অপুর সংসার

অপুর সংসার সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র । এই চলচ্চিত্রটি অপু ট্রিলোজির শেষ পর্ব । এই চলচ্চিত্রতেই বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং শর্মিলা ঠাকুর প্রথম বার অভিনয় করেন।

অপুর সংসার
"অপুর সংসার" চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকসত্যজিত রায়
রচয়িতাসত্যজিত রায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে
শ্রেষ্ঠাংশেসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,
শর্মিলা ঠাকুর,
অলক চক্রবর্তী,
স্বপন মুখার্জি
পরিবেশকঅ্যাডওয়ার্ড হ্যারিসন
মুক্তি১৯৫৯
দৈর্ঘ্য১১৭ মিনিট
ভাষাবাংলা

কাহিনী সংক্ষেপ

অপু আইএ পাশ করেছে বটে, কিন্তু চাকরি এখনও জোটাতে পারেনি, চাকরির সন্ধানে কলকাতায় ভাড়াবাড়িতে থেকে টিউশন করে সে পেট চালায়। অপুর সংসারের প্রথম দৃশ্যে অপু নিজের কলেজের এক শিক্ষকের কাছে চারিত্রিক সনদপত্র নিতে যায়। বাড়িওয়ালা বকেয়া ভাড়া চাইতে এলে তার সাথে পাক্কা শহুরে লোকের মত ঝগড়া করে অপু। নিশ্চিন্দিপুরের সেই সরল গ্রাম্য বালক এখন পুরোপুরি কলকাতার নাগরিক। বাড়িওয়ালা ভাড়া না পেয়ে তাকে তুলে দেবার হুমকি দিয়ে চলে যাবার সময় ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে গেলে অপু সেটা এবং তার সঙ্গে বাইরের আলোটাও জ্বালিয়ে দেয় – তারপর আবার নির্বিকারে দাড়ি কামানোয় মন দেয়।

বহু বছর বাদে কলেজের প্রাণের বন্ধু পুলুর সাথে দেখা হয় অপুর, ভালো রেস্টুরেন্টে নিয়ে অপুকে খাওয়ায় পুলু, চাকরির কথাও বলে। অপু বলে সে চাকরি করবে না, পরিশ্রম করবে। অপু একটা উপন্যাস লিখছে, উপন্যাসটা আসলে আত্মজীবনী – পুলুর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে অপু, তার উপন্যাস কল্পনা আর বাস্তব অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ। এর সামান্য আগেই সধবার একাদশীর সংলাপ আওড়াচ্ছিল অপু, পুলু বলে প্রেম সম্বন্ধে তার কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই, তাই প্রেমের কথা সে কল্পনা করেও লিখতে পারবে না। অপু পুলুর সাথে তর্ক করে চলে – যদিও তার যে প্রতিবেশিনী রোজ তার বাঁশি শোনার জন্য জানালার ধারে এসে দাঁড়ায়, অপু তাকে দেখে লুকিয়ে পড়ে।

পুলু অপুকে নিমন্ত্রণ কোরে তার মাসির মেয়ের বিয়েতে নিয়ে গেলে ঘটনাচক্রে অপর্ণাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় অপু, বিয়ের আগে পুলুকে যে চাকরিটা নেবে না বলেছিল সেটার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেয়।অপর্ণাও শহুরে দরিদ্র জীবনে দরিদ্র স্বামীর ভাড়াবাড়ির সংসারে মানিয়ে নেয়। স্বামী অফিস থেকে ফিরলে তার সঙ্গে মস্করা করে কাগজের ঠোঙা ফাটিয়ে, সিগারেটের প্যাকেটে অণুরধ লিখে রাখে সিগারেট না খাবার, বাড়িতে কাজের লোক না রাখতে চেয়ে অপুকে অণুরধ করে বাড়তি টিউশনগুলো ছেড়ে দেবার, আবার অপর্ণা খেতে বসলে অপু পাসে বসে তাকে বাতাস করে।

কাজলের জন্ম দিতে মৃত্যু হয় অপর্ণার। প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে বিপর্যস্ত অপু আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না – অপু আবার বোহেমিয়ান হয়ে পড়ে। কাজলকে অপু পছন্দ করে না, কারণ কাজল আছে বলেই অপর্ণা নেই। চাকরদের কাছে মানুষ হবার ফলে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছেলেটা অত্যন্ত অবাধ্য। তার কাছে কলকাতা এবং বাবা এই দুটো কথাই প্রায় সমার্থক, কারণ তাকে বলা হয়েছে তার বাবা কলকাতায় থাকে এবং দুটোই তার কাছে অদেখা। অপু বাবা হিসাবে কাজলকে ধরতে গেলে কাজল ঢিল ছুড়ে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়, কিন্তু সে যখন বলে সে কাজলের বন্ধু এবং তাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চায়, তখন কাজল রাজি হয়। এইভাবে জৈবিক সম্পর্কের সীমানা ছাড়িয়ে মানবিক / সামাজিক সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা। অপুর সংসারের শেষ দৃশ্য – অপুর কাঁধে চেপে কাজল চলেছে কলকাতায়।

অভিনয়ে

সম্মাননা

পুরস্কার বছর পুরস্কারের বিভাগ মনোনীত ফলাফল সূত্র
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) ১৯৫৯ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অপুর সংসার বিজয়ী [1]
ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার
(লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব)
১৯৬০ সাদারল্যান্ড ট্রফি অপুর সংসার বিজয়ী
এডিনবরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬০ ডিপ্লোমা অব মেরিট অপুর সংসার বিজয়ী [2]
ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ (যুক্তরাষ্ট্র) ১৯৬০ শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র অপুর সংসার বিজয়ী
বাফটা পুরস্কার ১৯৬২ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অপুর সংসার মনোনীত

তথ্যসূত্র

  1. "7th National Film Awards" (PDF)চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭
  2. "Apur Sangsar"। Satyajit Ray.org। ২৯ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.