মনোমোহন বসু
মনোমোহন বসু (১৭ জুলাই ১৮৩১-৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১২) ছিলেন একজন বিশিষ্ট নাট্যকার এবং এবং মঞ্চাধ্যক্ষ । মনোমোহন বসু ডেভিড হেয়ারের ছাত্র এবং কবি ঈশ্বর গুপ্তের শিষ্য ছিলেন । ছাত্রাবস্থাতেই তিনি প্রভাকর এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতে থাকেন ।

১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মধ্যস্থ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন । তিনি ছিলেন এই পত্রিকার সম্পাদক । পরে এই পত্রিকা পাক্ষিক এবং মাসিক রূপেও প্রকাশিত হয়েছিল । তিনি পাঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহের উপর একটি তথ্যভিত্তিক জীবনী দুলীন রচনা করে খ্যাতিলাভ হয়েছিলেন । তার লেখা বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই পদ্যমালা বেশ জনপ্রিয় ছিল ।
শুরুর দিকে মনোমোহন যাত্রা, হাফ-আখড়াই, পাঁচালী, কীর্তন, বাউল নানা বিষয়ের সঙ্গীত রচনা করতেন ।
তৎকালীন যুগে যাত্রার মান খুবই নিচুস্তরে নেমে গিয়েছিল। মনোমোহন যাত্রাকে উন্নত করে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবার চেষ্টা করেন । তার রচিত নাটকগুলি বাইরে থেকে আধুনিক নাটকের মত ছিল কিন্তু ভিতর থেকে ছিল এদেশের যাত্রাধর্মী । এই নাটকগুলি যাত্রার মত খোলামঞ্চে এবং আধুনিক থিয়েটারের মত স্টেজ বেঁধেও অভিনয় করা যেত । এই সময়ে গীতাভিনয় নামক এক রকমের মিশ্রধর্মী ফর্ম তৈরি হয়েছিল । থিয়েটার ও যাত্রার মিশ্রন মনোমোহন তার নাটকগুলির মধ্যে করেছিলেন । যাঁদের স্টেজ বেঁধে থিয়েটার করার মত আর্থিক সঙ্গতি ছিল না আবার থিয়েটারের প্রতি আকর্ষণ ছিল এবং যাত্রাকেও পুরোপুরি ছাড়তে পারছিলেন না এরকম মানুষদের কাছে মনোমোহন খুবই জনপ্রিয় ও শ্রদ্ধেও ছিলেন ।
মনোমোহন বহুবাজার বঙ্গ নাট্যালয় -এর সঙ্গে পৃষ্ঠপোষক এবং নাট্যকার হিসাবে যুক্ত ছিলেন । এই সময়ে তিনি বেশ কিছু নাটক রচনা করেছিলেন । রামাভিষেক (প্রথম অভিনয়: ১৮৬৮), সতী (১৮৭৪), হরিশ্চন্দ্র (১৮৭৫) প্রভৃতি নাটকগুলি বহুবার অভিনীত হয়ে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল ।
সতী নাটকটি বিয়োগান্তক হওয়াতে অনেকে আপত্তি করেন । তাই মনোমোহন একটি মিলনান্তক ক্রোড়অঙ্ক লিখে ছাপিয়ে এর সাথে জুড়ে দেন । বিয়োগান্তক নাটককে এভাবে ক্রোড়অঙ্ক জুড়ে মিলনান্তক করার এই হাস্যকর পদ্ধতি বাংলা যাত্রায় ছিল । কিন্তু মনোমোহনের ব্যবহারে বাংলা নাটকেও এই রীতি জনপ্রিয় হয় ।
১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে ন্যাশন্যাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে মনোমোহন উৎসাহী ছিলেন । নতুন যুগের এই থিয়েটারকে স্বাগত করে তিনি বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছিলেন ।
মনোমোহন বেশ কয়েকটি রঙ্গালয়ে পেশাদারিভাবে মঞ্চাধ্যক্ষের কাজ করেন । এবং বাংলা থিয়েটারের যুগবদলের সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে তিনি যাত্রাকে উন্নত এবং সঙ্গীতের অংশগুলিকে মার্জিত করেন ।
নাট্যতালিকা
- রামাভিষেক(১৮৬৮)
- সতী (১৮৭৪)
- হরিশ্চন্দ্র (১৮৭৫)
- প্রণয় পরীক্ষা (১৮৬৯)
- পার্থপরাজয় (১৮৮১)
- রাসলীলা (১৮৮৯)
- আনন্দময় (১৮৯০)
তথ্যসূত্র
বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস - দর্শন চৌধুরী পুস্তক বিপণী কলকাতা