প্রতাপচন্দ্র মজুমদার

প্রতাপচন্দ্র মজুমদার (১৮৪০-১৯০৫) বাংলায় হিন্দু সংস্কার আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তিনি ভারতের ব্রাহ্মসমাজের সদস্য এবং কেশবচন্দ্র সেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তিনি হিন্দুধর্ম এবং খ্রিস্ট ধর্মের দর্শন এবং নীতিশাস্ত্রের মধ্যে যোগাযোগের এক আদর্শ প্রতিনিধি ছিলেন। এই সম্পর্কে তিনি তার বই দি ওরিয়েন্টাল ক্রাইস্ট লিখে গেছেন।

প্রতাপচন্দ্র মজুমদার
জন্ম১৮৪০
মৃত্যু১৯০৫
জাতীয়তাভারতীয়
পেশালেখক, ধর্মীয় নেতা

জীবন এবং কাজ

কেশবচন্দ্র সেন এবং তার সহকর্মীরা ঠিক করেছিলেন যে চার ব্রাহ্মসভ্য ব্রাহ্ম আদর্শ ও চারটি প্রধান বিশ্ব ধর্ম (হিন্দুধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং ইসলাম) এর মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে অধ্যয়ন করবেন এবং প্রতিবেদন দাখিল করবেন। গৌরগোবিন্দ রায় হিন্দু ধর্ম অধ্যয়নের জন্য নিযুক্ত হন; অঘোরনাথ গুপ্ত নিযুক্ত হন বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যয়ন করতে এবং গিরিশ চন্দ্র সেনের ওপর দায়িত্ব পড়ে ইসলাম ধর্ম অধ্যয়নের। মজুমদারকে খ্রিস্ট ধর্ম অধ্যয়নের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল। এই অধ্যয়নের ফল হিসেবে তিনি লেখেন দি ওরিয়েন্টাল ক্রাইস্ট , এটি ১৮৮৩ সালে বোস্টনে জিও. এইচ. এলিসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।[1] এটি নিয়ে পাশ্চাত্যে অনেক আলোচনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মজুমদার এবং ম্যাক্স মুলারের মধ্যে হিন্দুধর্মখ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্রের আদান-প্রদানের সূচনা হয়। মজুমদার এই চিঠিপত্র ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করেন। এরপর এটি ব্রিটেনভারত - উভয় দেশেই বিতর্কের সৃষ্টি করে। মুলার প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে মজুমদার খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গিয়ে এখন খ্রিস্টান। কিন্তু মজুমদার তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আত্মত্যাগের নমুনা হিসাবে যিশুর প্রতি তার নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে "খ্রিস্টান" আখ্যাটি যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করে না। ব্রাহ্ম দর্শনের মধ্যে দিয়েই তিনি যিশুর ক্রিয়া ও ঈশ্বরত্বের দাবীকে ব্যাখ্যা করেছেন। পরিবর্তে মুলার বলেছিলেন যে খ্রিস্টানদের ব্রহ্মদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং প্রায়শ্চিত্তের প্রচলিত খ্রিস্টান প্রথাটি বিসর্জন দেওয়া উচিত।[2]

মজুমদার ব্রাহ্ম আন্দোলনের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক আদর্শ সম্পর্কেও বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন। তিনি কেশবচন্দ্র সেনের একটি জীবনী লেখেন, দ্য লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব কেশবচন্দ্র সেন (১৮৮৭)। তিনি রামকৃষ্ণ দেবের একটি জীবনীও লিখেছিলেন। তার প্রতি মজুমদারের গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তিনি ১৮৯৩ সালে শিকাগোতে বিশ্ব ধর্মের সংসদে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৮৯৩ সালের অক্টোবরে মজুমদার আমেরিকান অ্যান্টিকুয়ারিয়ান সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন।[3]

১৯১৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র মজুমদারের সংগৃহীত প্রজ্ঞাগুলি 'উপদেশ' নামে প্রকাশিত হয়েছিল।[4] মজুমদারের রচনাগুলি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে যা খ্রিস্টান, ইসলাম বা ইহুদি ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মের মূল্য এবং মৌলিক সম্বন্ধকে অবাধে স্বীকৃতি দেয় ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা তাদের মূল ভাব এবং প্রচারের সাথে সম্পর্কিত।

তথ্যসূত্র

  1. Suresh Chunder Bose (1929). The Life of Protap Chunder Mozoomdar (Vol. 2). Calcutta: Nababidhan Press, p. 105.
  2. Müller, Georgina, The Life and Letters of Right Honorable Friedrich Max Müller, 2 vols. London: Longman, 1902.
  3. American Antiquarian Society Members Directory
  4. Protap Chunder Mazoomdar (১৯১৯)। Upadesh। Calcutta।

গ্রন্থপঞ্জী

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.