ত্রিপুরসুন্দরী

ত্রিপুরসুন্দরী বা ষোড়শী বা ললিতা [1] এক হিন্দু দেবী। ইনি দশমহাবিদ্যার অন্যতমা। ত্রিপুরসুন্দরী রাজরাজেশ্বরী নামেও পরিচিতা।

শ্রীচক্রের উপর বামপদ স্থাপন করে সিংহাসনে উপবিষ্ট শ্রী ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরী (পার্বতী); হাতে সনাতনী প্রতীক ইক্ষুদণ্ড, পুষ্পবাণ, পাশ-অঙ্কুশ।
দেবী ত্রিপুরাসুন্দরীর চিত্র, ঊনবিংশ শতাব্দী
চতুর্ভুজা ললিতার রূপে পার্বতী, সঙ্গে পুত্র গণেশস্কন্দ,ওড়িশা, পূর্ব ভারত। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত একাদশ শতাব্দীর ভাস্কর্য।

ত্রিপুরসুন্দরীর ষোড়শী রূপটি ষোড়শবর্ষীয়া এক বালিকার রূপ। এই রূপ ষোড়শপ্রকার কামনার প্রতীক। ষোড়শীতন্ত্রে ত্রিপুরাসুন্দরীকে "শিবের নয়নজ্যোতি" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কৃষ্ণবর্ণা ও শিবোপরি উপবিষ্টা। শিব ও ষোড়শীকে শয্যা, সিংহাসন অথবা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র ও ইন্দ্রের মস্তকোপরিস্থিত বেদিতে উপবিষ্ট রূপে কল্পনা করা হয়।

ললিতা শ্রীবিদ্যা সংক্রান্ত অন্যতমা দেবী। ললিতা ধনুক, পঞ্চবাণ, পাশ ও অঙ্কুশধারিনী। পাশ-অঙ্কুশ বন্ধন ও মুক্তির প্রতীক, পঞ্চবাণ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রতীক এবং ইক্ষুধনু মনের প্রতীক।

ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার নাম ত্রিপুরসুন্দরীর নাম থেকে ব্যুৎপত্তিলাভ করেছে। উদয়পুর শহরের অদূরে রাধাকিশোরপুর গ্রামের নিকট একটি পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দেবীর প্রধান মন্দির।

কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ত্রিপুরাসুন্দরীর পাঁচটি স্তবগান সংকলন করেছেন। পঞ্চস্তবী নামে পরিচিত এই স্তবগানগুলি উক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে আজও জনপ্রিয়।

ব্যুৎপত্তি

ত্রিপুর শব্দের অর্থ ত্রিভুবন; অর্থাৎ স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল। এই কারণে ত্রিপুরসুন্দরী শব্দের অর্থ ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী। অন্য এক মতে, দেবীর অপর নাম ত্রিপুরা। কারণ তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণুশিবের শক্তি ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবীরুদ্রাণীর সম্মিলিত রূপ।

সাহিত্যে ত্রিপুরসুন্দরী

হিন্দু ধর্মসাহিত্যে ত্রিপুরসুন্দরীকে পরমাসুন্দরী দেবীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ললিতা সহস্রনামসৌন্দর্যলহরী স্তোত্রে তার রূপবর্ণনা করা হয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কামনা সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি সৃষ্টির স্রোত অবারিত রাখেন। আদি শঙ্করাচার্য তার ত্রিপুরসুন্দরী অষ্টকম স্তোত্রে ত্রিপুরসুন্দরীকে বিশ্বজননী বলেছেন।

ত্রিপুরাসুন্দরীর মধ্যে কালীর শক্তি ও দুর্গার সৌন্দর্য ও মহত্বের সম্মিলন লক্ষিত হয়। ধর্মীয় সাহিত্যের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ত্রিনয়নী, চতুর্ভুজা, রক্তাম্বর পরিহিতা, সর্বালঙ্কারভূষিতা এবং স্বর্ণসিংহাসনের উপর পদ্মাসনে উপবিষ্টা। তার হস্তধৃত বস্তুগুলি শিবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তার মূর্তিতে রাজকীয় আভা থাকায় তাকে রাজরাজেশ্বরী নামে অভিহিত করা হয়।

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

  • Hindu Goddesses: Vision of the Divine Feminine in the Hindu Religious Traditions (আইএসবিএন ৮১-২০৮-০৩৭৯-৫) by David Kinsley

পাদটীকা

  1. Frawley, David: "Tantric Yoga and the Wisdom Goddesses", page 89. Motilal Banarsidass Publishers, reprint 2005

তথ্যসূত্র

  • Kinsley, David (১৯৯৭)। Tantric Visions of the Divine Feminine: The Ten Mahavidyas। New Delhi: Motilal Banarsidassআইএসবিএন 978-0520204997।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.