কোতয়ালী দরজা
কোতওয়ালী দরজা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি প্রাচীন নিদর্শন। কোতওয়ালী দরজাকে গৌড় এর সিংহ দ্বার বলা হয়। প্রাচীন গৌড়ের উপনগরী হতে মূল রাজধানীতে অনুপ্রবেশের একটিমাত্র মূল ফটক ছিলো এটি। নগর পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ ‘কোতওয়াল’ এর অনুকরণে নামকরণ করা হয়েছে। এখানে নগরপুলিশ (কোতওয়াল) গৌড় নগরীর দক্ষিণ দেয়াল রক্ষা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।[1]
কোতয়ালী দরজা | |
---|---|
![]() কোতয়ালী দরজা, বাংলাদেশ প্রান্ত থেকে | |
সাধারণ তথ্য | |
শহর | চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর |
অবস্থান
বালিয়াদীঘি ডানে রেখে সোজা উত্তর পশ্চিমে ভারত সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোতওয়ালী দরজা। এটি সীমান্তের জিরো লাইন থেকে দেখা যায়।[2]
অবকাঠামো
এটির ৩০ ফুট উঁচু ও ১৬ ফুট ৯ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি খিলান পথ ছিলো। ফটকটির পূর্ব ও পশ্চিমে শত্রুর উপর কামানের গোলা নিক্ষেপের জন্য বেশ কিছু ছিদ্র ছিলো। কোতয়ালী দরজার মধ্যবর্তী রাস্তা ১৭ ফুট ও ৪ ইঞ্চি। বর্তমানে খিলান ভেঙ্গে পড়েছে। এটা সম্পূর্ণরূপে গৌড়িয়া ইটের তৈরি।
স্থাপত্য রীতি
নগর রক্ষা দুর্গের ফটকগুলোর স্থাপত্য রীতির চেয়ে এ ফটকটির স্থাপত্য রীতি অনেক পূর্বের। ভিতরে ও বাইরে প্রতিটি সম্মুখভাগে ৬ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট দু’টি করে মোট চারটি অর্ধবৃত্তাকার বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলোর প্রতি পার্শ্বে অলংকৃত স্তম্ভের উপর স্থাপিত সুচালো খিলানযুক্ত গভীর কুলাঙ্গী রয়েছে। এ তোরণ অভ্যন্তরে সশস্ত্র পুহরীদের আবাস কক্ষগুলি বিভিন্ন প্রকার নকশাযুক্ত কারুকাজ ও পোড়া মাটির অলংকরণে সুসজ্জিত।[3]
স্থাপনার উদ্দেশ্য
এখানে কোন শিলালীপি না থাকায় কোতওয়ালী দরজা নির্মানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বেশ কিছু মত প্রচলিত আছে। তবে এসব মতের সবগুলোই বেশ গ্রহণযোগ্য। নিম্নে ৩ টি আলাদা মত এবং উদ্দেশ্য দেওয়া হলো।
- জেনারেল ক্যানিং হ্যামের মতে এটি সুলতান আলাউদ্দীন খলজীর মৃত্যুর পর গৌড় লখনৌতিতে দিল্লীর আধিপত্য কায়েমের সময় নগর রক্ষা প্রাচীর অভ্যন্তরে এ বিশাকায় তোরণটি নির্মিত হয়। এ মত সমর্থন করলে তোরনটি সম্ভবত ১২২৯ খ্রিঃ ৬২৭ হিজরী সনের কিছু পর নির্মিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়।[4]
- ডঃ দানির মতে বাংলার সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুত শাহের আমলের প্রথমার্ধে পান্ডুয়া হতে গৌড়ে রাজধানী স্থানান্তর হওয়ার পর রাজধানীর নগর দ্বার হিসেবে এটি নির্মিত হয়।[4]
- এম. আবিদ আলী খানের মতে ফটকটি গৌড়ের প্রাপ্ত সর্ব প্রাচীন মুসলিম লিপির তারিখের ১২৩৪ খ্রিঃ সুলতান ইলতাতমিশ ও মুহাম্মদ আলাউদ্দীন খলজীর মৃত্যুর (১৩১৫ খ্রিঃ) মধ্যবর্তী কোন সময়কার।[4]
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
- তরু, মাযহারুল ইসলাম (ডিসেম্বর ১৯৯০)। জেলা নবাবগঞ্জ এর ইতিকথা। পৃষ্ঠা ৪৮।
- "কোতোয়ালী দরওয়াজা"। শিবগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়ন। শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ।
- খাঁন, এম. আবিদ আলী (মার্চ ১৯৮৭)। গৌড় ও পান্ডুয়ার স্মৃতিকথা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৮৫।
- করিম, আবদুল (জানুয়ারী ১৯৯৪)। মুসলিম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য। বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১২৬।