হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার
হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি মূলত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। মাযারের পাশেই অবস্থিত আরো দুটি স্থাপনা হচ্ছে শাহজাদপুর দরগাহ মসজিদ এবং শামসুদ্দিন তাবরিজির মাজার।[1]
হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার | |
---|---|
![]() হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার | |
সাধারণ তথ্য | |
ঠিকানা | শাহজাদপুর উপজেলা, সিরাজগঞ্জ জেলা |
শহর | রাজশাহী |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ১ |
যে কারণে পরিচিত | হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার ভবন |
অন্যান্য তথ্য | |
কহ্ম সংখ্যা | ১ |
অবস্থান
হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।[1] বগুড়া নগরবাড়ি পাকা সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে হুরাসাগর নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই মাযার।[2]
বিবরণ
শাহজাদপুর দরগাহ মসজিদটির পাশেই হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার এবং অন্যান্য শহিদের কবর অবস্থিত।[3] মখদুম শাহের সমাধিটি একটি প্রাচীন গোলাকার এক কক্ষের স্থাপত্য। কক্ষের উপরে একটি বৃহদাকার গম্বুজ আছে।
মাজারের কিংবদন্তী
কথিত আছে, ইয়েমেনের শাহজাদা হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহঃ) ১১৯২-৯৬ সালের মধ্যে ইয়েমেন থেকে ধর্মপ্রচারার্থে যাত্রা শুরু করে বোখারা শহরে আগমন করেন। বোখারা শহরে হযরত জালাল উদ্দিন বোখারী (রহঃ) এর দরবার শরীফে কিছু সময় অতিবাহিত করে তিনি বাংলার পথে যাত্রা শুরু করে বাংলার শাহজাদপুর অঞ্চলে আসেন। তিনি বাংলায় প্রবেশ করে ইসলাম প্রচার শুরু করলে তৎকালীন সুবা বিহারের অমুসলিম অধিপতি "রাজা বিক্রম কেশরী" হযরত মখদুম শাহদৌলার আগমনে রাগান্বিত হয়ে তার সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। কিন্তু সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়ে ফিরে যায়। রাজা বিক্রম কেশরী বেশ কয়েকবার সৈন্য প্রেরণ করে পরাজিত হয়, ইতিমধ্যে হযরত মখদুম শাহদৌলা শাহজাদপুরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করেন। শেষ যুদ্ধে হযরত মখদুম শাহদৌলা এবং তার বহু সঙ্গী ও অনুসারী যোদ্ধা শহীদ হন, এই ধর্ম যুদ্ধে তার শহীদ হবার কারণে তিনি হযরত মখদুম শাহদৌলা শহীদ ইয়ামেনী (রহঃ) নামে পরিচিত লাভ করেন।এবং সাময়িকভাবে এখানে বসবাস করে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। দরগাহপাড়ার এই স্থানটিতেই মখদুম শাহদ্দৌলা (রহঃ) তাঁর অনুচর এবং ওস্তাদ শামসুদ্দিন তাবরেজীকে নিয়ে পাঞ্জেগানা নামাজ আদায় করতেন। ধীরে ধীরে এখানে গড়ে তোলেন জামে মসজিদ। তখনকার ওই মসজিদটি “মখদুমিয়া জামে মসজিদ” হিসেবেই পরিচিত লাভ করে। আর এই মসজিদকে ঘিরেই ইসলাম প্রচারণা চালাতে থাকেন তখন এই অঞ্চলের সবটুকুই ছিল সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কিশোরীর অধীনে। ইসলাম প্রচারে ঈশান্বিত হয়ে রাজা বিক্রম কিশোরী বাধা প্রদান করতে থাকলে সর্বমোট ৩৩বার মখদুম শাহদ্দৌলা (রহঃ) এর সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম দুটি যুদ্ধে বিক্রম কিশোরী পরাজিত হলে প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া হয়ে উঠে। পরে গুপ্তচর পাঠিয়ে ওই গুপ্তচর মখদুম শাহদ্দেীলা (রহঃ) এর বিশ্বস্ত সহচরে পরিণত হয়ে একদিন একাকী অবস্থায় আসর নামাজ পড়ার সময় ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে গুপ্তচর দেহ থেকে গর্দান মোবারক বিছিন্ন করে শহীদ করেন। পরে তাঁর দ্বিখণ্ডিত মাথা সুবা বিহারের রাজা বিক্রম কিশোরীর নিকট নেয়া হলে সেখানেও জবান থেকে সোবহান আল্লাহ ধ্বনি উচ্চারিত হতে থাকে। এই অলৈাকিক দৃশ্য দেখে সুবা বিহারের রাজাসহ অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দ্বিখণ্ডিত দেহ মোবারক এই মসজিদের দক্ষিণ –পূর্ব কোণে দাফন করা হয়। থেমে থাকেনি ইসলাম প্রচারের কাজ। শাহাদতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) অনুচররা অব্যাহত রাখেন প্রচার প্রসারের কাজ। সুযোগ্য উত্তরসূরী ইউসুফ শাহ (রহঃ),শাহ হাবিবুল্লাহ (রহঃ),শাহ বদর (রহঃ), ওস্তাদ শামসুদ্দিন তাবরেজী (রহঃ) এর প্রচেষ্টায় দিন দিন ইসলাম ব্যাপকভাবে বিস্তার করে। যার ফলে হিন্দুদের সংখ্যা কমে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করা হয়। এজন্য বহু সংখ্যক ঈমানদার মুসলমানকে শহীদ হতে হয়। দরগাহপাড়ার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শহীদের কবর রয়েছে। এমনকি এই মসজিদের দক্ষিণ কোণে শহীদদের গণ কবর বা গঞ্জে শহীদান রয়েছে। পরে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা শহীদী রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করে এ অঞ্চলে শাসন ভার অর্পিত হয় ইউসুফ শাহ (রহঃ) এর উপর। আর তাঁর নামানুসারেই এ অঞ্চলকে ইউসুফ শাহ পরগনার অধীনে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে (১৫০০–১৫৭৬) খৃষ্টাব্দে বাংলার মুসলিম সুলতানি আমলে এই মসজিদের নিদর্শন কাজ শুরু হয়। তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম কারুকার্য ব্যবহার করা হয় এর নির্মাণে। ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের উত্তর দক্ষিণ দৈর্ঘ্য ১৩.১৯ মিটার পূর্ব পশ্চিম প্রস্থ ১২.৬০ মিটার এবং ছাদের উপরিভাগের গম্বুজের ব্যাস ৩.০৮ মিটার। গম্বুজের প্রতিটি মাথায় পিতলের কারুকার্য মন্ডিত।[4]
চিত্রশালা
- এক নজরে হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার
- মাজারের ইতিবৃত্ত
- মাজারের উপরিভাগের কারুকার্য
তথ্যসূত্র
- "প্রত্নস্হলের তালিকা"। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। http://www.archaeology.gov.bd/। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া; প্রশ্নোত্তরে বাঙলাদেশের প্রত্নকীর্তি (প্রথম খন্ড);ঝিনুক প্রকাশনী; তৃতীয় মুদ্রণঃ মার্চ ২০১৩; পৃষ্ঠা- ৩২১-৩২৩, ISBN 984- 70112-0112-0
- "শাহজাদপুর উপজেলা"। http://onushilon.org। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৬।
|প্রকাশক=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - "হযরত মখদুম শাহদৌলা (রহঃ) এর মসজিদ ও মাজার - Digital Sirajganj"। digitalsirajganj.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-০৭।
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে হযরত মখদুম শাহদৌলার মাজার সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |