আনোয়ার পাশা (লেখক)

আনোয়ার পাশা (এপ্রিল ১৫, ১৯২৮-ডিসেম্বর ১৪, ১৯৭১) একজন বাংলাদেশী কবি, কথাসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ। তার পিতার নাম হাজী মকরম আলী আর মা সাবেরা খাতুন।[1] ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ঢাকার মিরপুরের বধ্যভূমিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সহযোগী আল বদর বাহিনীর সদস্যদের হাতে তিনি নিহত হন।[2]

আনোয়ার পাশা
জন্ম (1928-04-15) ১৫ এপ্রিল ১৯২৮
মুর্শিদাবাদ
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
পেশাকবি, কথা সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী  বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার

ছাত্র ও কর্ম-জীবন

আনোয়ার পাশা মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মোহকুমার রাঙ্গামাটি চাঁদপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ডবকাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সন অনুযায়ী তার জন্ম হয় ২ বৈশাখ ১৩৩৫ সনে।[3] তিনি ১৯৪৬ সালে মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতকার্য হন। কিন্তু ১৯৪৮ সালে আই এ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে। এরপর তিনি চলে আসেন রাজশাহীর বিখ্যাত রাজশাহী কলেজে। এখান থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক পাশ করেন ১৯৫১ সালে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যেই স্নাতকোত্তর সম্মাননা অর্জন করেন।

মানিকচক হাই মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে আনোয়ার পাশার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ১৯৫৪ সালে ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসায় এবং ১৯৫৭ সালে সাদিখান দিয়ার বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে এই কলেজেরই বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থাকেন।

১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৬৯ সালে অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী অধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি স্থায়ী প্রভাষক হন। ১৯৭০ সালে তিনি জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন।[3]

মৃত্যু

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাহায্যকারী আল বদর গোষ্ঠীর একটি দল তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নিকট নির্মমভাবে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামে মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।[4]

হত্যার বিচার

৩রা নভেম্বর, ২০১৩ সালে, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আনোয়ার পাশা সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।[5][6]

সাহিত্য জীবন

আনোয়ার পাশা ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার সাহিত্যকর্মে ফুটে ওঠে দেশাত্মবোধ, মননশীলতা এবং প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার। তার সাহিত্যজীবনের সূচনা ছাত্রাবস্থায়। রাজশাহী কলেজে বিএ শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি হাস্নাহেনা শিরোনামে একটি রম্যরচনা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত প্রথম উপন্যাস[7] রাইফেল রোটি আওরাত রচনার জন্য তিনি মরনোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।

উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম

উপন্যাস

  • নীড় সন্ধানী (১৯৬৮)
  • নিশুতি রাতের গাথা (১৯৬৮)
  • রাইফেল রোটি আওরাত (১৯৭৩)

কাব্য

  • নদী নিঃশেষিত হলে (১৯৬৩)
  • সমুদ্র শৃঙ্খলতা উজ্জয়িনী (১৯৭৪)
  • অন্যান্য কবিতা (১৯৭৪)

সমালোচনা

  • সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল (১৯৬৭)
  • রবীন্দ্র ছোটগল্প সমীক্ষা (প্রথম খন্ড-১৯৬৯, দ্বিতীয় খন্ড-১৯৭৮)

গল্পগ্রন্থ

  • নিরুপায় হরিণী (১৯৭০)

সম্মাননা

  • বাংলা একাডেমি পুরস্কার। (১৯৭২,মরণোত্তর)

তথ্যসূত্র

  1. কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত রণেশ মৈত্রর লেখা
  2. "বাংলাপিডিয়ায় আনোয়ার পাশার জীবনী"। ১১ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০০৬
  3. গুণীজন ওয়েব সাইট
  4. "পাশা, আনোয়ার"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭
  5. বুদ্ধিজীবী হত্যার সাজা ফাঁসি, প্রথম আলো দৈনিক পত্রিকা, লেখক: কুন্তল রায় ও মোছাব্বের হোসেন, ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৩।
  6. মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড, আকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা, ঢাকা, ৩রা নভেম্বর, ২০১৩।
  7. liberationwarbangladesh.org, মুক্তিযুদ্ধ ই আর্কাইভ। "রাইফেল, রোটি, আওরাত"। ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.