আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মিলিশিয়া কমান্ডার যিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সচিব ছিলেন[6][7][9][10]; ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ও সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আধা-সামরিক বাহিনী আল বদরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন যারা যুদ্ধ চলাকালে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহাযোগিতা দান করেছিল।[9][11] এই বাহিনীটিই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত। তিনি একাধারে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহাযোগিতা দান এবং ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানের দায়ে অভিযুক্ত।

আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
জন্ম২রা জানুয়ারি ১৯৪৮ (বয়স ৬৭)[1][2]
মৃত্যু২২শে নভেম্বর ২০১৫
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
মৃত্যুর কারণফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশারাজনীতি
নিয়োগকারীসেক্রেটারি জেনারেল
প্রতিষ্ঠানবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
পরিচিতির কারণরাজনীতি, যুদ্ধাপরাধ
আদি নিবাসফরিদপুর জেলা
অফিসসমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়
স্থিতিকাল২০০১-২০০৬
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
অপরাধের অভিযোগবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ১৯৭১ বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড[3][4][5][6][7]
অপরাধের শাস্তিমৃত্যুদণ্ড[8]

২০১৩ সালের ১৭ই জুলাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২, মুজাহিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যার পরিকল্পনা, নির্যাতন ইত্যাদিসহ মোট উত্থাপিত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে তাকে দোষী সাবস্থ্য করেন এবং দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড আদেশ দেয়া হয়।[3][4][5][12] ২১শে নভেম্বর আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও অপর দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাকর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিকট প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করেন[13] কিন্তু রাষ্ট্রপতি দুজনের আবেদনই নাকচ করে দেন।[14] ২২শে নভেম্বর ২০১৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে দুজনকে একই সাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।[15] তিনি ২০০১-২০০৭ সময়কালে চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিলেন।[16][17][18][19][20]

প্রারম্ভিক জীবন

মুজাহিদ ১৯৪৮ সালে ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতা মওলানা মোহাম্মদ আলী শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। শান্তি কমিটিও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। স্বাধীনতার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অণুরোধে তিনি শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক বিচারের হাত থেকে রক্ষা পান।[21] ফরিদপুর শহর থেকে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৭০ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।[22]

রাজনৈতিক জীবন

১৯৬৮ সালে মুজাহিদ ইসলামী ছাত্র সংঘের ফরিদপুর জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন।[22] ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি ঢাকা জেলার ছাত্র সংঘের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।[22] ১৯৭০-এর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন; যা ছিল নিখিল পাকিস্তান ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক শাখা[22] এবং ১৯৭১ সালের অক্টোবরে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।[23]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়নে ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮-এর নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেন এবং শুধুমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচন বাদে বাকীগুলোতে পরাজিত হন।[22] ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভূমিকা

১৯৭১ সালে মুজাহিদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৭ই অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্র সংঘের একটি সভার আয়োজন করেন এবং সেখানে উপস্থিতদের আল-বদরে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করেন।[24] তিনি ছিলেন আল বদর বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। রাজাকার এবং আল বদর বাহিনীর প্রধান কাজ ছিলো স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া অথবা নির্যাতনের পর হত্যা করা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক অভিযোগে উল্লেখ করেন, মুজাহিদ ১৯৭১ সালের অক্টোবরে মতিউর রহমান নিজামীর কাছে থেকে সুপ্রীম কমান্ডার হিসেবে আল-বদরের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।[23] এছাড়াও তার নেতৃত্বে একটি দল ১৯৭১ সালের মে মাসে ৩০০-৩৫০টি হিন্দু বাড়িতে লুটতরাজ করে এবং ৫০-৬০ জন হিন্দুকে হত্যা করে।[25] তিনি ঘোষণা করেন, হিন্দুস্থানকে তিনি স্বাধীন দেশ হিসেবে মানেন না এবং পৃথিবীর ম্যাপ থেকে হিন্দুস্থানকে মুছে ফেলা না পর্যন্ত আল-বদর ক্ষ্যান্ত হবে না। এছাড়াও তিনি, কোন হিন্দু লেখকের লেখা বা তাদের পক্ষে লেখা কোন বই বিক্রি, প্রকাশ ও সংগ্রহ করাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।[24] ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১-এ দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত মুজাহিদের বক্তব্য:

"রাজাকার, আল বদর এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর তরুণেরা জাতিকে ভারতের যৌথবাহিনী এবং গুপ্তচরদের হাত থেকে রক্ষা করতে কাজ করছে। কিন্তু, সম্প্রতি দেখা গেছে যে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেমন জুলফিকার আলী ভুট্টো, কাওসার নিয়াজী, মুফতি আহমেদ এবং আসগর খান এই দেশপ্রেমিকদের নামে অসম্মানসূচক মন্তব্য করছেন।"

যুদ্ধাপরাধের বিচার

মৃত্যু

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।[26]

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"দৈনিক সংবাদ (অন-লাইন)। ১ অক্টোবর ২০১৫। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৫
  2. মেহেদী হাসান ডালিম। "মুজাহিদ : আলবদর নেতা থেকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী"। রাইজিংবিডি ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৫
  3. "Bangladesh Islamist leader sentenced to death for 1971 war crimes"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ জুলাই ২০১৩।
  4. http://www.dw.de/bangladesh-islamist-party-leader-sentenced-to-death-for-war-crimes/a-16957509
  5. Habib, Haroon (১৮ জুলাই ২০১৩)। "Jamaat secretary-general gets death penalty for war crimes"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। Chennai, India।
  6. "Bangladesh Islamist leader sentenced to death for war crimes" (ইংরেজি ভাষায়)। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩
  7. "Death penalty for leading Bangladesh Islamist" (ইংরেজি ভাষায়)। Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩
  8. "Bangladesh Islamist leader sentenced to death for 1971 war crimes"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ জুলাই ২০১৩।
  9. "Jamaat Secretary General gets death for war crimes in Bangladesh" (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪
  10. "মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩
  11. "Mojaheed to hang" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪
  12. Hossain, Maneeza (১৫ অক্টোবর ২০০৯)। Barry A. Rubin, সম্পাদক। Guide to Islamist Movements (ইংরেজি ভাষায়)। M.E. Sharpe। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 978-0765617477।
  13. ক্ষমার আবেদন করেছেন সাকা-মুজাহিদ: আইনমন্ত্রী
  14. প্রাণভিক্ষা পাননি সাকা-মুজাহিদ
  15. "Salauddin Quader Chowdhury, Ali Ahsan Mohammad Mujahid hanged for 1971 war crimes"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৫
  16. "Bangladesh Islamist leader sentenced to death for 1971 war crimes"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩
  17. "Bangladesh Islamist party leader sentenced to death for war crimes"Deutsche Welle (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩
  18. "Jamaat secretary-general gets death penalty for war crimes"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩
  19. Khan, Tamanna (১৮ জুলাই ২০১৩)। "They now can rest in peace"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩
  20. Hiranmay Karlekar, Bangladesh: The Next Afghanistan?, SAGE Publications, 2006, p. 159
  21. Ahmed, Jakia (২ এপ্রিল ২০১২)। "'Mojaheed not own his father's crimes'"BanglaNews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা। ২৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  22. "Mojaheed indicted for genocide, crimes against humanity"New Age (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা। ২২ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  23. "Discharge plea for Mojaheed"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা। ২৫ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  24. "Newspaper archives testify to 1971 role of Mojaheed, other war crimes suspects"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা। ৪ এপ্রিল ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  25. Sarkar, Ashutosh (১৭ জানুয়ারি ২০১২)। "Mojaheed pressed Pak army for hasty killings"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  26. "সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর"bbc.comবিবিসি বাংলা। ২২ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.