মুহাম্মদ কামারুজ্জামান

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান (৪ঠা জুলাই ১৯৫২ - ১১ই এপ্রিল ২০১৫) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবীদ ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ও সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী।[2][5][6][7][8]। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও জামায়াতের মুখপত্র হিসাবে বিবেচিত খবরের কাগজ দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক এবং 'সাপ্তাহিক সোনার বাংলার' সম্পাদক ছিলেন।[9]

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
জন্ম
মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান

(১৯৫২-০৭-০৪)৪ জুলাই ১৯৫২
শেরপুর, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১১ এপ্রিল ২০১৫(2015-04-11) (বয়স ৬৭)[1]
ঢাকা, বাংলাদেশ
শিক্ষাসাংবাদিকতায় মাস্টার্স
যেখানের শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাসাংবাদিক, রাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণরাজনীতি, সম্পাদকীয়, যুদ্ধাপরাধ
আদি নিবাসশেরপুর, বাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
অপরাধের অভিযোগবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ ও গণহত্যা, লুণ্ঠন ও বিতাড়িত করার অভিযোগ।[2][3][4]
অপরাধের শাস্তিমৃত্যুদণ্ড
অপরাধীর অবস্থাযুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার বিভাগীয় মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসিতে ঝুলিয়ে)
দাম্পত্য সঙ্গীনুরুন নাহার
সন্তান
পিতা-মাতামৌলবি ইনসান আলী সরকার (পিতা)

২০১১ সালের ৪ই জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, ধর্ষণ ও গণহত্যা, লুণ্ঠন ও বিতাড়িত করার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করে। ২০১৩ সালের ৯ই মে ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। কামারুজ্জামান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন ও বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে মন্তব্য করেন। ১১ই এপ্রিল ২০১৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১০টা ৩১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[10]

প্রারম্ভিক জীবন

কামারুজ্জামানের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ঠা জুলাই শেরপুর জেলা সদরের বাজিতখিলা গ্রামের এক কৃষকের পরিবারে। এ সময় শেরপুর ছিল তদানীন্তন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহুকুমার অন্তর্গত একটি থানা। তার পিতা ছিলেন মৌলভী ইনসান আলী সরকার। কামারুজ্জামানের বেড়ে উঠা শেরপুরেই। শহরের গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। এরপর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। [11]

রাজনীতি ও কর্মজীবন

১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির) ময়মনসিংহ এলাকার সদস্য ছিলেন।[2][12][13][14][15] এছাড়াও তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার আল বদর কমান্ডার ও প্রধান সংগঠক ছিলেন।[2][12][13][14][15][16][17] ১৯৭১ সালের ১৬ই আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের একটি রিপোর্টে লিখা হয়, “পাকিস্তানের ২৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহে আলবদর কর্তৃক একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিলো। আলবদরের প্রধান সংগঠক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একটি স্থানীয় মুসলিম প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন।”[18] কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরেরপ্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি এবং দুই মেয়াদের সভাপতি ছিলেন।[15][19] ১৯৮০-এর দশকে তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলাতে সাংবাদিকতা শুরু করেন[20] এবং পরবর্তিতে পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন[9]। এছাড়াও তিনি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[21]

কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে শেরপুর সদর তথা শেরপুর-১ আসনে ১৯৯১, জুন ১৯৯৬, ২০০১২০০৮-এ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন চারটিতে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন।[22]

যুদ্ধাপরাধ

১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রথম যে আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠে, তার প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বেই ময়মনসিংহ জেলার সকল ছাত্রসংঘকর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[23][24][25][26][27][28][29]

কামারুজ্জামানকে নিম্নলিখিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়[21]:

  • ২৯শে জুন ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর কর্তৃক বদিউজ্জামানকে হত্যা করা হয়।
  • ১৯৭১ এর মে মাসে কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কর্তৃক প্রভাষক আব্দুল হান্নানকে নির্যাতন করা হয়।
  • ২৫শে জুলাই ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামানের পরিকল্পনায় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করে ও নারীদের ধর্ষণ করে।[30][31]
  • ১৯৭১ সালের ২৩শে আগষ্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদররা গোলাম মোস্তফাকে হত্যা করে।
  • যুদ্ধের সময় রমজান মাস চলাকালীন কামারুজ্জামানের উপস্থিতিতে আলবদররা শেরপুরের চকবাজারে আট জনকে হত্যা করে।
  • ১৯৭১ এর নভেম্বরে ময়মনসিংহে দিদার ও অন্যান্যদের উপর নির্যাতন পরিচালনা।
  • কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদররা ২৭শে রমজানে ৫ জনকে হত্যা করে।

মামলা ও বিচার

শেরপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক তার ছেলে বদিউজ্জামানকে হত্যার জন্য কামারুজ্জামানকে দায়ী করে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২ মে বদিউজ্জামানের বড় ভাই হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ১৮ জন আসামির অন্যতম ছিলেন কামারুজ্জামান। মামলাটির নম্বর ২(৫) ৭২ ও জিআর নম্বর ২৫০ (২) ৭২।'[32] ২০১০ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে কামারুজ্জামানকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।[33] ৯ই মে ২০১৩, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেয়।তার বিরুদ্ধে আনীত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং এর মধ্যে ২টি তে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। ২০১৪ সালের ৫ জুন থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ১৭ সেপ্টেম্বর। ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সোহগপুরে গণহত্যার দায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।[5] [30]

তথ্যসূত্র

  1. "Bangladesh hangs Islamist leader Kamaruzzaman for war crimes 'worse than Nazis'"। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৫
  2. Kamaruzzaman to hang - bdnews24.com
  3. 3rd Jamaat leader to hang for war crimes - Times Of India
  4. Bangladesh Islamist sentenced to hang for war genocide - Yahoo! News Singapore
  5. Kamaruzzaman to hang
  6. 3rd Jamaat leader to hang for war crimes - Times Of India
  7. Bangladesh Islamist sentenced to hang for war genocide - Yahoo! News Singapore
  8. "মানবতাবিরোধী অপরাধ : কামারুজ্জামানের মামলার রায় যে কোন দিন (Crimes against humanity: The verdict of Kamaruzzaman's case any day now)"। Amar Desh। ২০১৩-০৪-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৯
  9. "Weekly Sonar Bangla"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৫-০৯
  10. "Bangladesh hangs Islamist leader Kamaruzzaman for war crimes 'worse than Nazis'"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৫
  11. http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/05/130508_an_kamaruzzaman.shtml
  12. Bangladesh Jamaat leader sentenced to death - Central & South Asia - Al Jazeera English
  13. Kamaruzzaman was very young to led any Razakar, Al-Badr and Al-Shams, he was not involved any unlawful activities: witness
  14. Key man of Al-Badr | The Daily Star
  15. Profile of Kamaruzzaman - bdnews24.com
  16. The Daily Sangram, 16 August 1971, Text:http://archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=267005
  17. Ekattorer Ghatok Dalalera ke kothay, Page-111 & 112. Photo on page 111,
  18. Kamaruzzaman was kingpin
  19. Jamaat e Islami Website
  20. "National Press Club cancels membership of Quader Molla, Kamaruzzaman"New Age। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৩
  21. Bangladesh Election Commission (২০১২)। পরিসংখ্যান প্রতিবেদন: ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন (Statistics report: Ninth Jatiya Sangshad Election)
  22. একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র। ১৯৮৭। পৃষ্ঠা ১১১–১১২। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  23. The Daily Sangram, 16 August, 1971, Text:http://archive.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=267005
  24. http://www.aljazeera.com/news/asia/2013/05/2013595575783613.html
  25. http://www.newagebd.com/detail.php?date=2012-08-03&nid=19421#.UY5zx118uo8%5B%5D
  26. http://www.thedailystar.net/beta2/news/key-man-of-al-badr/
  27. http://bdnews24.com/bangladesh/2013/05/09/kamaruzzaman-to-hang
  28. http://bdnews24.com/bangladesh/article623132.bdnews
  29. http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/361882/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B2
  30. http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/337325.html
  31. "List of 1,597 war criminals released : War Crimes Facts Finding Committee to disclose another list soon", Staff Correspondent
  32. দৈনিক প্রথম আলো, "জামায়াতের আরও দুই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার", নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৩-০৭-২০১০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.