আদিত্যপুর গণহত্যা

আদিত্যপুর গণহত্যা বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীর দ্বারা বাংলাদেশের সিলেট জেলার আদিত্যপুর গ্রামে বাঙ্গালী হিন্দুদের উপর সংগঠিত একটি হত্যাকান্ডকে বুঝায়। ১৯৭১ সালের ১৪ই জুন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায়, সিলেট জেলার আদিত্যপুর গ্রামে ৬৩ জন বাঙ্গালী হিন্দুকে হত্যা করে।

আদিত্যপুর গণহত্যা
স্থানআদিত্যপুর, সিলেট, বাংলাদেশ
তারিখ১৪ জুন, ১৯৭১ (ইউটিসি+৬:০০)
লক্ষ্যবাঙ্গালী হিন্দু
হামলার ধরনগণহত্যা
ব্যবহৃত অস্ত্ররাইফেল
নিহত৬৩
হামলাকারী দলপাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার

পটভূমি

আদিত্যপুর গ্রামটি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার বালাগঞ্জ ইউনিয়নের অধীনে ছিল। কুশিয়ারা নদীর তীরে আদিত্যপুর একটি হিন্দু অধ্যুষিত সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল। ১৯৭১ সালে, যখন পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে এবং হিন্দুদের উপর গণহত্যা শুরু করে, তখন হাজার হাজার হিন্দু ভারত পালিয়ে যেতে শুরু করে। বালাগঞ্জে, হিন্দুরা ভারতে শরণার্থী হওয়ার পরিবর্তে থেকে গিয়েছিল।

হত্যাকাণ্ড

১৪ জুন সকালে, প্রায় সূর্যোদয়ের ২ ঘণ্টা পূর্বে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ থেকে ৩০ জন সৈন্যের একটি দল চারটি ট্যাংকে করে আদিত্যপুর গ্রামে এসে পৌঁছায়।[1][2] আধাঘণ্টার ভিতর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পুরো গ্রাম বেষ্টন করে ফেলে, যদিও পুরো গ্রাম তখনো নিদ্রিত অবস্থায় ছিল। তারপর তারা লাউডস্পীকারের সাহায্যে ঘোষণা দেয় যে শান্তি কমিটির স্থানীয় শাখা গঠন করতে এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের ড্যান্ডি কার্ড বিতরণ করতে তারা এসেছে। বন্দুকের গুলির সামনে জোড় করে হিন্দুদের তাদের ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় এবং আদিত্যপুর সরকারি স্কুলের সামনে সমবেত করানো হয়। পঁয়ষট্টি জন লোককে বাধা হয় এবং শুটিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করানো হয়।[1][2]

পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনী স্থানীয় রাজাকার আব্দুল আহাদ চৌধুরীর সাথে আলোচনা করে নেয়। আলোচনা শেষে ক্যাপ্টেন গুলির নির্দেশ দেয়। সৈন্যরা বন্দী হিন্দুদের উপর গুলি চালায়, ৬৩ জন তৎক্ষণাৎ মারা যায়।[1] মৃতের ভাণ করে তাদের মধ্য থেকে দুজন বেঁচে যায়।[2] এরপর রাজাকাররা গ্রামে লুটপাট চালায় এবং পাকিস্তানি হানাদাররা মহিলাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আব্দুল আহাদ চৌধুরীর বাড়িতে একজন মহিলাকে বন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।[1]

পরিণাম

১৭ জুন, যখন লাশের দুর্গন্ধ অসহনীয় হয়ে পড়ে, রাজাকাররা তখন মৃতদেহ গুলোকে কবর দেয়।[2] যাইহোক, ২২শে জুন, এমএজি ওসমানীর নির্দেশে একদল মুক্তিযোদ্ধা মৃতদেহগুলোকে উদ্ধার করে এবং সিলেট নিয়ে আসে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে মৃতদেহগুলোকে গণনা এবং শনাক্ত করা হয় অতঃপর আবার তাদের আদিত্যপুরে নিয়ে আসা হয়। আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সামনে কবর দেওয়া হয়।[1]

তথ্যসূত্র

  1. Mohammad, Tajul (ফেব্রুয়ারি ২০০৫) [1989]। সিলেটে গণহত্যা [Genocide in Sylhet] (Revised 2nd সংস্করণ)। Dhaka: Sahitya Prakash। পৃষ্ঠা 57-59। আইএসবিএন 984-465-416-5।
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" আজ আদিত্যপুর গণহত্যা দিবস [Today is the Day of Adityapura Genocide]Samakal। ১৪ জুন ২০১২। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩টেমপ্লেট:Deadlink

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.