বড়নগর

বড়নগর (বরানগর বা বটনগর নামেও পরিচিত) হল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জের দুই মাইল উত্তরে ভাগীরথী গঙ্গাতীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন শহর, নাটোরের রাণী ভবানীর স্মৃতি ও কীর্তির সঙ্গে জড়িত। এখানকার দেবালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গের দেবালয়ের মধ্যে প্রাচীনতা ও আকার-গড়নের দিক থেকে বিশেষ আকর্ষণীয়।[1]

পুরাকীর্তিসমূহ

নাটোর রাজবংশের গঙ্গাবাস ছিল বড়নগরে; সেইজন্য রানী ভবানী এইখানে গঙ্গাতীরে দেবদেবীদের একাধিক দেবালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পোড়ামাটির কারুকার্য করা মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল চারটি একচালা বাংলা-মন্দির, যা 'চার-বাংলা' নামে খ্যাত; মন্দিরের মধ্যে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। উত্তরদিকের দক্ষিণমুখী মন্দিরের টেরাকোটা বর্তমানে ক্ষতবিক্ষত হলেও এটি নিপুণ কারুশিল্পের নিদর্শন। ভাস্কর্যের মধ্যে রামলীলাকৃষ্ণলীলার দৃশ্য বেশি, মধ্যে মধ্যে শিকার ও শোভাযাত্রার দৃশ্য আছে; তিনটি তোরণের উপরে অসুরনাশিনী চণ্ডী, রাম-রাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণের কংসবধ প্রভৃতি দৃশ্য আছে। এতে কালী, চণ্ডী ও অন্যান্য দেবদেবী ছাড়াও যোগাসনে উপবিষ্ট বেশ বড় শিবমূর্তি আছে। পশ্চিমদিকের মন্দিরে লঙ্কাযুদ্ধ ও দেবীযুদ্ধের দৃশ্যসম্বলিত টেরাকোটার কাজ আছে; আরেকটি মন্দিরের গায়ের প্যানেলগুলি প্লাস্টার দিয়ে ভরাট করে খুব সূক্ষ্মরেখায় চিত্র খোদাই করা আছে। দক্ষিণদিকের মন্দিরে বিশেষ কারুকার্য নেই।[1]

চার-বাংলা মন্দিরের পাশে টেরাকোটার কাজ যুক্ত চারটি অষ্টকোণ শিবমন্দির আছে, মন্দিরের চূড়াগুলি উল্টানো পদ্মফুলের মতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দিরটি ভবানীশ্বর শিবের। গোপাল মন্দির ও দোলমঞ্চ পাশ্চাত্যরীতিতে স্তম্ভের উপর তৈরি। এর কিছুটা দূরে, রানী ভবানীর গুরুবংশের মঠবাড়িতে কয়েকটি কালীমন্দির ও শিবমন্দির আছে। এখানে গঙ্গেশ্বর শিবের জোড়বাংলা মন্দিরের পোড়ামাটির ভাস্কর্য বেশ চিত্তাকর্ষক। মঠবাড়ির উত্তরে সন্ন্যাসী ব্রহ্মানন্দ প্রতিষ্ঠিত দয়াময়ী কালীর মন্দিরটি প্রায় পরিত্যক্ত। এখানকার কালীমূর্তি ও অষ্টভূজ গণেশমূর্তি চুরি হয়ে গেলেও রাজরাজেশ্বর মূর্তিটি চুরি হওয়ার পর পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। রানী ভবানীর দত্তকপুত্র সাধক রামকৃষ্ণের পঞ্চমুণ্ডের আসনের স্থানটি এখানে বর্তমান।[1]

খানিকটা উত্তরদিকে, কিছুটা পরিত্যক্ত অবস্থায়, বড়নগরের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির চারচালা গঠনের রামেশ্বর মন্দির (স্থাপিত ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দ) অবস্থিত। এর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যগুলি কৃষ্ণলীলা, রামলীলা, দশাবতার, সপ্তমাতৃকা, নন্দীপৃষ্ঠে শিব, গরুড়পৃষ্ঠে বিষ্ণু, সপরিবারে দুর্গা ইত্যাদি ধরনের। চার-বাংলা মন্দিরের দক্ষিণে আঞ্চলিক লোকদেবতা পঞ্চাননরূপী শিবের আলাদা একটি এক-বাংলা মন্দির বর্তমান।[1]

তথ্যসূত্র

  1. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৪

২. পর্যটনে মুর্শিদাবাদ : দীননাথ মণ্ডল, অণিমা প্রকাশনী, কলকাতা।।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.