গুপ্তিপাড়া

গুপ্তিপাড়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলার একটি প্রাচীন জনপদ। এই জায়গাটি চুঁচুড়া সদর মহকুমা ও বলাগড় থানার অধীন। গুপ্তিপাড়া ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত। ১৭৭৯ সালের রেনেলের মানচিত্রে দেখা যায় পার্শ্ববর্তী বেহুলা নদী গুপ্তিপাড়ার পাশ দিয়ে ভাগিরথী বা গঙ্গায় পড়েছে।

গুপ্তিপাড়া
গ্রাম
স্থানাঙ্ক: ২৩.১১° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব / 23.11; 88.25
Country ভারত
Stateপশ্চিমবঙ্গ
Districtহুগলী জেলা
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট২,১৬৯
Languages
  Officialবাংলা, ইংরেজী
সময় অঞ্চলIST (ইউটিসি+5:30)
লোকসভা কেন্দ্রহুগলী লোকসভা কেন্দ্র
বিধানসভা কেন্দ্রবলাগড় বিধানসভা

ইতিহাস

বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির, গুপ্তিপাড়া

বাংলার প্রথম বারোয়ারি পুজার প্রচলন হয় গুপ্তিপাড়ায়। এটি বিন্ধ্যবাসিনী জগদ্ধাত্রী পুজা নামে প্রচলিত।[1] ১৭৬০ সালে (মতান্তরে ১৭৯০) কয়েকজন ব্যক্তি স্থানীয় সেন রাজাদের প্রচলিত দুর্গাপুজায় অংশ নেননি এবং নিজেরাই পুজা করার মনস্থির করেন। বারোজন ব্যক্তি মিলে প্রতিষ্ঠা করেন বিন্ধ্যবাসিনী বারোয়ারী পুজা। এখানে প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে নানা টোল গড়ে উঠেছিল। সংস্কৃত ভাষার শিক্ষাবিদ, টোলের পন্ডিতেরা বসবাস কর‍তে থাকেন গুপ্তিপাড়ায়। এই সংক্রান্ত বহু পুঁথি স্থানীয় সরকারী গ্রন্থাগার 'শিশির বানী মন্দির পাঠাগারে' সংরক্ষিত আছে।

গুপ্তিপাড়ার রথ

গুপ্তিপাড়ার প্রধান ও বিখ্যাত উৎসব হল দোল ও রথযাত্রা। ২৭৯ বছরের প্রাচীন বৃন্দাবনচন্দ্রের রথযাত্রা শুরু হয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে। বৃন্দাবন মঠের সামনে থেকে বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ এক মাইল পথের দু’ ধারে মেলা বসে। উল্টোরথের আগের দিন ‘ভাণ্ডারলুট’ উৎসব ধুমধামের সাথে পালিত হয় এখানে। প্রথা অনুযায়ী ভোগ নিবেদন করার পর ভক্তরা ভোগ লুট করে নেন। বাংলার ঐতিহ্যশালী ও বড় রথগুলির মধ্যে গুপ্তিপাড়ার রথ অন্যতম। পূর্বভারতের নানা অঞ্চল থেকে রথের রশি টানার জন্যে মানুষ আসেন।[2]

বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের মন্দিরসমূহ

বৃন্দাবনচন্দ্র মঠে রয়েছে ৪টি বৈষ্ণব মন্দির। বৃন্দাবনচন্দ্র, চৈতন্য, রামচন্দ্র এবং কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির। রামচন্দ্র মন্দিরে বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের নিদর্শন আছে। এই চার মন্দিরের সমষ্টিকে বলা হয় গুপ্তিপাড়ার মঠ।[3] গুপ্তিপাড়া ও পার্শ্ববর্তী কালনা বৈষ্ণব সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত।[1][4]

বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির
রামচন্দ্র মন্দির

এছাড়া বৃন্দাবনমঠের নিকট প্রাচীন দেশকালী মাতার মন্দির আছে। দেশকালীমাতা গুপ্তিপাড়ার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কালীপূজার দিন নতুন মাটির মূর্তি এনে পুজো করা হয়। পরের শুক্লা দ্বিতীয়ার দিন মূর্তির কেশ, কাঁকন, কেউর, কপোল প্রভৃতি কেটে নিয়ে বাকি মূর্তি গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। খণ্ডিত অংশগুলো একটা আধারে রেখে সারা বছর তান্ত্রিক মতে পূজা করা হয়। এই মন্দিরে আধার ছাড়া কোনো দেবীমূর্তি নেই।

গুপ্তিপাড়ায় রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গীত শিক্ষাগুরু ‘কালী মির্জা’র জন্ম। এছাড়া বিখ্যাত কবিয়াল ভোলা ময়রা, বিজ্ঞানী ইন্দুমাধব মল্লিক ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মোহন লালের জন্মস্থান হিসেবেও স্বীকৃত।[5] বাংলার মিষ্টান্ন গুঁপো সন্দেশ উদ্ভব হয় গুপ্তিপাড়াতে।

যোগাযোগ

গুপ্তিপাড়ার দূরত্ব হাওড়া থেকে রেলপথে ৭৫ কিলোমিটার ও ব্যান্ডেল থেকে ৩৫ কিলোমিটার। গুপ্তিপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটি ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইন রেলপথের ওপর অবস্থিত। আসাম রোড দ্বারা সড়কপথে এই জায়গাটি জেলা শহর ও রাজ্য রাজধানী কলকাতার সাথে যুক্ত। বর্ধমান, তারকেশ্বর, চুঁচুড়ার সাথে গুপ্তিপাড়ার বাস যোগাযোগ আছে। গঙ্গার অপর তীরে নদিয়া জেলাশান্তিপুরের সাথে জলপথে যোগাযোগ আছে।

প্রশাসন

গুপ্তিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত তিনটি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। এটি হুগলী জেলার সদর মহকুমা চুঁচুড়ার, বলাগড় থানার অধীন একটি গ্রাম পঞ্চায়েত।

শিক্ষা

সরোজমোহন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি

এখানে দুটি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যথা গুপ্তিপাড়া হাই স্কুল (প্রতিষ্ঠা ১৮৯০) ও গুপ্তিপাড়া গার্লস হাই স্কুল(প্রতিষ্ঠা ১৯৫১) আছে। এছাড়া এ অঞ্চলে একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে সরোজমোহন ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি নামক একটি কারিগরি মহাবিদ্যালয় আছে।

তথ্যসূত্র

  1. গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ জুলাই ২০১৫)। "প্রথম বারোয়ারি পুজোর পত্তন এ শহরেই"anandabazar.com। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৭
  2. "গুপ্তিপাড়া"। বিকাশপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৭
  3. "Hugli Temples (322)"aishee.org। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৭
  4. "Next weekend you can be at Guptipara"telegraphindia.com। দি টেলিগ্রাফ। ২৬ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৭
  5. অমলেন্দু দে (২০১২)। সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে। কলকাতা: পারুল প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪৯। আইএসবিএন 9789382300472।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.