বোড়াল

বোড়াল হল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ কলকাতার একটি পুরাতাত্ত্বিক স্থান। অধুনালুপ্ত প্রাচীন ভাগীরথী বা 'আদিগঙ্গা'র তীরে অবস্থিত বোড়াল গ্রাম একসময় (পাল ও সেন যুগে) সমৃদ্ধশালী বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল। নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গঙ্গার প্রবাহপথ পরিবর্তিত হলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার অন্যান্য গ্রামের মতো বোড়ালও সুন্দরবনের উত্তরপ্রান্তের জঙ্গলের মধ্যে সমাধিস্থ হয়। গঙ্গার লুপ্ত খাতের ধারে বোড়ালের পথে প্রাচীন দেবালয় ও গঙ্গার ঘাট কিছুদিন আগেও বনাকীর্ণ অবস্থায় দেখা যেত।[1] সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবির চিত্রগ্রহণ হওয়ার পরে বোড়াল গ্রাম অধিক পরিচিতি পায়।

পুরাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য

অতীতে প্রাচীন ভাগীরথী বা 'আদিগঙ্গা' (বর্তমান 'টালির নালা' খাল) খিদিরপুর হয়ে গড়িয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বেঁকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত গিয়ে, সেখান থেকে বর্তমান মুড়িগঙ্গার ধারা ধরে এগিয়ে ধবলাট ও মনসার দ্বীপের মধ্য দিয়ে প্রথমে পশ্চিমে, পরে দক্ষিণমুখী হয়ে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হত৷ গঙ্গার তীরবর্তী অন্যান্য গ্রামের মতো বর্ধিষ্ণু বোড়ালও গঙ্গার প্রবাহপথ পরিবর্তিত হলে ক্রমে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
পরবর্তীকালে, দীঘি ও পুকুর কাটার সময় বোড়াল কয়েকটি পাথরের বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া যায়; মূর্তির স্থূলত্ব দেখে এগুলিকে একাদশ-দ্বাদশ শতকেরও প্রাচীন (সম্ভবত পাল যুগের) বলে অনুমান করা হয়। বোড়ালের সুবৃহৎ সেনদীঘি (প্রায় ৪২ বিঘা বিস্তৃত), দক্ষিণের গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে প্রাপ্ত সেনরাজা লক্ষ্মণসেনের তাম্রপট্টলিপি এবং মাটি খুঁড়ে পাওয়া অন্যান্য নিদর্শন বোড়ালকে সেন আমলের একটি বর্ধিষ্ণু সভ্যতাকেন্দ্র হিসাবে ইঙ্গিত করে।[1]

ঐতিহাসিক নিদর্শন

বোড়ালের গ্রাম্য দেবদেবীর মধ্যে সর্বপ্রধান হলেন 'ত্রিপুরাসুন্দরী'। ধাতুময়ী মূর্তির পাদপীঠে পঞ্চদেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ঈশ্বর ও রুদ্ধের মূর্তি উৎকীর্ণ; তার উপর শিব শবরূপে শয়ান এবং শিবের নাভিপদ্মস্থিত পদ্মের উপর চতুর্ভূজা ত্রিনয়না ত্রিপুরাসুন্দরীর মূর্তি অধিষ্ঠিত। বোড়ালে 'বাবাঠাকুর' (ভিন্ননামে ধর্মঠাকুর) নামে দুটি দেববিগ্রহ আছে; একটি সেনদীঘির পূর্বকোণে (ত্রিপুরাসুন্দরীর ভৈরব হিসাবে পূজিত) এবং অপরটি সরলদীঘির কোণে। দেবীর অপরপ্রান্তে আছেন 'ককাই চণ্ডী'। আগে 'ডর মাকাল' (ডর মহাকাল) নামে এক দেবতার পূজার বহুল প্রচলন ছিল। বাবাঠাকুরের মূর্তি গড়ে পূজা এখনও সাধারণ লোকায়ত স্তরে প্রচলিত।[1]

তথ্যসূত্র

  1. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ২২৮-২৩০
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.