নারী (বই)

নারী বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং প্রগতিবাদী লেখক হুমায়ুন আজাদের একটি নারীবাদী রচনা।[1] এটি সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে ঢাকার একুশে বইমেলাতে নদী প্রকাশনী দ্বারা প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করতে থাকে। বাংলা ভাষায় নারীবাদের সূচনা হয় বেগম রোকেয়ার হাতে যদিও সেটি ছিলো অবিভক্ত ভারতীয় বঙ্গে, আর হুমায়ুন আজাদের লেখা এই বইটিই হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ বিষয়ক প্রথম বই।[2]

নারী
নারী গ্রন্থের প্রচ্ছদ
লেখকহুমায়ুন আজাদ
মূল শিরোনামনারী
প্রচ্ছদ শিল্পীউত্তম সেন
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
বিষয়নারীবাদ
ধরনপ্রবন্ধ
প্রকাশকআগামী প্রকাশনী
প্রকাশনার তারিখ
১৯৯২
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত গ্রন্থ
পৃষ্ঠাসংখ্যা৪০৮ (তৃতীয় সংস্করণ)
আইএসবিএন৯৭৮-৯৮৪-০৪-০০৭৭-৫
পূর্ববর্তী বইভাষা-আন্দোলন: সাহিত্যিক পটভূমি 
পরবর্তী বইপ্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে 

নারী বইটিতে সর্বমোট ৪০৮ টি পৃষ্ঠা রয়েছে এবং অধ্যায় আছে ২১ টি (নারীবাদ ও নারীবাদের কালপঞ্জি, রচনাপঞ্জি এবং নির্ঘন্ট সহ ২৪টি)।

মূল বিষয়

এ বইটি মূলত বিভিন্ন বিদেশী বই এর ওপর ভিত্তি করে লেখা যা বইটির অবতরণিকাতেই উল্লেখিত। বইটিতে পুরুষতন্ত্রবাদ এবং হিন্দু, ইহুদী, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান দ্বারা নারী কিভাবে শোষিত হয় তার কথা বলা হয়েছে। বইটির প্রথম অধ্যায় শুরু হয় ফরাসী লেখিকা সিমোন দ্য বোভোয়ারের বিখ্যাত উক্তি 'কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, ক্রমশ নারী হয়ে ওঠে' দিয়ে। বিভিন্ন অধ্যায়ে অনেক খ্যাতিমান মানুষ যেমন মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিশিষ্ট সাহিত্যিক বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ফরাসী দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশো সহ অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সমালোচনা করা হয়েছে।

অধ্যায়সমূহ

এই বইয়ের অধ্যায়গুলো হলোঃ

  1. নারী ও তার বিধাতাঃ পুরুষ - এ অধ্যায়তে বোঝানো হয়েছে যে, পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় এবং সমাজে পুরুষেরা বিধাতার সমান।
  2. লৈঙ্গিক রাজনীতি - এই অধ্যায়তে বলা হয়েছে যে, পুরুষেরা যৌনতার ক্ষেত্রেও রাজনীতি করে।
  3. দেবী ও দানবী - পুরুষতন্ত্র নারীদেরকে একভাবে দেবী'র স্থান দেয় আবার দানবীও করে তোলে।
  4. নারীজাতির ঐতিহাসিক মহাপরাজয় - প্রাচীন সভ্যতায় নারীদের অবস্থানের বিষয় এখানে বর্ণিত হয়েছে।
  5. পিতৃতন্ত্রের খড়গঃ আইন বা বিধিবিধান - মুসলিম এবং হিন্দু পিতৃতন্ত্র নারীদের ওপর কিভাবে খড়গ নামায় তার কথা বলা হয়েছ।
  6. নারীর শত্রুমিত্রঃ রুশো, রাসকিন, রবীন্দ্রনাথ এবং জন স্টুয়ার্ট মিল - ফরাসী দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশো, ইংরেজ সমাজপতি জন রাসকিন এবং বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সমালোচনা করা হয়েছে এঁদের পুরুষতান্ত্রিক মন-মানসিকতার কারণে এবং ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিলের পক্ষে কথা বলা হয়েছে তার নারী-অধিকার বিষয়ক লেখনীর জন্যে।
  7. ফ্রয়েডীয় কুসংস্কার, ও মনোবিশ্লেষাণাত্মক-সমাজবৈজ্ঞানিক প্রতিক্রিয়াশীলতা - প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড নারীদেরকে কোন দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখতেন তা এই অধ্যায়তে লিখিত হয়েছে।
  8. নারী, তার লিঙ্গ ও শরীর - নারীদের শরীর যে নিষিদ্ধ কোনো জিনিস নয় তা এখানে বোঝানো হয়েছে।
  9. বালিকা - এই অধ্যায়ে বালিকার বেড়ে ওঠার বর্ণনা রয়েছে।
  10. কিশোরীতরুণাঁ - কিশোরীদের জীবন কোথায় কেমন তা বলা হয়েছে।
  11. নষ্টনীড় - নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
  12. প্রেম ও কাম - প্রেম এবং যৌনতার ক্ষেত্রেও যে পুরুষেরা আধিপত্য বজায় রাখে এটা বলা হয়েছে।
  13. বিয়ে ও সংসার - পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় বিয়ে নারীদের জন্য যে একটি পেশা এবং এতে নারীরা যেয়ে একটি পুরুষের সঙ্গে সংসার করে তাদের জীবন অবিকশিত করে দেয় তা বোঝানো হয়েছে।
  14. ধর্ষণ - পিতৃতান্ত্রিক সভ্যতায় নারী ধর্ষণ যে একটি সাধারণ বিষয় সেটা বোঝানো হয়েছে।
  15. মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্টঃ অগ্নিশিখা ও অশ্রুবিন্দু - প্রখ্যাত ইংরেজ নারীবাদী ম্যারি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট এর সংক্ষিপ্ত জীবন কাহিনী এই অধ্যায়ের মূল বিষয়।
  16. রামমোহন ও বিদ্যাসাগরঃ প্রাণদাতা ও জীবনদাতা - ব্রিটিশ আমলের দু'জন বাঙালি রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রশংসা করা হয়েছে, রামমোহন সতীদাহ প্রথা বাতিলের পক্ষে ছিলেন আর ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন বিধবা-বিবাহ প্রচলনের পক্ষে।
  17. পুরুষতন্ত্র ও রোকেয়ার নারীবাদ - বাংলাদেশ ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণকারী প্রথম পুরোদস্তুর নারী-অধিকারবাদী লেখিকা ছিলেন রোকেয়া, এই অধ্যায়তে তার সম্বন্ধে কিছু তথ্য আছে।
  18. বঙ্গীয় ভদ্রমহিলাঃ উন্নত জাতের নারী উৎপাদন - উনিশ শতকের বাংলার সমাজে নারীরা কিরকম জীবন-যাপন করতো তার বর্ণনা এই অধ্যায়ের বিষয়।
  19. নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্ব ও সমালোচনা - নারীবাদী বিদেশী সাহিত্যের মূল্যায়ন-অবমূল্যায়ন রয়েছে এই অধ্যায়ে।
  20. নারীদের নারীরাঃ নারীদের উপন্যাসে নারীভাবমূর্তি - নারীকেন্দ্রিক বাংলা উপন্যাসে নারীকে কিভাবে উপস্থাপন করা হয় বা হয়েছে সেটা এই অধ্যায়ের বিষয়।
  21. নারীর ভবিষ্যৎ - নারীর ভবিষ্যৎ কিরূপ হওয়া উচিৎ বা হবে তার কিছুটা রূপরেখা দেওয়া হয়েছে এখানে।

নিষিদ্ধকরণ

হুমায়ুন আজাদ রচিত এই বইটি ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করে। তারপর থেকে বইটি পুনরায় প্রকাশিত হতে থাকে 'আগামী প্রকাশনী' সংস্থা থেকে।[3]

আরও দেখুন

  • হুমায়ুন আজাদের গ্রন্থতালিকা

তথ্যসূত্র

  1. মৌলি আজাদ (২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬)। "হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা ও বইমেলা"ntvbd.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৭
  2. মৌলি আজাদ (১৬ জুলাই ২০১৫)। "আমার বাবা হুমায়ুন আজাদ"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৭
  3. মৌলি আজাদ (১২ আগস্ট ২০১৫)। "হুমায়ুন আজাদ, ভেতর-বাহিরে"ntvbd.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.