চলন বিল
চলন বিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল। এটি রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, এবং পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সাতচল্লিশটি নদী ও অন্যান্য জলপথ চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়।[1] বিলটিতে পলিমাটি জমে, এর আকার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।[2]
চলন বিল | |
---|---|
![]() নাটোরের চলন বিল | |
অবস্থান | রাজশাহী |
স্থানাঙ্ক | ২৪.৫২° উত্তর ৮৯.২২° পূর্ব |
ধরন | বৃহৎ বিল |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | আত্রাই সহ আরও ৪৬টি নদনদী[1] |
অববাহিকার দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ২৬ বর্গকিলোমিটার (১০ বর্গমাইল) |
গড় গভীরতা | ২ মিটার (৬.৬ ফুট) |
সর্বাধিক গভীরতা | ৪ মিটার (১৩ ফুট) |
বিস্তৃতি
রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলা, আটটি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে এর বিস্তৃতি।[3]
গঠন


চলন বিলের গঠন ঐতিহাসিকভাবেই আত্রাই ও বড়াল নদীর সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আত্রাই নদী ছিল চলন বিলের প্রধান যোগান দানকারী প্রণালী যা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার উত্তরাংশ ও দিনাজপুর এলাকার জল নিষ্কাশন করত। বড়াল চলন বিল থেকে জল নির্গম পথ হিসেবে কাজ করে এবং বিলের পানি বহন করে যমুনা নদীতে ফেলে। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।
আয়তন
গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে। চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার।[4] আবার কোন জরিপ মতে চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ কিলোমিটার।[5] বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ বর্গ কিলেমিটারে।
বিলসমূহ
আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। চলন বিল গঠনকারী ছোট ছোট বিলগুলি পশ্চিম থেকে পূর্বে যথাক্রমে:
- পূর্ব মধ্যনগর
- পিপরুল
- ডাঙাপাড়া
- লারোর
- তাজপুর
- নিয়ালা
- চলন
- মাঝগাঁও
- ব্রিয়াশো
- চোনমোহন
- শাতাইল
- খরদহ
- দারিকুশি
- কাজীপাড়া
- গজনা
- বড়বিল
- সোনাপাতিলা
- ঘুঘুদহ
- কুরলিয়া
- চিরল
- দিক্ষিবিল এবং
- গুরকা
বড় আকারের বিলগুলির বেশিরভাগই পাবনা জেলায় অবস্থিত, যেমন- গজনা বিল, বড়বিল, সোনাপাতিলা বিল, ঘুঘুদহ, চিরল বিল এবং গুরকা বিল। গজনা বিল দুলাই-এর দক্ষিণে ১২৩ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বড়বিলের আয়তন ৩১ বর্গ কিমি। প্রায় ৩৫ বর্গ কিমি আয়তনের সোনাপাতিলা বিল পাবনা জেলার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থিত। চাটমোহর উপজেলায় কুরলিয়া ও দিক্ষিবিল দুটি যথাক্রমে ১৮ ও ১৫ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। চিরল ও গুরকা বিল- উভয়েরই আয়তন ৮ বর্গ কিমি এবং ঘুঘুদহ ৪ বর্গ কিমি।
গ্যালারি
ক্ষতিকর প্রভাব
চলন বিল বেশ দ্রুত ভরাট হয়ে আসছে। জমি পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং বিলের ধার দিয়ে গড়ে উঠছে গ্রাম। কেবল কেন্দ্রের গভীরতম অংশটুকু ছাড়া শুকনো মৌসুমে সমস্ত ছোট-বড় বিল শুকিয়ে যায়। [6]
তথ্যসূত্র
- Srinivasan, Roopa; Tiwari, Manish; Silas, Sandeep (২০০৬)। Our Indian Railway: Themes in India's Railway History। New Delhi: Foundation Books। আইএসবিএন 81-7596-330-1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৯।
- মোহা. শামসুল আলম ও মোঃ সাজ্জাদ হোসেন (২০১২)। "চলন বিল"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওসিএলসি 883871743।
- Nishat, Ainun; Huq, S. M. Inamul; Barua, Shuvasish P.; Reza, Ali A. H. M.; Khan, A. S. Monirazzaman, সম্পাদকগণ (২০০২)। Bio-ecological zones of Bangladesh। International Union for Conservation of Nature Bangladesh Country Office। আইএসবিএন 978-984-31-1090-9। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৯।
- ১৯১৯ সালে ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া
- ১৯৬৮ সালের জরিপ
- "চলন বিল"। বাংলা পিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিভ্রমণে চলন বিল সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে চলন বিল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |