কল্পতরু উৎসব

কল্পতরু উৎসব হল একটি হিন্দু উৎসব। রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসীবৃন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশনের গৃহস্থরা এই উৎসব পালন করেন। বিশ্বব্যাপী বেদান্ত সোসাইটিগুলিতেও এই উৎসব পালিত হয়।

রামকৃষ্ণ পরমহংস
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি

১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই উৎসব শুরু হয়েছিল। এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর অনুগামীদের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব পালিত হলেও কাশীপুর উদ্যানবাটীতে (বর্তমানে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখাকেন্দ্র) এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানেই রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবনের শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের অনুগামীরা এই উৎসবকে "ঠাকুরের বিশেষ উৎসব"গুলির অন্যতম উৎসব হিসেবে গণ্য করেন।[1]

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও এই উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। সারা দেশ থেকে রামকৃষ্ণ-অনুগামী তীর্থযাত্রীরা এই দিন দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে পূজা দিতে আসেন।[2] ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি পূর্ব রেল দক্ষিণেশ্বরের তীর্থযাত্রীদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল।[3] এই উপলক্ষে দরিদ্রদের দাতব্য চিকিৎসা ও কম্বল বিতরণের আয়োজন করা হয়।

উৎস

১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম কল্পতরু উৎসবের দিনটি রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর অনুগামীদের জীবনে ছিল এক “অভূতপূর্ব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।” [4] রামকৃষ্ণ পরমহংস সেই সময় দুরারোগ্য গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থারও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলের একটি বাগানবাড়িতে চিকিৎসার সুবিধার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি একটু সুস্থ বোধ করায় তিনি বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর অনুগামী নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার কী মনে হয়, আমি কে?” [4] গিরিশচন্দ্র বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে রামকৃষ্ণ পরমহংস “মানবকল্যাণের জন্য মর্ত্যে অবতীর্ণ ঈশ্বরের অবতার।” [4] রামকৃষ্ণ পরমহংস বলে, “আমি আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক।”[4] এরপর তিনি সমাধিস্থ হয়ে তাঁর প্রত্যেক শিষ্যকে স্পর্শ করেন। রামকৃষ্ণ-অনুগামীদের মতে, তাঁর স্পর্শে সেদিন প্রত্যেকের অদ্ভুত কিছু আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, সেই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংস হিন্দু পুরাণে বর্ণিত কল্পতরুতে পরিণত হয়েছিলেন।[4] তিনিই এই দিনটিকে কল্পতরু দিবস নাম দিয়েছিলেন, যা পরে কল্পতরু উৎসব নামে পরিণত হয়েছিল।[5] উল্লেখ্য, এই দিন রামকৃষ্ণ পরমহংসের গৃহস্থ শিষ্যরাই তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যেরা সেই দিন তাঁর কাছে ছিলেন না।

পাদটীকা

  1. Sri Ramakrishna, the Great Master। Swami Saradananda।
  2. "Kolkatans start new year with prayers and picnics"। BombayNews.net Mumbai। জানুয়ারি ১, ২০১০। ৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২, ২০১১
  3. "Special trains"The Telegraph। Calcutta, India। ডিসেম্বর ২৫, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২, ২০১১
  4. Kripal, Jeffrey John (১৯৯৮)। Kālī's child: the mystical and the erotic in the life and teachings of Ramakrishna (2nd সংস্করণ)। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 258–261। আইএসবিএন 978-0-226-45377-4।
  5. Balakrishnan, S. (ডিসেম্বর ৩১, ২০০১)। "The spiritual significance: On January 1, 1886, Ramakrishna Paramahamsa experienced divine bliss. That day is celebrated as "Kalpataru Day" by his followers."The HinduChennai। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩, ২০১১

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.