এরিস্টটল

এরিস্টটল (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Ἀριστοτέλης আরিস্তোতেল্যাস্‌) (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ – ৭ই মার্চ, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২) বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানীদার্শনিক। তাকে প্রাণীবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। এছাড়া প্লেটোর সাথে যৌথভাবে তাকে "পশ্চিমা দর্শনের জনক" বলে অভিহিত করা হয়। এরিস্টটল সক্রেটিস ও প্লেটোর দর্শনসহ তার পূর্বের সময়ের বিদ্যমান বিভিন্ন দর্শনের জটিল ও সদৃশ সমন্বয় দেখান।

এরিস্টটল (Ἀριστοτέλης)
যুগপ্রাচীন দর্শন
অঞ্চলপশ্চিমা দর্শন
ধারাপেরিপ্যাটেটিক দার্শনিক ধারাকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং এরিস্টটলবাদ এর জন্ম দেন
আগ্রহরাজনীতি, অধিবিদ্যা, বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা
অবদানগোল্ডেন ম্যান, কারণ, যুক্তি, জীববিজ্ঞান, অনুরাগ

এরিস্টটলের জীবনী সম্পর্কে অল্পই জানা গেছে। তার শৈশবেই তার পিতা নিকোমেকাস মারা যাওয়ার পর তার অভিভাবক প্রোক্সেনাস তাকে লালন পালন করেন। ১৭ বা ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্সে প্লেটোর একাডেমিতে যোগ দেন এবং ৩৭ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তার লেখনীতে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, নন্দনতত্ত্ব, কবিতা, মঞ্চনাটক, সঙ্গীত, মনোবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতিসরকার নিয়ে আলোচনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে পশ্চিমা দর্শনের প্রথম বুদ্ধিভিত্তিক ব্যবস্থা গঠিত। প্লেটোর মৃত্যুর কিছুদিন পর এরিস্টটল এথেন্স ত্যাগ করেন এবং মেসিডোনের দ্বিতীয় ফিলিপের অনুরোধে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৩ অব্দ থেকে মহান আলেকজান্ডারকে শিক্ষাদান শুরু করেন। আলেকজান্ডারকে শিক্ষাদান করতে গিয়ে এরিস্টটল অনেক সুবিধা লাভ করেন। তিনি লাইসিয়ামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্যাপিরাস স্ক্রলে অনেকগুলো বই রচনা করেন।

জন্ম

অ্যারিস্টটল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ সালে থারেস উপকূলবর্তী স্টাগিরাস নামক এক গ্রিক উপনিবেশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নিকোম্যাকাস ম্যাসিডোনিয়ার রাজা আমিন্টাসের রাজসভায় গৃহচিকিৎসক ছিলেন। এ চিকিৎসা ব্যবসায়ই তাদের পরিবারিক জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায় ছিল। তার পিতার প্রেরণায় তিনি ডাক্তার হবার চেষ্টা করেছিলেন।[1] জীবনের শুরু থেকেই মেসিডোনিয়ার রাজসভার সাথে সম্পর্ক থাকা, তার ভবিষ্যৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

জীবনী

শৈশবে তার বাবা মারা যান, এবং ১৭ বছর বয়সে তার অভিভাবক প্রোক্সেনাস তাকে এথেন্সে জ্ঞানার্জনে পাঠিয়ে দেন। এথেন্স তখন বিশ্বে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হত। সেখানে তিনি প্লেটোর একাডেমিতে সরাসরি প্লেটোর অধীনে প্রায় বিশ বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন। একসময় প্লেটো ও তার একাডেমিতে থাকাকালেই তিনি নিজেই ভাষাতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৭ সালে প্লেটোর মৃত্যুর পর অ্যারিস্টটলই একাডেমির প্রধান হবার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু প্লেটোর দর্শনের সাথে অ্যারিস্টটলের নিজের দর্শনের দূরত্বের দরুন প্লেটোর আত্মীয় স্পিউসিপ্পাসকেই একাডেমির প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এরপর অ্যাটারনিয়াস এর শাসক হারমিয়াসের আমন্ত্রণে অ্যারিস্টটল সেখানে যান। তিনি সেখানে তিন বছর থাকেন এবং রাজার ভগ্নি পিথিয়াসকে বিয়ে করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি আর একজন নারী হারপিলিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের এক ছেলে সন্তান জন্ম হয় যার নাম রাখা হয় নিকোম্যাকাস। তিন বছর সেখানে থাকার পর অ্যাটারনিয়াস পারস্য সম্রাট দখল করে নেয় এবং অ্যারিস্টটল মাইটিলেনি চলে যান। পরবর্তী পাঁচ বছর অ্যারিস্টটল মেসিডোনিয়া র রাজা ফিলিপের ১৩ বছরের ছেলে আলেকজান্ডারের (পরবর্তীকালে যিনি বিশ্ব জয় করেন)শিক্ষকতা করেন। রাজা ফিলিপ এবং আলেকজান্ডার উভয়েই অ্যারিস্টটলকে পরম শ্রদ্ধা করতেন।

ফিলিপের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং অ্যারিস্টটল এথেন্স ফিরে যান। প্লেটোর মৃত্যুর পর তিনি এবারই প্রথম এথেন্স আসেন। এথেন্সে এসে তিনি দেখলেন প্লেটোর একাডেমিতে প্লেটোনিজমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং এথেন্সে এখন প্লেটোনিজমের প্রধান দর্শন। ফলে, তিনি লাইসিয়াম নামক এলাকায় নিজের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী তের বছর তিনি শিক্ষকতা ও তার দর্শন প্রচার করে কাটান। তিনি দিনে তার ঘনিষ্ঠ ছাত্রদের জন্য ও রাতে এথেন্সের সাধারণ জ্ঞানপিপাসু জনগণের জন্য লেকচার দিতেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩-এ আলেকজান্ডারের অকাল মৃত্যুতে এথেন্সের মেসিডোনিয়া পূর্ব সরকারকে উৎখাত করা হয়। তখন অ্যারিস্টটলের উপর ধর্মীয় বিশ্বাসহানিতার অভিযোগ আনা হয়। শাস্তি থেকে রক্ষা পাবার জন্য দ্রুত ইউবোয়ার ক্যালসিসে চলে যান। তিনি ভয় করছিলেন তার অবস্থাও যেন প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিসের মতো না হয়। ক্যালসিসে প্রথম বছরই তিনি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ সালে মৃত্যু বরণ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. মো. আবদুল ওদুদ (দ্বিতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ২০১৪)। রাষ্ট্রদর্শন। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ২৩, ৯৩। আইএসবিএন 978-98-43300-90-4। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.