দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত একটি সৌধ। এটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার গোর-এ-শহীদ বড়ময়দান-এ অবস্থিত এবং প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে এখানে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।[1]

দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সাধারণ তথ্য
অবস্থাসম্পূর্ণ
ধরনশহীদ মিনার
স্থাপত্য রীতিআধুনিক
অবস্থানদিনাজপুর, বাংলাদেশ
ঠিকানাগোর-এ-শহীদ বড়ময়দান, দিনাজপুর

ইতিহাস

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি হয় ১৯৫৬ সালের দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (এসএন কলেজ) চত্বরে। বর্তমানে যার পরিচিতি দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজ হিসেবে। এসএন কলেজের ছাত্র সংসদের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক ছাত্র নেতা মোঃ ফরহাদ (পরবর্তীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে নির্মিত হয় সেই শহীদ মিনার। দ্বিতীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয় দিনাজপুর সরকারী ডিগ্রি কলেজ চত্বরে (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) ১৯৬৩ সালে। এই শহীদ মিনার নির্মাণে নেতৃত্ব দেন তত্কালীন ছাত্র নেতা মোঃ জাফর আলী ও আব্দুস সামাদ চৌধুরী। স্বাধীন দেশে প্রথম মহান শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি '৭২ উদযাপিত হয় এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশে ইশতেহার পাঠকারী ও প্রথম বাংলাদেশ সরকারের শপথ পাঠকারী ও প্রথম শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ আলী এ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। দিনাজপুরে ৩য় যে শহীদ মিনারটি নির্মিত হয় তা হচ্ছে বালুবাড়ীস্থ ঐতিহাসিক তে-ভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী প্রখ্যাত কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের বাসভবনের সন্নিকটস্থ মোড়ের সড়ক দ্বীপে। এ শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন শতদল ক্লাবের পক্ষ থেকে তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুসলিম ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে ২১ ফেব্রুয়ারি পাক সরকারের পুলিশবাহিনী বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতার মিছিলে গুলি চালিয়ে ঢাকার রাজপথ ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত করে। সেই আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুর জেলা শহরে। সেই সময় দিনাজপুরে মির্জা নূরুল হুদা ছোটি, আসলেউদ্দিন, রহিমউদ্দিন, রফিক চৌধুরী, নাসিম চৌধুরী, মোস্তাফা নূর-উল-ইসলাম, এম আর আখতার মুকুল, রিয়াজুল ইসলাম, দবিরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান চৌধুরী, হীরণ চক্রবর্তী, মাহমুদ মোকাররম হোসেন, আব্দুল হাফিজ, আব্দুল হক, মোহাম্মদ আলী, আবুল কাসেম, আব্দুল মোতালেব মঈনুদ্দিন, আমিনুর রহমান মন্টু, মোহাম্মদ ফরহাদ, দলিলউদ্দিন, আমানুল্লাহ সরকার, আবু তোরাব, আমানুল্লাহ আহমেদ লায়ন ও টাইগার দুই ভাই, তত্কালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পানাউল্লাহ আহমেদের দুই পুত্র, কাজী বুরহান, মির্জা আনোয়ারুল ইসলাম তানু প্রমুখ ভাষা আন্দোলনে দিনাজপুর ভিত্তিক নেতৃত্ব গড়ে তোলেন। নারী সমাজের মধ্যে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হামিদা হক, শেফালী, কচিমনি, খুকুমনি। এসব কলেজ ও স্কুলছাত্রীদের উত্সাহ যোগান দেন নুরজাহান আহমেদ, দৌলতুনেসা লিলি চৌধুরী প্রমুখ। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় নির্মিত শহীদ মিনারসহ জেলায় মোট শহীদ মিনারের সংখ্যা বর্তমানে ৬৩৮।

নকশা ও স্থাপত্য

দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবিকল আদলে।[1]

নির্মাণ ও উদ্বোধন

১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই শহীদ মিনারটি ফুল দিয়ে উদ্বোধন করেন শতদল ক্লাবের সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ডাঃ হাফিজ উদ্দীন আহমেদ। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বালুয়াডাঙ্গা লতিফের স্মরণে বালুয়াডাঙ্গা মোড়ে একটি শহীদ মিনার স্থানীয় পাহাড়পুর, চাউলিয়াপট্টি মিলনায়তন সমিতির উদ্যোগে '৭৪ সালে নির্মাণ করা হয়। এই ৪টি শহীদ মিনারই নির্মিত হয়েছিল অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক উদ্যোগে। পরবর্তীতে দিনাজপুর শহরে এবং সদর উপজেলাতে কেবিএম কলেজ, দিনাজপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, পিটিআই এবং মেডিকেল কলেজ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার। ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজিজুর রহমান অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ঐ সভাতেই প্রস্তাবটি গৃহীত হবার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা কমিটি, সাধারণ কমিটি এবং নির্মাণ উপ-কমিটি গঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক গোর-এ-শহীদ ময়দানের উত্তর-পূর্বকোণে ৫০ শতক জায়গা নির্ধারণ করা হয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবিকল আদলে দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্দেশ্যে পূর্বোক্ত শহীদ মিনারের মূল নক্সা, ডিজাইন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের কপি সংগ্রহ করে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম সভায় উপস্থাপন করে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আনোয়ারুল ইসলাম তানু, দিনাজপুরের আপামর জনগণ ১৯৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ভোর পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।[1]

ব্যবহার

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখের বর্বরতার কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় দিনাজপুরবাসী এই শহীদস্তম্ভে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে থাকে।[1]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর (০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "আমাদের শহীদ মিনার:দিনাজপুর জেলা"দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.