চিরায়ত বলবিদ্যা

চিরায়ত বলবিজ্ঞান বা চিরায়ত বলবিদ্যা নামের পদার্থবিজ্ঞানের শাখায় বিভিন্ন রকমের বস্তু, যেমন প্রক্ষেপক, যন্ত্রাংশ, খ-বস্তু, মহাকাশযান, গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, ইত্যাদির গতি বর্ণনার চেষ্টা করা হয়। যে সব বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে অনেক অনেক কম, সেইসব ক্ষেত্রে চিরায়ত বলবিজ্ঞান খুবই সঠিক ফলাফল প্রদানে সক্ষম। এটি বিজ্ঞানের অন্যতম প্রাচীনবৃহত্তম শাখা। চিরায়ত বলবিজ্ঞানের মূলনীতিসমূহ নিউটনের গতিসূত্রসমূহের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

চিরায়ত বলবিদ্যা

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র
চিরায়ত বলবিদ্যার ইতিহাস

এছাড়া, কঠিন, তরলবায়বীয় পদার্থ নিয়েও এ শাখার বিশেষায়িত ক্ষেত্রে গবেষণা করা হয়। আলোর বেগের কাছাকাছি দ্রুতির বস্তুর গতি বর্ণনার জন্য চিরায়ত বলবিজ্ঞানে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সাহায্য নেওয়া হয়।

চিরায়ত বলবিদ্যার শাখাসমূহ

চিরায়ত বলবিদ্যা বল এবং বলের প্রভাবাদি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করে থাকে। বিজ্ঞানের যে শাখায় বল ও বলের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে বলবিদ্যা বা বলবিজ্ঞান বলে। এটি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের মৌলিক পাঠ্য।

গতি আছে কি নেই এ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে, অধ্যয়নের সুবিধার জন্য বলবিদ্যাকে কয়েকটি শাখায় ভাগ করে নেয়া হয়। যথাঃ

১। স্থিতিবিদ্যা (Statics)

২। গতিবিদ্যা (Dynamics)

গতিবিদ্যা আবার দু'ভাগে অধ্যয়ন করা হয়ঃ

১। সৃতিবিদ্যা (Kinematics)

২। চলবিদ্যা (Kinetics)

আবার, প্রায়োগিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বলবিদ্যাকে আরো কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়। যেমনঃ

১। কঠিন বস্তুর বলবিদ্যা (Mechanics of Solids)

২। প্রবাহী বলবিদ্যা (Mechanics of Fluids)

৩। জ্যোতির্বলবিদ্যা (Celestial Mechanics)

স্থিতিবিদ্যা

বলবিদ্যার যে শাখায় স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল ও বলের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে স্থিতিবিদ্যা বলে।

যেমনঃ বস্তুর ওজন, প্লবতা, প্রবাহীর চাপ সংক্রান্ত বল ইত্যাদি।

গতিবিদ্যা

বলবিদ্যার যে শাখায় গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল ও বলের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে গতিবিদ্যা বলে। এটি আবার দু'ধাপে আলোচিত হয়। যথাঃ সৃতিবিদ্যা ও চলবিদ্যা।

সৃতিবিদ্যা

গতিবিদ্যার যে শাখায় গতিশীল বস্তুর কেবল গতির অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়, কিন্তু, গতির কারণ (বল) সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় না, তাকে সৃতিবিদ্যা (Kinematics) বলা হয়।

এখানে, গতিশীল বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের প্রভাব তথা বিভিন্ন গতীয় অবস্থা আলোচনা করা হয়, কিন্তু কেন গতির অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে, তা নিয়ে আলোকপাত করা হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, গতির সমীকরণ (Equations of Motion) গুলো নিয়ে অধ্যয়নের সময় কেবল বিভিন্ন গতীয় অবস্থা যেমনঃ আদিবেগ, শেষবেগ, সরণ, ত্বরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়, কিন্তু কেন আদিবেগ পরিবর্তিত হয়ে শেষবেগ হচ্ছে কিংবা কেন বস্তুটি ত্বরিত হচ্ছে তা বলা হয় না।

গতির সমীকরণ

গতিশীল বস্তুর গতীয় অবস্থা পর্যালোচনার জন্য এর আদিবেগ, শেষবেগ, সরণ, ত্বরণ ও সময় এই পাঁচটি রাশিকে ব্যবহার করে কয়েকটি সমীকরণ প্রতিপাদন করা হয়েছে, এগুলোকে গতির সমীকরণ বলা হয়। সমীকরণগুলো এরূপঃ

১।

২।

৩।

৪।

চলবিদ্যা

গতিবিদ্যার যে শাখায় গতিশীল বস্তুর গতির প্রভাবের পাশাপাশি গতির কারণ আলোচনা করা হয়, তাকে চলবিদ্যা (kinetics) বলা হয়।

যেমনঃ নিউটনের গতিসূত্রসমূহ (Laws of Motion) মূলত চলবিদ্যার আলোচনাধীন বিষয়।

কঠিন বস্তুর বলবিদ্যা

বলবিদ্যার যে শাখা কঠিন বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল, বলের প্রভাব, গতীয় অবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে কঠিন বস্তুর বলবিদ্যা (Mechanics of Solids) বলা হয়। কঠিন বস্তুর বলবিদ্যা নিয়ে অধ্যয়নের সময়ও উপরের মত স্থিতিবিদ্যা, গতিবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়।

প্রবাহী বলবিদ্যা

বলবিদ্যার যে শাখায় প্রবাহী পদার্থের (তরল ও বায়বীয়) উপর ক্রিয়াশীল বল, বলের প্রভাব, গতীয় অবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে প্রবাহী বলবিদ্যা (Mechanics of Fluids) বলা হয়। প্রবাহী বলবিদ্যা নিয়ে অধ্যয়নের সময়ও উপরের মত স্থিতিবিদ্যা, গতিবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়।

চিরায়ত বলবিদ্যার সীমাবদ্ধতা ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যা

চিরায়ত বলবিদ্যা আমাদের বাস্তবিক জীবনের ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশের জন্য খুবই উপযোগী। তবে, ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ও বিংশ শতকের শুরুর দিকে এমন বেশ কিছু ঘটনা বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেন, যা বলবিদ্যার প্রচলিত ধারণা ও সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়েই আধুনিক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূচনা হয়।

চিরায়ত বলবিদ্যা ব্যাখ্যা করতে পারে না- এমন কিছু বিষয় হলঃ

১। আলোর বেগের মত প্রচণ্ড বেগে গতিশীল বস্তুসমূহের গতীয় অবস্থাদি চিরায়ত বলবিদ্যা দ্বারা সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যায় না।

২। কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ সংক্রান্ত ঘটনা চিরায়ত বলবিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।

৩। আলোর কাছাকাছি বেগে গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে ভর বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ভর ও শক্তির পারস্পারিক রূপান্তর ইত্যাদি বিষয় ব্যাখ্যা করা যায় না।

চিরায়ত বলবিদ্যার আলোচ্যসূচি

চিরায়ত বলবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয় বিভিন্ন প্রকার রাশি- যেমনঃ স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি, স্থিতিবিদ্যা, গতিবিদ্যা, সৃতিবিদ্যা, চলবিদ্যা, বিভিন্ন উপপাদ্য, গতিসূত্র, কৌণিক গতিসূত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, তাপতাপগতিবিদ্যা, তরঙ্গ, স্থিতিস্থাপকতা, প্রবাহী বলবিদ্যা, শব্দবিদ্যা, তড়িৎবিদ্যা, চৌম্বকবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যা, নিউটনীয় বলবিদ্যা প্রভৃতি।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.