পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান

পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞান বা পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞান হল পদার্থবিজ্ঞানের প্রধান একটি ধারা । পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্বনির্দেশিত কোন ভৌত ধর্ম বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করার পদ্ধতি আলোচনা করা এখানকার কাজ । মহাকর্ষ ধ্রুবক নির্ণয়ের জন্য করা ’ক্যাভেন্ডিশের পরীক্ষণ’ এর মত মোটামুটি সরল পরীক্ষণ থেকে শুরু করে, বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক এর মত জটিল পরীক্ষণ-ব্যবস্থা সহ নানান পদ্ধতি-প্রণালী পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় ।

আলোকপাত

পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সব শাখারই, যেমন কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান, কণা পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদির জ্ঞানার্জন-গবেষণার দুইটি প্রধান দিক রয়েছে, তাত্ত্বিক আর পরীক্ষামূলক । পরীক্ষামূলক শাখাটি উপাত্ত সংগ্রহ, উপাত্ত সংগ্রহের প্রণালী এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সাথে পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের পার্থক্য হল এই যে, তাত্ত্বিকরা ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করে থাকেন কিংবা ঘটনার গাণিতিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন, যেখানে পরীক্ষণ পদার্থবিদরা তাত্ত্বিকের তত্ত্ব বা ব্যাখ্যার সত্যতা পরীক্ষার মাধ্যমে মিলিয়ে দেখেন।

পরীক্ষণবিদ ও তাত্ত্বিকের কাজের ধারা ভিন্ন হলেও দু'জনের উদ্দেশ্য অভিন্ন—প্রকৃতিকে বোঝা। অহরহ মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তারা এ উদ্দেশ্য সাধন করেন। পরীক্ষণ পদার্থবিদ প্রকৃতি-বিশ্ব বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করেন, যেগুলো প্রয়োজন অনুসারে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ সংগৃহীত উপাত্তের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন; কিভাবে বেহতর উপাত্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে, পরীক্ষণ কিভাবে সম্পন্ন করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।

ইতিহাস

আধুনিক ইউরোপের প্রস্তুতি প্রাক্কালে, বিজ্ঞান বিপ্লবের সময়ে, গ্যালিলিও, হাইগেন্স, কেপলার, প্যাসকেল, নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের স্বতন্ত্র একটি ক্ষেত্র হিসেবে পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান এর প্রতিষ্ঠা করেন। সতের শতকের প্রারম্ভে গ্যালিলিও বলবিজ্ঞানের বেশ কিছু তত্ত্বের সত্যতা নিরূপণের লক্ষ্যে বহু সংখ্যক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অধুনা তার কর্মপদ্ধতি "বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি" তথা বিজ্ঞানীর কাজের ধারা নামে সুপরিচিত। তিনি পরীক্ষণের মাধ্যমে বস্তুর জড়তার তত্ত্ব প্রমাণ করেন, যা পরে নিউটনের প্রথম গতিসূত্র নামে পরিচিত হয়।

হাইগেন্স একটি খালে চলমান নৌকার গতি পর্যবেক্ষণ করে ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের ব্যাখ্যা দেন।

১৬৮৭ সালে নিউটনের "ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা" প্রকাশ পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে মাহেন্দ্রক্ষণ। এ গ্রন্থে নিউটন তার বিখ্যাত " গতিসূত্র" ও "মহাকর্ষ সূত্র" উপস্থাপন-ব্যাখ্যা করেন। দু'টি সূত্রই পরীক্ষণসিদ্ধ হয়।

বয়েল, ইয়ং প্রমুখ বিজ্ঞানীরা সতের শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে তাপগতিবিদ্যা তত্ত্বের প্রভূত উন্নতি ঘটান। ১৭৩৩ সালে বার্নলি তাপগতিবিদ্যার ব্যাখ্যায় বলবিজ্ঞান প্রয়োগ করতে গিয়ে ব্যবহার করেন পরিসংখ্যান; সৃষ্টি হয় পরিসংখ্যান বলবিজ্ঞান। টমসন ১৭৯৮ সালে যান্ত্রিক শক্তির তাপশক্তিতে রুপান্তর প্রত্যক্ষ করেন। প্রেসকট জুল ১৮৪৭ সালে যান্ত্রিক শক্তির অনুরুপ তাপশক্তির ক্ষেত্রেও শক্তির সংরক্ষণ সূত্র প্রদান করেন।

চিরায়ত বলবিজ্ঞান ও তাপগতিবিদ্যার পাশাপাশি তড়িৎ ও তার প্রকৃতি বোঝার চেষ্টায় উদ্ভব হয় তড়িৎ-চুম্বকত্ব এর।

পরীক্ষণ প্রণালী

পরীক্ষণ পদার্থবিদরা দু'টি প্রধান ধরনের পরীক্ষা করে থাকেন--বহিঃনিয়ন্ত্রিত ও প্রাকৃতিক। নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা করা হয়ে থাকে গবেষণাগারে; যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যবেক্ষণাধীন পরীক্ষা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়। প্রাকৃতিক পরীক্ষণের উদাহরণ হল, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যেখানে পরীক্ষণবস্তুর উপর কার্যত পরীক্ষক-বিজ্ঞানীর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

চলমান গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাদি

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত দু'টি পরীক্ষণ কেন্দ্র হল, বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষক ও লাইগো হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণের উত্তরসূরি জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করা হচ্ছে, বিভিন্ন সক্ষমতার কণা ত্বারক যন্ত্র পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষণ পদার্থবিদরা ব্যবহার করে চলছেন।

বিখ্যাত কিছু পরীক্ষণ

গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষণ-প্রকৌশল

পরীক্ষণ-পদার্থবিদদের নামের তালিকা

প্রসিদ্ধ পরীক্ষণ-পদার্থবিদদের মধ্যে আছেন :

তথ্যসূত্র

H. Otto Sibum http://science.sciencemag.org/content/306/5693/60.full

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.