বিশেষ আপেক্ষিকতা
বিশেষ আপেক্ষিকতা বা আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব (সংক্ষেপে STR) হল স্থান ও কাল এর আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ক সাধারণভাবে গৃহীত ও পরীক্ষা-পর্যবেক্ষন দ্বারা দৃঢ়ভাবে সমর্থিত তত্ত্ব। বিশেষ আপেক্ষিকতাকে সাধারণ আপেক্ষিকতার একটি বিশেষ রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাইকেলসন এবং মর্লি তাদের পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তগুলোর প্রেক্ষিতেই আইনস্টাইন তার এই তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। তত্ত্বটি দুইটি মৌলিক স্বীকার্যের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছিল:
১. পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র সমূহ সকল জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্রে একই রূপে বলবৎ থাকবে।
ব্যাখ্যা: নিউটনের গতিসূত্রের ১ম সূত্র যে নির্দেশতন্ত্রে প্রযুক্ত হয়, তাকে জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্র বলে। যদি কোন বস্তু জড়তায় থাকে তাকে এর ওপর বাহ্যিক বল প্রযুক্ত না হলে এর অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। এ স্বীকার্য অনুসারে দুজন পর্যবেক্ষক একই রৈখিক বেগে চলতে থাকলে কোনো ভৌত সূত্রের রূপ একই থাকবে।
২ আলোর গতিবেগ সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে একই রূপে বলবৎ থাকবে।
ব্যাখ্যা: এ স্বীকার্যের প্রেক্ষিতে ইথারের অস্তিত্ব স্বীকার করা কোন মতে সম্ভব হয় না। তাছাড়া ইথার মাধ্যমের ওজন বা সান্দ্রতা কিছুই নির্ণয় করা যায় না। আইনস্টাইনের মতে, আলোক পরিবাহী ইথারের প্রবর্তন অনাবশ্যক। মাইকেলসন ও মর্লির পরীক্ষা এবং পরবর্তী যুগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, শূন্যস্থানে বা বায়ু মাধ্যমে আলোকের বেগ আলোক প্রবাহের দিক, উৎস এবং পর্যবেক্ষকের আপেক্ষিক বেগের ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি একটি ধ্রুব রাশি।
শক্তি-ভর সমতুল্যঃ
আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব থেকে পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি সূচীত হয়।আর সেটি হল শক্তি ও ভর সমতুল্য। এই উপলব্ধিটি এসেছে আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র থেকে।এই সূত্র অনুসারে m ভরের কোন বস্তুতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ ঐ ভরের সাথে আলোর বেগ(c)এর বর্গের গুনফল এর সমান।অর্থাৎ ১ কেজি ভরের কোন বস্তুতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ ৯০০০০০০০০০০০০০০০০ জুল। এই অবিশ্বাস্য পরিমাণ শক্তি আমেরিকার মত একটি দেশের দিনের বৈদ্যুতিক শক্তির যোগান দিতে পারে!
সমীকরণটি শক্তির সাথে ভরের একটি চমৎকার সম্পর্ক নির্দেশ করে। এটি থেকে বোঝা যায় যে, শক্তি এবং ভর আসলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।ভর থেকে শক্তি পাওয়া যায় এবং শক্তি থেকেও ভর পাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ শক্তি এবং ভর পরস্পর সমতুল্য।
ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হবার সবচাইতে পরিচিত এবং বেদনাদায়ক উদাহরণটি হল হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৮ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা।পারমানবিক বোমাতে একটি বড় মৌলের পরমাণুকে (যেমনঃ- ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম) নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে বড় পরমাণুটি ভেঙ্গে দুইটি নতুন পরমাণুতে বিভক্ত হয় এবং কিছু ভর পরিণত হয় শক্তিতে।
'পেয়ার প্রোডাকশন শক্তি'ও ভরে রূপান্তরের উদাহরণ। এ প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী একটা গামা রশ্মি (যার ভর নেই কিন্তু শক্তি আছে) একটি ইলেকট্রন এবং একটি পজিট্রনে পরিণত হয়। উল্লেখ্য যে, ইলেকট্রন এবং পজিট্রন উভয়ের ভর রয়েছে।[1]