গতি
নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে যদি কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন না ঘটে তবে বস্তুটি তার পরিপার্শিকের বা প্রসঙ্গ কাঠমোর সাপেক্ষ স্থির, গতিহীন, অচল, স্থবির তথা ধ্রুব বা সময়-অপরিবর্তিত[1] অবস্থানে রয়েছে বলা হয়। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে স্থিতি বলা হয়। অপরদিকে প্রসঙ্গ কাঠামোর বা পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে যখন কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে তখম একে গতিশীল বস্তু এবং এই ঘটনাকে গতি (ইংরেজি: Motion) বলা হয়।

সাধারণত কোন স্থির পরিপার্শিকের বা প্রসঙ্গ কাঠমোর সাপেক্ষে বস্তুটি গতিশীল আছে কিনা তুলনা করা হয়। স্থির প্রসঙ্গ কাঠমোর সাপেক্ষে বস্তুর গতিকে পরম গতি বলা হয়। মহাবিশ্বের সবকিছুই গতিশীল; যেমন— পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর গতিশীল যা সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, আবার সূর্যও তার কক্ষপথে গতিশীল। সুতরাং ভূপৃষ্ঠস্থ কোন বস্তু ভূপৃষ্ঠের সাপেক্ষে স্থির থাকলেও তা পৃথিবীর গতির দরুন সূর্যের সাপেক্ষে গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। অতএব বাস্তবে এমন কোন পরম স্থির বস্তু তথা নিখুঁত প্রসঙ্গ কাঠামো পাওয়া সম্ভব নয় যার তুলনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যাবে অন্য কোন বস্তু স্থিতিশীল নাকি গতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ, নিখুঁত প্রসঙ্গ কাঠামোর অনুপস্থিতির দরুন পরম গতি বা পরম স্থিতিও পাওয়া অসম্ভব।[2][3]:পৃ:২০–২১
বস্তু, পদার্থ কণা, পদার্থ ক্ষেত্র, বিকিরণ, বিকিরণ ক্ষেত্র, বিকিরণ কণা, বক্রতা এবং স্থান-কাল সহ বহুবিধ ক্ষেত্রে গতির প্রভাব বিদ্যমান। এসব ভৌত ব্যবস্থার ব্যাখ্যায় গতি ও গতি-উদ্ভুত বিভিন্ন ধারণার প্রয়োগ করা হয়। প্রতিচ্ছবি, আকার এবং সীমানার গতিও এ প্রসঙ্গে আলোচ্য। সুতরাং গতি শব্দটি সাধারণভাবে কোন স্থানে একটি ভৌত ব্যবস্থা বা কনফিগারেশনের অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, তরঙ্গ অথবা কোয়ান্টাম কণার গতির কথা বলা যেতে পারে, যেখানে কনফিগারেশনটির নির্দিষ্ট অবস্থান থাকার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
কোন বস্তুর গতিকে যে প্রধান রাশিটি দ্বারা পরিমাপ করা হয় তা হল ভরবেগ যা বস্তুটির ভর ও বেগের গুণফল। বস্তুর ভর ও বেগের বৃদ্ধিতে এর ভরবেগও বৃদ্ধি পায়। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রানুসারে কোন ব্যবস্থার উপর প্রযুক্ত নিট বাহ্যিক বল শূন্য হলে ব্যবস্থাটির মোট ভরবেগ সংরক্ষিত বা অপরিবর্তিত থাকে। বিশদভাবে বলা যায়, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ারত একাধিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল ব্যতিত অন্য কোন বল কাজ না করলে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটার পূর্বের মোট ভরবেগ ও পরের মোট ভরবেগ সমান হবে।
বিশ্বজগতের গতি ৪ প্রকার যথা: ১. সরলরৈখিক গতি, ২. পর্যায়বৃত্ত গতি, ৩. চলন গতি ও ৪. স্পন্দন গতি।
বিভিন্ন প্রকার গতি

- সরল স্পন্দন গতি— (যেমন—
সরল দোলকের গতি)
- রৈখিক গতি— এই গতি সরল রেখা বরাবর সম্পাদিত হয় যেখানে বস্তুটির সরণ তার ভ্রমণপথকে অনুসরণ করে।
- প্রত্যাগমনী গতি— কোন বস্তু একটি রেখা বরাবর বারবার সামনে-পিছনে (up-down) যাওয়া আসা করলে এ গতিকে প্রত্যাগমনী গতি বলা হয়। যেমন— পিস্টনের গতি।
- ব্রাউনিয় গতি— (যেমন— কণার বিক্ষিপ্ত গতি)
- বৃত্তীয় গতি— (যেমন— গ্রহসমূহের আবর্তন গতি)
- বক্ররৈখিক গতি— একে বক্ররেখা বরাবর গতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যা সমতলীয় বা ত্রিমাত্রিক হতে পারে।
- ঘূর্ণন গতি
- গড়িয়ে চলার গতি— (যেমন— রাস্তায় উপর কোন চাকার গতি)
- স্পন্দন গতি— =পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোন বস্তুকণা যদি এর পর্যায়কালের অর্ধেক সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় পূর্বগতির বিপরীত দিকে চলে তবে এটি হবে স্পন্দন গতি। যেমন: একটি স্প্রিংকে স্বল্প ব্যবধানে টেনে ছেড়ে দিলে এর গতি স্পন্দন গতি হবে।
- কম্পন গতি
- সমন্বিত বা যুগপৎ গতি— এ ধরনের গতি উপরে বর্ণিত একাধিক গতির সমন্বিত রূপ
- প্রাসের গতি— (যেমন— অনুভূমিকের সাথে তির্যকভাবে নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতি; এখানে বস্তুর অনুভূমিক ও উলম্ব দু ধরনের গতিি সম্পাদিত হয়)
তথ্যসূত্র
- সময়ের পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও অবস্থান একই থাকা
- Wahlin, Lars (১৯৯৭)। "9.1 Relative and absolute motion" (PDF)। The Deadbeat Universe। Boulder, CO: Coultron Research। পৃষ্ঠা 121–129। আইএসবিএন 978-0-933407-03-9। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৩।
- Tyson, Neil de Grasse; Charles Tsun-Chu Liu; Robert Irion (২০০০)। The universe : at home in the cosmos
। Washington, DC: National Academy Press। আইএসবিএন 978-0-309-06488-0। - ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে অনুবাদ হল এক প্রকার জ্যামিতিক রূপান্তর যেখানে কোন ফিগার বা স্থানের প্রতিটি বিন্দু একটি নির্দিষ্ট দিক বরাবর গতিশীল।