আবুল বশার (বীর প্রতীক)

আবুল বশার (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

আবুল বশার
মৃত্যু২০০০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন আবুল বাশার

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবুল বশারের পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক এবং মায়ের নাম আঞ্জুমান নেছা। তার স্ত্রীর নাম সাহেদা বেগম। তাদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।

কর্মজীবন

আবুল বশার চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৯ মার্চ ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বরের সিলেটের কানাইঘাটের গৌরীপুরে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়। কয়েক দিন ধরে আবুল বশার ও তার সহযোদ্ধারা যুদ্ধ-উন্মাদনায়। একটানা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন। দু-তিন দিন যুদ্ধের দামামা নেই। যেকোনো সময় আবার দামামা বেজে উঠবে। তাদের অবস্থান এক জঙ্গলের ভেতরে। কয়েক কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। সেখানে তারা আক্রমণ করবেন। সে জন্য তারা সমবেত হয়েছেন। জঙ্গলের ভেতরে আবুল বশাররা বিশ্রামে। তবে সতর্ক অবস্থায়। কেউ ঘুমিয়ে, কেউ জেগে। সবাই একসঙ্গে ঘুমাননি। পালা করে ঘুমাচ্ছেন। ভোর হয়-হয়। এমন সময় আবুল বশারদের অবস্থানে আকস্মিক আক্রমণ চালায় একদল পাকিস্তানি সেনা। শান্ত এলাকা হঠাৎ তীব্র গোলাগুলিতে প্রকম্পিত। শত্রুর আকস্মিক আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা হকচকিত। তবে দ্রুত তারা নিজেদের সামলিয়ে নেন। যে যেভাবে পারেন পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা শুরু করেন। আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনারা ছিল বেপরোয়া ও অপ্রতিরোধ্য। জীবনের মায়া তাদের ছিল না। মরিয়া মনোভাব নিয়ে তারা আক্রমণ করে। এ রকম অবস্থায় সম্মুখযুদ্ধ ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। আবুল বাশারসহ মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। কিন্তু বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে ব্যর্থ হন। ফলে তারা চরম নাজুক অবস্থায় পড়েন। শহীদ ও আহত হন আবুল বশারের কয়েকজন সহযোদ্ধা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তার অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান (বীর উত্তম) শহীদ হন। পরবর্তী অধিনায়ক লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম) গুরুতর আহত হন। এতে বাশার দমে যাননি। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে তিনিও গুরুতর আহত হন। পরে ওয়াকার হাসানের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল এসে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তীব্র পাল্টা আক্রমণ চালায়। তখন যুদ্ধের গতি ক্রমশ মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তে আসে। শেষে পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে হটে তাদের মূল অবস্থানে ফিরে যায়। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে সিলেট অভিমুখে অভিযান শুরু করেন। তারা প্রথমে চারগ্রাম দখল করেন। এরপর জকিগঞ্জ দখল করে কানাইঘাট দখলের জন্য ২৩-২৪ নভেম্বর গৌরীপুরে সমবেত হন। এর দুই মাইল দূরে কানাইঘাট ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা। ২৬ নভেম্বর ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী (৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট) তাদের মূল ডিফেনসিভ পজিশন ছেড়ে পূর্ণ শক্তিতে অগ্রসর হয়ে হঠাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের আলফা কোম্পানি নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। এই কোম্পানিতে ছিলেন আবুল বাশার। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৭-০৯-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৮৬। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.