সোনার কেল্লা (চলচ্চিত্র)
সোনার কেল্লা সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় নির্মিত একটি রহস্য রোমাঞ্চ চলচ্চিত্র । সত্যজিৎ রায় নিজের কাহিনী নিয়েই চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছিলেন । তিনি সোনার কেল্লা উপন্যাসটি রচনা করেন ১৯৭১ সালে । সোনার কেল্লা মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে চলচ্চিত্রটির শুটিং হয়েছিল রাজস্থানে ।
সোনার কেল্লা | |
---|---|
![]() সোনার কেল্লা চলচ্চিত্রের পোস্টার | |
পরিচালক | সত্যজিত রায় |
প্রযোজক | পশ্চিমবঙ্গের সরকার |
রচয়িতা | সত্যজিত রায় |
শ্রেষ্ঠাংশে | সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্তোষ দত্ত, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুশল চক্রবর্তী, শৈলেন মুখার্জী, কামু মুখার্জী |
মুক্তি | ১৯৭৪ |
ভাষা | বাংলা |
গল্পের উৎস
ষাটের দশকে এক জাতিস্মর বালককে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উৎসাহেই কলকাতায় তৈরি হয় প্যারাসাইকোলজি সোসাইটি। অফিস ছিল লালমোহন ভট্টাচার্য রোডে। উত্তমকুমারের মতো সত্যজিৎও হলেন আজীবন সদস্য। সোসাইটির কাজকর্মের মধ্য দিয়েই সত্যজিতের সঙ্গে বিখ্যাত রাজনীতিবিদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাকা , বিমলবাবুর পরিচয় ঘনীভূত হল। সোসাইটির মাধ্যমে হেমেনবাবুর গবেষণা বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠলেন সত্যজিৎও।
ফেলুদার সোনার কেল্লা উপন্যাস ও সিনেমার পিছনে ছিলো এই রোমাঞ্চকর বাস্তব। সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতেও জাতিস্মর মুকুলের আড়ালে লুকিয়ে ছিল প্রভু নামের রাজস্থানের এক ছেলে, আর প্যারাসাইকোলজিস্ট ড. হেমাঙ্গ হাজরার মধ্যে ধরা পড়েছিল জয়পুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি। [1]
কাহিনী সূত্র
মুকুল (কুশল চক্রবর্তী) এক ছোট ছেলে যে বলে তার পূর্বজন্মের ইতিহাস তার মনে আছে। সে রাত্রি জেগে ছবি আঁকে যুদ্ধের যেগুলো সে দেখেছিলো পূর্বজন্মে। তখন তার বাবা তাকে ডঃ হাজরার (শৈলেন মুখার্জী) কাছে নিয়ে যান যিনি একজন মনস্তত্ত্ববিদ (প্যারাসাইকোলজিস্ট) এবং এইসব রোগের প্রতিরোধক জানেন। মুকুলের বর্নিত মরুভুমি ও ময়ূরের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার পর, তিনি আন্দাজ করলেন যে জায়গাটা রাজস্থানের কোনো স্থান হবে। মুকুল আরো জানায় যে সে একটি সোনার কেল্লাতে থাকত, যদিও সে জানে না এটার মানে কি, এবং এটাও যে তাদের ঘরে অনেক রত্ন ছিলো। ডঃ হাজরা মুকুলকে নিয়ে ঘুরতে যান রাজস্থানে এই ভেবে যে তিনি আরো অনেক মনস্তত্ত্ব নিয়ে জানতে পারবেন এবং ছেলেটাকেও সুস্থ করে তুলতে পারবেন।
একটি খবরের কাগজের লেখা অমিয়নাথ বর্মন (অজয় ব্যানার্জী) এবং মন্দার বোসকে (কামু মুখার্জী) জানিয়ে দেয় এই ঘটনার কথা। বর্মন ও বোসের সাথে ডঃ হাজরার আগে দেখা হয়েছে যখন ডঃ হাজরা এই দুজনকে ভুয়া প্রমাণ করেছিলো। তারা ধারনা করে যে রত্নগুলি আসলে সোনার কেল্লায় লুকানো সম্পদ এবং পরিকল্পনা করে মুকুলকে অপহরণ করবে যাতে সেই রত্নের মালিক তারাই হতে পারে। তাদের প্রথম চেষ্টা ভেস্তে হয়ে যায় যখন মুকুল নামক আরেকটি ছেলেকে তারা তুলে নিয়ে আসে একই এলাকার থেকে এবং জানতে পারে যে আসল মুকুল আগেই রাজস্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে।
ভেস্তে যাওয়া অপহরণের খবর পেয়ে মুকুলের বাবা ফেলুদাকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) একজন ব্যক্তিগত গোয়েন্দাকে তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য বলেন। ফেলুদা কাজটি হাতে নেন এবং রাজস্থানের পথে যান তার ভাই তোপসেকে (সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়) নিয়ে। রাজস্থানের পথে ট্রেনের মধ্যে তাদের দেখা হয়ে যায় লালমোহন গাঙ্গুলী বা জটায়ুর (সন্তোষ দত্ত) সাথে যিনি একজন বিখ্যাত লেখক।
ইতিমধ্যে কুচক্রী বর্মন ও বোস ডঃ হাজরার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। তারা ফেলুদাদের সাথে একই ট্রেনে ছিল। এরপর এই দুই অপহারক ডঃ হাজরাকে পাহাড়ের উপর থেকে ধাক্কা দেয় এবং মুকুলকে অপহরণ করে যাতে বর্মন হয়ে যায় নকল ডঃ হাজরা এবং মন্দার বোস হয় তাদের সহযাত্রী বিশ্বপরিব্রাজক। তাদের কাছে অজানা থেকে যায় যে ডঃ হাজরা বেঁচে যেতে পেরেছেন, যদিও তাকে কিছু দিনের জন্য বিশ্রাম নিতে হয়। ফেলুদার সাথে নকল হাজরার সাথে দেখা হয় এবং তাকে নকল হাজরা বিষাক্ত বিছা দিয়ে মারতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। জটায়ু তাদের সাথে যোগ দেন এবং রাজস্থান ঘুরতে শুরু করেন। এরপর থেকে মন্দার বোসের উপর ফেলুদার চোখ পড়ে যখন সে জটায়ুর কাছে জানায় যে সে আফ্রিকাতে নেকড়ে মেরেছিলো। কারণ জটায়ু ধরে ফেলেন আফ্রিকায় আদৌ নেকড়ে নেই।
এক রাত্রে, বর্মন তার মনস্তত্ত্ববিদ্যা ব্যবহার করে মুকুলকে সম্মোহিত করে এবং জানতে পারে যে কেল্লাটি জয়শলমেরে। পরের দিন, ফেলুদাও একই কথা বুঝতে পারেন যখন তার মনে পড়ে যে জয়শলমীর জয়সলমের কেল্লা সোনালী হলুদ পাথর দিয়ে তৈরী। যখন তিনি আবার ফিরে আসেন, তখন তিনি জানেন যে বর্মন আগেই চলে গিয়েছে। মন্দার বোস বলেন যে মুকুল জায়গাটার নাম বর্মনকে বলতে পেরেছে। যখন ফেলুদা হাজরার নামে ভুল বানান দেখেন হোটেলের খাতায়, সন্দেহ দৃঢ় হয় ও গাড়ি নিয়ে জলশামের যাওয়ার পথে হাজরার কারসাজীতে ফেলুদাদের গাড়ির চাকা পাংচার হয়।
ফেলুদারা উটে চড়ে নিকটবর্তী স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে ধরেন এবং পরের ট্রেনে জয়সালমের যান। সেখানে মন্দার বোস ফেলুদাদের আক্রমন করতে চেষ্টা করে, কিন্তু ফেলুদার বুদ্ধিতে পরাস্ত হলেও হঠাৎ জটায়ুকে আড়াল করে পালাবার চেষ্টা করে। কোনোরকমে ঝুলে বেঁচে গিয়ে অন্য একটি কামরাতে ওঠে যেটায় ছিলেন আসল ডঃ হাজরা। তিনি দরজাটাকে ধাক্কা দিয়ে মন্দার বোসকে ফেলে দেন। এভাবেই তার মৃত্যু হয়।
পরের দিন সকালে, ফেলুদারা তিনজন জয়সালমের পৌঁছান এবং ডঃ হাজরার সাথে দেখা হয়। তারা বর্মন এবং মুকুলকে পায় কেল্লা মধ্যে খুঁজতে গিয়ে। বর্মনের ময়ূরের প্রতি ভয়ের কারণে সে একটিকে গুলি করতে চেষ্টা করে, যা দেখে মুকুল রেগে গিয়ে দৌড়ে পালায়। এই সময় ফেলুদা তাকে আটক করতে যায়। নকল হাজরা পালাবার চেষ্টা করলেও ফেলুদার গাড়ির বিশালদেহী ড্রাইভার তাকে পাকড়াও করে ফেলে। মুকুলকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানায় সোনার কেল্লা নয় সে বাড়ী যেতে চায়। ফেলুদা জানান, সোনার কেল্লা বলে কিছু নেই। থাকলেও সেখানে রত্ন নেই। ছিলোনা কোনোদিন।
শিল্পী পরিচিতি
- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় - ফেলুদা
- সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় - তোপশে
- সন্তোষ দত্ত - জটায়ু
- কুশল চক্রবর্তী - মুকুল ধর
- শৈলেন মুখার্জী - ড. হেমাঙ্গ হাজরা
- অজয় ব্যানার্জী - অমিয়নাথ বর্মন
- কামু মুখার্জী - মন্দার বোস
- হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় - সিধু জ্যাঠা
কলাকুশলী
- সত্যজিৎ রায় - পরিচালনা, সঙ্গীত পরিচালনা ও সুরকার, Screenplay
- সৌমেন্দু রায় - Cinematography
- দুলাল দত্ত - সম্পাদক
- অশোক বোস - Production Designer
পুরস্কার
পুরস্কার | পুরস্কার দাতা |
সেরা ছবি | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
সেরা পরিচালক, সত্যজিৎ রায় | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
রাষ্ট্রপতির রৌপ্য পদক | ভারত সরকার, ১৯৭৪ |
Best Colour Photography, সৌমেন্দু রায় | ভারত সরকার, ১৯৭৫ |
Best Director, সত্যজিৎ রায় | ভারত সরকার, ১৯৭৫ |
Best Screenplay, সত্যজিৎ রায় | ভারত সরকার, ১৯৭৫ |
গোল্ডেন স্ট্যাচু for the “বেস্ট লাইভ ফিচার ফিল্ম” | 10th তেহরান ইন্টারন্যাশন্যাল ফেস্টিভ্যাল অফ ফিল্মস ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ঙ অ্যাডাল্টস |