বুদ্ধঘোষ

বুদ্ধঘোষ (থাই: พระพุทธโฆษาจารย์, চীনা: 覺音/佛音) (খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী) ছিলেন একজন ভারতীয় থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু, অনুবাদক ও টীকাকার।[1][2] তার সর্বাধিক পরিচিত গ্রন্থটির নাম বিশুদ্ধিমাগ্‌গ। এই গ্রন্থটি গৌতম বুদ্ধের নির্বাণ প্রসঙ্গে থেরবাদী ধারণার একটি সম্পূর্ণ সারব্যাখ্যা। খ্রিস্টীয় ১২শ শতাব্দীর পর থেকে বুদ্ধঘোষের এই ব্যাখ্যাই থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির প্রথাগত ধারণার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়েছে।[3][4] শুধু থেরবাদী বৌদ্ধগণই নন, বরং পাশ্চাত্য বৌদ্ধধর্ম-বিশারদগণও বুদ্ধঘোষকে থেরবাদী বৌদ্ধধর্মের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ টীকাকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন।[2][5]

বুদ্ধঘোষ
বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থের তিনটি পুথি হাতে বুদ্ধঘোষ, কেলানীয় রাজ-মহাবিহার
জন্মকাঞ্চীপুরম, দক্ষিণ ভারত
পেশাধর্মীয় টীকাকার
সময়কালখ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী
বিষয়থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিবিশুদ্ধিমাগ্‌গ

জীবন

বুদ্ধঘোষের জীবন সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য খুব কমই পাওয়া গিয়েছে। এই তথ্যের তিনটি প্রাথমিক সূত্র পাওয়া যায়। এগুলি হল: বুদ্ধঘোষের গ্রন্থগুলির ছোটো ছোটো ভূমিকা ও উপসংহার অংশ; শ্রীলঙ্কার রাজাবলি মহাবংশ গ্রন্থে নথিভুক্ত বুদ্ধঘোষের বিস্তারিত জীবনী; এবং বুদ্ধঘোষুপ্পত্তি নামে পরিচিত পরবর্তীকালে রচিত একটি জীবনীগ্রন্থ।[6][7] অন্য কয়েকটি সূত্র থেকেও বুদ্ধঘোষের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা জানা যায়। তবে সেই সূত্রগুলি বিশ্বস্ত সূত্র নয়।[5] পালি ভাষায় ‘বুদ্ধঘোষ’ নামটির অর্থ ‘বুদ্ধের কণ্ঠনিনাদ’।[8]

বুদ্ধঘোষের গ্রন্থাবলিতে তার জীবন সম্পর্কে যে খণ্ড খণ্ড বিবরণগুলি পাওয়া যায়, তা থেকে তার জীবন সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত অল্প কথাই জানা যায়। খুব সম্ভবত এগুলি গ্রন্থ রচনাকালেই গ্রন্থগুলিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[5][9] এই তথ্যগুলির মধ্যে পার্থক্য বিশেষ নেই। এগুলি থেকে জানা যায়, বুদ্ধঘোষ শ্রীলঙ্কায় গিয়ে অনুরাধাপুরে বসবাস শুরু করেছিলেন।[10] এই তথ্য ছাড়া এই সূত্রগুলি থেকে বুদ্ধঘোষের শিক্ষক, সমর্থক ও সহযোগীদের একটি ছোটো তালিকাই শুধু পাওয়া যায়। এই নামগুলি অন্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি বলে এগুলির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।[10]

মহাবংশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, বুদ্ধঘোষ মগধ রাজ্যে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[2] কথিত আছে, তার জন্মস্থানটি বোধগয়ার নিকটস্থ। বেদ অধ্যয়নের জন্য তিনি সারা ভারত পর্যটন করেন এবং একাধিক দার্শনিক বিতর্কসভায় অংশগ্রহণ করেন।[11] রেবত নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুই (বৌদ্ধ সন্ন্যাসী) কেবল তাকে তর্কে পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রথমে একটি বৈদিক মতের অর্থ-সংক্রান্ত এক বিতর্কে বুদ্ধঘোষ পরাজিত হন। তারপর অভিধম্ম থেকে গৃহীত উপদেশের উপস্থাপনায় তিনি হতচকিত হয়ে পড়েন।[11] এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন এবং ভিক্ষু হন। এরপর তিনি তিনি তিপিটক ও তার টীকাগুলি অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। এই সময় তিনি এমন একটি গ্রন্থের সন্ধান পান, যেটির টীকা ভারতে আর পাওয়া যেত না। তিনি শুনেছিলেন, শ্রীলঙ্কায় সেই গ্রন্থের একটি সিংহলি টীকা রক্ষিত আছে। সেটি পড়ার জন্য তিনি সিংহলে যাত্রা করেন।[11]

কথিত আছে, শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুর মহাবিহারের ভিক্ষুদের দ্বারা সংগৃহীত ও সংরক্ষিত বহু টীকাগ্রন্থ বুদ্ধঘোষ অধ্যয়ন করেছিলেন।[12] সিংহলি ভাষায় রচিত টীকাসংগ্রহকে একটিমাত্র সংক্ষিপ্ত পালি টীকা গ্রন্থের আকারে রচনার জন্য তিনি অনুমতি প্রার্থনা করেন।[13] প্রবীণ ভিক্ষুরা প্রথমে বুদ্ধঘোষের জ্ঞান পরীক্ষা করার জন্য তাকে সুত্ত থেকে দুটি সূত্রের মতবাদ-সংক্রান্ত অর্থ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে বলেন। বুদ্ধঘোষ বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থটি রচনা করে সুত্তদুটির ব্যাখ্যা দেন।[14] এরপর দেবতারা এই কাজে হস্তক্ষেপ করে তার গ্রন্থটি লুকিয়ে ফেললে বুদ্ধঘোষকে পুনরায় পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। দুইবার তাকে গ্রন্থের লুপ্তাংশ থেকে গ্রন্থটি পুনরুদ্ধার করতে হয়।[15] যখন সম্পূর্ণ তিপিটকের সারসংক্ষেপ তিনটি পুথির আকারে পাওয়া যায় এবং সেগুলি সব দিক থেকে সঠিক বলে বিবেচিত হয়, তখনই ভিক্ষুরা বুদ্ধঘোষকে তাদের সম্পূর্ণ টীকাসংগ্রহ অধ্যয়নের অনুমতি দেন।[13]

এরপর বুদ্ধঘোষ তিপিটকের অন্যান্য প্রধান গ্রন্থগুলির অনেকগুলির উপর টীকা রচনা করেন। তার রচনা বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রের সর্বাধিক প্রামাণ্য থেরবাদী ব্যাখ্যায় পরিণত হয়।[2] কথিত আছে, অনুরাধাপুর মহাবিহারে রক্ষিত সম্পূর্ণ সিংহলি টীকাসংগ্রহের সারসংক্ষেপ রচনা বা অনুবাদের পর বুদ্ধঘোষ ভারতে ফিরে বোধগয়ায় তীর্থযাত্রা করেন এবং বোধিবৃক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।[13]

মহাবংশ গ্রন্থের বিবরণটির যাথার্থতা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যাচাই করা যায়নি। পাশ্চাত্য গবেষকরা মনে করেন, এই বিবরণের মধ্যে কিংবদন্তি উপাখ্যানও (যেমন, দেবতাদের দ্বারা বুদ্ধঘোষের গ্রন্থ লুকিয়ে রাখার বর্ণনা) মিশে রয়েছে। তবে বিরুদ্ধ কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় এই গ্রন্থের বিবরণকে সঠিক বলে মেনে নেওয়া হয়েছে।[13] মহাবংশ অনুসারে, বুদ্ধঘোষ উত্তর ভারতে বোধগয়ার কাছে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার টীকাগ্রন্থের উপসংহারে ভারতের একটি মাত্র স্থানেরই উল্লেখ আছে এবং সেটি তার সাময়িক বাসস্থান হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। এই স্থানটি হল দক্ষিণ ভারতের কাঞ্চী[5] কোনো কোনো গবেষক (এঁদের মধ্যে রয়েছেন অসকার ফন হিনুবার ও পোলওয়াত্তে বুদ্ধদত্ত থের) মনে করেন, বুদ্ধঘোষ দক্ষিণ ভারতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে রচিত জীবনীগ্রন্থগুলিতে বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অঞ্চলের সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করার জন্য তার জন্মস্থান উত্তর ভারত বলে উল্লেখ করা হয়।[5]

পরবর্তীকালে রচিত বুদ্ধঘোষুপ্পত্তি নামক জীবনীগ্রন্থটিকে পাশ্চাত্য গবেষকরা ইতিহাস না বলে কিংবদন্তি বলাই সমীচীন মনে করেন।[16] এই গ্রন্থে মহাবংশ গ্রন্থের উপাখ্যানটিই কিছু বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হয়েছে। এতে বুদ্ধঘোষের পিতামাতা, তার গ্রাম, কয়েকটি নাটকীয় ঘটনা, বুদ্ধঘোষের পিতার ধর্মান্তরণ ও একটি বুদ্ধঘোষের বিচারসভায় বুদ্ধঘোষের ভূমিকার উল্লেখ করা হয়েছে।[17] যে সিংহলি মূল গ্রন্থগুলি থেকে বুদ্ধঘোষ পালি টীকা রচনা করেছিলেন, সেগুলি পালি টীকা রচনার পর কিভাবে নষ্ট হয়েছিল, তার বিবরণও এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। এই গ্রন্থ দাবি করে, টীকা রচনার পর বুদ্ধঘোষ মূল টীকাগুলি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন।[18]

রচনা ও অনুবাদ

তিপিটকের সিংহলি টীকাগুলির একটি বৃহৎ অংশের সারাংশ রচনা ও অনুবাদের কাজ করেছিলেন বুদ্ধঘোষ। তার বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থটি থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের একটি প্রামাণ্য নির্দেশিকা। এই গ্রন্থ আজও পঠিত ও অধীত হয়।[19][20][21] মহাবংশ গ্রন্থে বুদ্ধঘোষের রচনা হিসেবে অনেকগুলি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। এগুলির কোনো কোনোটি তার রচনা নয় বলেই অনুমিত হয়। সম্ভবত পরবর্তীকালে রচিত হয়ে এই গ্রন্থগুলি বুদ্ধঘোষের রচনা বলে চালানো হয়েছে।[22]

অট্টকথা নামে একটি গ্রন্থ বুদ্ধঘোষের রচনা বলে পরিচিত। এই গ্রন্থ থেকে তিপিটকের বুদ্ধঘোষ-রচিত চোদ্দটি টীকার একটি তালিকা দেওয়া হল:[23]

তিপিটক বুদ্ধঘোষের
টীকা
বিনয় পিটক
থেকে
বিনয় (সাধারণ) সামন্তপাসাদিকা
পতিমোক্ষকঙ্খবিতরণি
সুত্ত পিটক
থেকে
দিঘ নিকায় সুমঙ্গলবিলাসিনী
মঝঝিম নিকায় পপঞ্চসুদনি
সংযুক্ত নিকায় সারত্থপপকাসিনি
অঙ্গুত্তর নিকায় মনোরথপুরনি
from the
খুদ্দক নিকায়
খুদ্দকপাঠপরমাত্থজোতিকা (এক)
ধম্মপদধম্মপদ-অট্টকথা
সুত্ত নিপাত পরমাত্থজোতিকা (দুই),
সুত্তনিপাত-অট্টকথা
জাতক জাতকাত্থবন্ননা,
জাতক-অট্টকথা
অভিধম্ম পিটক
থেকে
ধম্মসঙ্গনিঅট্টশালিনী
বিভঙ্গসম্মোহবিনোদিনী
ধাতুকথা পঞ্চপকরনট্টকথা
পুগ্‌গলপন্নত্তি
কথাবত্তু
যমক
পত্থনা

প্রথাগত বিবরণ অনুসারে বুদ্ধঘোষ উপরিউক্ত সবকটি টীকাই রচনা করেছিলেন। তবে গবেষকরা এখন এই বিষয়ে একমত যে, শুধুমাত্র বিশুদ্ধিমাগ্‌গ ও প্রথম চারটি নিকায়ের টীকাই বুদ্ধঘোষের রচনা।[24]

প্রভাব ও উত্তরাধিকার

টেমপ্লেট:Theravada Buddhism ১২শ শতাব্দীতে রাজা প্রথম পরাক্রমবাহু কর্তৃক শ্রীলঙ্কার ভিক্ষু সম্প্রদায়ের পুনর্মিলন ঘটানোর পর শ্রীলঙ্কার ভিক্ষু সারিপুত্ত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের প্রধান পণ্ডিতের মর্যাদা লাভ করেন।[3] সারিপুত্ত বুদ্ধঘোষের অনেক রচনা নিজের টীকার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[3] পরবর্তী বছরগুলিতে শ্রীলঙ্কার মহাবিহার শাখার মতবাদগত যথার্থতা ও পাণ্ডিত্যের জন্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক থেরবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রীলঙ্কায় আসেন।[3] এর ফলে মহাবিহার ধারার শিক্ষা এবং তার মাধ্যমে বুদ্ধঘোষের টীকা সারা বিশ্বে প্রসার লাভ করে।[3] এরপর থেকে বুদ্ধঘোষের টীকাগুলি থেরবাদ ধর্মগ্রন্থগুলি বোঝার ক্ষেত্রে প্রামাণ্য পদ্ধতির স্বীকৃতি পায় এবং থেরবাদ মতবাদে বুদ্ধঘোষ সর্বোচ্চ ব্যাখ্যাকর্তার মর্যাদা লাভ করেন।[14]

পরবর্তীকালে বুদ্ধঘোষের খ্যাতি ও প্রভাব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়। তার জীবনকাহিনি নথিভুক্ত করা হয়। বুদ্ধঘোসুপ্পত্তি নামক পালি কালপঞ্জি গ্রন্থে বিস্তারিত এবং সম্ভবত অতিরঞ্জিত আকারে তার জীবনী লিখিত হয়।[14] তাকে সাধারণ বিশ্বাস অনুসারে জন্মসূত্রে ভারতীয় মনে করা হলেও, ব্রহ্মদেশে বৌদ্ধধর্ম|ব্রহ্মদেশের মোন জাতি পরবর্তীকালে তাকে সেই জাতিভুক্ত বলে দাবি করে। এই দাবির কারণ ছিল থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের বিকাশে শ্রীলঙ্কার উপরে তাদের প্রাধান্য স্থাপনের একটি চেষ্টা।[25] অন্যান্য গবেষকরা মনে করেন, মোন নথিতে অপর একজনের উল্লেখ রয়েছে, যাঁর নাম ও জীবনীর সঙ্গে ভারতীয় বুদ্ধঘোষের কিছু মিল রয়েছে।[16]

বুদ্ধঘোষের রচনা থেরবাদী ধর্মগ্রন্থের ভাষা হিসেবে পালি ভাষার পুনরুত্থান ও সংসক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে এই ভাষা শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের থেরবাদী দেশগুলির পণ্ডিতদের যোগাযোগ-রক্ষাকারী ভাষায় পরিণত হয়। সম্ভবত পালি ও সিংহলি ভাষায় থেরবাদী মতবাদের নতুন ব্যাখ্যার বিকাশ বুদ্ধঘোষের আগমনের আগে রুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।[26] ভারতে বৌদ্ধ দর্শনের নতুন নতুন শাখার (যেমন মহাযান) উত্থান ঘটছিল। এই শাখাগুলির মধ্যে অনেক শাখাই ধ্রুপদি সংস্কৃত ভাষাকে ধর্মগ্রন্থ ও দার্শনিক আলোচনার ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল।[26] মহাবিহারের ভিক্ষুরা পালি ভাষায় অধ্যয়ন ও গ্রন্থরচনা এবং মহাবংশ গ্রন্থে উল্লিখিত ভারত থেকে অবলুপ্ত সূত্রগুলির অধ্যয়নের মাধ্যমে এই সব শাখার বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন।[27] সাহিত্যের ভাষা হিসেবে পালি ভাষার পুনরুত্থানের একটি নিদর্শন দীপবংশবিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থদুটির রচনা। দুটি গ্রন্থই শ্রীলঙ্কায় বুদ্ধঘোষের আগমনের অল্প কিছুকাল পরে রচিত হয়।[6] বুদ্ধঘোষের রচনাগুলির মধ্যে প্রাচীনতম সিংহলি টীকাগুলির সারমর্ম নিহিত ছিল। সেকালের থেরবাদ শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে ব্যবহৃত পালি ভাষায় এই গ্রন্থগুলি রচিত হয়। এগুলি পালি ভাষা ও থেরবাদ বৌদ্ধিক ধারার পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণা জোগায়। সম্ভবত ভারতের মূল ভূখণ্ডে নতুন বৌদ্ধ শাখাগুলির উত্থানের ফলে থেরবাদ যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, তার বিরুদ্ধেও এই গ্রন্থগুলি ব্যবহৃত হয়।[28]

কোনো কোনো গবেষকের মতে, বুদ্ধঘোষের রচনার মধ্যে একটি শক্তিশালী অথচ অস্বীকৃত যোগাচার বৌদ্ধ প্রভাব লক্ষিত হয়। পরবর্তীকালে থেরবাদ শাখায় বুদ্ধঘোষের বিশেষ প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই যোগাচার বৌদ্ধ প্রভাবটি থেরবাদ মতবাদের নির্ণায়ক হয়।[29]

সমালোচনা

বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থে বুদ্ধের সময় থেকে পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে তার বাণীর ব্যাখ্যার পরিবর্তনগুলি প্রতিফলিত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান বৌদ্ধ ভিক্ষু শ্রাবস্তী ধাম্মিকা সমসাময়িক ধর্মানুশীলনের সমালোচনা করেছেন।[30] তার মতে, বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থে প্রদর্শিত পথে চলে সত্যই নির্বাণ লাভ করা যায় না বলেই বুদ্ধঘোষ বিশ্বাস করতেন:[30]

এমনকি বুদ্ধঘোষও বিশ্বাস করতেন না যে, থেরবাদী ধর্মানুশীলনের মাধ্যমে নির্বাণলাভ সম্ভব। তাঁর বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থটিকে বোধিলাভের একটি বিস্তারিত ও স্তরবিশিষ্ট গ্রন্থ মনে করা হয়। কিন্তু উপসংহারে [...] তিনি বলেছেন যে, তিনি আশা করেন বিশুদ্ধিমাগ্‌গ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি যে প্রজ্ঞা অর্জন করেছেন, তাঁর ফলে তিনি স্বর্গে পুনর্জন্ম গ্রহণ করবেন এবং মেত্তেয়ের (মৈত্রেয়) আবির্ভাব পর্যন্ত সেখানেই বাস করবেন। মেত্তেয় তাঁর শিক্ষার কথা শুনবেন এবং তারপর তিনি বোধিলাভ করবেন।[30][note 1]

অন্যদিকে নাণামোলি বলেছেন যে, এই উপসংহারটি মূল পালি গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।[33][note 2]

কালুপাহনের মতে, বুদ্ধঘোষ মহাযান মতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই মতবাদে রক্ষণশীল থেরবাদ ধারণাগুলির সঙ্গে সূক্ষভাবে নতুন ধারণা নিহিত ছিল। ধীরে ধীরে এর থেকে অধিবিদ্যামূলক প্রবণতাগুলি বিকাশ লাভ করে, যা প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের অনত্তা ধারণার প্রতি গুরুত্বারোপের পরিপন্থী ছিল।[35]

টীকা

  1. Devotion to Metteya was common in South Asia from early in the Buddhist era, and is believed to have been particularly popular during Buddhaghosa's era.[31][32]
  2. In the final words of the conclusion of the original Pali text says: "This Path of Purification was made by the elder who is [...] an ornament in the lineage of the elders who dwell in the Great Monastery and who are shining lights in the lineage of elders with unblemished enlightenment.[34]

তথ্যসূত্র

  1. (v. Hinüber 1996, পৃ. 103) is more specific, estimating dates for Buddhaghosa of 370–450 CE based on the Mahavamsa and other sources. Following the Mahavamsa, (Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxvi) places Buddhaghosa's arrival as coming during the reign of King Mahanama, between 412 and 434 CE.
  2. Strong 2004, পৃ. 75।
  3. (Crosby 2004, পৃ. 837)
  4. Gombrich 2012, পৃ. 51।
  5. (v. Hinüber 1996, পৃ. 102)
  6. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxviii।
  7. Gray 1892
  8. Rhys Davids & Stede, 1921-25, Pali-English Dictionary আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে, Pali Text Society.
  9. (Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxix)
  10. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxix-xxx।
  11. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxiv।
  12. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxii।
  13. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxv।
  14. Strong 2004, পৃ. 76।
  15. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxc।
  16. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxix।
  17. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxvii-xxxviii।
  18. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxviii।
  19. Stede, W. (অক্টোবর ১৯৫১)। "The Visuddhimagga of Buddhaghosācariya by Henry Clarke Warren; Dharmananda Kosambi"। The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland (3/4): 210–211। জেস্টোর 25222520
  20. Stede, D. A. L. (১৯৫৩)। "Visuddhimagga of Buddhaghosācariya by Henry Clarke Warren; Dharmananda Kosambi"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies, University of London15 (2): 415। doi:10.1017/s0041977x00111346জেস্টোর 608574
  21. Edgerton, Franklin (জানুয়ারি ১৯৫২)। "Visuddhimagga of Buddhaghosācariya by Henry Clarke Warren; Dharmananda Kosambi"। Philosophy East and West1 (4): 84–85। doi:10.2307/1397003জেস্টোর 1397003
  22. (v. Hinüber 1996, পৃ. 103)
  23. Table based on (Bullitt 2002) For translations see Atthakatha
  24. For instance, regarding the Khuddha Nikaya commentaries, (v. Hinüber 1996, পৃ. 130–1) writes:
    Neither Pj [Paramattha-jotika] I nor Pj II can be dated, not even in relation to each other, except that both presuppose Buddhaghosa. In spite of the 'Buddhaghosa colophon' added to both commentaries ... no immediate relation to Buddhaghosa can be recognized.... Both Ja [Jataka-atthavannana] and Dhp-a [Dhammapada-atthakatha] are traditionally ascribed to Buddhaghosa, an assumption which has been rightly questioned by modern research....
  25. (Pranke 2004, পৃ. 574)
  26. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxvii।
  27. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxvii-xxviii।
  28. Bhikkhu Ñāṇamoli 1999, পৃ. xxxix-x।
  29. Buddhist Phenomenology: A Philosophical Investigation of Yogācāra Buddhism by Dan Lusthaus. RoutledgeCurzom: 2002 আইএসবিএন ০৭০০৭১১৮৬৪ pg 106 n 30
  30. The Broken Buddha by S. Dhammika, see p.13 of 80, Quote: “Even Buddhaghosa did not really believe that Theravada practice could lead to Nirvana. His Visuddhimagga is supposed to be a detailed, step by step guide to enlightenment. And yet in the postscript [...] he says he hopes that the merit he has earned by writing the Vishuddhimagga will allow him to be reborn in heaven, abide there until Metteyya (Maitreya) appears, hear his teaching and then attain enlightenment.”
  31. Sponberg 2004, পৃ. 737–738।
  32. "Maitreya (Buddhism) -- Britannica Online Encyclopedia"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৮
  33. Nanamoli, page 743
  34. "Visuddhimagga. The Path of Purification by Bhadantacariya Buddhaghosa. Translated by Bhikkhu Nanamoli copyright 1975, 1991 Buddhist Publication Society" (PDF)। ১২ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৬
  35. Kalupahana 1994

গ্রন্থপঞ্জি

  • Bhikkhu Ñāṇamoli (১৯৯৯), "Introduction", Buddhaghosa, Visuddhimagga: The Path of Purification, Bhikkhu Ñāṇamoli কর্তৃক অনূদিত, Seattle: Buddhist Publication Society, আইএসবিএন 1-928706-01-0
  • Bullitt, John T. (২০০২), Beyond the Tipitaka: A Field Guide to Post-canonical Pali Literature, সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-০৭
  • Crosby, Kate (২০০৪), "Theravada", Buswell, Jr., Robert E., Macmillan Encyclopedia of Buddhism, USA: Macmillan Reference USA, পৃষ্ঠা 836–841, আইএসবিএন 0-02-865910-4
  • Gray, James, trans. (১৮৯২), Buddhaghosuppatti or the Historical Romance of the Rise and Career of Buddhaghosa, London: Luzac
  • Hinüber, Oskar von (১৯৯৬), A Handbook of Pali Literature, New Delhi: Munshiram Manoharal Publishers Pvt. Ltd., আইএসবিএন 81-215-0778-2
  • Kalupahana, David J. (১৯৯৪), A history of Buddhist philosophy, Delhi: Motilal Banarsidass Publishers Private Limited
  • Pranke, Patrick A. (২০০৪), "Myanmar", Buswell, Jr., Robert E., Macmillan Encyclopedia of Buddhism, USA: Macmillan Reference USA, পৃষ্ঠা 574–577, আইএসবিএন 0-02-865910-4
  • Rogers, Henry Thomas, trans. (1870): Buddhaghosha's Parables / translated from Burmese. With an Introduction, containing Buddha's Dhammapada, or "Path of Virtue" / transl. from Pâli by F. Max Müller, London: Trübner.
  • Sponberg, Alan (২০০৪), "Maitreya", Buswell, Jr., Robert E., Macmillan Encyclopedia of Buddhism, USA: Macmillan Reference USA, আইএসবিএন 0-02-865910-4
  • Strong, John (২০০৪), "Buddhaghosa", Buswell, Jr., Robert E., Macmillan Encyclopedia of Buddhism, USA: Macmillan Reference USA, পৃষ্ঠা 75, আইএসবিএন 0-02-865910-4

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

  • টেমপ্লেট:Ppn
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.