ছোট সর্দার বাড়ি (পানাম নগর)

সর্দার বাড়ি সোনারগাঁ এ অবস্থিত একটি সুদৃশ্য ভবন। এটি বর্তমান লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের সীমানায় এবং পানাম নগর থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে দুটি বাঁধানো পুকুরের মাঝে অবস্থিত।

ছোট সর্দার বাড়ি, সোনারগাঁ

প্রাচীন ইতিহাস

প্রাচীন মুসলিম শাসনামলে ১২৯৬ থেকে ১৬০৮ সাল পর্যন্ত সোনারগাঁ বাংলা প্রদেশের রাজধানী ছিল। এরপর রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে সোনারগাঁর প্রাধান্য কমে যায়। দুটি ভাগবিশিষ্ট সর্দারবাড়ির ছোট প্রবেশমুখের ভাগটিতে একটি দেয়াললিখন থেকে জানা যায় যে এই ভবনের পিছনে চারপাশের তিনটি ভবন মুঘল আমলের প্রথমদিকে নির্মিত। মধ্যভাগের লাল বর্গাকার ভবনটি বাংলার বারো ভূইয়ার সময় নির্মিত হয়েছে। সামনের অংশ ১৯০২ সালে নির্মাণ করা হয়। এর নিচতলায় ৪৭টি এবং দ্বিতীয় তলায় ৩৮টি কক্ষ বিদ্যমান।[1]

আধুনিক পর্যায়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় পর বাংলাদেশ সরকার এটি অধিগ্রহণ করে এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় রক্ষিত হয়। আশির দশকের প্রথমদিকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি উদ্ধার এবং আংশিক সংস্কার সাধন করে। তখন এটিকে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর (ন্যাশনাল ফোক আর্ট এন্ড ক্রাফট মিউজিয়াম) হিসেবে গড়ে তোলা হয়।[1]

২০১২ সালের দিকে ‘সিএসআর’ (কর্পোরেট সোসিয়াল রেসপন্সিবিলিটি) অর্থাৎ সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কোরীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইয়ংওয়ান করপোরেশন ২০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে সর্দার বাড়িটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।[2]

স্থাপত্যশৈলী

পশ্চিম ও দক্ষিণদিকে এর দুটি সুসজ্জিত প্রবেশ রয়েছে। দক্ষিণের প্রবেশমুখের বারান্দাটি ২৫ ফুট দীর্ঘ এবং কাদামাটির ফুলপাতা ও চিনামাটির কাটা টুকরার নকশাসজ্জিত অর্ধবৃত্তাকার তোরণের সঙ্গে যুক্ত। বাঁকা তোরণটির নকশায় মোজাইকের মত বিভিন্ন লতাপাতা ও জ্যামিতিক আকৃতির ব্যবহার দেখা যায়। তোরণটির উভয়দিকে তিনটি ছোট গোলাকার স্তম্ভ ও দুটি বড় করিন্থিয়ান স্তম্ভ রয়েছে- যেগুলোর প্রত্যেকটি ক্রমান্বয়ে সাদা ও কালো মোজাইকের সর্পিল বলয় দ্বারা সজ্জিত। উভয়দিকের অর্ধবৃত্তাকার চূড়াযুক্ত জানালাগুলোও সরু করিন্থীয় স্তম্ভ দ্বারা স্থাপিত। বারান্দার উপরের প্যারাপেট মুক্ত লতাপাতার নকশায় সাজানো। উপরের দেয়ালের লিখনে এর নির্মাণকাল ১৩০৮ বঙ্গাব্দ লেখা আছে।

সম্পূর্ণ আয়তাকার ব্লকটি দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন। এতে বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ৭০টি কক্ষ আছে। পূর্বদিকে ৫০ ফুট * ৫০ ফুট আর পশ্চিম দিকে ৫০ ফুট* ২৫ ফুট খোলা আঙিনা রয়েছে। দক্ষিণের বারান্দাটির তিনদিকে কামরা এব পূর্বপার্শ্বে একটি কৃষ্ণমন্দির আছে। মন্দির বা নাটমণ্ডপের একটি বৃহদাকার বারান্দা আছে, যা চিনামাটির টুকরার মোজাইক শোভিত চারটি করিন্থিয়ান স্তম্ভ দ্বারা স্থাপিত। অন্য তিন পাশের কামরাগুলোতে অর্ধবৃত্তাকার তোরণ রয়েছে।

সুসজ্জিত পশ্চিম দুয়ারে ইটের তৈরী বাঁধানো ঘাটসহ একটি দিঘি বিদ্যমান, যার পাড়ে দুজন ইংরেজ অশ্বারোহীর মানবাকারপরিমিত মূর্তি রয়েছে।[3]

চিত্রশালা

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.