সোনাকান্দা দুর্গ
সোনাকান্দা দুর্গ মুঘল আমলে নির্মিত একটি জল দুর্গ।[2] এটি ১৬৫০ সালের দিকে তৎকালীন বাংলার সুবাদার মীর জুমলা কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এটি নারায়ণগঞ্জে জেলার বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষা নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। সপ্তদশ শতকে ঢাকা শহরকে বহিঃ শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে যে তিনটি জল দুর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল সোনাকান্দা দুর্গ তারমধ্যে অন্যতম।[3]
সোনাকান্দা দুর্গ | |
---|---|
সোনাকান্দা দুর্গ | |
নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ | |
![]() সোনাকান্দা দুর্গ | |
![]() ![]() সোনাকান্দা দুর্গ | |
ধরন | জল দুর্গ |
সাইটের তথ্য | |
নিয়ন্ত্রন করে | প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা বিভাগ |
জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত | হ্যাঁ |
অবস্থা | পুনঃনির্মাণ |
সাইটের ইতিহাস | |
নির্মিত | ১৬১০/১৬৫০ [1] |
নির্মাতা | মীর জুমলা ইসলাম খান[1] |
ইতিহাস
১৫৫৭ সালে মুঘল সেনাপতি মুনিম খানের নিকট দাউদ খান কিররানির পরাজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে আসে। মুঘলরা বাংলায় একটি প্রগতিশীল শাসন ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাকে বহিঃ শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে দৃঢ় নীতি গ্রহণ করেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মীর জুমলাকে তৎকালীন বাংলা প্রদেশের সুবাদার বা গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি জলদস্যু দ্বারা বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলোতে লুটতরাজ চালানোর ব্যাপারে অবগত ছিলেন। জলদস্যু্দের আক্রমন থেকে রাজধানী ঢাকাকে রক্ষা করতে তিনি ঢাকার আশেপাশে তিনটি জল দুর্গ নির্মাণ এর সিদ্ধান্ত নেন। নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গ তারমধ্যে একটি। [3]
এই দুর্গ নির্মাণের তারিখ সম্বলিত কোন শিলালিপি পাওয়া যায় নি তবে ঐতিহাসিকদের মতে এটি ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। [4]
অবকাঠামো
দুর্গটিতে রয়েছে ইষ্টক নির্মিত পুরু দেয়াল, একটি বিশাল কামান প্ল্যাটফর্ম এবং উত্তরমুখি একটি প্রবেশ তোরন[1] দুর্গটিতে মূলত দুটি প্রধান অংশ লক্ষ্য করা যায়. এক আত্মরক্ষামূলক প্রাচীর এর বিশাল আয়তন যা ৩.০৫ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন এবং যার মধ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য বহুসংখ্যক প্রশস্ত-অপ্রশস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। যা থেকে বন্দুক এবং হালকা কামান ব্যবহার করে জলদস্যুদের দিকে শেল নিক্ষেপ করা যেত। অপরটি হচ্ছে পশ্চিমদিকের উচু মঞ্চ যা দুর্গকে জলদস্যুর আক্রমন থেকে রক্ষা করত।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হচ্ছে দুর্গের বিশাল কামান প্ল্যাটফর্ম।গোলাকার কামান প্ল্যাটফর্মের একটি সিঁড়ি রয়েছে, কামান প্ল্যাটফর্মের উঁচু মঞ্চে শক্তিশালী কামান নদীপথে আক্রমণকারীদের দিকে তাক করা থাকত। এটি মুগলদের জলদুর্গের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। চতুর্ভুজাকৃতির এ দুর্গটির আয়তন ৮৬.৫৬ মি থেকে ৫৭.০ মি। এখানে অষ্টভুজাকৃতির চারটি বুরুজ দুর্গের চার কোণে রয়েছে। [1] দুর্গের একমাত্র প্রবেশ তোরণটি উত্তর দিকে্ট। প্রবেশদ্বারটি একটি আয়তাকার ফ্রেমএর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।
জনশ্রুতি
জল দুর্গকে ঘিরে নানারকম কল্পকাহিনী প্রচিলিত রয়েছে। যেমন-
- বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ী শীতলক্ষ্যা নদীতে স্নান করতে গিয়ে জলদস্যু দ্বারা অপহৃত হন। সোনার গাঁর শাসক ঈশা খাঁ তাকে উদ্ধার করে দুর্গে নিয়ে আসেন ও তার পিতাকে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কেদার রায় তাকে মুসলমানের ঘরে রাত কাটানোর দায়ে ফিরিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মর্মাহত রাজকুমারী স্বর্ণময়ী দুর্গে বসে কেঁদেছিলেন বলে এই দুর্গের নাম হয় সোনাকান্দা।[5]
- বারোভুঁইয়াদের অন্যতম নেতা ঈশাখাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনা বিবিকে জোড়পূর্বক বিয়ে করে এনে এই দুর্গে বন্দী করে রেখেছিলেন। তিনি দুর্গে বসে কেঁদেছিলেন বলে এই দুর্গের নাম হয় সোনাকান্দা। [6]
- কিছু মানুষ বিশ্বাস করত যে দুর্গের ভেতরের গুপ্ত সুড়ঙ্গ দিয়ে সোনারগাঁও এবং ঢাকার লালবাগ কেল্লা র সাথে সংযোগ ছিল। [4]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে সোনাকান্দা দুর্গ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- "Sonakanda Fort"। Banglapedia। ২০১৪-০৩-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।
- "নারায়ণগঞ্জের আশপাশে"। bdnews24.com। ২০১৪-০৩-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।
- "সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য"। Daily Jugantor। ২০১৫-০১-২৬। Archived from the original on জানুয়ারি ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।
- "মোগলদুর্গে বৈশাখী মেলা"। Prothom Alo। ২০১০-০৪-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।
- "সোনাকান্দা জলদুর্গ নারায়ণগঞ্জ"। Kalerkantho। ২০১০-০৫-১০। Archived from the original on জানুয়ারি ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।
- "সোনাকান্দা দুর্গ"। Alokito Bangladesh। ২০১৪-০৭-১১। Archived from the original on জানুয়ারি ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-৩০।