শিয়া ইসলাম

শিয়া ইসলাম (আরবি: شيعة, শীআ'হ্‌) ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়। শিয়া ইসলাম অনুসরণকারীদের শিইতি বা শিয়া বলা হয়। “শিয়া” হল ঐতিহাসিক বাক্য “শিয়াতু আলি” (شيعة علي) এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ “আলি অনুগামীরা” বা “আলির দল”।[1][2][3][4][5] শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো, আলি এবং ফাতিমার বংশের মাধ্যমে নবি পরিবারের (আহলে বাইত) লোকেরাই হলেন ইমামত বা নেতৃত্বের প্রধান দাবীদার; তাই আলি খিলাফতের প্রশ্নে আবু বকর, উমর ও উসমানের মুকাবেলায় অগ্রাধিকারী। শিয়ারা বিশ্বাস করে ইসলামের সর্বশেষ নবী গাদির খুমের ঘটনার (The event of Ghadir Khumm) মাধ্যমে তাকেই খিলাফতের জন্য মনোনীত করে গিয়েছিলেন।[6] আবু বকর ছিলেন বনু তাইম গোত্রের, উমর বনু আদি গোত্রের, উসমান বনু উমাইয়া গোত্রের কিন্তু আলি মুহাম্মদের হাশেমি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া আলি একাধারে প্রথম পুরুষ মুসলিম, ইসলামের রাসুলের চাচাতো ভাই, রাসুলের জামাতা, রাসুলের দৌহিত্র হাসান ও হোসেনের পিতা ও রাসুলের সেনাপতি ছিলেন। রাসুলের কোনো পুত্রসন্তান ছিলনা এবং দৌহিত্রা (হাসান, হোসেন) শিশু ছিলেন। এসবদিক বিবেচনায় রাসুলের ইন্তেকালের পর আলিই নেতৃত্বের সর্বাধিক যোগ্য বলে শিয়া মুসলিমগণ মনে করেন। তারা আলি ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধেও আলিকে সমর্থন করেন। পরবর্তীতে মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের সেনাবাহিনী আলির পুত্র হোসেনকে হত্যা করলে শিয়া মুসলিমরা খিলাফতের প্রতি পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং হোসেনপুত্র জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমে আলি ও ইসলামের রাসুলের বংশধরদের মধ্যে থেকে ইমামতের নীতি অনুসরণ করতে থাকে।

ইসলামের অন্য স্কুলের মতো, শিয়া ইসলাম ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ, পবিত্র কুরআন এবং ইসলামের সর্বশেষ নবী[7] এর জীবনাদর্শের উপর প্রধান গুরুত্ব দেয়।[8] তবে তারা আব্বাসিয় শাসনামলে (হিজরি ৩য় শতকে) সংকলিত সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের তুলনায় আহলে বাইতের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদিস সমূহকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করে। শিয়া মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, শুধুমাত্র আল্লাহই ইসলাম, কুরআন এবং শরিয়াত রক্ষা করার জন্য একজন প্রতিনিধি (নবী এবং ইমাম) নির্বাচন করতে পারেন[9], সাধারণ মুসলমানরা পারে না। যার কারণে শিয়ারা ইসলাম এবং কুরআনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জনগণ যে আবু বকর, উমর এবং উসমানকে নির্বাচন করেছেন তা অনুসরণ করে না। এই জন্য শিয়ারা আলিকে চতুর্থ খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করেন। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, অনেক বর্ণনা রয়েছে যেখানে ইসলামের নবী তার উত্তরাধিকারী হিসাবে আলিকে নির্বাচিত করেছিলেন।[10][11]

ইরান, ইরাক, বাহরাইন, আজারবাইজান, লেবানন, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাছাড়া সিরিয়া, কুয়েত, জর্ডান, ফিলিস্তিন, সউদি আরব, ভারত, পাকিস্তানেও প্রচুর শিয়া মুস্লিমদের বসবাস।

শিয়া ইসলামের ইমাম সমুহ

  1. ইমামুল মুত্তাকীন আলি
  2. ইমাম হাসান মুজতাবা
  3. ইমাম আবু আব্দিল্লাহ হোসাইন
  4. ইমাম সাজ্জাদ আলি জয়নুল আবেদিন
  5. ইমাম মোহাম্মদ বাকির ইবনে আলি
  6. ইমাম আবা আব্দিল্লাহ জাফর সাদিক
  7. ইমাম আবুল হাসান মুসা কাজিম
  8. ইমাম আবুল হাসান আলি রেজা
  9. ইমাম মোহাম্মদ জাওয়াদ ত্বকি
  10. ইমাম আলি নাকি ইবনে মোহাম্মদ
  11. ইমাম আবু মোহাম্মদ হাসান আস্কারি
  12. আয়ুহাল কায়েম মুন্তাযারাল মাহাদী

বারো ইমামের তালিকা

১মআলি ইবন আবি তালিব৬০০ - ৬৬১ 'Alī ibn Abī Ṭālib , Amīru al-Mu'minīn নামেও পরিচিত
২য়হাসান ইবনে আলি৬২৫ – ৬৬৯ Ḥasan ibn 'Alī , Al-Hasan al-Mujtaba নামেও পরিচিত
৩য়হুসাইন ইবনে আলি৬২৬ – ৬৮০ Ḥusayn ibn 'Alī , Al-Husayn ash-Shaheed নামেও পরিচিত
৪র্থজয়নাল আবেদিন৬৫৮ – ৭১৩ 'Alī ibn Ḥusayn , Ali Zayn al-'Abideen নামেও পরিচিত
৫মমুহাম্মদ আল বাকির৬৭৬ – ৭৪৩ Muḥammad ibn 'Alī , Muhammad al-Bāqir নামেও পরিচিত
৬ষ্ঠজাফর আল সাদিক৭০৩ – ৭৬৫ Ja'far ibn Muḥammad , Ja'far aṣ-Ṣādiq নামেও পরিচিত
৭মমুসা আল কাদিম৭৪৫ – ৭৯৯ Mūsá ibn Ja'far , Mūsá al-Kāżim নামেও পরিচিত
৮মআলি আর-রিজা৭৬৫ – ৮১৮ 'Alī ibn Mūsá , Ali ar-Riża নামেও পরিচিত
৯মমুহাম্মদ আল তকি৮১০ – ৮৩৫ Muḥammad ibn 'Alī , Muḥammad al-Jawad এবং Muḥammad at-Taqi নামেও পরিচিত
১০মআলি আল হাদি৮২৭ – ৮৬৮ 'Alī ibn Muḥammad , Alī al-Ḥādī এবং ""Alī an-Naqī নামেও পরিচিত
১১তমহাসান আল আসকারি৮৪৬ – ৮৭৪ Ḥasan ibn 'Alī , Hasan al Askari নামেও পরিচিত
১২তমমুহাম্মাদ আল মাহদি৮৬৯ – In occultation Muhammad ibn Ḥasan , al-Hujjat ibn al-Ḥasan, Imam al-Mahdī, Imam al-Aṣr, ইত্যাদি নামেও পরিচিত

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. The New Encyclopædia Britannica, Jacob E. Safra, Chairman of the Board, 15th Edition, Encyclopædia Britannica, Inc., 1998, আইএসবিএন ০-৮৫২২৯-৬৬৩-০, Vol 10, p. 738
  2. "The Term "Shia" in Quran and Hadith"। Al-islam.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৪
  3. "Central Intelligence Agency"। Cia.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৪
  4. "Encyclopedia - Britannica Online Encyclopedia"। Britannica.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৪
  5. "Major Branches of Religions"। Adherents.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৪
  6. ড. আহমদ আমীন (লেখক), আবু তাহের মেসবাহ (অনুবাদক) (২০০৪)। দুহাল ইসলাম (ইসলামী ইতিহাসের কৈশোর) ২য় খণ্ড। বাংলাদেশ: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১৮৭–১৯০। আইএসবিএন 9840608045।
  7. "Esposito, John. "What Everyone Needs to Know about Islam." Oxford University Press, 2002 | আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫১৫৭১৩-০. p. 40
  8. "From the article on Shii Islam in Oxford Islamic Studies Online"। Oxfordislamicstudies.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৫-০৪
  9. কুরআন 2:30 “"I will create a vicegerent on earth."”, কুরআন 38:26 “"O David! We did indeed make thee a vicegerent on earth"”, কুরআন 28:68 “"Thy Lord does create and choose as He pleases: no choice have they (in the matter)"”
  10. সহীহ বুখারী, “"...The Prophet Muhammad said to 'Ali, "Will you not be pleased from this that you are to me like Aaron was to Moses?"” ৫:৫৭:৫৬ (ইংরেজি), কুরআন 19:53 “And, out of Our Mercy, We gave him his brother Aaron, (also) a prophet.”
  11. Tarikh at-Tabari, vol. 2, pp. 62-63; Tarikh al-Kamil, vol. 2, pp. 40-41; Musnad Ahmad ibn Hanbal, vol. 1, p. 111; Ibn Abi'l-Hadid, Sharh Nahj al-Balaghah, vol. 13, pp. 210-212, "(Prophet Muhammad said) Verily, he ('Ali) is my brother, the executor of my will and my successor among you. So, listen to him and obey him."

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.