ইসলামি অর্থনীতি

ইসলামী অর্থনীতি (আরবি: الاقتصاد الإسلامي) হলো কুরআনসুন্নাহ মোতাবেক অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থা।[1] ইসলামী কৃষ্টি ও তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই ইসলামী অর্থনীতি। প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন- ইসলামী অর্থনীতি হলো জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নীতি-পদ্ধতি অনুসরণে সৃষ্টির লালন-পালনের যাবতীয় জাগতিক সম্পদের সামগ্রিক কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাপনাই ইসলামী অর্থনীতি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ডঃ এম নেজাতুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন- "ইসলামী অর্থনীতি সমকালীন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের জবাব"। ডঃ এম এ মান্নান বলেন- "ইসলামী অর্থনীতি হলো একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে"।

মাওলানা হিফযুর রহমান (র.) বলেন, "শরী'আতের পরিভাষায়, যে বিদ্যা বা জ্ঞানের মাধ্যমে এমন সব উপায় সম্বন্ধে জ্ঞাত হওয়া যায়; যার দ্বারা ধন-সম্পদ আহরণ ও ব্যয়ের উপযুক্ত ও সঠিক ,পন্থা এবং বিনষ্ট হওয়ার প্রকৃত কারণ নির্দেশ করা হয়, তাকে 'ইসলামী অর্থনীতি' (ইলমুল ইকতিসাদ) বলা হয় ।"[2]

ইসলামী অর্থনীতির গুরুত্ব, উদ্দেশ্য এবং সফলতা

ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলা আবশ্যক, অনুরূপভাবে অর্থ উপার্জন ও ব্যয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধান মেনে চলা আবশ্যক । অর্থনৈতিক জীবনে যাতে ভারসাম্য ক্ষুণ্ন না হয় এর জন্য হালাল-হারামের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে । গরীব যেন অনাহারে-অর্ধাহারে মারা না যায় সেজন্য যাকাত, উশর, খারাজ ইত্যাদির বিধান রাখা হয়েছে । এমনিভাবে ধনবৈষম্য সৃষ্টিকারী শোষণমূলক সুদ, জুয়া, লটারী, কালোবাজারী, মওজুদদারী, ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল ইত্যাদি উপার্জনের পন্থাকে হারাম করা হয়েছে । বস্তুত ইসলামী অর্থব্যবস্থায় কোনোরূপ যুলুম, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবকাশ নেই । মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে এর বাস্তবতা দেখা যায় । যে আরবের অধিবাসীরা একসময় বৈষম্য ও দারিদ্রের শিকার ছিল, ইসলামী অর্থনীতির স্পর্শে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাতে এমন পরিবর্তন সাধিত হলো যে, যাকাতের অর্থ নেওয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যেত না ।[3]

রূপরেখা

ইসলামিক অর্থনীতির মৌলিক রূপরেখা হলো-

  1. কোরআন ও সুন্নাহর নৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।[4][5]
  2. যাকাত,জিজিয়া কর ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল ও সুদ[6] বর্জিত অর্থনীতি।

মূলনীতি

কিছু মুসলিম পন্ডিতের মত অনুযায়ী, মূলত সাতটি প্রধান মূলনীতি হল ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি। এই মূলনীতিগুলোর নিরিখেই অর্থনীতির সকল কর্মকৌশল, কর্মপদ্ধতি ও কর্মদ্যোগ নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। এগুলো যথাক্রমে:[7]

  1. সকল ক্ষেত্রে আমর বিল মারুফ এবং নেহী আনিল মুনকার-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অর্জন;
  2. সকল কর্মকাণ্ডেই শরীয়াহর বিধান মান্য করা;
  3. আদল (বা ন্যয়বিচার) ও ইহসান (বা কল্যাণ) - প্রয়োগ;
  4. ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা;
  5. ভারসাম্যপূর্ন জীবন যাপনের প্রয়াস;
  6. মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরন নিশ্চত করা; এবং
  7. যুগপৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Mat, Ismail; Ismail, Yusof। "A Review of Fiqh al-Mua'malat Subjects in Economics and Related Programs at International Islamic University Malaysia and University of Brunei Darussalam" (PDF)kantakji.com। পৃষ্ঠা 1। ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৫
  2. ইসলাম কা ইকতিসাদী নিযাম, মাওলানা হিফযুর রহমান (র.), পৃষ্ঠা. ১৭।
  3. দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম সংস্করন : ফেব্রুয়ারি ২০১২, ফাল্গুন ১৪১৮, রবিউল আউয়াল : ১৪৩৩ , পৃষ্ঠা : ৪৬২ আইএসবিএন ৯৮৪-০৬-০৫৬০-৭
  4. The economic system in contemporary Islamic thought: Interpretation and assessment ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ মে ২০১৬ তারিখে, by Timur Kuran, International Journal of Middle East Studies, 18, 1986, pp. 135–64
  5. Karim, Shafiel A. (২০১০)। The Islamic Moral Economy: A Study of Islamic Money and Financial Instruments। Boca Raton, FL: Brown Walker Press। আইএসবিএন 978-1-59942-539-9।
  6. কুরআন 2:276
  7. হাবীবুর রহমান, শাহ্‌ মুহাম্মদ (এপ্রিল ২০০৫)। ইসলামী অর্থনীতি নির্বাচিত প্রবন্ধ। বিনোদপুর বাজার, রাজশাহী-৬২০৬: দি রাজশাহী স্টুডেন্ট’স ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা নং– ১০।


This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.