হিরণ্যকশিপু
হিরণ্যকশিপু ছিলেন হিন্দু ধর্মে বর্ণিত জনৈক দৈত্যরাজ। তিনি পরম বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের পিতা।
জন্ম রহস্য
মহর্ষি কশ্যপের ঔরসে তৎপত্নী দিতির গর্ভে এই দৈত্যের জন্ম হয়। তার ভাইয়ের নাম হিরণ্যাক্ষ। হিরণ্যাক্ষ বিষ্ণু’র হাতে নিহত হলে হিরণ্যকশিপু ব্রহ্মা’র কঠোর তপস্যায় নিযুক্ত হয় এবং তার নিকট এরূপ বর প্রাপ্ত হয় যে, সে জীব-জন্তু ও যে-কোন অস্ত্রের অ-বধ্য হবে এবং ভূতলে, জলে বা শূণ্যে ও দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা তার মৃত্যু হবে না। এরূপ বরে প্রচণ্ডভাবে দৃপ্ত ও উজ্জীবিত হয়ে হিরণ্যকশিপু যথেচ্ছাচার নিয়ম-কানুন করে রাজ্যশাসন করতে লাগল।
হিরণ্যকশিপু ও প্রহ্লাদ
হিরণ্যকশিপু’র পত্নীর নাম কয়াধু। তার গর্ভে চারটি পুত্র জন্মে। তন্মধ্যে প্রহ্লাদ সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। এছাড়াও, প্রহ্লাদ পরম বিষ্ণুভক্ত ছিলেন, কিন্তু হিরণ্যকশিপু ঘোর বিষ্ণুদ্বেষী ছিলেন।
বিষ্ণুদ্বেষী হিরণ্যকশিপু’র মৃত্যু
পিতার তাড়নায় এবং শিক্ষকের উপদেশে প্রহ্লাদ হরিনাম ত্যাগ না করায় হিরণ্যকশিপু তার প্রাণনাশের আদেশ দিলেন। বিষাক্ত সাপের বিষ প্রয়োগ, প্রজ্জ্বলিত আগুন, গভীর জলে ডুবানো, হাতির পদতলে পৃষ্ট হওয়াসহ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের মৃত্যু হয়নি দেখে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে নিজ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুই এ সমস্ত বিপদ, সংকট হতে কিভাবে পরিত্রাণ পেলে?” প্রহ্লাদ হিরণ্যকশিপু’র প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “সর্ববিপদভঞ্জন হরিই আমাকে এ সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেছেন”। এরপর হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর হরি কোথায় থাকে রে?” প্রত্যুত্তরে শিশু প্রহ্লাদ বললেন, “তিনি সবসময়, সব জায়গায় অবস্থান করেন।” দৈত্যরাজ পুণরায় তাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর হরি এক্ষণে এ স্ফটিকস্তম্ভে আছে কি?” প্রহ্লাদ উত্তর দিলেন, “আছেন বৈ-কি!” এ কথা শুনে প্রচণ্ড গর্জন করে দৈত্য হিরণ্যকশিপু ঐ স্ফটিকস্তম্ভ পা দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন। ঐ মূহুর্তেই তা হতে এক নরসিংহ মূর্তি নির্গত হয়ে হিরণ্যকশিপুকে স্বীয় দুই উরুর উপর রেখে দিন ও রাতের সন্ধিকালে নখ দিয়ে রক্তাক্ত করে সংহার করে।
তথ্যসূত্র
- সুবলচন্দ্র মিত্র, সরল বাঙ্গালা অভিধান, নিউ বেঙ্গল প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৯৫।