আধুনিক প্রমিত আরবি

আধুনিক প্রমিত আরবি (আরবি: اللغة العربية الفصحى আল-লুঘাত উল-'আরাবীয়াত উল-ফুস়হ্বা) বা প্রমিত আরবি বা সাহিত্যিক আরবি হল আরবি ভাষার প্রমিত ও সাহিত্যিক প্রকার যা সাহিত্যে এবং আনুষ্ঠানিক কথোপকথনে আরব বিশ্বে ব্যবহার হয়।

আধুনিক প্রমিত আরবি
العربية الفصحى, عربي فصيح
[টীকা 1]
লিখিত আরবিতে al-ʻArabīyah (নাসখ লিপি)
উচ্চারণ/al ʕaraˈbijja lˈfusˤħaː/, বৈচিত্র দেখুন [টীকা 2]
অঞ্চলপ্রধানত আরব লীগে, মধ্যপ্রাচ্যে, উত্তর আফ্রিকায় এবং আফ্রিকার অন্তরীপে;
ইসলামের পবিত্র ভাষা
মাতৃভাষী
কেউ নয়[1]
(শুধুমাত্র দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে)
আফ্রো-এশীয়
  • সেমিটিয়
    • মধ্য সেমিটিয়
      • আরবি
        • আধুনিক প্রমিত আরবি
পূর্বসূরীরা
আদি আরবি
  • ধ্রুপদী আরবি
আরবি লিপি
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা
২৮টি দেশের সরকারি ভাষা (ইংরেজি এবং ফরাসির পর তৃতীয় বৃহত্তম[2])
নিয়ন্ত্রক সংস্থা
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-৩arb
ভাষাবিদ তালিকা
arb-mod
গ্লোটোলগstan1318[3]
আরব বিশ্বে আধুনিক প্রমিত আরবির সরকারি ভাষা হিসাবে বিন্যাস।
সবুজ: শুধুমাত্র সরকারি ভাষা; নীল: সরকারি ভাষার মধ্যে একটি.

অধিকাংশ পশ্চিমা পন্ডিতদের মতে প্রমিত আরবি দুই প্রকারের: ধ্রুপদী আরবি (اللغة العربية التراثية আল-লুঘা আল-'আরাবীয়া আত-তুরাথীয়া), যা কুরআন এবং ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দী অবধি সাহিত্যে ব্যবহার হত, এবং আধুনিক প্রমিত আরবি (اللغة العربية المعيارية الحديثة আল-লুঘা আল-'আরাবীয়া আল-মি'য়ারীয়া আল-হ্বাদীথা)। আধুনিক প্রমিত আরবি ধ্রুপদী আরবির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, এবং আরবির এই দুই প্রকারের পার্থক্য সরাসরি লিখিত এবং কথিত ভাষার আধুনিকিকরণ এবং সরলীকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধিকাংশ আরব বক্তা এই দুই ভাষাকে একই ভাষার দুটি ভিন্ন রূপ হিসাবে মনে করেন। এই দুই রূপকে আরবিতে বলা হয় فصحى العصر (ফুস়হ্বা আল-আস়র) আধুনিক প্রমিত আরবি এবং فصحى التراث ( ফুস়হ্বা আত-তুরাথ) ধ্রুপদী আরবি।[4]

ধ্রুপদী আরবি

ধ্রুপদী আরবি, যা কুরআনের আরবি নামেও পরিচিত, কুরআনে এবং ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দীর উমাইয়া খিলাফতআব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার অসংখ্য সাহিত্য গ্রন্থে ব্যবহৃত ভাষা। অনেক মুসলমান কুরআনকে তার মূল ভাষায় পাঠ করার জন্য ধ্রুপদী আরবি অধ্যয়ন করেন। এটা লক্ষ্যনীয় যে ইসলামি যুগের শুরুর দিকে লিখিত ধ্রুপদী আরবিতে মৌলিক পরিবর্তন আসে। আবু আল-আসওয়াদ আল-দুয়ালী, আল-খলিল ইবনে আহমদ আল-ফারাহীদী এবং অন্যান্য পণ্ডিতগণ এই সময় একই রকম দেখতে বর্ণের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য বিন্দু ব্যবহার এবং উচ্চারণ চিহ্নিত করার জন্য ধ্বনিনির্দেশক তাশকীল ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। ধ্রুপদী আরবি প্রাচীন যুগে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং আফ্রিকার অন্তরীপে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল।

আধুনিক প্রমিত আরবি

আধুনিক প্রমিত আরবি মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং আফ্রিকার অন্তরীপ জুড়ে একটি সাহিত্যিক মানদণ্ড, এবং জাতিসংঘের ছয়টি সরকারি ভাষাগুলির মধ্যে একটি। আরব লীগের অধিকাংশ মুদ্রিত সামগ্রী যেমন বই, সংবাদপত্র, পত্রিকা, সরকারি নথি এবং শিশুপাঠ্য বই আধুনিক প্রমিত আরবিতে লিখিত হয়। এর প্রচলন উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল । "চলিত" আরবি বলতে সেই অঞ্চলে ব্যবহৃত ধ্রুপদী আরবি থেকে উৎপন্ন বহু আঞ্চলিক উপভাষাকে বোঝায়, এবং এটি প্রথম ভাষা হিসেবে শেখা হয় , তবে যে দেশগুলিতে সেখানকার স্থানীয় ভাষা প্রথম ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয় সেখানে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে এটি শেখা হয়। এই উপভাষাগুলি সাধারণত লেখায় ব্যবহার হয় না, যদিও কিছু সংখ্যক লেখা (বিশেষত নাটক, কবিতা এবং গান) এখনো বিদ্যমান। আধুনিক প্রমিত আরবি আরব লীগের সব দেশগুলির সরকারি ভাষা, এবং ভাষার একমাত্র রূপ যা বিদ্যালয়গুলিতে সব পর্যায়ে শেখানো হয়। উপরন্তু, কিছু খ্রিস্টান আরবি ভাষাভাষীরা এই ভাষাতে প্রার্থনা পড়েন, যেহেতু এটি সাহিত্যের ভাষা বলে মনে করা হয়, বাইবেল ধ্রুপদী আরবি ছাড়াও আধুনিক প্রমিত আরবিতেও লেখা হয়। আধুনিক প্রমিত আরবি কুরআনের আধুনিক সংস্করণেও ব্যবহার করা হয় এবং কিছু মুসলিম আরবি ভাষাভাষীরা এটিতে নামাজ পড়েন; উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার অসংখ্য সাহিত্যের সংশোধিত সংস্করণও আধুনিক প্রমিত আরবিতে লেখা হয়।

আধুনিক কালে আরবি ভাষার সমাজভাষাতাত্ত্বিক পরিস্থিতি দ্বিভাষারূপিতার একটি প্রধান উদাহরণ প্রদান করে।[5] দ্বিভাষারূপিতা হচ্ছে একই ভাষা সম্প্রদায়ের দ্বারা একই ভাষার দুটি ভিন্ন প্রকারকে দুটি ভিন্ন সামাজিক প্রক্ষাপটে ব্যবহার করা। ঠিক যেমন কয়েক দশক আগে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে হত; বলার জন্য চলিত ভাষা এবং লেখার জন্য সাধু ভাষা ব্যবহার হত। এই দ্বিভাষিরূপিতা কোড-সুইচিঙকে জন্ম দেয়, যার ফলে বক্তা একই কথোপকথনে ভাষার দুটি উপভাষার মধ্যে আনাগোনা করে। যারা নিজের দেশের স্থানীয় ভাষাকে প্রথম ভাষা হিসাবে এবং চলিত আরবিরে কোন উপভাষাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে, তারা আধুনিক প্রমিত আরবিকে তৃতীয় ভাষা হিসাবে ব্যবহার করেন। আরব বিশ্বের বাইরে আরব বংশোদ্ভুত মানুষরা, যারা ভিন্ন উপভাষায় কথা বলেন, তারা যখন একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেন তখন তারা নিজেদের মধ্যে আধুনিক প্রমিত আরবিতে কথা বলেন।

ধ্রুপদী আরবি আদর্শ হিসাবে বিবেচিত হয়; কিছু সমসাময়িক লেখক ধ্রুপদী ব্যাকরণবিদদের (যেমন সীবাওয়াই) দ্বারা নির্ধারিত বাক্য ও ব্যাকরণগত নিয়মগুলি অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করেন এবং ধ্রুপদী অভিধানগুলিতে (যেমন লিসান আল-আরব لِسَان العَرَب) বর্ণিত শব্দভান্ডার ব্যবহার করার চেষ্টা করেন।

অন্য ভাষার থেকে নেওয়া হোক (উদা: فلم ফিল্ম) বা বিদ্যমান শব্দভান্ডার থেকে উদ্ভূত হোক, আধুনিকতার অত্যাবশ্যকতার জন্য অনেকগুলি শব্দ আধুনিক প্রমিত আরবিতে গ্রহণ করা হয়েছে যা একটি ধ্রুপদী লেখকের কাছে রহস্যজনক হতে পারে। বিদেশী ভাষা বা স্থানীয় ভাষা থেকে কাঠামোগত প্রভাবও আধুনিক প্রমিত আরবিকে প্রভাবিত করেছে: উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক প্রমিত আরবি রচনায় কখনও কখনও তালিকার ক্ষেত্রে "ক, খ, গ, এবং ঘ" বিন্যাস ব্যবহার করে, কিন্তু ধ্রুপদী আরবি "ক এবং খ এবং গ এবং ঘ" ব্যবহার করে, এবং ধ্রুপদী আরবি ভাষার তুলনায় আধুনিক প্রমিত আরবিতে আদ্য-উদ্দেশ্য বাক্য বেশি প্রচলিত।[6] এই কারণগুলির জন্য, আধুনিক প্রমিত আরবিতে সাধারণত অ-আরবি উৎসগুলিতে আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হয়।[7] আধুনিক প্রমিত আরবির বক্তারা সবসময় ধ্রুপদী আরবির ব্যাকরণের জটিল নিয়ম পালন করেন না। আধুনিক প্রমিত আরবি মূলত তিনটি ক্ষেত্রে ধ্রুপদী আরবির থেকে পৃথক: শব্দভান্ডার, রচন শৈলী, এবং প্রান্তস্থ কিছু উদ্ভাবন যা কঠোরভাবে ধ্রুপদী কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। সামগ্রিকভাবে, আধুনিক স্ট্যান্ডার্ড আরবি সমপ্রকৃতির নয়: এমন কিছু লেখক আছেন যারা ধ্রুপদী শৈলী ঘেঁষা গঠনশৈলী ব্যবহার করেন আবার কেউ কেউ নতুন শৈলীর নিদর্শন তৈরি করার চেষ্টা করেন।[8] এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় আরবি ভাষার প্রকারের প্রভাব এবং বিদেশী ভাষা, যেমন আফ্রিকায় এবং লেবাননে ফরাসি বা মিশর, জর্দান, এবং অন্যান্য দেশে ইংরেজির প্রভাবের উপর নির্ভর করে শব্দভান্ডারের আঞ্চলিক পার্থক্য।[9] আধুনিক প্রমিত আরবি যেহেতু ধ্রুপদী আরবির একটি সংশোধিত এবং সরলীকৃত রূপ, আধুনিক প্রমিত আরবি ধ্রুপদী আরবিতে ব্যবহৃত অপ্রচলিত শব্দগুলি বর্জন করেছে। দ্বিভাষারূপিতার কারণে বিভিন্ন আরবি উপভাষা অবাধে আধুনিক প্রমিত আরবি থেকে শব্দ "ঋণ" নেয়, ঠিক যেমন নব্য ভারতীয়-আর্য ভাষাগুলি সংস্কৃত থেকে শব্দ ঋণ নিয়ে থাকে; বিভিন্ন চলিত উপভাষায় শিক্ষিত বক্তারা এই ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমে কথা বলে থাকেন। আধুনিক প্রমিত আরবিতে জোরে পাঠ করা ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে, কারণ ধ্রুপদী আরবির তুলনায় কম কঠোর নিয়ম ব্যবহার, বিশেষত বিভক্তি ত্যাগ করা, এবং এর ফলে এটি আরবির কথিত প্রকারগুলির কাছাকাছি হয়ে উঠছে।

স্থানীয় শব্দের, ঋণশব্দের, বিদেশী শব্দের উচ্চারণ আধুনিক প্রমিত আরবিতে শিথিল, নামজ্ঞাপক শব্দ বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিভিন্ন বক্তার দ্বারা বিভিন্নভাবে উচ্চারিত বা বানান করা হয়। উচ্চারণ ব্যক্তির শিক্ষা, ভাষাগত জ্ঞান এবং দক্ষতার উপরেও নির্ভরশীল। ধ্রুপদী আরবিতে অনুপস্থিত ধ্বনি কথা ভাষাগুলিতে বিদ্যমান থাকতে পারে: ব্যঞ্জনধ্বনি - [v], [p], [t͡ʃ] (প্রায়শই [t]+[ʃ] হিসাবে প্রতীত হয়), কিন্তু সবসময় বিশেষ বর্ণ দিয়ে নাও লেখা হতে পারে; এবং স্বরধ্বনি - [o], [e] (হ্রস্ব ও দীর্ঘ), [e~i] এবং [o~u] পরিবর্তিত ধ্বনিগুলি বোঝানোর জন্য কোন বিশেষ বর্ণ নেই, কিন্তু o এবং e (হ্রস্ব ও দীর্ঘ) উচ্চারণ আরবির চলিত প্রকারগুলিতে এবং আধুনিক প্রমিত আরবির কিছু বিদেশী শব্দে আছে। আটপৌরে উপভাষাগুলির উচ্চারণের পার্থক্যের কারণ হচ্ছে অন্যান্য ভাষা যা আগে ব্যবহার হত বা এখনও ওই অঞ্চলগুলিতে ব্যবহার হয়, যেমন মিশরে কোপটিক, উত্তর আফ্রিকাতে ফরাসি, উসমানীয় তুর্কি ভাষা, ইতালীয়, স্পেনীয়, বর্বর ভাষা, পুনীয় ভাষা বা ফিনিসীয়, ইয়েমেনে হিময়ারীয়, আধুনিক দক্ষিণ আরব ভাষা এবং প্রাচীন দক্ষিণ আরব ভাষা এবং লেভ্যান্টে আরামীয়

ধ্বনিতত্ত্ব

ব্যঞ্জনধ্বনি

আধুনিক প্রমিত আরবি ব্যঞ্জনধ্বনি স্বনিম
ওষ্ঠ্য দন্ত্য দন্তমূলীয় পশ্চাদ্দন্তমূলীয় তালব্য পশ্চাত্তালব্য অলিজিহ্ব্য গলনালীয় কণ্ঠনালীয়
সাধারণ গলনালীভূত
নাসিক্য m م n ن
স্পর্শ অঘোষ t ت ط k ك q ق ʔ ء
সঘোষ b ب d د ض d͡ʒ ج
উষ্ম অঘোষ f ف θ ث s س ص ʃ ش x ~ χ خ ħ ح h ه
সঘোষ ð ذ z ز ðˤ ظ ɣ ~ ʁ غ ʕ ع
কম্পনজাত r ر
নৈকট্য l ل (ɫ) j ي w و

টিকা:

  • /ɫ/ স্বনিমটি শুধুমাত্র الله /aɫːaːh/ ('আল্লাহ্') এবং এই শব্দ থেকে উৎপন্ন শব্দগুলিতে পাওয়া যায়.[10]

স্বরধ্বনি

ধ্রুপদী আরবির মতো আধুনিক প্রমিত আরবিরও তিন জোড়া হ্রস্ব এবং দীর্ঘ স্বরধ্বনি আছে:

আধুনিক প্রমিত আরবি স্বরধ্বনি স্বনিম
হ্রস্ব দীর্ঘ
সম্মুখ পশ্চাৎ সম্মুখ পশ্চাৎ
সংবৃত i u
বিবৃত a

টিকা:

  • উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়া জুড়ে, /i/ গলনালীভূত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং [q], [r], [ħ], [ʕ]-র আগে বা সংলগ্ন অবস্থায় [ɪ ~ e ~ ɨ] হিসাবে প্রতীত হয়। /u/-ও [ʊ ~ o ~ ʉ] হিসাবে প্রতীত হতে পারে। এগুলি বিদেশী শব্দে স্বতন্ত্র স্বনিম, কখনও হ্রস্ব এবং র্দীঘ স্বরের ক্ষেত্রে একই মান থাকে আবার কখনও আলাদা হয়।
  • মিশরে সংবৃত স্বরধ্বনিগুলির ভিন্ন মান হয়; অক্ষরের আদিতে বা মধ্যে হ্রস্ব স্বর: /i, u/-র বদলে → [e], [o]। কিছু কিছু উপভাষায় /i~ɪ/ এবং /u~ʊ/ যথাক্রমে /e/ এবং /o/-তে সম্পুর্ণভাবে পরিণত হয়।
  • গলনালীভূত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং [q] এবং [r]-র আগে /a/ এবং //-র পূরক ধ্বনিগুলি হল [ɑ] এবং [ɑː]; অন্যান্য ক্ষেত্রে [æ] এবং [æː]
  • গলনালীভূত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং [q], [r], [ħ], [ʕ]-র আগে বা সংলগ্ন অবস্থায় /iː/-র পূরক ধ্বনিগুলি হল [ɪː]~[ɨː]
  • গলনালীভূত ব্যঞ্জনবর্ণ এবং [q], [r], [ħ], [ʕ]-র আগে বা সংলগ্ন অবস্থায় /uː/-র পূরক ধ্বনিগুলি হল [ʊː]~[ɤː]~[]
  • অশ্বাসঘাতিয় অন্তিয় দীর্ঘস্বর /aː, iː, uː/ প্রায়শই হ্রস্ব করা হয়: /aː/  [æ ~ ɑ], /iː/  /i/, /uː/  [o~u].

আধুনিক প্রমিত আরবি এবং ধ্রুপদী আরবির মধ্যে পার্থক্য

আধুনিক প্রমিত আরবি এবং ধ্রুপদী আরবির মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপ্তি ভাষাবিজ্ঞানের তিনটি শ্রেণী জুড়ে: বাক্য-গঠন, পরিভাষা এবং উচ্চারণ (বিশেষত তাশকীলের ক্ষেত্রে)। বিরামচিহ্ন এবং লেখার শৈলী ব্যবহারের মধ্যেও পার্থক্য স্পষ্ট।

এটা উল্লেখ্য যে আরবি ভাষাভাষীর মানুষরা এই দুই প্রকারের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য পার্থক্য খুঁজে পান না, এবং কখনও কখনও একই নাম দ্বারা উভয় প্রকারকেই উল্লেখ করে থাকেন: আল-আরাবীয়াত উল-ফুশহা, "সবচেয়ে প্রাচুর্যপূর্ণ আরবি ভাষা"।

বাক্য গঠনের পার্থক্য

ধ্রুপদী আরবিতে ব্যবহৃত জটিল বাক্য এবং শব্দ গঠন প্রক্রীয়াকে আধুনিক প্রমিত আরবিতে সরলীকরণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরুপ বিশেষ্য পদগুচ্ছ এবং আংশিক-বাক্যের পরিবর্তে ক্রীয়া বাক্য ব্যবহার করা, পদগুচ্ছীয় বিশেষণ ব্যবহার না করা এবং পদমর্যাদা এবং চাকুরিগত উপাধির ক্ষেত্রে স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার করা।[11]

পরিভাষার পার্থক্য

আধুনিক প্রমিত আরবি এবং ধ্রুপদী আরবি যে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক তা হল পরিভাষা। প্রযুক্তি, সাহিত্য ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার প্রয়োজনীয়তা থেকে এই পার্থক্যের জন্ম হয়েছে। এই সমস্ত পরিভাষার অধিকাংশরই ধ্রুপদী আরবিতে অস্তিত্ব ছিল না। অ-আরবিয় পরিভাষার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রমিত আরবির গ্রহণযোগ্যতার প্রবনতা বেশি। বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় অর্ধে আরবি ভাষা একাডেমীর আধুনিক পরিভাষাকে শাস্ত্রিয় আরবি প্রথায় আরবিকরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আধুনিক কালের দ্রুত উন্নয়নের কারণে প্রতিবর্ণিকরণ হল পরিভাষার আরবিকরণের বিকল্প পদ্ধতি। [11][12]

উচ্চারণের পার্থক্য

আরবি লিপিতে যে সমস্ত উচ্চারণ নেই সেই সমস্ত উচ্চারণ আধুনিক প্রমিত আরবিতে ব্যবহার হয়, যেমন /g/ (গ), /p/ (প), এবং /v/ (ৱ)। এর ব্যবহার ধ্রুপদী আরবিতে পাওয়া যায় না। আবার অন্যদিকে ধ্রুপদী আরবিতে শব্দের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তাশকীল। কিন্তু আধুনিক প্রমিত আরবিতে তাশকীল শুধুমাত্র উচ্চারণের প্রয়োজনিয়তা অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়। আধুনিক প্রমিত আরবিতে বাক্যের শেষে, এমনকি কখনও বাক্যের মাঝখানেও, তাশকীল ব্যবহার করা হয় না।

যতিচিহ্নের পার্থক্য

আধুনিক প্রমিত আরবি অন্যান্য ভাষা থেকে বিভিন্ন যতিচিহ্ন গ্রহণ করেছে, এবং ধ্রুপদী আরবির কিছু চিহ্নের বিলোপ ঘটেছে। এর প্রধান কারণ আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মুদ্রণ ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার।

শৈলীর পার্থক্য

আধুনিক প্রমিত আরবি ধ্রুপদী আরবির রীতি অনুসরণ না করে আধুনিক লেখার রীতি, যেমন প্রবন্ধ, মতামত নিবন্ধ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে। এছাড়াও বিদেশি ভাষা থেকেও কিছু রীতি, যেমন ব্লগ, প্রদর্শিকা, ইত্যাদি, সরাসরি আমদানি করা হয়েছে। মকামার মত কিছু ধ্রুপদী লেখার রীতি সম্পুর্ণরূপে অবলুপ্ত হয়ে গেছে।

আঞ্চলিক প্রকারভেদ

আধুনিক প্রমিত আরবি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তুলনামূলকভাবে অভিন্ন। আঞ্চলিক বৈচিত্রগুলি দেশীয় কথ্য ভাষার প্রভাবের কারণে বিদ্যমান। যে সমস্ত টিভি সঞ্চালক আধুনিক প্রমিত আরবি লেখা দেখে সঞ্চালন করেন, তাদের বিশেষভাবে আদেশ করা হয় বিভিন্ন শব্দের উচ্চারণের সময় তাদের জাতিগত বৈশিষ্টতা (যেমন মিশরিয়দের ক্ষেত্রে ج জিম বর্ণটি "গ"-এর মতো উচ্চারণ) না ফুটে ওঠে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বক্তার অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, ষেমন শ্বাসাঘাত, স্বরধ্বনির প্রকৃত উচ্চারণ এবং অন্যান্য ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ, স্পষ্টত বোঝা যেতে পারে। যারা আধুনিক প্রমিত আরবি বলেন তারা উচ্চারণ, শব্দের ব্যবহার এবং ব্যাকরণগত রূপে কথ্য ভাষার সঙ্গে ধ্রুপদী ভাষার সংমিশ্রণ করেন। এই সংমিশ্রণ সংবাদ প্রতিবেদনের মতো আনুষ্ঠানিক লেখার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। বিনোদনের খবরের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে আধুনিক প্রমিত ভাষা এবং কথ্য ভাষার সংমিশ্রণ দেখা যায়।

বক্তা

আধুনিক প্রমিত আরবিতে শিক্ষিত ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে আরব লীগের বেশিরভাগ দেশে পাওয়া যায়। এটা অনুমান করা যেতে পারে যে এই অঞ্চলের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই হচ্ছে এই ভাষার বক্তার সংখ্যা, কারণ আরব লীগের বেশিরভাগ দেশেই বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক প্রমিত আরবি শেখা বাধ্যতামূলক। যারা এই ভাষাতে শিক্ষিত তারা আরও অনেক কম স্বক্রিয়ভাবে ব্যবহার করে থাকেন, কারণ তারা প্রধানত পড়া বা লেখার সময় এটা ব্যবহার করে থাকেন, বলার সময় নয়। উত্তর নাইজেরিয়ার ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিতরা (বিশেষ করে হাউসা এবং ফুলা জাতির মানুষরা) এই ভাষায় কথা বলে থাকেন।

বৃহত্তম জনসংখ্যা অনুযায়ী যে সমস্ত দেশে বিদ্যালয়ে আধুনিক প্রমিত আরবি পড়ানোর আদেশ আছে (তথ্য ২০০৮-২০১৪ সালের):

ব্যকরণ

উদাহরণ

বাংলা আরবি আধ্বব রোমানীকরণ (ALA-LC)
আরবিالعربية/alʕaraˈbij.ja/al-ʻArabīyah
নমস্কার/সালাম/হ্যালো/স্বাগতমمرحباً, أهلاً وسهلاً/marħabaː, ˈʔahlan wa ˈsahlaː/marḥabā, ahlan wa-sahlā
"আপনার উপর শান্তি (বর্ষিত) হোক"السلام عليكم/assaˈlaːmu ʕaˈlajkum/as-salāmu ʻalaykum
আপনি কেমন আছেন?
তুমি কেমন আছো?
كيف حالك؟/ˈkajfa ˈħaːluk/kayfa ḥāluk
আবার দেখা হবেإلى اللقاء/ʔila l.liqaːʔ/ilá al-liqāʼ
বিদায়مع السلامة/maʕa s.saˈlaːma/maʻa as-salāmah
অনুগ্রহ/ দয়া করেمن فضلك/min ˈfadˤlik/min faḍlik
ধন্যবাদشكراً/ˈʃukraː/shukrā
ওই(টা)ذلك/ˈðaːlik/dhālik
কতটা/ কতগুলি?كم؟/kam/kam?
ইংরেজিالإنجليزية/الإنكليزية/الإنقليزية(ভিন্ন হতে পারে) /alʔing(i)li(ː)ˈzij.ja/(ভিন্ন হতে পারে) al-inglīzīyah
আপনার নাম কী?
তোমার নাম কী?
ما اسمك؟/masmuk/ masmuka / -ki?
আমি জানি নাلا أعرف/laː ˈʔaʕrif/lā aʻrif

আরও দেখুন

  • আরবি ভাষা
  • আরবি ভাষার প্রকার
  • আরবি সাহিত্য
  • আরব লীগ
  • দেশের তালিকা যেখানে আরবি সরকারি ভাষা
  • আধুনিক লিখিত আরবির অভিধান
  • আরবি ধ্বনিতত্ত্ব
  • সাহায্য:আধ্বব/আরবি

টিকা

  1. শেষ বর্ণের বানান yāʼ মিশর, সুদান এবং অন্যান্য অঞ্চল যেমন ইয়েমেনে ভিন্ন হয়। সবসময় বিন্দু ছাড়া হয় ى, তাই عربى فصيح
  2. অঞ্চল অনুযায়ী উচ্চারণ ভিন্ন হয়। উদাহরণ:
    • লেভ্যান্ট: [al ʕaraˈbɪjja lˈfʊsˤħa], চলিত: [(e)l-]
    • হেজাজ: [al ʕaraˈbijjalˈfusˤħa]
    • পুর্ব-মধ্য আরব: [æl ʢɑrɑˈbɪjjɐ lˈfʊsˤʜɐ], চলিত: [el-]
    • মিশর: [æl ʕɑɾɑˈbejjɑ lˈfosˤħɑ], চলিত: [el-]
    • লিবিয়া: [æl ʕɑrˤɑˈbijjæ lˈfusˤħæ], চলিত: [əl-]
    • তিউনিশিয়া: [æl ʕɑrˤɑˈbeːjæ lˈfʊsˤħæ], চলিত: [el-]
    • আলজেরিয়া, মরক্কো: [æl ʕɑrˤɑbijjæ lfusˤħæ], চলিত: [l-]

তথ্যসূত্র

  1. এথ্‌নোলগে আধুনিক প্রমিত আরবি (১৮তম সংস্করণ, ২০১৫)
  2. রাইট, ২০০১, পৃ: ৪৯২.
  3. হ্যামারস্ট্রোম, হারাল্ড; ফোরকেল, রবার্ট; হাস্পেলম্যাথ, মার্টিন, সম্পাদকগণ (২০১৭)। "Standard Arabic"গ্লোটোলগ ৩.০ (ইংরেজি ভাষায়)। জেনা, জার্মানি: মানব ইতিহাস বিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট।
  4. এলগিবালি, আলা; বাদাউই, এল-সাইদ ম. (১৯৯৬)। Understanding Arabic: Essays in Contemporary Arabic Linguistics in Honor of El-Said M. Badawi। পৃষ্ঠা ১০৫।
  5. ফারঘালি, এ., শালান, কে. Arabic Natural Language Processing: Challenges and Solutions, ACM Transactions on Asian Language Information Processing (TALIP), the Association for Computing Machinery (ACM), 8(4)1-22, ডিসেম্বর ২০০৯.
  6. এলান এস. কায় (১৯৯১)। "The Hamzat"। Journal of the American Oriental Society। মার্কিন প্রাচ্য সমিতি। ১১১ (৩): ৫৭২–৫৭৪। doi:10.2307/604273জেস্টোর 604273
  7. লন্ডন আরবিক টিউশান
  8. আরবি উপভাষা
  9. উল্ফডায়ট্রিশ ফিশার, ১৯৯৭. "Classical Arabic," The Semitic Languages. লন্ডন: রুটলেজ. পৃ: ১৮৯.
  10. ওয়াটসন (২০০২:১৬)
  11. "আধুনিক_প্রমিত_আরবি (হোয়াইট পেপার)"msarabic.com। ২০১৮-০২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১৬ Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  12. محمد, د. علي। "ورقة عمل حول التعريب اللفظي في اللغة العربية"al-arabic.com। ২০১৬-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-২২
  13. "মিশরিয় সরকারি জনসংখ্যা ঘড়ি"। ৩০ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৮
  14. দ্যা ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক সংগৃহীত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  15. সিআইএ বিশ্ব ফ্যাক্টবুকে আলজেরিয়ার জনসংখ্যা
  16. "World Population Prospects, Table A.1" (PDF)। ২০০৮। United Nations Department of Economic and Social Affairs। ২০০৯: 17। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  17. ২০০৮ সুদান আদমশুমারি
  18. সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকে মরক্কোর জনসংখ্যা

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.