শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী

কুতুবউদ্দিন আহমেদ ইবনে আবদুল রহিম (আরবি: قطب الدین احمد ابن عبدالرحیم) শাহ ওয়ালিউল্লাহ বলেও পরিচিত (১৭০৩–১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দ / ১১১৪–১১৭৬হিজরি) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন ইসলামি পন্ডিত, সংস্কারক এবং আধুনিক ইসলামি চিন্তার একজন প্রতিষ্ঠাতা। সাম্প্রতিক পরিবর্তনের আলোকে তিনি ইসলামি আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন।[1][2]

ইসলামি পন্ডিত
শাহ ওয়ালিউল্লাহ
জন্ম(১৭০৩-০২-২১)২১ ফেব্রুয়ারি ১৭০৩ (১১১৪ হিজরি)
দিল্লি, ভারত
মৃত্যু২০ আগস্ট ১৭৬২(1762-08-20) (বয়স ৫৯) (১১৭৬ হিজরি)
দিল্লি, ভারত
মাজহাবহানাফি
শাখাসুন্নি ইসলাম
মূল আগ্রহফিকহ
লক্ষণীয় কাজহুজ্জাতুল বালিগা

জীবন

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর চার বছর পূর্বে ১৭০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বংশলতিকা উমর ইবনুল খাত্তাবের পরিবার পর্যন্ত পৌছায়।[3] দিল্লিতে তার পিতা শাহ আবদুল রহিম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা লাভ করেন। কুরআনের পাশাপাশি তিনি আরবিফারসি ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং উচ্চস্তরের দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, অতীন্দ্রিয়তা ও আইনশাস্ত্রের উপর পাঠ নেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি এখান থেকে উত্তীর্ণ হন। একই বছর তার পিতা তাকে নকশবন্দিয়া তরিকায় পদার্পণ ঘটান। মাদ্রাসায়ে রহিমিয়াতে তিনি তার পিতার মৃত্যুর অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৭১৮ সালের শেষের দিকে পিতার মৃত্যুর পর তিনি মাদ্রাসার প্রধান হন এবং বার বছর যাবত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেন। এসময় তিনি তার নিজস্ব পড়াশোনা চালিয়ে যান। শিক্ষক হিসেবে তার সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার্থীরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।[4][5]

১৭২৪ সালে তিনি হজ্জ পালনের জন্য হেজাজ গমন করেন। তিনি সেখানে আট বছর অবস্থান করেন এবং আবু তাহের বিন ইবরাহিম আল কুর্দি আল মাদানির মত পন্ডিতদের কাছ থেকে হাদিসফিকহ শিক্ষালাভ করেন। এসময় তিনি মুসলিম বিশ্বের সকল প্রান্তের লোকের সংস্পর্শে আসেন এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন।[3] এসময় তিনি সাতচল্লিশটি আধ্যাত্মিক বিষয় দেখতে পান যা তার বিখ্যাত রচনা ফুয়ুদ আল হারামাইনের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।[6]

১৭৩২ সালে তিনি দিল্লি ফিরে আসেন এবং ১৭৬২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনের বাকি সময় এখানে অতিবাহিত করেন ও লেখালেখি চালিয়ে যান। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল হুজ্জাতুল বালিগা। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অধিবিদ্যাসহ সম্পূর্ণ ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়েও তিনি লিখেছেন। ইসলামের প্রকৃত ও আদিরূপ বিষয়ে তার মত তিনি এসব লেখায় তুলে ধরেন।

মারাঠা শাসন থেকে ভারতকে জয় করার জন্য তিনি আহমেদ শাহ দুররানির কাছে চিঠি লেখেন।[7] তিনি আরবি থেকে ফারসিতে কুরআন অনুবাদ করেন যাতে মুসলিমরা কুরআনের শিক্ষা বুঝতে পারে।

তথ্যসূত্র

  1. Jalbani, G.N. (২০০৬)। Life of Shah Wali Allah (1st সংস্করণ)। New Delhi, India: Kitab Bhavan। আইএসবিএন 9788171513703।
  2. S.M. Ikram (১৯৬৪)। "XIX. A Century of Political Decline: 1707-1803"। Ainslie T. EmbreeMuslim civilization in India। New York: Columbia University Press। আইএসবিএন 9780231025805। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৩
  3. Sharif, M. M. (১৯৬৩)। A History of Muslim Philosophy: With short accounts of other Disciplines and the Modern Renaissance in the Muslim Lands (PDF)। Wiesbaden: Otto Harrassowitz। আইএসবিএন 9788175361461।
  4. Husain, M Hidayat (১৯১২)। "Al-Juz' al-Latif fi Tarjamat al-'Abd al-Da'if (English translation from Persian text)"। Journal of Asiatic Society of Bengal14: 161–175।
  5. Hermansen, transl. by Marcia K. (১৯৯৬)। The conclusive argument of God : Shāh Walī Allāh of Delhi's Ḥujjat Allāh al-Bāligha। Leiden [u.a.]: Brill। আইএসবিএন 9789004102989।
  6. Waliullah, Shah। Fuyud al-haramayn (Emanations or Spiritual Visions of Makkah and Madina)
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.