মুঘল তাহখানা
মুঘল তাহখানা (ফার্সি: تاهخانا), বা শাহ সুজার তাহখানা একটি তিনতলা বিশিষ্ট রাজ প্রাসাদ। তোহাখানা ফার্সি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির পিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তোহাখানা নামে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি. দূরেুত্বে অবস্থিত শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স বা তোহাখানা অবস্থিত।[1]
মুঘল তাহখানা | |
---|---|
![]() মুঘল তাহখানার সম্মুখ চিত্র | |
সাধারণ তথ্য | |
স্থাপত্য রীতি | গৌড় |
অবস্থান | ছোট সোনা মসজিদ |
ঠিকানা | শিবগঞ্জ উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা, রাজশাহী বিভাগ |
শহর | চাঁপাই নবাবগঞ্জ |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৪.৮১৭৭৪৩° উত্তর ৮৮.১৩৭৩৩৮° পূর্ব |
স্বত্বাধিকারী | প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ১ |
অন্যান্য তথ্য | |
কহ্ম সংখ্যা | ১ |
_Complex_of_Shah_Suja_19.jpg)
ইতিহাস
বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা তার মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকলে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তার মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন।[2] জনশ্রুতি আছে যে-শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মোরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন।[3] তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরো নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।
- তাহখানার খোদাইকৃত কারুকার্য
- তাহখানার প্রাচীন স্তম্ভ
গঠন
গৌড়ের মত সুপ্রাচীন স্থাপত্যকর্ম তাহখানা ছাড়া অন্যত্র তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। এর ছাদ এবং দেয়ালগুলো কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি। মসজিদ এবং তাহখানা উভয়েই 'দাফে-উল-বালাহ' নামক জলাধারের পাশে অবস্থিত। দুটি বাধানো সিড়ি জলাধারের পানির নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। মূল প্রাসাদের উত্তর পশ্চিম দিকে আরও দুটি ভবন রয়েছে। এদের মধ্যে নিকটস্থটি হলো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং অন্যটি হলো বাঁধানো বারান্দা সহ একটি গম্বুজবিশিষ্ট সমাধি। ভবনগুলো প্রায় একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এদের একত্রে একটি কমপ্লেক্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ভবনটি মূলত ইট দ্বারা নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। ভবনটিকে পশ্চিম দিক থেকে দেখলে একতলা বলে মনে হতে পারে, তবে পূর্ব দিক থেকে দ্বিতল বলেই মনে হয়। ঘরগুলি থেকে সৃষ্ট সুড়ঙ্গপথ প্রসারিত হয়ে জলাধারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ভবনের পশ্চিমে একটি হাম্মাম (গোসলখানা) রয়েছে যাতে পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে অষ্টভূজাকৃতির একটি কূপ। প্রাসাদের উত্তরদিকে একটি ছোট্ট পারিবারিক মসজিদ রয়েছে। এর পিছনে রয়েছে একটি খোলা ঘর যা অষ্টভুজাকার একটি দুর্গের সাথে সংযুক্ত। এই দুর্গটি সম্ভবত প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত হত। এই অষ্টভুজাকার মিনারটি তাহখানা কমপ্লেক্সকে পূর্ণতা দান করেছে। প্রাসাদটি মূলত মুঘল স্থাপত্যের কারুকার্যের আদলে প্লাস্টার এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে।
চিত্রশালা
- তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহ সৈয়দ নিয়ামতুল্লাহ মসজিদ
- তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহ সৈয়দ নিয়ামতুল্লাহ মসজিদ
- শাহ সৈয়দ নিয়ামতউল্লাহর সমাধি
- শাহ সৈয়দ নিয়ামতউল্লাহর সমাধির পাশে অবস্থিত অজ্ঞাতনামা সমাধিসমূহ
- তাহখানার ভিতরে অবস্থিত কূপ
তথ্যসূত্র
- সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ (২৬ মার্চ ২০১০)। "শাহ নিয়ামতুল্লাহ (রঃ) এর মাজার"। গৌড়বঙ্গ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর প্রাচীন নিদর্শন (2 সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: জাতীয় সাহিত্য পরিষদ। পৃষ্ঠা ১০১।
- চক্রবর্তী, রজনীকান্ত (জানুয়ারি ১৯৯৯)। গৌড়ের ইতিহাস (PDF) (১ ও ২ সংস্করণ)। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭৩: দেব'স পাবলিশিং।
- "সোনামসজিদ তোহাখানা মাজার শরিফ"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি ও বেসিস।