বাংলার পুতুল
বাংলার পুতুল বাঙ্গালীর অন্যতম প্রাচীন ঘরোয়া শিল্পকর্ম। সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে পুতুল তৈরি করা হয়ে থাকে। মায়েরা বালিকাদের খেলার জন্য কাপড়ের পুতুল বানিয়ে দেন। মাটির পুতুল গড়ে দেন। নানা কাজের মিস্ত্রীরা পুতুল গড়ে, বাজারে নিয়ে যায়। এলাকা ভেদে পুতুলের গড়নে বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হয়। কোনো কোনো এলাকায় পুতুল তৈরীর দক্ষ কারিগরের উদ্ভব হয়। তাদের পেশাদারী হাতে পুতুল রীতিমতো শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে।
বাংলার পুতুল | |
---|---|
![]() ঐতিহ্য়বাহী বাংলার পুতুল | |
উৎপত্তিস্থল | পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
উপাদান | পোড়ামাটি, কাঁচামাটি, তালপাতা, তালের এটি, নারকেলের ছোবা, পাট, গালা, কাপড়, পিতল ইত্যাদি |
আকৃতি | মনুষ্য মূর্তি, হাতি, ঘোড়া, দেব-দেবী |
উচ্চতা | ২ ইঞ্চি - ৫ ফুট |
রং | লালচে খয়েরি, কালো, সাদা লাল ডোরা কাটা |
ব্যবহার | ঘর সাজানো, বাচ্চাদের খেলনা, পুজো পার্বন |
সংশ্লিষ্ট উৎসব | দুর্গা পূজা, জন্মাষ্টমী,টুসু উৎসব, মনসা পূজা, গাজন, শিবের বিয়ে, চরক |
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে বাংলার পুতুল সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
সারা পৃথিবীতেই পুতুল তৈরী হয় আদিকাল থেকে কিন্তু বাংলার পুতুলের কিছু বিশেষত্ব আছে। এই বিশেষত্ব বাংলার পুতুলকে বাকি স্থানের পুতুলের থেকে আলাদা করেছে। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় প্রত্ন খনন কার্য চালিয়ে পোড়া মাটির পুতুল পাওয়া গেছে। সেগুলোই বাংলার পুতুল শিল্পকে প্রাচীনত্ব দিয়েছে। প্রাপ্ত সামগ্রীর মধ্যে নারী মূর্তি গুলো অন্যতম। উর্বরতার ও শক্তির প্রতীক নারী মূর্তি গুলি আজও সমান ভাবে বাংলার জনসমাজে সমান জনপ্রিয়। বাংলার জনসমাজকে পুতুলের মাধ্যমে চিত্রিত করার এক প্রবণতা সুপ্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। কাঁঠালিয়ার পুতুল বাংলার সমাজ জীবনের অন্যতম নির্দেশক পুতুল। এছাড়া রানি পুতুল ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। আবার শিবের মুখোশ লৌকিক সংস্কৃতিকে চিত্রিত করেছে।[1][2]
উপজীব্য
বিভিন্ন বিষয়কে উল্লেখ করে বাংলায় পুতুল তৈরি হয়। বাংলার শ্রমজীবি মানুষের প্রতীক হিসাবে বাংলার পুতুল তৈরি হয়। যা বাংলার সমাজজীবনকে প্রতিভাত করে। আবার ঐতিহাসিক বিষয়ও পুতুলের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। এছাড়া আদিবাসী দেবতাদের উদ্দেশ্যে যেমন পুতুল তৈরি হয়েছে, আবার সে রকম ভাবেই মনসা দেবীর বা শিবের উদ্দেশ্যেও পুতুল তৈরি করা হয়েছে। বাংলার লৌকিক ধর্মের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।[3]
প্রকারভেদ

উপকরণের ওপর ভিত্তি করে পুতুলকে নয় ভাগে ভাগ করা যায়।
- মাটির পুতুল
- কাপড়ের পুতুল
- কাঠের পুতুল
- পাটের পুতুল
- তালপাতার পুতুল
- গালার পুতুল
- ধাতব পুতুল
- কাগজের পুতুল
- শোলার পুতুল
মাটির পুতুল
শরতের কোন এক দুপুর গাঁয়ের বাড়ির উঠানে দুর্গা মূর্তি গড়ার কাজ চলছে, মাটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মজিলপুরের বোস পাড়া। এ অঞ্চলের এক বাড়িতে জন্ম পাঁচুবাবুর। টালির চাল, দরজা দিয়ে ঢুকেই বাঁ হাতে ছোট্ট দালান, দেওয়াল লম্বা লম্বা কাঠের তাকে পরপর পুতুলের ছাঁচ সাজানো। দালানের একধারে কাঁচা মাটির কিছু পুতুল রাখা। বেশ কিছু পোড়ানো পুতুল ঝুড়িতে। সামনের উঠোনে কাঠের পাটায় কিছু পুতুল শুকোতে দেওয়া। মাটির খুরির বেশ কটাতে আধশুকনো রঙ রাখা। লাল, নীল, হলুদ। এমনই এক বাড়ির বাসিন্দা, পাঁচুগোপাল দাস। আমাদের পাঁচুবাবু। বয়স আশি ছুঁই ছুঁই সহজ সরল আন্তরিক যেন নিজেই নিজের মধ্যে বিভোর। তিনি মাটির মানুষ, মাটির গন্ধ তার সারা শরীরে, পুতুল গড়েন মাটি দিয়েই। আপাদমস্তক শিল্পী। আমার তাকে বাবু ডাকি। প্রশ্ন করি, বাবু মা দুর্গা গড়েন তো এখনও? পাঁচুবাবু কী ভাবছিলেন জানি না। কিছুক্ষণ চুপচাপ। জানো, এ বয়েসে সে ভাবে ঠাকুর করা হয়ে ওঠে না। শরীর দেয় না, যা করার শম্ভুই করে এখন। ঠাকুরের চোখ ওই দেয়।
ট্যাপা পুতুল
কাঠের পুতুল
পাটের পুতুল
কাপড়ের পুতুল
তালপাতার পুতুল
গালার পুতুল
ধাতুর
শৈশবে পুতুল পুতুল খেলা
পুতুলের বিয়ে
যাদুবিদ্যায় পুতুল
যাদুবিদ্যায় পুতুলকে কালো পুতুল বলা হয়
সাহিত্যে পুতুল
ক্ষীরের পুতুল
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ক্ষীরের পুতুল গল্পে পুতুলের উল্লেখ আছে। এখানে দুয়োরানি ক্ষীর দিয়ে তার পুত্র তৈরী করে বিয়ে করাতে পাঠিয়েছেন এবং ষষ্ঠী ঠাকুর সেই ক্ষীরের পুতুল খেয়ে ফেলায় পরে একটা পুত্র উপহার দেন।
পুতুল নাচ
পুতুলনাচের ইতিকথা
পুতুল নাচের ইতিকথা বাঙালি হিন্দু সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। পুতুলনাচ নিয়ে উপন্যাসটি না হলেও রূপক হিসাবে পুতুল নাচের উল্লেখ করা হয়েছে।[4]
তথ্যসূত্র
- বিশ্ব বাংলা। বাংলার পুতুল (PDF)। বিশ্ব বাংলা।
- তারাপদ সাঁতারা (ডিসেম্বর, ২০০০)। পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্প ও শিল্পী সমাজ। কলকাতা: লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - অজিত মুখার্জি, AJITCOOMAR MOOKERJEE (১৯৩৯)। Folk Art of Bengal। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণ কক্ষ, সেনেট হাউস, কলকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৪৬।
- ড. ফজলুল হক সৈকত (ডিসেম্বর, ১৭, ২০১৪)। "পুতুলনাচের ইতিকথা ও মানুষের নিয়তি"। যায় যায় দিন। যায় যায় দিন। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারী ২০১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)