পার্সি চ্যাপম্যান

আর্থার পার্সি ফ্রাঙ্ক চ্যাপম্যান (ইংরেজি: Percy Chapman; জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০০ - মৃত্যু: ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১) বার্কশায়ারের রিডিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে বার্কশায়ার ও কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এছাড়াও, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, বামহাতি মিডিয়াম ও স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। সচরাচর তিনি পার্সি চ্যাপম্যান নামে পরিচিত ছিলেন।[প 1]

পার্সি চ্যাপম্যান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার পার্সি ফ্রাঙ্ক চ্যাপম্যান
জন্ম(১৯০০-০৯-০৩)৩ সেপ্টেম্বর ১৯০০
রিডিং, বার্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬১(1961-09-16) (বয়স ৬১)
অ্যাল্টন, হ্যাম্পশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনবামহাতি মিডিয়াম
স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় পার্শ্ব
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২১৩)
১৪ জুন ১৯২৪ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২০–১৯২২কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
১৯২০–১৯২৪বার্কশায়ার
১৯২৪–১৯৩৮কেন্ট
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৬ ৩৯৪
রানের সংখ্যা ৯২৫ ১৬,৩০৯
ব্যাটিং গড় ২৮.৯০ ৩১.৯৭
১০০/৫০ ১/৫ ২৭/৭৫
সর্বোচ্চ রান ১২১ ২৬০
বল করেছে ৪০ ১,৫৭৬
উইকেট ২২
বোলিং গড় ৪১.৮৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৪০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩২/– ৩৫৬/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

১৪ জুন, ১৯২৪ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১ তারিখে হ্যাম্পশায়ারের অ্যাল্টন এলাকায় ৬১ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।

বার্কশায়ারের রিডিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পার্সি চ্যাপম্যান আপিংহাম স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। এ সময়েই প্রতিভাবান বিদ্যালয় ক্রিকেটার হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯১৯ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা বিদ্যালয় বালক ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। এরপর কেমব্রিজের পেমব্রোক কলেজে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের সদস্য মনোনীত হন ও প্রভূতঃ সফলতা পান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার আরও একটি খেলায় সেঞ্চুরি করে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছেন। ১৯২৪ সালে চ্যাপম্যানের টেস্ট অভিষেক ঘটে। তখনও তিনি কাউন্টি ক্রিকেট খেলছিলেন। কেন্টের পক্ষে খেলার সুযোগ লাভের পর আকস্মিকভাবে ১৯২৬ সালে আর্থার কারের পরিবর্তে ইংল্যান্ড দলনেতা হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর প্রথম নয়টি খেলায় জয়লাভ করেন। তবে দুই খেলায় পরাজয় ও বাদ-বাকী ছয় খেলায় ড্র করে তার দল। কৌশল গ্রহণে দূর্বলতা ও সম্ভবতঃ ব্যাপকমাত্রায় মদ্যপানের ফলে ১৯৩০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েন। ১৯৩০-৩১ মৌসুমে শেষবারের মতো ইংরেজ দলকে নিয়ে সফরে বের হন। এরপর তাকে আর কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

এরপর ১৯৩১ সালে কেন্ট দলের অধিনায়ক মনোনীত হন পার্সি চ্যাপম্যান। দূর্বল ক্রীড়াশৈলী ও শারীরিক অক্ষমতার কারণে ১৯৩৬ সালে অধিনায়ক থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে, ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যান ও অবসর গ্রহণ করার পর তার মদ্যপানের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে ছিলেন যা তাকে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। ১৯২৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা অভিজাত পরিবারে জনপ্রিয়তা পান ও গণমাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ ছিল। ক্রিকেটের বাইরে তিনি ব্রিউরিতে কাজ করেন। জীবনের শেষদিকে চ্যাপম্যান উত্তরোত্তর মাদকগ্রহণের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রায়শঃই জনসমক্ষে মদপান করতে তাকে দেখা যেতো। ১৯৪২ সালে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়। শেষের বছরগুলোয় মূলতঃ একাকীত্বে কাটান। মানসিক অবসাদ ও মদ্যপান তার অনুষঙ্গ ছিল। নিজ গৃহে ভূপতিত হন ও পরবর্তীতে চিকিৎসা করার পর ৬১ বছর বয়সে চ্যাপম্যানের দেহাবসান ঘটে।

প্রারম্ভিক জীবন

৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০০ তারিখে বার্কশায়ারের রিডিং এলাকায় পার্সি চ্যাপম্যানের জন্ম। বাবা ফ্রাঙ্ক চ্যাপম্যান বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মা বার্থা ফিঞ্চ গৃহিনী ছিলেন।[2] চ্যাপম্যানের বাবা তাকে ক্রিকেট খেলতে উদ্বুদ্ধ করতেন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।[3] বাবার প্রিপারেটরি স্কুল ফ্রিথহাম হাউজে প্রথম শিক্ষাগ্রহণ করেন।[3] আট বছর বয়সেই বিদ্যালয়ের প্রথম একাদশে অন্তর্ভূক্ত হন।[4] সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে তিনি ওকহাম বিদ্যালয়ে যোগ দেন। প্রথম সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে ক্রিকেটে আধিপত্য বিস্তার করেন ও ফুটবল দলে খেলেন।[5] ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে আপিংহাম স্কুলে অধ্যয়ন করেন।[2] তবে, পড়াশোনায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি।[6] দ্রুতলয়ে ক্রিকেটে তার দক্ষতা বাড়তে থাকে। ১৯১৬ সালের মধ্যে আপিংহাম প্রথম একাদশে ঠাঁই হয় তার। ব্যাটিং গড়ে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন যা তাকে সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।[7] ১৯১৭ সালে তার রেকর্ডের আরও উত্তরণ ঘটে। ১১১.৩৩ গড়ে ৬৬৮ রান তুলেন। তন্মধ্যে, দুইটি অর্ধ-শতক, দুইটি শতক ও একটি দ্বিশতক ছিল যা শেষ পাঁচটি ইনিংসে আসে।[7]

১৯১৮ সালে ৫২.৪৪ গড়ে ৪৭২ রান তোলার পাশাপাশি ১৫ উইকেট পান। পরের বছর দলের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করে ৭০.৭৭ গড়ে ৬৩৭ রানসহ ৪০ উইকেট সংগ্রহ করেন।[8] খেলার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার কারণে ১৯১৯ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।[প 2][7] ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত মর্যাদাসম্পন্ন বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হন।[11] ১৯১৯ সালে আপিংহাম ত্যাগ করার পূর্বে তিনি তার প্রজন্মের অন্যতম উদীয়মান ক্রিকেটাররূপে আখ্যায়িত হন।[8]

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণ

১৯১৯ সালে কেমব্রিজের পেমব্রোক কলেজে ভর্তি হন।[12] ১৯২০ সালের ক্রিকেট মৌসুমে খেলার জন্য দুইটি প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নিলেও ব্যর্থ হন। এসেক্সের বিপক্ষে মৌসুমের উদ্বোধনী প্রথম-শ্রেণীর খেলায় বিশ্ববিদ্যালয় দল থেকে উপেক্ষিত হন।[13] তবে, খেলার দিন একজন খেলোয়াড় কেমব্রিজ দল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলে চ্যাপম্যান তার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৫ মে, ১৯২০ তারিখে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অভিষেক ঘটে তার। ১১৮ রানের দূর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন ও মৌসুমের বাদ-বাকী সময় দলের পক্ষে খেলতে থাকেন।[14] একটি শতরান ও দুইটি অর্ধ-শতরান সংগ্রহের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় অক্সফোর্ডের বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি।[15] বিশ্ববিদ্যালয় মৌসুমের চূড়ান্ত খেলায় ২৭ রান তুলেন। ৪০.৮৬ গড়ে ৬১৩ রান তুলে কেমব্রিজের ব্যাটিং গড়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।[14] অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটের প্রথম বছরে থাকাকালে মর্যাদাসম্পন্ন জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের জন্য লর্ডসে খেলার সুযোগ লাভ করেন। ব্যাটহাতে তেমন সফলতা না পেলেও কার্যকরী ফিল্ডিংয়ের কারণে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেন।[14] আগস্ট মাসে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাইনর কাউন্টিজ ক্রিকেটে বার্কশায়ারের পক্ষে শৌখিন খেলোয়াড়রূপে অংশ নেন ও দলের ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন। পরবর্তীতে মৌসুমের শেষদিকে স্কারবোরা উৎসবে তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেন। জেন্টলম্যান ও প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় তিনজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় সমৃদ্ধ বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে ১০১ রান তুলেন।[16] ১৯২০ সালে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে চ্যাপম্যান ৩৯.৬৮ গড়ে ৮৭৩ রান তুলেন।[17]

১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ৫০-এর অধিক গড়ে রান তুলেন। তন্মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরিও ছিল। তাস্বত্ত্বেও কিছু সমালোচকের মতে, তার মাঝে গুণাগুনের অভাব রয়েছে ও তিনি যোগ্য নন।[18] আরও একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় অক্সফোর্ডের বিপক্ষে লড়েন। জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন ও ধারাভাষ্যকারদের মন জয় করেন। এবার কিছু সমালোচকের অভিমত যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীয়মান কিছু খেলোয়াড় ইংল্যান্ড দলে খেলার উপযোগী। টেস্ট দলটি তখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের মাঝামাঝি পর্যায়ে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল। ফলে, অপ্রত্যাশিতভাবে দলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কায় তাকে মনোনীত করা হয়নি।[19] আগস্টে বার্কশায়ারের পক্ষে আরও একবার অংশ নেন।[20] মৌসুম শেষে আর্চি ম্যাকলারেন তাকে ইস্টবোর্নে শৌখিন প্রতিনিধিত্ববিহীন ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে নির্বাচিত করেন ও সফরকারী অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অংশ নেন তিনি। পরবর্তী বছরগুলোয় ঐ খেলাটি বেশ প্রশংসিত হয়। ম্যাকলারেনের দল প্রথমবারের মতো সফরকারী দলকে পরাজিত করতে সক্ষমতা দেখায়। তবে, ব্যক্তিগতভাবে চ্যাপম্যান সফল ছিলেন না।[21] এ মৌসুমে চ্যাপম্যান ৩৯.৭৫ গড়ে ৯৫৪ রান তুলেন।[17]

ঐ শীতে দ্য ক্রিকেটার সাময়িকী চ্যাপম্যানকে বর্ষসেরা তরুণ ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে।[22] তবে, ১৯২২ মৌসুমের শুরুতে তার খেলার মান বেশ দূর্বল হতে থাকে। এরফলে সমালোচকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার বাইরে তাকে রাখার পরামর্শ দিতে থাকে। ১৪ ইনিংসে তিনি মাত্র ৩০০ রান উঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফিল্ডিংয়ে দক্ষতার কারণে তিনি তার স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন।[23] প্রথম দিনে কেমব্রিজ দল খুব ধীরলয়ে ব্যাটিং করতে থাকে। দ্বিতীয় দিন সকালে চ্যাপম্যান বোলারদের উপর চড়াও হন ও ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন।[23] কেমব্রিজ খুব সহজেই খেলায় জয় পায়। এর মাধ্যমে চ্যাপম্যানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটও শেষ হয়। কিন্তু, তার চমকপ্রদ ইনিংসের কারণে সমালোচকদের মন জয় করে। ফলশ্রুতিতে লর্ডসে আবারও জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলায় তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।[23] ১৬০ রান করেন। এ সময় আর্থার কার ও ফ্রাঙ্ক মানের সাথে শতরানের জুটি গড়েন। চ্যাপম্যান বেশ আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেন ও অফ সাইডে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটান।[24] দ্য টাইমস মন্তব্য করে যে, খেলার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি।[25] এর পরপরই সিডনি পারডন দ্য টাইমসে লিখেন যে, ক্রিকেট মাঠে সকলের উর্ধ্বে এ মুহুর্তের সেরা ব্যক্তি হচ্ছেন মি. এ. পি. এফ. চ্যাপম্যান। এক পক্ষকাল পূর্বেও এ মৌসুমে তার খেলার মান বেশ দূর্বলতর ছিল। তবে, তার সেরা উপহার ও আশার পরিপূর্ণতা ১৯২০ সালে দেখে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেছি। তিনি এখন এমন অবস্থানে রয়েছেন যে, পরের সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম একাদশে নির্দ্বিধায় রাখা যায়।[26] তার সামনে কেবলমাত্র আর. ই. ফস্টার রয়েছেন যিনি একই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলা ও জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় সেঞ্চুরির সন্ধান পেয়েছেন।[24] বার্কশায়ার ও উৎসবের খেলায় অংশ নিয়ে ঐ মৌসুমে ৮০৫ রান ও ১৯ উইকেট দখল করেন তিনি।[15][27] ঐ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৩৩.৭২ গড়ে ৬০৭ রান তুলেন।[17]

কেমব্রিজে অবস্থানকালে চ্যাপম্যান বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন ও খুব ভালো সময় উপভোগ করতে থাকেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকেন ও অন্যান্য ক্রীড়ায়ও সম্পৃক্ত হন।[28] অন্যান্য ক্রীড়ার মধ্যে ছিল - ফাইভস, টেনিস, রাগবি ইউনিয়ন, গল্ফ ও ফুটবল।[29] রাগবি খেলায় পেমব্রোক কলেজে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষেও খেলতে থাকেন তিনি। প্রায় ৩০ বছর বয়সেও বার্কশায়ার ওয়ান্ডারার্সের পক্ষে রাগবি খেলা চালিয়ে যান।[30] গোলরক্ষক হিসেবেও পেমব্রোক ফুটবল দলে খেলেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলার জন্য হকি খেলাকেও গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিলেন পার্সি চ্যাপম্যান।[30] শেষের বছরগুলোয় টেনিসেও দক্ষতা দেখাতে শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে সমালোচকেরা মন্তব্য করতে শুরু করেন যে, যদি উৎসাহ পেতেন তাহলে এ ক্রীড়ায় তিনি সর্বোচ্চ সফলতা পেতেন। এছাড়াও গল্ফে তার দক্ষতা ছিল।[30]

খেলোয়াড়ী জীবন

১৯২০ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[31][32] এ সময়ে তিনি এমসিসি দলের সদস্যরূপে ১৯২২-২৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯৩০-৩১ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন।

১৯২২-২৩ মৌসুমের শীতকালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে যায়। ঐ সফরে তিনিও অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।[প 3] দলটিকে আর্চি ম্যাকলারেন নেতৃত্ব দেন ও প্রধানতঃ শৌখিন খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে দলটি শক্তিশালী ছিল না ও ক্রিকেটে দক্ষতার তুলনায় সামাজিক মানদণ্ডকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল।[35] এ সফরে দলটি চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দলের মুখোমুখি হয়। প্রথম খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও বাদ-বাকীগুলোয় পরাজয়বরণ করে সফরকারী ইংরেজ দল। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৫ ও ৫৮ রান তুলেন তিনি। এরপর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে যথাক্রমে ৫৩, ৭৩ ও ৬৯ রানের মূল্যবান ইনিংস উপহার দেন।[15] তবে শক্তিশালী নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে দূর্দান্ত ১০০ রান করে নিজের প্রতিভার কথা জানান দেন তিনি।[36][37] গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণ তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করে। তবে, সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক ইরাডেল তার ব্যাটিং কৌশলে কিছুটা ত্রুটির কথা তুলে ধরেন।[38] নিউজিল্যান্ডে অবতরণের পর অনিশ্চিতভাবে চ্যাপম্যানের সফর শুরু হয়। তিনি ৪৮.৪৫ গড়ে ৫৩৩ রান তুলেন। তন্মধ্যে দুইটি শতরানের ইনিংসও ছিল।[17][39] সফরের শেষ পর্যায়ে পুণরায় সফরকারী দল অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসে। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ৯১ রান তোলার পর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪২ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ১৩৪ রান হাঁকান।[15][40] অস্ট্রেলিয়ায় সকল খেলায় অংশ নিয়ে ৬৫.১৬ গড়ে ৭৮২ রান এবং সফরের সকল খেলায় অংশ নিয়ে ৫৭.১৫ গড়ে ১,৩১৫ রান তুলেন তিনি।[40]

কেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন

ইংল্যান্ডে ফিরে আসার পর তিনি কেন্টের হিথভিত্তিক ম্যাকেসন ব্রিউরিতে কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে এটি এইচ এন্ড জি সাইমন্ডস কিনে নেয়। এখানে অবস্থানের কারণে কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে খেলার জন্য সুযোগ লাভ করেন।[প 4][42] যোগ্যতা লাভের পূর্বে চ্যাপম্যান বেশ কয়েকটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ১৯২৩ সালে ক্লাব ক্রিকেটে অংশগ্রহণের বাঁধা প্রদান করা হয়েছিল। বার্কশায়ারের পক্ষে আরও কয়েকটি খেলায় অংশ নেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দলের পক্ষে আরও ১২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় সম্পৃক্ত ছিলেন। লর্ডস ও ওভালে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলাগুলোয় নির্বাচিত হন। শেষের খেলাটিতে তিনি ৮৩ রান তুলেন ও ইংরজে দলে অংশগ্রহণের জন্য দুটি প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন। তবে, ঐ বছর কোন টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়নি।[15][43] ২৯.২৮ গড়ে সর্বমোট ৬১৫ রান তুলেন পার্সি চ্যাপম্যান।[15][17]

১৯২৪ মৌসুমে অ্যাশেজে পরবর্তী শীতে অস্ট্রেলিয়া দলের আগমনকে কেন্দ্র করে দল নির্বাচকমণ্ডলী মনোনিবেশ ঘটায়। সমালোচকেরা দলের নিশ্চিত সদস্যরূপে চ্যাপম্যানকে বিবেচনা করছিল।[44] শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে তিনি খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। চ্যাম্পিয়নশীপবিহীন খেলায় কেন্টের পক্ষে প্রথম অংশ নেন তিনি। তবে তিনি এ সময়ে বেশ সফলভাবে ক্লাবের শুরুর দিকের খেলায় সপ্রতিভ অংশগ্রহণ করছিলেন।[44] ঐ গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অংশগ্রহণ করে। প্রথম টেস্ট শুরুর পূর্বে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্য চ্যাপম্যানকে মনোনীত করা হয়। বাদ-বাকী একাদশের পক্ষে অপরাজিত ৬৪ ও ৪৩ রান তুলেন।[প 5][15] প্রথম টেস্টের পূর্বে একজন ব্যাটসম্যান নাম প্রত্যাহার করে নিলে ১৪ জুন তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে চ্যাপম্যানের।[45][46] এরফলে ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়ের মধ্যে অন্যতম হিসেবে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপবিহীন খেলায় অংশগ্রহণ ব্যতিরেকেই মাইনর কাউন্টিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পান তিনি।[2] চ্যাপম্যান একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পান। তবে, শেষদিনে আশ্চর্যজনক ক্যাচ তালুবন্দী করেন যাতে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল।[45][46] দ্বিতীয় টেস্টেও তাকে রাখা হয়। তবে ব্যাট করার প্রয়োজন পড়েনি তার। কেবলমাত্র চারজন ইংরেজ ব্যাটসম্যান মাঠে নামেন ও স্বাগতিক দল ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[45] তৃতীয় খেলায়ও তিনি অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে, মোটরবাইক দূর্ঘটনার ফলে খেলতে পারেননি। গুরুতরভাবে আহত না হলেও ঐ টেস্ট সিরিজের বাদ-বাকী খেলায় অংশ নিতে পারেননি। এছাড়াও, লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায়ও অনুপস্থিত থাকেন। আরোগ্যলাভের পর বার্কশায়ারের পক্ষে খেলায় ফিরে আসলেও তেমন সফলতা পাননি। মৌসুমের শেষদিকে বেশ কয়েকটি উৎসবের খেলায় অংশ নেন তিনি।[15][47] এ পর্যায়ে তাকে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।[48] মৌসুমের চূড়ান্ত খেলায় বাদ-বাকী একাদশের সদস্যরূপে কাউন্টি চ্যাম্পিয়ন ইয়র্কশায়ারে বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। মাত্র ৫০ মিনিটে ৭৪ রান তুলেন যাতে তিনটি ছক্কা হাঁকান। তন্মধ্যে, উইলফ্রেড রোডসের বল থেকেই পরপর দুটি ছক্কা মারেন।[47] ঐ মৌসুমে এটিই তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। ৩১.১৬ গড়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫৬১ রান তুলেন।[17]

দ্বিতীয়বার অস্ট্রেলিয়া সফর

আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বে এমসিসি দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে। সফরের শুরুর দিকের খেলাগুলোয় পূর্বের খেলাগুলোকে ঘিরে স্মৃতিরোমন্থন করে দর্শকেরা তাকে ঘিরে উল্লাস প্রকাশ করে। তবে, উল্লেখযোগ্য কোন সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন তিনি।[49] ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনিংস খেলেন। দলের সংগৃহীত ১১১ রানের মধ্যে ৭২ রান তুলে এমসিসির জয়ে বৃহৎ ভূমিকা রাখেন।[50] পরের খেলায় কুইন্সল্যান্ডের মুখোমুখি হয় তার দল। ৭০ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ৮০ রান ও পরের খেলায় প্রতিনিধিত্বমূলক অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে ৯৩ রান সংগ্রহ করেন।[15][51] পাঁচ খেলার টেস্ট সিরিজের প্রথম চার টেস্টে অংশগ্রহণ করেন পার্সি চ্যাপম্যান। খেলায় তিনি বেশ কয়েকবার উল্লেখযোগ্য রান তুললেও কেবলমাত্র একবার পঞ্চাশের কোটা অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। তৃতীয় টেস্টে ৫৮ রানের নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতক করেন।[52] একই টেস্টে জিলিগানের বোলিংকালীন মাংসপেশীতে টান পড়লে তাকে মাঠ ত্যাগ করতে হয়। চ্যাপম্যান অধিনায়কের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[53] প্রথম তিন খেলায় ইংল্যান্ড পরাজিত হয়। ফলশ্রুতিতে সিরিজে তারা এগিয়ে যায়। চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জয়ী হয়। চূড়ান্ত টেস্টে চ্যাপম্যান স্বেচ্ছায় দলের বাইরে অবস্থান করেন।[54] সিরিজে তিনি ৩০.৮৩ গড়ে ১৮৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।[55] সমালোচকেরা তার সক্ষমতা ও কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মন্টি নোবেল বিশ্বাস করতেন যে, চ্যাপম্যান আরও ভালোমানের ব্যাটসম্যান হতে পারতেন যদি আগ্রাসী না হতেন। তবে, দ্য ক্রিকেটার তার কৌশল গ্রহণে ত্রুটির কথা তুলে ধরে।[54] কিন্তু, উইজডেন চ্যাপম্যানকে পুরোপুরি ব্যর্থ হিসেবে ঘোষণা করেনি ও সময়ে সময়ে বেশ কার্যকরী রান তোলার কথা জানায়।[56] সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে চ্যাপম্যান ৩৪.৭২ গড়ে ৬২৫ রান তুলেন।[17] মাঠে আংশিক সময় দিলেও সামাজিকভাবে এ সফরকে স্বার্থক করে তোলেন চ্যাপম্যান।[57]

এ পর্যায়ে কেন্টের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা লাভ করেন। ১৯২৫ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের কেবলমাত্র চারটি খেলায় অংশ নেন। খেলার তুলনায় নতুন ব্যবসায়িক কাজে সময় দেন। শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা না থাকায় ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতায় ক্রিকেট মাঠে অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ আকার ধারণ করে।[58] ১৯২৫ সালে সীমিত প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৫.৮৭ গড়ে ২০৭ রান তুলেন। উইজডেনের মতে, সাধারণের তুলনায় তিনি কিছুই করেননি।[59]

অধিনায়কত্ব লাভ

১৯২৬ সালের শুরুতে চ্যাপম্যান ইংরেজ ক্রিকেটে তারকা খেলোয়াড় ছিলেন না। তাস্বত্ত্বেও শুরুর দিকে অর্জনগুলোর কারণে সমীহের পাত্রে অবস্থান করছিলেন। টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে মাঝারিমানের রেকর্ড ছিল তার।[60] এ মৌসুমে অস্ট্রেলীয়রা আরও একটি অ্যাশেজ সিরিজ খেলার জন্য ইংল্যান্ড সফরে আসে। মৌসুমের শুরুতে তিনি কোন খেলায় অংশ নেননি। কেন্টের পক্ষে প্রথম খেলায় অতিথি দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হন। জানুয়ারি, ১৯২৫ সালের পর ৫১ রানের প্রথম প্রথম-শ্রেণীর অর্ধ-শতক সংগ্রহ করেন।[15][61] এক সপ্তাহ পর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় ১৫৯ রানের ইনিংস উপহার দেন। ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড দলে ফিরে আসা সহজতর হয়। এরপর অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে টেস্টের প্রস্তুতিমূলক খেলায় ৮৯ রান তুলেন।[62] কেন্টে চ্যাপম্যানের উপস্থিতি মৌসুমের বাদ-বাকী সময় বেশ সাড়া জাগায়। নয় খেলায় অংশ নিয়ে ৬২৯ রান তুলেন। ৫৭.১৮ গড়ে সংগৃহীত রানের কল্যাণে কেন্টে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। এছাড়াও লর্ডসে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে মনোরম শতরান করেন।[62]

মৌসুমের শুরুতে সিরিজের পূর্বে আর্থার কারকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে কার প্রথম পছন্দের ছিলেন। ঐ সময়ে পার্সি ফেন্ডারকে অন্যতম প্রতিযোগী মনে করা হতো।[63] চ্যাপম্যান তিনটি প্রস্তুতিমূলক খেলার দুইটিতে অংশ নেন। ফলশ্রুতিতে প্রথম টেস্টে তাকে নেয়া হয়। তবে, বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় ব্যাট হাতে মাঠে নামতে পারেননি তিনি।[63] দ্বিতীয় টেস্টে চ্যাপম্যান অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। এ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[64] তৃতীয় টেস্টের অধিকাংশ সময় সফরকারী দল খেলায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তবে, ইংল্যান্ড খেলাটি বাঁচাতে পেরেছিল। তবে, এ খেলায় কারের কৌশলের বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। সকালের প্রথম অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ হাতছাড়া করেন।[65][66] চতুর্থ টেস্টে দলের বাইরে রাখা হয় তাকে। তবে, খেলা চলাকালীন কার অসুস্থবোধ করলে অতিরিক্ত খেলোয়াড়রূপে ফিল্ডিং করেন।[67]

সিরিজের প্রথম চার খেলায় ড্র হলে ওভালে পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে সিরিজ নির্ধারণী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণযোগ্য যে, গত ১৯ খেলায় ইংল্যান্ড দল কেবলমাত্র একবার অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করতে পেরেছিল। দলের পরিবর্তনে দল নির্বাচকমণ্ডলী বেশকিছু পরিবর্তন আনেন। ঐ সময়ে চ্যাপম্যান জাতীয় ব্যাটিং গড়ে চতুর্থ স্থানে ছিলেন। তিনি অধিনায়ক হিসেবে কারের স্থলাভিষিক্ত হন।[68] এ সিদ্ধান্তটি বেশ বিতর্কিত ছিল। গণমাধ্যমে কারের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তুলনামূলকভাবে চ্যাপম্যান বেশ তরুণ ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবেও প্রমাণিত হননি এবং দলে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না।[69][70] ১৪ আগস্ট খেলা শুরু হয়। চ্যাপম্যান টসে জয়লাভ করে ইংল্যান্ড দলকে প্রথমে ব্যাটিং করতে পাঠান। ব্যাট করার সময় আসলে উপস্থিত দর্শকেরা তাকে বেশ উৎসাহিত করে।[71] ৪৯ রানে আউট হন তিনি।[15] এরপর হুরমুড়িয়ে দলের বাদ-বাকী ব্যাটসম্যান দ্রুতলয়ে আউট হতে থাকেন। এরফলে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ মাত্র ২৮০ রানে থেমে যায়।[72] অস্ট্রেলিয়া ৩০২ রানে গুটিয়ে যায়। বৃষ্টিবিঘ্নিত পিচে ইংল্যান্ড দল এরপর ৪৩৬ রান তুলে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জ্যাক হবসহার্বার্ট সাটক্লিফের বিরাট রান সংগ্রহই এর প্রধান কারণ ছিল।[72] ৪১৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অস্ট্রেলিয়া মাঠে নামে। তবে, পিচের পরিবেশ বেশ প্রতিকূল ছিল। দলটি ১২৫ রানে তাদের ইনিংস শেষ করে। চ্যাপম্যানের কমপক্ষে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্তই অস্ট্রেলিয়ার উইকেট পতনে সহায়তা করে। উইজডেন মন্তব্য করে যে, কোন ক্যাচ হাতছাড়া হয়নি কিংবা কোন রানও আসছিল না। পুরো ইংল্যান্ড দল নব উদ্যমে জেগে উঠে। শেষ পর্যন্ত হাজারো দর্শক প্যাভিলিয়নে চলে আসে। ইংরেজ ও অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা বেশ উৎফুল্ল হয়।[72] এক সংবাদদাতা মন্তব্য করেন যে, প্রথম-শ্রেণীর দলকে নিয়ে মাঠে নেতৃত্বের বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে অত্যন্ত উৎফুল্ল চিত্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তরুণ শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে অধিকাংশ সময়ই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে বোলিং করেছেন। দুই বা তিনবার এ ধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন যা বেশ দূর্লভ।[72] পুরো খেলা জুড়ে দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে চ্যাপম্যান নিজস্ব কৌশল অনুসরণ করেছেন।[73] ঐ সিরিজে তিনি ৫৮.৩৩ গড়ে ১৭৫ রান করেন।[55]

ফলাফল ও সাফল্যগাঁথা

এ খেলার পর চ্যাপম্যান ক্রিকেট বীরে পরিণত হন।[74] পঞ্চম জর্জ ও প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডউইনের ন্যায় ব্যক্তিত্বরা তাকে অভিনন্দনসূচক বার্তা প্রেরণ করেন।[75] ঐ মৌসুমের সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে তিনি ৫১.১৪ গড়ে ১,৩৮১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এরফলে প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে চার অঙ্কের কোঠা স্পর্শ করেন তিনি।[17] ইংল্যান্ডের ক্রিকেট অধিনায়কদের বিষয়ের ইতিহাস নিয়ে লেখা পুস্তকে অ্যালান গিবসন মন্তব্য করেন যে, চ্যাপম্যানের অধিনায়কত্ব লাভের ন্যায় বিতর্কিত বিষয়টি সফলতা লাভের পর থেকে সকলেই ভুলে যায়। তিনি আরও লিখেন যে, ইংরেজ ক্রিকেট নতুন বীর খুঁজে পেয়েছে; যিনি দলের অংশ মনে করেন ও প্রত্যেক দল নির্বাচক নিজেদেরকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মনে করছেন।[69]

১৯২৭ মৌসুমের বিষয়বস্তু হিসেবে উইজডেন তাকে কেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘোষণা করে। তার রক্ষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নতির কথাও জানায়।[75] কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপাধারী দল ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে তিন ঘন্টায় ২৬০ রান তুলেন। তার এ সংগ্রহটি পরবর্তীকালে নিজস্ব সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিল।[76] এ সময়ে বিশ্বের সেরা গতিসম্পন্ন বোলার ও কাউন্টি ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতিপ্রদ সাবেক অস্ট্রেলীয় টেস্ট বোলার টেড ম্যাকডোনাল্ডের ন্যায় বোলারকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল তাকে।[77] অনেক সমালোচকের কাছেই চ্যাপম্যানের ইনিংসটি ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে যা অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল।[76] লর্ডসে প্রথমবারের মতো জেন্টলম্যান দলের নেতৃত্বে ছিলেন ও প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলেন।[78] ঐ মৌসুমে তিন টেস্টের প্রস্তুতিমূলক খেলার দুইটিতে প্রতিনিধিত্ব দলের নেতৃত্ব দেন। প্রচারমাধ্যমে তার অধিনায়কত্বের প্রশংসা করা হয়।[79] প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৬৬.০৪ গড়ে ১,৩৮৭ রান তুলেন যা তার খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বোচ্চ ও গড়ের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ ছিল।[17] ঐ মৌসুম শেষে কেন্টের অধিনায়কত্ব পূরণে তিনি মনোনীত হননি। চ্যাপম্যানের আত্মজীবনীকার ডেভিড লেমনের মতে, খুব সম্ভবতঃ তার এ দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। তবে, এ পদে থেকে প্রয়োজনীয় সময়ের অভাবের কারণে তা ফিরিয়ে দেন। [80]

১৯২৭-২৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চ্যাপম্যান যাননি। তবে, ১৯২৮-২৯ মৌসুমে এমসিসি দলের নেতৃত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছ থেকে আরও নিয়মিতভাবে খেলার জন্য তাগিদ পান। ফলশ্রুতিতে অন্য যে-কোন মৌসুমের তুলনায় ১৯২৮ সালে তাকে বেশী খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়। তিনি চমৎকার অবস্থায় খেলতে থাকেন। তবে, ১৯২৭ সালের মতো কার্যকারীতা প্রদর্শনে সক্ষম হননি। তাস্বত্ত্বেও তার অধিনায়কত্ব ধারাবাহিকভাবে উচ্চস্তরের ছিল। এ সময়ে তার দেহের ওজন বাড়তে থাকে। তাস্বত্ত্বেও ঐ মৌসুমে অনুষ্ঠিত টেস্টগুলোয় ফিল্ডিং চমৎকারভাবে করে যাচ্ছিলেন। প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের অধিনায়ক হিসেবে ৩-০ ব্যবধানে জয় পায় ও হোয়াইটওয়াশ করে।[81] এ সিরিজে একটি অর্ধ-শতরানেরও সন্ধান পান তিনি।[55] ৩৭.১৯ গড়ে মোট ৯৬৭ প্রথম-শ্রেণীর রান তুলেন তিনি।[17] প্রত্যাশিতভাবেই অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য দলের অধিনায়ক মনোনীত হন পার্সি চ্যাপম্যান।[81] ধারাভাষ্যকারদের কাছ থেকে সফরকারী এমসিসি দলকে অন্যতম শক্তিধর দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে, ফ্রাঙ্ক ওলিকে বাইরে রেখে বিতর্কের সৃষ্টি হলেও এর কোন কারণ দেখানো হয়নি। পরবর্তী বছরগুলোয় গুজব ছড়ায় যে, চ্যাপম্যান ঈর্শ্বান্বিত হয়ে কাউন্টির সতীর্থ ওলিকে দলে নেননি। তবে, লেমন এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত হিসেবে তুলে ধরেন।[82]

১৯২৮-২৯ মৌসুমের অস্ট্রেলিয়ার সফর

ডগলাস জারদিনের আত্মজীবনীকার ক্রিস্টোফার ডগলাসের অভিমত, চ্যাপম্যান এ সফরে ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলেন। তবে, তিনি অদ্যাবধি অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছেন। খুব সম্ভবতঃ অস্ট্রেলিয়া সফরে আসার ইংরজে অধিনায়কদের মধ্যে অদ্যাবধি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছেন।[83] শুরুর দিকের খেলাগুলোয় ইংল্যান্ড দল বৃহৎ সংখ্যায় রান তোলার দিকে নজর দেয়।[84] প্রথম টেস্টে দলের ব্যাটিং শক্তিমত্তার কথা চিন্তা করে চ্যাপম্যান ও সফর নির্বাচনী কমিটি কেবলমাত্র তিনজন বোলিংয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দেরকে রাখে। টেস্টগুলো অসীমসময়ের ছিল ও সময়ের কোন সীমাবদ্ধতা না থাকায় তিনি ব্যাটিং করাকেই জয়ের প্রধান মানদণ্ডরূপে চিত্রিত করেন।[85] প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংরেজ দল ৫২১ রান তুলে। চ্যাপম্যান করেন ৫০ রান। ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত, তিনি হয়তোবা আরও ব্যাটিং করতে পারতেন।[86] এরপর অস্ট্রেলিয়া তাদের ইনিংস খেলতে নামে। গালি অঞ্চলে বিল উডফুলের ক্যাচ তালুবন্দী করেন যা অনেক দর্শকদের কাছেই তাদের দেখা সেরা মুহুর্ত ছিল।[87][88] সিডনি সাউদার্টন ইংরেজদের ফিল্ডিংয়ের বিষয়ে লিখেন যে, স্বয়ং চ্যাপম্যান ব্রিসবেনে সকলকে অভিভূত করে দেন। উডফুলকে আউট করে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমার মতে, ঐ ক্যাচটি পরবর্তী তিন টেস্ট পর্যন্ত সুগন্ধ ছড়িয়েছিল। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে চ্যাপম্যানের ফিল্ডিংয়ের মান ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।[89] অস্ট্রেলিয়া ১২২ রানে অল-আউট হলেও দর্শকদের অসন্তুষ্টির কথা বিবেচনায় এনে[90] ফলো-অন করার সুযোগ পেয়েও চ্যাপম্যান অস্ট্রেলিয়াকে পুণরায় ব্যাট করতে বলেননি।[91] ফলশ্রুতিতে ব্যাটসম্যানেরা ইংল্যান্ডের সংগ্রহকে আরও স্ফীত করে তুলতে সচেষ্ট হয়। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অসীমসময়ের টেস্টে চ্যাপম্যান ইনিংস ঘোষণা করেন। ফলে, অস্ট্রেলিয়ার জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৭৪২। কিন্তু, বৃষ্টিবিঘ্নিত পিচে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৬৬ রানে গুটিয়ে যায়। এরফলে অস্ট্রেলিয়া দল ৬৭৫ রানের ব্যবধানে জয় পায়। এ জয়টি ২০১৭ সাল পর্যন্ত রানের দিক দিয়ে বৃহৎ ব্যবধানের জয় হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছে।[91][92]

দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে চ্যাপম্যানের দল ৬৩৬ রান তুলে খুব সহজেই জয় তুলে নেয়। ঐ সময়ে এ সংগ্রহটি দলগতভাবে সর্বোচ্চ ছিল।[15][93] তৃতীয় টেস্টে ৩৩২ রানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট হয়। তবে, বৃষ্টিবিঘ্নিত পিচে ক্রিকেট বোদ্ধাদের কাছে অসম্ভবরূপে বিবেচিত হয়েছিল।[94] হবস ও সাটক্লিফের উদ্বোধনী জুটি বৃহৎ সংখ্যায় রান সংগ্রহ করলে ইংল্যান্ডের জয়ের সুযোগ আসে। বিশ্রাম কক্ষে হবস বার্তা প্রেরণ করে ব্যাটিং অর্ডারে কৌশলগত পরিবর্তনের কথা জানান। কিন্তু দলের কেউই চ্যাপম্যানকে খুঁজে পায়নি। পার্সি ফেন্ডারের ভাষ্য মোতাবেক জানা যায়, সাংবাদিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে লেডিজ স্ট্যান্ডে তখন তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার অধিকাংশ সময় পার করছিলেন। ফলে, অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে হবসের পরিকল্পনামাফিক দল অগ্রসর হচ্ছিল।[95] জয়ের মাত্র ১৪ রান দূরে থাকা অবস্থায় চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। চ্যাপম্যান মাঠে নাম ও অস্বাভাবিক পন্থায় ব্যাট করতে থাকেন। কয়েকটি বড় ধরনের শট খেলার চেষ্টার পর অত্যন্ত রক্ষণাত্মক পন্থায় খেলতে থাকেন। খুব সম্ভবতঃ ইংল্যান্ডের জয়ের পূর্বে প্যাটসি হেনড্রেনকে অর্ধ-শতক লাভে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই হেনড্রেন আউট হলে ছক্কা মারার চেষ্টা করলে চ্যাপম্যান কট হন। ব্যাটসম্যানেরা বেপরোয়াভাবে খেলতে থাকেন ও রান আউটে আরও একজন বিদায় নেন। ডগলাস লেখার শেষাংশ সম্পর্কে মূল্যায়ণ করেন যে, ইংরেজ ব্যাটসম্যান জর্জ গিয়ারি আকস্মিক বিপর্যয়ে কিছুটা শান্ত ছিলেন। পরের বলেই মিড-অনে চার মারেন ও অবশেষে আমরা তা করতে পেরেছি। এটিই উপযুক্ত পন্থা যেখানে চ্যাপম্যানের অধীনে একটি দল অ্যাশেজ জয় করতে পেরেছে।[96] তৃতীয় টেস্ট জয়ের মাধ্যমে ইংল্যান্ড দলে অ্যাশেজ অক্ষুণ্ণ রাখে। এছাড়াও চতুর্থ টেস্ট জয়ে সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে নিয়ে যায়।[97]

এরপর চ্যাপম্যান অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। তবে, চতুর্থ টেস্টের পর ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় একাদশ ব্যাটসম্যান বার্ট আইরনমঙ্গারের বিপক্ষে ফাস্ট বোলার হ্যারল্ড লারউডকে বোলিং করার পর উত্তেজিত দর্শক এমসিসি দলকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ কৌশল গ্রহণটি অখেলোয়াড়ীসূলভ ছিল।[97][প 6][98] প্যাভিলিয়নে ফেরার পথে তুচ্ছ ঘটনায় দর্শকদের একাংশের দ্বারা নিগৃহীত হন।[97][98] সম্ভবতঃ এ সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত টেস্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এছাড়াও, অসুস্থতা ও দূর্বল ক্রীড়াশৈলীও অনেকাংশে দায়ী ছিল।[98] লেমনের মতে, পরবর্তী বছরগুলোয় ঐ টেস্টে অনুপস্থিতির জন্য ক্রমবর্ধমান মদ্যপানকেও দায়ী করা হয়।[99] তার অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া দল পঞ্চম টেস্টে জয়লাভে সক্ষম হয়। পঞ্চম দিন খেলার পর নিজের উভয় ইনিংসে ব্যাটিং সম্পন্ন করে জারদিন নৌকায় চড়ে ভারতে চলে যান। এ কারণটি অজানাই রয়ে যায়। তবে, চ্যাপম্যান তার পরিবর্তে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে ফিল্ডিং করেছিলেন। ডগলাস মন্তব্য করেন যে, এটি ইংল্যান্ডের পক্ষেই সম্ভব; যেখানে ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য চ্যাপম্যানকে বাদ দিতে হয় ও ফিল্ডিংকে দূর্বলতর না করতে চ্যাপম্যান জারদিনের পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন।[100] তবে, ঐ খেলায় অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের শর্তাবলীতে চ্যাপম্যানকে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান না করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।[100]

টেস্টগুলোয় অংশ নিয়ে চ্যাপম্যান ২৩.৫৭ গড়ে ১৬৫ রান তুলেছিলেন।[55] সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে তিনি ৩৩.৩১ গড়ে ৫৩৩ রান তুলেন।[17] সাউদার্টন তার ক্রীড়াশৈলী সম্পর্কে বলেন যে, চ্যাপম্যান বেশ ভালোভাবে ব্যাটিং করতে শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী খেলাগুলোয় এর ব্যতিক্রম ছিল। সফর যতোই এগুতে থাকে, অস্ট্রেলীয় বোলারেরা তার দূর্বলতার দিকগুলো উন্মোচিত করতে থাকে।[89] তার অধিনায়কত্ব প্রসঙ্গে সাউদার্টন লিখেন যে, চ্যাপম্যান দলকে অসাধারণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এ সফর যতোই এগিয়ে যেতে থাকে তিনি তার সবটুকু জ্ঞান দিয়ে দলের উত্তরণ ঘটাতে থাকেন।[89] সামাজিক দিক দিয়েও চ্যাপম্যান এ সফরে সমানতালে উপভোগ করেছেন। তিনি অনেকগুলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দলীয় স্কোরার বিল ফার্গুসন এ সফরে কেবলমাত্র একবার দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দেখেছিলেন। মধ্যাহ্নভোজনে পানীয় না আসলে তিনি অপেক্ষা না করে বেরিয়ে যান।[101]

১৯৩০ অ্যাশেজ সিরিজ

১৯২৮-২৯ মৌসুমের সফরের পর জুলাইয়ের পূর্ব-পর্যন্ত মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন পার্সি চ্যাপম্যান। তার অনুপস্থিতিতে জ্যাক হোয়াইট ও আর্থার কার ইংল্যান্ড দলকে পরিচালনা করেন।

দেশে ফিরে আসার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কেন্টের পক্ষে খেলতে নামেন। সাত খেলায় অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ২৮ রান তুলেন। আগস্টের শুরুতে সাসেক্সের বিপক্ষে ফিল্ডিংরত অবস্থায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে তার এ মৌসুমের খেলা শেষ হয়ে যায়।[102][103] এছাড়াও, শীতকালে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে এমসিসি দলের দুইটি সফরে অংশগ্রহণ থেকেও বঞ্চিত হন। ঐ দলটি পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ছিল না।[104]

১৯৩০ সালে অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড সফরে আসে। টেস্ট সিরিজ শুরুর পূর্বে চ্যাপম্যান সংবাদমাধ্যমে বেশ পরিচিত ছিলেন ও পছন্দের পাত্র ছিলেন। অনেক সমালোচকই মনে করেন যে, ক্রমবর্ধমান ওজন বৃদ্ধির কারণে সাবেক ইংরেজ অধিনায়ক পেলহাম ওয়ার্নার তাকে কমপক্ষে দুই স্টোন ওজন কমাতে পরামর্শ দেন ও ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফিরিয়ে আনতে বলেন।[105] তবে, মৌসুমের শুরুটা বেশ ভালো করেন তিনি। ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও অধিনায়কত্বের মাধ্যমে ধারাভাষ্যকারদের মন জয় করেন।[106] ফলশ্রুতিতে, প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনীত হন।[106] প্রথম ইনিংসে ৬৫ মিনিটে ৫২ রান তুলেন।[107] চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ড দল ৯৩ রানে জয় তুলে নেয়। উইজডেন সংবাদদাতা লেখেন যে, চ্যাপম্যান সীমিত শক্তি নিয়ে বোলিং করেন ও ফিল্ডিংয়ে নবধারার প্রবর্তন করেন।[107] অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাপম্যান উপর্যুপরী ষষ্ঠ টেস্টে জয় পান ও অধিনায়ক হিসেবে নয় টেস্টের সবগুলোতেই জয় তুলে নেন। তবে, এটিই তার সর্বশেষ টেস্ট জয় ছিল।[108]

দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড দল সাত উইকেটে পরাজিত হয়। এ খেলার বিষয়ে গিবসন মন্তব্য করেন যে, চ্যাপম্যানের ভবিষ্যতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এ খেলাটি।[108] উইজডেন পর্যবেক্ষণ সহযোগে মন্তব্য করে যে, দৃশ্যতঃ ইংরেজরা খেলায় পরাজিত হলেও শেষদিনে খেলাকে রক্ষা করার কিছুটা সুযোগ ছিল।[109] প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৪২৫ রান তুলে। কিন্তু, ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের ২৫৪ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া ৭২৯/৬ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। চ্যাপম্যান যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখনো ইংরেজরা ১৬৩ রানে পিছিয়ে ছিল। চার উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটও হারায় তারা।[110] ক্রিজে নেমেই তিনি বোলারদের উপর চড়াও হন।[109] গাবি অ্যালেনের সাথে বড় অঙ্কের জুটি গড়ার প্রয়াস চালান। কিন্তু, অ্যালেনের আউটের পর চ্যাপম্যান আরও দ্রুতলয়ে মারমূখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। একপর্যায়ে তিনি ইংল্যান্ড দলকে টেনে তুলেন। প্রায় প্রত্যেক বল মোকাবেলা করে নিজস্ব একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ১৪০ মিনিটে।[110] উইজডেন মন্তব্য করে যে, খেলায় তখন ক্রান্তিকাল চলছিল। কিছুটা যত্ন ও চিন্তাধারা প্রবাহিত করলে ইংল্যান্ড হয়তো খেলাটিকে রক্ষা করতে পারতে। নিজস্ব শক্তিমত্তাকে এড়িয়ে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন না করে তারা ক্রমাগত মারমূখীভাবে রান তুলতে থাকে। সোয়া এক ঘন্টার মধ্যে আরও ১১৩ রান তুললেও বাদ-বাকী পাঁচ উইকেট হারায় তারা।[109] অবশেষে ১২১ রান তুলে চ্যাপম্যান বিদায় নেন। তিনি ১৫৫ মিনিট ব্যাটিং করেন। তার ইনিংসে ১২টি চার ও ৪টি ছক্কার মার ছিল।[110] ইংল্যান্ড ৩৭৫ রান তুলে অল-আউট হয়। ফলে, অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য মাত্র ৭২ রানে প্রয়োজন পড়ে। তবে, ব্র্যাডম্যানের তোলা কঠিন ক্যাচ তালুবন্দী করে ধারাভাষ্যকারদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসিত হন তিনি।[2] অস্ট্রেলিয়া বেশ সহজভাবে খেলায় জয় পায়।[110] এ সেঞ্চুরির ফলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলা, জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলা ও ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলায় করেছিলেন। পরবর্তীতে মার্টিন ডনেলি একই কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন; তবে টেস্ট সেঞ্চুরিটি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৯৬২ সালে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলা না হলে এ অর্জনটির পুণরাবৃত্তি আর হবে না।[111]

খেলা শেষ হবার পর চ্যাপম্যান তার ব্যাটিংয়ে জন্য প্রশংসিত হন। চ্যাপম্যান বাদে দল ও দল নির্বাচকমণ্ডলী পরাজয়ের জন্য দোষী হন। এছাড়াও, তার অধিনায়কত্ব ও কৌশল গ্রহণের বিষয়টিও পরবর্তীতে পেলহাম ওয়ার্নারসহ অন্যান্যরা সমালোচনায় মুখরিত হয়েছিল।[110] ফিল্ডারদের মাঠে অবস্থান ও রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমায় না খেলার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। গিবসন মন্তব্য করেন যে, ঐতিহাসিকেরা এ খেলাকে টেস্ট খেলায় অন্যতম প্রধান ঘটনারূপে আখ্যায়িত করবেন। এরপর থেকে অধিনায়কেরা চ্যাপম্যানের বিনোদনধর্মী খেলার নীতি গ্রহণের আক্রমণধর্মী ক্রিকেট উপহারের ফলাফল গ্রহণের তুলনায় পরাজবরণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষায় আরও সচেতন হবেন।[112] চ্যাপম্যানের অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও খেলায় অংশগ্রহণের বিষয়টি পরবর্তী বছরগুলোয় তাকে শেষ ক্রীড়া সঙ্কেতরূপে পরিচিতি পাবে।[113]

তৃতীয় টেস্টে ব্র্যাডম্যান টেস্ট খেলায় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ দাঁড় করান। অস্ট্রেলিয়ার ৫৬৬ রানের মধ্যে তার সংগ্রহই ছিল ৩৩৪। বৃষ্টির ফলে খেলায় সময় কমে যায় ও ইংল্যান্ড খেলাটি ড্র করে।[114] একমাত্র ইনিংসে চ্যাপম্যান ৪৫ রান করেছিলেন।[15] চতুর্থ টেস্টও বৃষ্টির কবলে পড়ে যা আরও একটি ড্রয়ে পরিণত করে।[115] এবার চ্যাপম্যান তার অধিনায়কত্বের কৌশল গ্রহণে সমালোচিত হন। আবারো ফিল্ডিং সাজানোর বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।[112] ওয়ার্নার মন্তব্য করেন যে, চ্যাপম্যানের কৌশলগ্রহণ বেশ দূর্বল ছিল এবং তিনি বেশ তিনি আড়ষ্ট থেকে প্রতিপক্ষীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছিলেন।[116] বিশিষ্ট ক্রিকেট লেখক লিও ম্যাককিনস্ট্রির অভিমত, দল নির্বাচকমণ্ডলী চ্যাপম্যানের উপর ধারাবাহিকতাবিহীন ভূমিকা গ্রহণের ফলে আস্থা হারাচ্ছিলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিং ও উত্তরোত্তর কৌশল গ্রহণের সঙ্কীর্ণতাও এর জন্য দায়ী ছিল। এছাড়াও, ম্যাককিনস্ট্রি আরও লেখেন যে, দল নির্বাচকমণ্ডলী ও প্রভাববিস্তারকারী অন্যান্য সদস্য চ্যাপম্যানের মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে তার নেতৃত্বে প্রভাবের বিষয়েও সজাগ ছিলেন। এছাড়াও গুজব রয়েছে যে, চতুর্থ টেস্টের বিরতিতে বেশ কয়েকবার মদ্যপান করে মাঠে নেমেছেন তিনি।[117] দল নির্বাচকমণ্ডলী দীর্ঘ সময় সভা করে চ্যাপম্যানকে দলের বাইরে রাখেন ও বব ওয়াটকে অধিনায়ক হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত করেন।[118] গণমাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে একত্রিত হয়। চ্যাপম্যানের ব্যাটিং ও অধিনায়কত্বের বিপরীতে ওয়াটের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়।[119] গিবসন লক্ষ্য করেছেন যে, ১৯৩০ সালে মাঝেমধ্যে সমালোচিত হলেও চ্যাপম্যানের অবস্থান কোন সঙ্কটের মুখে পতিত হয়নি। তখনও তিনি সমান জনপ্রিয় ও অলিখিত বীরে পরিণত হয়েছিলেন। ঐ সিরিজে ব্যাট হাতে তিনি সেরা সিরিজ অতিক্রম করেন। কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করতেন ও তার সমমানের ফিল্ডার ঐ সময়ে ইংল্যান্ড দলে ছিল না। তবে তাকে দোষ দেয়াও যায় না; কেননা, ইংরেজ বোলাররা ব্র্যাডম্যানকে আউট করতে পারছিল না। ওয়াট তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না ও উল্লেখযোগ্যভাবে পরিচিত ছিলেন না।[112] চূড়ান্ত টেস্টে ব্র্যাডম্যান আরও একটি সেঞ্চুরি করে ফেলেন। খেলায় পরাজিত হবার পাশাপাশি সিরিজও খোঁয়ায় তারা। তবে, ওয়াট বেশ উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলেন। উইজডেনের ভাষায়, চ্যাপম্যান ফিল্ডারের কর্ম ছাড়া খুব কমই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন।[120] পরবর্তীকালে এ দুইজন বন্ধু হিসেবেই রয়ে যান, এমনকি বিতর্কের পরও।[111] চ্যাপম্যানের নিয়োগ ও ওয়াটকে তার স্থলাভিষিক্ত করার সাথে তুলনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করে গিবসন লিখেন যে, ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ড জয় পায়; ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড পরাজয়বরণ করে।[121] তিনি এ বিষয়ে সমাপণী বক্তব্য উপস্থাপন করেন যে, ওয়াট তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে - ঐ বছরগুলোর পর বিরূপ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।[121] ঐ সিরিজে চ্যাপম্যান ৪৩.১৬ গড়ে ২৫৯ রান তুলেছিলেন।[55] সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়ে তিনি শেষবারের মতো চার অঙ্কের কোঠা অতিক্রম করেন। ২৯.৩৪ গড়ে ১,০২৭ রান তুলেন তিনি।[17]

১৯৩০-৩১ মৌসুমের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর

১৯৩০ সালের অ্যাশেজের চূড়ান্ত টেস্ট শুরুর পূর্বেই পরবর্তী শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য চ্যাপম্যানকে অধিনায়ক মনোনীত করা হয়।[122] তবে তার অধিনায়কত্বে এমসিসি দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাভূত হয়। বেশ কয়েকজন প্রথমসারির খেলোয়াড়কে নির্বাচিত করা হয়নি ও দলটি আহত ও অসুস্থতার কবলে পড়েছিল।[123] দর্শকদের কাছে চ্যাপম্যান বেশ পরিচিত ছিলেন। তবে সফরের শুরুতে বেশ দূর্বলভাবে শুরু করেন। তবে, পরবর্তীতে টেস্ট সিরিজ শুরু হলে নিজেকে মেলে ধরতে প্রয়াস চালান।[124] উদ্বোধনী খেলায় ইংল্যান্ড দল ২৮ রানে পরাজিত হয় ও বাদ-বাকী চার টেস্টে ড্র করে। চূড়ান্ত খেলায় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সিরিজ ড্র করার তাগিদে ইংল্যান্ড দল খেলা দেরীতে শুরু হওয়ায় হতাশার কবলে পড়ে। চ্যাপম্যান টসে জয়ী হয়ে বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হন। তবে, আম্পায়ারদ্বয় বেইল ভুল মাপের চিহ্নিত করে নতুন বেইল তৈরী করার পূর্ব-পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। ২০ মিনিট নষ্ট হয়ে যায় ও পিচও শুকোতে থাকে। ফলে ইংল্যান্ড দল অধিকাংশ সুবিধা লাভ করা থেকে বঞ্চিত হয়।[123][125] চ্যাপম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানান ও দল নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন।[126] ঐ সিরিজে ১০.৭১ গড়ে ৭৫ রান তুলেন তিনি।[55] সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৭.৮০ গড়ে ৪৭১ রান তুলেন।[17] উইজডেন লক্ষ্য করে যে, মারমূখী ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি সদ্ব্যবহার করেননি, মাঝে-মধ্যে ভালো ব্যাটিং করেছেন।[123] সামাজিক দৃষ্টিকোণে এ সফরটি তিনি বেশ সফলভাবে উপভোগ করেছেন। পিতা-মাতাসহ সস্ত্রীক এ সফরে যোগ দেন। তিনি অনেকগুলো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন ও অনেকগুলো হুইস্কি খামার পরিদর্শন করেন। এ সকল খামারে ইংল্যান্ডের তার অধীনস্থ কর্মচারীরা যুক্ত ছিল।[124]

চ্যাপম্যান এরপর আর কোন টেস্টে অংশ নেননি। ২৬ টেস্টে ২৮.৯০ গড়ে ৯২৫ রানসহ ৩২ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।[127] ইংল্যান্ড দলকে ১৭ খেলায় নেতৃত্ব দেন। তন্মধ্যে নয় টেস্টে জয় ও দুই পরাজবরণ করে। বাদ-বাকী খেলাগুলো ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[2] তার পরিচালনায় দল ধারাবাহিকভাবে সাতটি টেস্টে জয় করে। পরবর্তীতে সমান রেকর্ড হয় ও ২০০৪ সাল পর্যন্ত টিকেছিল।[128][129] নয়টি জয়ের সবগুলোই অধিনায়ক হিসেবে প্রথম নয় খেলায় অর্জিত হয়।[প 7][130]

শেষের বছরগুলোয়

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর তিনি ১৯৩১ মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন। তবে, এ দলে তিনি এর পূর্বে মাঝে-মধ্যে অধিনায়কত্ব করেছিলেন।[131] ১৯৩১ সালে ১৮.৩৮ গড়ে ৬৬২ রান তুলেন।[17] গণমাধ্যমের একাংশ ভেবেছিল যে, তিনিই হয়তো ইংল্যান্ডের দলনেতা হবেন।[131] টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ডগলাস জারদিন তার স্থলাভিষিক্ত হন। জারদিন তেমন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। দল নির্বাচকমণ্ডলী জারদিনকে দলের শৃঙ্খলা আনয়ণে সচেষ্ট হবার তাগিদ দেন।[132] মৌসুম শেষে লর্ড টেনিসনের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে জ্যামাইকা সফরে যান। ৩৩.৮৩ গড়ে ২০৩ রান সংগ্রহ করেন তিনি।[17][133]

১৯৩২ মৌসুমের শুরুতে বেশ চমৎকার অবস্থায় যাত্রা শুরু করেন যা কয়েক মৌসুমে দেখা যায়নি। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হিসেবে দেখার জন্যও গণমাধ্যমে আলোচিত হতে থাকে।[133] ১৯৩১ সালে জারদিনের অধিনায়কত্ব গ্রহণের বিষয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উইজডেন সম্পাদক সি. স্টুয়ার্ট কেইন লিখেন যে, চ্যাপম্যানের সৃষ্ট বিনোদনের পুণরাবৃত্তি ঘটানো প্রয়োজন। তিনি ব্যাটিংয়ে ফিরেছেন ও ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দেবার যোগ্য।[134] ক্রিস্টোফার ডগলাসের অভিমত, জারদিন ও চ্যাপম্যানের মধ্যকার অধিনায়কত্বের ধরনের পার্থক্যই জারদিনকে গণমাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। তবে, দূর্ভাগ্যবশতঃ দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে দলে ফিরিয়ে আনেননি।[135] ঐ মৌসুমে চ্যাপম্যান ২৯.৭১ গড়ে ৯৫১ রান তুলেন।[17] কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে উপর্যুপরী দ্বিতীয় বছর কেন্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তৃতীয় স্থানে নিয়ে আসেন।[136]

১৯৩৩ সালে ৮৩৪ রান তুললেও গড় রানে ২১.৯৪ ছিল। এরপর নিয়মিতভাবে পরবর্তী মৌসুমগুলো খেললেও ২৩-এর বেশী গড়ে রান তুলতে সক্ষমতা দেখাতে পারেননি।[17] এরজন্য ক্রমবর্ধমান ওজন বৃদ্ধি ও শারীরিক সুস্থতাও দায়ী ছিল। ফলে, তিনি উপলদ্ধি করেন যে, ব্যাট করা তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এক পর্যায়ে তিনি একই মানের ব্যাটিং করতে পারছিলেন না যা পূর্বে করেছিলেন। যদিও ফিল্ডিংকালে ক্যাচ তালুবন্দী করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছিলেন তবে, ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি এলাকায় তিনি তার অবস্থান ধরে রাখতে পারছিলেন না।[137] ১৯৩৪ ও ১৯৩৫ সালে ২২-এর কাছাকাছি গড়ে ৮০০-এর নিচে রান তুলেন।[17] ১৯৩৫ সালে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরিটি হাঁকান সমারসেটের বিপক্ষে। তবে, ১৯৩১ সালের ন্যায় কোন মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেননি।[15] দলীয় সঙ্গী ও পর্যবেক্ষকেরা লক্ষ্য করেন যে, খেলোয়াড়ী জীবনের শেষের বছরগুলোয় চ্যাপম্যান নিয়মিতভাবে খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠ ত্যাগ করতেন ও প্যাভিলিয়নে মদপানরত অবস্থায় তাকে দেখা যেতো।[138]

১৯৩৬ সালে চ্যাপম্যানকে অনিয়মিতাবে খেলতে দেখা যেতো। আরও দুইজনের সাথে অধিনায়কের দায়িত্ব অংশীদারীত্বের পর্যায়ে নিয়ে যান। তিনি ব্যাট হাতে নিতে আগ্রহান্বিত হননি। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার বন্ধুরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তার স্নায়ুকোষ বেশ দূর্বল হয়ে গেছে।[139] ঐ মৌসুম শেষে তিনি ঘোষণা করেন যে, ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতার কারণে তিনি অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও অধিনায়কত্ব ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।[140] পরবর্তী তিন বছর কেন্টের পক্ষে আরও তিনটি খেলায় অংশ নেন। ১৯৩৭ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দল ও ১৯৩৮ সালে দুইটি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় তার অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৩৭ সালে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে উৎসবের খেলায় প্রতিনিধিত্ববিহীন ইংল্যান্ড একাদশের পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ নম্বরে মাঠে নেমে ৬১ রান তোলেন। নিম্নমানের প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেন। শেষ তিন মৌসুমে ১৩ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এমসিসির অধিনায়কত্ব করে ১৯৩৯ সালে অক্সফোর্ডের বিপক্ষে ১২ ও রান তোলেন।[15][141] সকল প্রকার ৩৯৪টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে ৩১.৯৭ গড়ে ১৬,৩০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৩৫৬ ক্যাচ লাভ করেন।[127] খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হবার পর তার ওজন আরও বৃদ্ধি পায়। লেমন বিশ্বাস করেন যে, তিনি অন্যান্য ক্রিকেটারকে প্রতিমূর্ত হবার আহ্বান করছেন। তবে চ্যাপম্যান বেশ বিরক্তি প্রকাশ করলেও কোন মন্তব্য করেননি। [142]

মূল্যায়ণ

নেভিল কারদাস চ্যাপম্যানকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট একাদশের সঠিকমানের অধিনায়ক হিসেবে বিদ্যালয় বালকের স্বপ্নের পুরুষ ছিলেন।[143] ব্যাটিংকালে চ্যাপম্যান বোলিং আক্রমণে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতেন। ফলে কোন ভুল হলেই আউট হয়ে যেতেন তিনি।[73] তিনি খেলাকে পরিবর্তন করে স্বল্পসময়ের জন্য নিয়ে যেতেন।[144] গিবসন চ্যাপম্যানের খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, তার ব্যাটিংয়ে সংগৃহীত রান বেশ মানানসই। তবে, সমালোচকদের অভিমত যে, তিনি যদি তার প্রতিভাবে মেলে ধরতেন তাহলে হয়তো আরও অধিকসংখ্যক রান তুলতে পারতেন।[145] গিবসন আরও লিখেছেন যে যখন চ্যাপম্যান ভালো করতে থাকেন তখন অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী কেন্ট ও ইংল্যান্ডের দলীয় সঙ্গী ওলিকেও ছাঁপিয়ে যেতেন। ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার তুলনায় সেরা অন্য কোন বামহাতি ইংরেজ ব্যাটসম্যানকে দেখা যায়নি। সম্ভবতঃ হবস বাদে অন্য কোন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানকে দেখা যায়নি যা সবাই একবাক্যে মেনে নেবেন।[77] ১৯৩০-এর দশকে ক্রমবর্ধমান ওজন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় ও ধীরে ধীরে তার ব্যাটিংয়ে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়।[73] ব্যাটিংকালে চ্যাপম্যান সচরাচর কুইডনানক্স ক্যাপ পরিধান করতেন।[প 8][2]

ধারাভাষ্যকারদের অভিমত, চ্যাপম্যান আদর্শ অধিনায়ক ছিলেন না ও কারিগরী দিকগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেননি।[2] তাস্বত্ত্বেও, তার সময়কালীন অন্য ইংরেজ অধিনায়কদের তুলনায় অধিকতর ভালো ছিল।[2] পেলহাম ওয়ার্নারের মতে, চ্যাপম্যানের শুরু দিকে বেশ ভালো করেছিলেন। তবে, ১৯৩০ সালের পর থেকে প্রায়োগিক জ্ঞানকে প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছেন।[147] অন্যদিকে, চ্যাপম্যানের সমসাময়িক খেলোয়াড়েরা তাকে অন্যতম সেরা অধিনায়কের মর্যাদা দিয়েছেন।[11] চ্যাপম্যানের উত্তরসূরী হিসেবে আর্থার জিলিগান তাকে, এ দায়িত্বের আদর্শ প্রতিমূর্তি হিসেবে গণ্য করে গেছেন[148] ও চ্যাপম্যানের প্রতিপক্ষীয় অস্ট্রেলীয় উইকেট-রক্ষক বার্ট ওল্ডফিল্ড নেতৃত্বের সহজাত গুণাবলী তার মাঝে দেখেছেন।[149]

রবার্টসন-গ্লাসগো চ্যাপম্যানকে সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের একজনরূপে বর্ণিত করেছেন।[150] দ্য টাইমস তিনি তার সেরা সময়ে ইংল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা সেরা ফিল্ডার ছিলেন।[151] খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে তিনি ডিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। তবে, কেন্ট ও ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলাকালীন তিনি ব্যাটসম্যানের আরও কাছে গালি কিংবা সিলি পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করতেন।[144] দ্য ক্রিকেটার মন্তব্য করে যে, প্রশস্ত হাতে দূর্দান্ত ফিল্ডার ছিলেন। কিছু ক্যাচ হাতে নিয়েছেন বিস্ময়করভাবে।[127] তরুণ বয়সে চ্যাপম্যান নিয়মিতভাবে বোলিং করতেন। তবে, বার্কশায়ারের পক্ষে নেতিবাচক অভিজ্ঞতায় উদ্যম হারান।[27] এরপর থেকে এ বিষয়টিতে আর গুরুত্ব আরোপ করেননি।[41]

মার্টিন ডনেলি’র সাথে মাত্র দুইজন ক্রিকেটারের একজনরূপে লর্ডসে অনুষ্ঠিত তিনটি ধ্রুপদী খেলায় সেঞ্চুরি করেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

মে, ১৯২১ সালে জারট্রুড (বিট বা বিটি) লরি নাম্নী এক রমণীর সাথে স্বাক্ষাৎ ঘটে।[152] কেমব্রিজ ও সমারসেটের পক্ষে খেলা ও পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম লরির বোন ছিলেন জারট্রুড।[2][153] ১৯২২-২৩ মৌসুমে চ্যাপম্যান নিউজিল্যান্ড সফরে আসলে এ যুগল পুণরায় একান্তে মিলিত হন।[41] ১৯২৪-২৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে তারা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন ও একত্রে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। তাদের এ বিয়ের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল ও এক দশককাল এ দম্পতি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন তারা।[57] সমাজের উচ্চস্তরে তারা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।[2] ১৯২৩ সালে চ্যাপম্যান ম্যাকসনের কেন্ট ব্রিউরিতে যোগ দেন। এটি পরবর্তীতে এইচ এন্ড জি সাইমন্ডস কিনে নেয়।[41] তার স্ত্রীর ধারনা ছিল যে, এ পেশায় মদ্যপানের বিষয়টি জড়িত থাকার ফলে তার দাম্পত্যজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছিল ও চ্যাপম্যান ব্যাপকমাত্রায় মদপান করতেন।[142] সামাজিক কার্যাবলীতে তার পেশার সম্পৃক্ত থাকায় ওজনবৃদ্ধিসহ ক্রিকেট জীবনের শেষদিকে শারীরিক সুস্থতার বিষয়টিও অবনতির দিকে ঠেলে দেয়।[41][142] খ্যাতির ফলে আরও সমস্যার জন্ম দেয়। জনসমক্ষে তিনি বেশ আমোদে লিপ্ত হতেন, নিয়মিতভাবে নেশা করতে থাকেন ও অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন।[154] ক্রিকেট লেখক ইভো টেনান্টের ধারনা যে, চ্যাপম্যান অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও এর স্বাদ গ্রহণ করতেন।[2] তিনি সর্বদাই নিজেকে খুশীভাবে থাকতেন। তবে, গিবসন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, কিছু লোক তাদের অসন্তুষ্টির কথা ব্যক্ত করতেন।[111] লেমন মন্তব্য করেছেন যে, চ্যাপম্যানকে বিমর্ষ দেখাতো ও মনেপ্রাণে একাকী থাকতে পছন্দ করতেন।[138] লেমনের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে অতীতের বিষয়কে প্রাধান্য দিতেন ও মানসিকভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটের দিনগুলো নিয়ে খুশী থাকতেন।[155]

ই. ডব্লিউ. সোয়ানটন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, যুদ্ধের পর থেকে চ্যাপম্যানের জীবন অনেকাংশেই দুঃখে ভারাক্রান্ত ছিল।[144] ১৯৪২ সালে চ্যাপম্যান তার স্ত্রীর কাছ থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রস্তাবনা পান। লেমনের মতে, বিট অনেকভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু, এক পর্যায়ে একজনকে চলে না গেলে সকল প্রকার সম্পর্ক শেষ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।[155] ১৯৪৬ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডে ফিরে বসবাস করতে শুরু করেন।[155] ১৯৪৬ সালের পর ওয়েস্ট হিল গল্ফ ক্লাবের স্টুয়ার্ড বার্নার্ড বেনসনের সাথে যৌথভাবে এক গৃহে বসবাস করতে থাকেন। প্রায়শঃই তাকে জনসমক্ষে মাতাল অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেতো। তবে তার উপস্থিতি ও আচার-আচরণ নিষ্পাপ ছিল। ক্রিকেটে অর্জিত সাফল্য তাকে প্রত্যাখ্যান করে, বিভ্রান্তিপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি ঘটায় বিশেষ করে লর্ডসে খেলা দেখার মুহুর্তগুলোয়।[156] জীবনের শেষ দিকে তিনি ক্রিকেট খেলা দেখতে অক্ষম হন।[2] পাশাপাশি, তার মদ্যপান গ্রহণের ফলে উত্তরোত্তর জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, একাকীত্ব ও মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন।[157] ১৯৫০-এর দশকে বাতরোগে আক্রান্ত হন যা সম্ভবতঃ খেলাধূলায় অংশগ্রহণের ফলে সৃষ্ট।[158] ১৯৫৫ সালে কেন্ট কর্তৃপক্ষ নৈশভোজনের আয়োজন করে ও তাকে নিমন্ত্রণ করে। পরবর্তীতে তিনি নিজেকে গাড়ীর বাম্পারে মাথা ঝোলানো অবস্থায় গাড়ী রাখার স্থানে দেখতে পান।[159]

সেপ্টেম্বর, ১৯৬১ সালে নিজ গৃহে পড়ে যান ও হাঁটুতে আঘাতপ্রাপ্ত হন পার্সি চ্যাপম্যান। তাকে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা হলেও অপারেশনের পর ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে। সংবাদপত্রে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাবেক পত্নী মন্তব্য করেন যে, একজন অতীব দুঃখী ব্যক্তি হিসেবে তার অবশ্যই মৃত্যুবরণ করা উচিত।[160] স্মরণসভায় একজন ক্রিকেটার হিসেবে তার সফলতার কথকতা তুলে ধরা হয় ও ব্যক্তিগতভাবে সমবেদনাজ্ঞাপন করা হয়। [161]

পাদটীকা

  1. চ্যাপম্যান মূলতঃ আর্থার নামে পরিচিত ছিলেন। তবে, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পার্সি নামে পরিচিতি পান।[1]
  2. The Cricketers of the Year were usually chosen from among first-class cricketers. In the absence of first-class cricket during the First World War, schoolboy cricketers were chosen in 1918 and 1919 based on their performances in the previous season.[9][10]
  3. Throughout Chapman's career, the MCC organised and administered English cricket. Official English touring teams always played under the name of MCC and were only styled "England" during Test matches.[33][34]
  4. At the time, the County Championship had strict qualification rules preventing a player appearing for a team in the Championship until he had lived for two years in that county.[41]
  5. "The Rest" was a team representing the "Rest of England" against the full England side. In this match, "The Rest" was intended to be the England second team, placing Chapman just outside the first choice eleven.[45]
  6. Ironmonger was a notoriously poor batsman; at the time, crowds thought it unfair to target such batsmen with fast bowlers.[97]
  7. The team won seven Tests in succession between 1927 and 1928. Chapman won his first nine games as captain, but others captained England when he did not play within this sequence.[128][130]
  8. The Quidnuncs Cricket Club was a club for former Cambridge cricket Blues.[146]

তথ্যসূত্র

  1. Lemmon, pp. 23 and 39.
  2. Tennant, Ivo (২০১১) [2004]। "Chapman, (Arthur) Percy Frank (1900–1961)"Oxford Dictionary of National Biography (online সংস্করণ)। Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন)
  3. Lemmon, p. 23.
  4. Lemmon, p. 24.
  5. Lemmon, p. 25.
  6. Lemmon, p. 28.
  7. Lemmon, p. 26.
  8. Lemmon, pp. 26–29.
  9. "Wisden Almanack 1918"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১
  10. "Wisden Almanack 1919"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১
  11. Swanton, p. 137.
  12. Lemmon, p. 30.
  13. Lemmon, pp. 31–32.
  14. Lemmon, p. 32.
  15. "Player Oracle APF Chapman"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১১
  16. Lemmon, p. 33.
  17. "First-class Batting and Fielding in Each Season by Percy Chapman"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১১
  18. Lemmon, p. 34.
  19. Lemmon, pp. 36–37.
  20. Lemmon, p. 37.
  21. Lemmon, pp. 37–38.
  22. Lemmon, pp. 38–39.
  23. Lemmon, p. 41.
  24. Lemmon, p. 42.
  25. "Cricket: Gentlemen and Players"The Times। London। ২১ জুলাই ১৯২২। পৃষ্ঠা 6। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))
  26. Pardon, Sydney H. (২২ জুলাই ১৯২২)। "Cricket notes: Mr A. P. F. Chapman's achievement"The Times। London। পৃষ্ঠা 12। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))
  27. Lemmon, p. 43.
  28. Lemmon, pp. 39–40.
  29. Lemmon, p. 31.
  30. Lemmon, p. 40.
  31. ACS (১৯৮২)। A Guide to First-Class Cricket Matches Played in the British Isles। Nottingham: ACS।
  32. "Marylebone Cricket Club Players"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৭
  33. "MCC History"। MCC। ৭ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৩
  34. Peebles, I. A. R. (১৯৮৬)। "History (1900–1914)"। Swanton, E. W.; Plumptre, George; Woodcock, John। Barclay's World of Cricket (3rd সংস্করণ)। London: Willow Books in association with Barclays Bank PLC। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 0-00-218193-2।
  35. Lemmon, pp. 44–45.
  36. Lemmon, p. 46.
  37. "MacLaren's Team"The Sydney Morning Herald। National Library of Australia। ২৫ নভেম্বর ১৯২২। পৃষ্ঠা 17। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১২
  38. Lemmon, pp. 45–47.
  39. Lemmon, p. 47.
  40. Lemmon, p. 48.
  41. Lemmon, p. 50.
  42. Lemmon, pp. 50, 52.
  43. Lemmon, p. 51.
  44. Lemmon, p. 52.
  45. Lemmon, p. 53.
  46. "England v South Africa 1924 (First Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯২৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২
  47. Lemmon, p. 54.
  48. "The M.C.C. tour in Australia: 10 players selected"The Times। London। ২৩ জুলাই ১৯২৪। পৃষ্ঠা 7। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))
  49. Lemmon, pp. 55–56.
  50. Lemmon, p. 56.
  51. Lemmon, p. 57.
  52. Lemmon, pp. 57–58.
  53. "Australia v England 1924–25"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১২
  54. Lemmon, p. 58.
  55. "Test Batting and Fielding in Each Season by Percy Chapman"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১২
  56. "M.C.C. team in Australia 1924–25"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯২৬। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১২
  57. Lemmon, p. 59.
  58. Lemmon, pp. 59–60.
  59. Lemmon, p. 60.
  60. Lemmon, p. 61.
  61. Lemmon, p. 62.
  62. Lemmon, p. 63.
  63. Lemmon, p. 11.
  64. Lemmon, p. 12.
  65. Lemmon, pp. 12–13.
  66. Gibson, pp. 127–28.
  67. Lemmon, pp. 13–14.
  68. Lemmon, pp. 14–15.
  69. Gibson, p. 129.
  70. Lemmon, p. 16.
  71. Lemmon, pp. 17–18.
  72. "England v Australia 1926 (Fifth Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯২৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১২
  73. Robertson-Glasgow, p. 36.
  74. Lemmon, p. 20.
  75. Lemmon, p. 65.
  76. Lemmon, pp. 65–66.
  77. Gibson, p. 147.
  78. Lemmon, p. 67.
  79. Lemmon, pp. 67–69.
  80. Lemmon, p. 69.
  81. Lemmon, pp. 70–72.
  82. Lemmon, p. 75.
  83. Douglas, p. 65.
  84. Lemmon, pp. 77–78.
  85. Lemmon, p. 79.
  86. Lemmon, p. 80.
  87. Douglas, p. 72.
  88. Lemmon, p. 81.
  89. Southerton, S. J. (১৯৩০)। "M.C.C. team in Australian 1928–29"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১২
  90. Lemmon, p. 84.
  91. Lemmon, p. 82.
  92. "Test matches: Team records: Largest margin of victory (by runs)"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২
  93. Lemmon, p. 85.
  94. Lemmon, p. 87.
  95. Douglas, pp. 74–75.
  96. Douglas, p. 77.
  97. Lemmon, pp. 90–91.
  98. Douglas, p. 83.
  99. Lemmon, p. 135.
  100. Douglas, p. 84.
  101. Lemmon, p. 89.
  102. Lemmon, pp. 93–97.
  103. Gibson, p. 132.
  104. Gibson, pp. 135–36.
  105. Lemmon, pp. 99–100.
  106. Lemmon, pp. 100–101.
  107. "England v Australia 1930 (First Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  108. Gibson, p. 143.
  109. "England v Australia 1930 (Second Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  110. Lemmon, pp. 103–07.
  111. Gibson, p. 146.
  112. Gibson, p. 144.
  113. Marshall, p. 199.
  114. Lemmon, pp. 107–08.
  115. "England v Australia 1930 (Fourth Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  116. Lemmon, pp. 108–09.
  117. McKinstry, p. 333.
  118. Lemmon, p. 109.
  119. Lemmon, pp. 110–11.
  120. "England v Australia 1930 (Fifth Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  121. Gibson, p. 145.
  122. Lemmon, p. 116.
  123. "M.C.C. team in South Africa, 1930–31"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩২। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  124. Lemmon, p. 117.
  125. Lemmon, p. 118.
  126. Lemmon, p. 119.
  127. "Percy Chapman (ESPNCricinfo profile)"। ESPNCricifno। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  128. "Test Matches: Team Records: Most consecutive wins"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১১
  129. "South Africa v England (First Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ২০০৫। আইএসবিএন 0-947766-89-8। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১১
  130. "Most consecutive wins and defeats for a new captain"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  131. Lemmon, pp. 120–21.
  132. Douglas, pp. 93–96.
  133. Lemmon, p. 121.
  134. Caine, C. Stewart (১৯৩২)। "Notes by the Editor"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  135. Lemmon, pp. 122–23.
  136. "LV County Championship: County Championship Final Positions 1890–2010"। Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ২০১০। পৃষ্ঠা 575। আইএসবিএন 978-1-4081-2466-6।
  137. Lemmon, pp. 124–26.
  138. Lemmon, p. 136.
  139. Lemmon, p. 126.
  140. Lemmon, pp. 126–27.
  141. Lemmon, p. 127.
  142. Lemmon, p. 133.
  143. Cardus, Neville (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬১)। "Chapman, the Personification of Romantic Cricket"। The Guardian। Manchester। পৃষ্ঠা 4।
  144. Swanton, p. 138.
  145. Gibson, pp. 146–47.
  146. Douglas, pp. 81–82.
  147. Lemmon, p. 131.
  148. Lemmon, p. 129.
  149. ""Bert" Oldfield Talks About Cricket: The Colourful Percy Chapman"The Examiner। Launceston, Tas.: National Library of Australia। ১৪ মার্চ ১৯৩৮। পৃষ্ঠা 2 Edition: Late News Edition and Daily। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২
  150. Robertson-Glasgow, p. 37.
  151. "Mr A. P. F. Chapman"The Times। London। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬১। পৃষ্ঠা 13। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))
  152. Bill Francis, Tom Lowry: Leader in a Thousand, Trio, Wellington, 2010, p. 57.
  153. Lemmon, p. 39.
  154. Lemmon, pp. 136–38.
  155. Lemmon, p. 139.
  156. Lemmon, pp. 140–41.
  157. Gibson, p. 148.
  158. Lemmon, pp. 142–43.
  159. Lemmon, p. 144.
  160. Lemmon, pp. 144–45.
  161. Lemmon, p. 145.

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

  • Douglas, Christopher (২০০২)। Douglas Jardine: Spartan Cricketer। London: Methuen। আইএসবিএন 0-413-77216-0।
  • Gibson, Alan (১৯৭৯)। The Cricket Captains of England। London: Cassell। আইএসবিএন 0-304-29779-8।
  • Lemmon, David (১৯৮৫)। Percy Chapman: a biography। London: Queen Anne Press। আইএসবিএন 0-356-10458-3।
  • Marshall, Michael (১৯৮৭)। Gentlemen and Players: Conversations with Cricketers। London: Grafton Books। আইএসবিএন 0-246-11874-1।
  • McKinstry, Leo (২০১১)। Jack Hobbs: England's Greatest Cricketer। London: Yellow Jersey Press। আইএসবিএন 978-0-224-08329-4।
  • Peebles, Ian (১৯৭৮)। Spinner's Yarn। Newton Abbot: Readers Union Ltd।
  • Robertson-Glasgow, R. C. (১৯৪৩)। Cricket Prints: Some Batsmen and Bowlers, 1920–1940। London: T. Werner Laurie Ltd। ওসিএলসি 3257334
  • Swanton, E. W. (১৯৯৯)। Cricketers of My Time। London: André Deutsch। আইএসবিএন 0-233-99746-6।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.