টনি লুইস (ক্রিকেটার)

অ্যান্থনি রবার্ট লুইস (ইংরেজি: Tony Lewis; জন্ম: ৬ জুলাই, ১৯৩৮) ওয়েলসের সোয়ানসি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক।[1] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্ল্যামারগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, লেগ ব্রেক বোলিং করতেন টনি লুইস

টনি লুইস (ক্রিকেটার)
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যান্থনি রবার্ট লুইস
জন্ম (1938-07-06) ৬ জুলাই ১৯৩৮
সোয়ানসি, ওয়েলস
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ ব্রেক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় পার্শ্ব
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০৯
রানের সংখ্যা ৪৫৭ ২০৪৯৫
ব্যাটিং গড় ৩২.৬৪ ৩২.৪২
১০০/৫০ ১/৩ ৩০/৮৬
সর্বোচ্চ রান ১২৫ ২২৩
বল করেছে ৫২১
উইকেট
বোলিং গড় ৭২.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/১৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং –/– ১৯৩/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ১৫ মার্চ ২০১৮

বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ও ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতির সহ-প্রবক্তা টনি লুইসের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

প্রারম্ভিক জীবন

সোয়ানসিতে জন্মগ্রহণকারী টনি লুইস উইলফ্রিড লুইস ও মার্জোরি (বিবাহ-পূর্ব ফ্লাওয়ার) দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে তাদের পরিবার নিথে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। যুদ্ধে তার বাবা মেজর পদবীধারী ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের পর নিথে বীমা কার্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এরপর সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন উইলফ্রিড।[2]

নিথের নল স্কুলে ভর্তি হন টনি লুইস। এরপর বালকদের নিথ গ্রামার স্কুলে চলে যান। সেখানে তিনি বেহালায় বেশ নাম করেন। ফলশ্রুতিতে ওয়েলসের জাতীয় যুব অর্কেস্টায় অন্তর্ভূক্ত হন তিনি। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ক্রিকেট ও রাগবি দলে খেলার জন্য মনোনীত হন। ওয়েলস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে পাঁচ বছর প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে, তিন বছর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[3]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

১৯৫৫ সালে ১৭ বছর বয়েস প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গ্ল্যামারগনের সদস্যরূপে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক ঘটে টনি লুইসের।[4] এ সময় তিনি নিথ গ্রামার স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন। একই বছরে ওয়েলসের জাতীয় যুব অর্কেস্টায় প্রথম স্তরের বেহালাবাদক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।[5] আরএএফে জাতীয় সেবাকার্য সম্পন্ন করেন তিনি।[6]

এরপর ১৯৬০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের জন্য নিজেকে উপযোগী করে তুলেন। এ সময় তিনি কেমব্রিজের ক্রাইস্টস কলেজে অধ্যয়নকালীন অবস্থায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য মনোনীত হন। প্রথম বর্ষে থাকাকালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ৪৩.৫৬ গড়ে ১৩০৭ রান ও পরের বছর ৩০.৮০ গড়ে ৬১৬ রান তুলেন। এরপর তিনি গ্ল্যামারগনের পক্ষে যোগ দেন।

কেমব্রিজে থাকাকালে শেষ মৌসুমে ১৯৬২ সালে সকল খেলায় অংশ নেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় পাঁচ সেঞ্চুরি সহযোগে ৪০.৫১ গড়ে ২১৮৮ রান তুলেন। বিএ ডিগ্রি লাভের পর এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন টনি লুইস। ১৯৬৬ সালে দুই সহস্রাধিক রান তুলে শীর্ষস্থানে ছিলেন। ২১৯০ রান তুলেন ৪০.৫১ গড়ে যা ঐ মৌসুমে অন্য কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। ২২৩ রান সংগ্রহের মাধ্যমে একমাত্র দ্বি-শতক রান তুলেন কেন্টের বিপক্ষে। গ্রেভসেন্ডে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় গ্ল্যামারগন ফলো-অনের কবলে পড়েছিল। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত গ্ল্যামারগনের অধিনায়কত্ব করেন তিনি। তন্মধ্যে, ১৯৬৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সময় পুরো মৌসুমে গ্ল্যামারগন অপরাজিত অবস্থায় ছিল।

টেস্ট ক্রিকেট

২০ ডিসেম্বর, ১৯৭২ তারিখে টেস্ট অভিষেক ঘটে টনি লুইসের। টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকেই সর্বশেষ ইংরেজ ক্রিকেটার হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার বিরল সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় পাঁচ মাসের সফরে কঠোরভাবে দলকে পরিচালনা করেন তিনি। টেস্ট খেলায় কোনরূপ অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত অভিষেক খেলায় অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।[7]

তার সুযোগ্য পরিচালনায় ভারত উপমহাদেশে ইংল্যান্ড দল দুই দশকেরও অধিক সময় পর ইংল্যান্ড দল প্রথম জয়ের সন্ধান পায়। পরের দুই টেস্টে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড দল। তবে, কানপুর টেস্টে লুইস ১২৫ রান তুলে তার প্রথম টেস্ট শতক লাভ করেন।[1] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আট টেস্টে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে, ১৯৫১ সালের পর ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দেন। দুইবার খেলায় পরাজিত হন ও পাঁচবার খেলা ড্র করতে সক্ষমতা দেখায় তার দল। বোম্বে টেস্টসহ কানপুরের চতুর্থ টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন তিনি। এ সকল সম্মাননার পরও পরবর্তী গ্রীষ্মকালের জন্য অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত রে ইলিংওয়ার্থের সহকারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য দল নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক তাকে অধিনায়কের দায়িত্বভার প্রদানের জন্য মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি এ দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিবর্তে লেখা ও সম্প্রচারের দিকে মনোনিবেশ ঘটান তিনি।

অর্জনসমূহ

নিথ গ্রামার স্কুল থেকে আসা দুইজন ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়কের একজন ছিলেন টনি লুইস। আর ই এস ওয়াট শেষ মুহুর্তে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সি. এফ. ওয়াল্টার্স এ দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ঐ সময় শৌখিন খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে দলের অধিনায়কত্ব মনোনীত করা হতো। অবশ্য ঐ সময় ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলছিলেন। তবে, লুইস অদ্যাবধি একমাত্র গ্ল্যামারগনের খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডকে অধিনায়কত্ব করেছেন ও বড় ধরনের টেস্ট সফরে ইংল্যান্ডকে পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও, টনি লুইস ও অ্যালান ওয়াটকিন্স একমাত্র গ্ল্যামারগনের খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডে পক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেছেন।

২০০৪ সালে নববর্ষের সম্মাননায় ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সিবিই পদবীতে ভূষিত হন। ওয়েলসভিত্তিক কার্ডিফ, সোয়ানসী, গ্ল্যামারগন, ইউডব্লিউআইসি ও নিউপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক সম্মাননা লাভ করেছেন।

অবসর

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৯০-এর বিবিসি টেলিভিশনে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব পরিণত হন। এরপর এমসিসির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

নিথ ও গ্লুচেস্টারের পক্ষে রাগবি ইউনিয়নে অংশ নিয়েছেন তিনি। এরপূর্বে ১৯৫৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় কেমব্রিজের পক্ষে ব্লু লাভ করেছেন টনি লুইস। দীর্ঘকালীন হাঁটুর ব্যথায় জর্জরিত থাকা অবস্থায় রাগবি খেলা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হন। এর অর্থ দাঁড়ায় যে, ৩৪ বছর বয়সেই তাকে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে হয়। তবে, ১৯৬৫ সাল থকে লেখালেখি ও সম্প্রচারের দিকেই তার মনোযোগ দেখা যায়। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে রাগবি ইউনিয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন লেখার মাধ্যমে সংবাদপত্রের জগতে ধাবিত হন তিনি।[8]

১৯৭৫ সালে দ্য সানডে টেলিগ্রাফের ক্রিকেট ও রাগবি সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েলস স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। গ্ল্যামারগন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি, ক্রিকেট সভাপতি, প্রেসিডেন্ট ও বোর্ড সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিবিসি টেলিভিশনের ক্রিকেট সম্প্রচারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে টেস্ট ম্যাচ স্পেশালের দায়িত্ব পালন করেন। রেডিও ফোরের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান স্পোর্ট অন ফোর শীর্ষক অনুষ্ঠানের সূচনাকারী উপস্থাপক হিসেবে দশ বছর দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৯৮ সাল থেকে মিড গ্ল্যামারগনের হাই শেরিফের দায়িত্ব পালন করছেন।[9]

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৬২ সালে জোয়ান প্রিটচার্ড নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। প্রিটচার্ড বালিকাদের নিথ গ্রামার স্কুল ও সারের অ্যাডলটনের মোভমেন্ট স্টুডিও ল্যাবান আর্ট থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন।[10] তাদের সংসারে জোয়ানা ও অ্যানাবেল নাম্নী দুই কন্যা রয়েছে।[11]

তথ্যসূত্র

  1. Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 110–111। আইএসবিএন 1-869833-21-X।
  2. Tony Lewis, Taking Fresh Guard, Headline, London, 2004, pp. 1–8.
  3. Lewis, Taking Fresh Guard, pp. 19–36.
  4. Leicestershire v Glamorgan, 1955
  5. Tony Lewis, Playing Days, Stanley Paul, London, 1985, pp. 10–16.
  6. Lewis, Playing Days, pp. 38–45.
  7. India v England, Delhi, 1972–73
  8. Lewis, Playing Days, pp. 89–92.
  9. "A R Lewis, Esq, CBE, DL"। Debretts। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১১
  10. Lewis, Playing Days, pp. 84–85.
  11. Lewis, Playing Days, p. 93.

গ্রন্থপঞ্জী

  • Summer of Cricket (১৯৭৬)
  • Playing Days: An Autobiography (১৯৮৫)
  • Double Century : The Story of MCC and Cricket (১৯৮৭)
  • Cricket in Many Lands (১৯৯১)
  • MCC Masterclass (১৯৯৪)
  • Taking Fresh Guard: A Memoir (২০০৩)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.