মানব পরিপাকতন্ত্র
মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যনালী এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গ সমবায়ে মানব পরিপাকতন্ত্র গঠিত যার মূল কাজ খাদ্য পরিপাক করা। একে পাচনতন্ত্র (digestive system) বা পৌষ্টিকতন্ত্রও বলা হয়ে থাকে।
Human gastrointestinal tract (Digestive System) | |
---|---|
![]() Stomach colon rectum diagram | |
শনাক্তকারী | |
টিএ | A05.0.00.000 |
এফএমএ | FMA:7152 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
খাদ্য পাচন বা পরিপাক বা হজম একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাদ্যকে প্রথমে ছোট ছোট টুকরো করে তার পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন উৎসেচক দ্বারা বিগলিত করে দেহে আত্তীকরণের উপযোগী করা হয়। পাচন প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত অঙ্গতন্ত্রকে পাচনতন্ত্র বলে।
পাচন প্রক্রিয়াকে অবস্থান অনুযায়ী দুটিভাগে ভাগ করা যায়:
- অন্তঃকোষীয় (Intracellular digestion): আদিম প্রাণী যেমন প্রোটোজোয়ার পাচনতন্ত্র পুরোপুরি অন্তঃকোষীয়। উদাহরণ প্যরামেশিয়ামের পাচনতন্ত্র।
- বহিঃকোষীয়:(Extracellular digestion): উন্নত প্রাণী এবং পতঙ্গভুক উদ্ভিদদের খাদ্য ভক্ষণ ও এপ্রাথমিক পাচনের জন্য খুব বিশদ বৈশিষ্টপূর্ণ পাকনালীতে প্রাথমিক পাচন সমপন্ন হয়।
পাকনালীকে অন্ননালী বা খাদ্যনালী বলা হয় । ইংরাজী: Gut, gastrointestinal tract(GIT), digestive tract, alimentary canal. স্তন্যপায়ী পাকনালীর অংশগুলি যথাক্রমে:
শিরঃপাকনালী (Head gut)

মুখবিবর (mouth)
মুখগহ্বর (buccal cavity)
তালু (মুখগহ্বর) (palate)
কঠিন তালু (hard palate)
নমনীয় বা কোমল তালু (soft palate)
জিহ্বা
স্বাদকোরক
ওরো-ফ্যারিঙ্স (oro-pharynx)
মধ্যপাকনালী (mid gut) বা ক্ষুদ্রান্ত্র (small intestine)

ডিওডেনাম (duodenum) (এটা ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ পাকস্থলীর পরের অংশ,দেখতে ট আকৃতির )
জেজুনাম (jejunam) এটা ডিওডেনাম ও ইলিয়ামের মধ্য
ইলিয়াম(অন্ত্র) (ileum)
পশ্চাৎপাকনালী (hind gut) বৃহদন্ত্র (large intestine)
সিকাম (আমাদের ভার্মিফর্ম অ্যাপেন্ডিক্স)
অ্যাসেন্ডিং কোলন
ট্রান্সভার্স কোলন
ডিসেন্ডিং কোলন
সিগময়েড কোলন
মলাধার (রেক্টাম)
ক্লোয়াকা
আনুসঙ্গিক পাচক গ্রন্থি
লালাগ্রন্থি

প্যারোটিড গ্রন্থি
সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি
সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি
যকৃৎ (liver)
অগ্ন্যাশয়
স্তন্যপায়ী ছাড়া অন্যান্য মরুদণ্ডীদের পাকনালী প্রায় একই রকম তবে ক্ষুদ্রান্ত্রে তিনটির বদলে দুটি ভাগ (জেজুনাম নাই)। বৃহদন্ত্র প্রায় নাই এবং অন্ত্রের এই শেষভাগে মূত্রনালী ও জননাঙ্গ উন্মুক্ত হয়, তাই পাকনালীর এই অংশের নাম ক্লোয়াকা যার কাজ মল ও মূত্র থেকে জল শুষে নিয়ে স্থলচরদের জল অপচয় রোধ।
পাচন প্রক্রিয়ার পর্যায়ক্রমিক স্তর
বহিঃকোষীয় পাচন প্রক্রিয়ার পর্যায়ক্রমিক ধাপে হয়। প্রথম দুটি ধাপ হয় শিরপাকনালীতে
- খাদ্য আহরণ:
- খাদ্য সংগ্রহ
- হস্তগতকরণ (prehension)
- ভক্ষণ:
- মুখব্যদন
- চর্বন (চিবান)
- লালাক্ষরণ (salivation)
- গলধঃকরণ (গিলে ফেলা)
পেরিস্টলসিস
খাদ্য হজমের স্বার্থে পাকস্থলী গাত্রের যে আন্দোলন তাকে পেরিস্টলসিস বলা হয়। এই আন্দোলনের ফলে খাদ্য দ্রব্য সহজে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড, পানি এবং অন্যান্য এনজাইমের সঙ্গে মিশে।
স্ফিঙ্কটারের কাজ
পাকস্থলীর পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার (sphincter= পেশির বেড়ী যা ছিদ্রপথকে বেস্টন করে থাকে) পাকস্থলী থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে।
অ্যাসিডের কাজ
পাকস্থরীতে খাদ্য পরিপাক হওয়ার জন্য অম্লীয় পরিবেশের প্রয়োজন হয়। তাছড়া পাকস্তলীতে নিঃসৃত হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যদ্রব্যকে নরম করে সহজপাচ্য করে তোলে।
আন্ত্রিক গ্রন্থি
পাকনালীতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা
পাকনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা প্রায় ১০০,০০,০০,০০,০০,০০০ যা আমাদের পুরো দেহের কোষ সংখ্যার থেকে কমপক্ষে ১০ গুণ। ভালো ভূমিকা: প্রাণীদের সেলুলেজ নেই (একমাত্র ব্যতিক্রম "টিউনিক"-ধারী অ্যাসিডিয়া)।
তাই উইপোকা থেকে গরু সবার সেলুলোজ হজম করতে ব্যাকটেরিয়া লাগে।
তৃণভোজী পাকনালী
এদের দুভাগে ভাগ করা যায়:
- যারা পুরোঃপাকনালীতে ফারমেন্ট করে বা গাঁজায় (Foregut fermenter) যেমন গরু।
- যারা পশ্চাৎপাকনালীতে ফারমেন্ট করে বা গাঁজায় (hindgut fermenter) যেমন ঘোড়া।