ধৃতরাষ্ট্র

ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন মহাভারতে বর্ণিত দুর্যোধনের পিতা । তিনি পান্ডুর অবর্তমানে হস্তিনাপুরের রাজা হন। তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। গান্ধারের রাজকুমারী গান্ধারীকে তিনি বিবাহ করেন। তার একশত পুত্র ও এক কন্যা ছিল। এছাড়া এক বৈশ্য দাসীর গর্ভে যুযুৎসু নামে ধৃতরাষ্ট্রের এক পুত্রের জন্ম হয়।

তার জন্মান্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে মহাভারতে রয়েছে বিচিত্রবীর্যের মৃত্যু হলে বংশ রক্ষার্থে তার মাতা সত্যবতী কুমারী অবস্থায় গর্ভজাত পরাশর মুনির পুত্র ব্যাসদেবকে ডাকেন। সত্যবতীর ইচ্ছায় ব্যাসদেব অম্বিকার সঙ্গে মিলিত হয়ে তাকে গর্ভবতী করেন। মিলনের সময়ে ব্যাসদেবের কুৎসিত মূর্তি দর্শন করে অম্বিকা ভয়ে চোখ বন্ধ করায় তার পুত্র জন্মান্ধ হয়।[1]

আবার অন্য একটি উপাখ্যানে বর্ণিত রয়েছে ধৃতরাষ্ট্র তার পূর্ব জন্মে একজন ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন। আর তখনকার দিনে ক্ষত্রিয়রা হরিণের মাংস ভক্ষন করতো। একদিন রাজা হরিণ শিকারে জঙ্গলে যান এবং তিনি হঠাৎ একটি হরিণ দেখতে পান। হরিণটিকে ধরার জন্য তিনি হরিণটির পেছনে ছুটতে লাগলেন একবার হরিনটি সামনে আসে আবার আড়ালে চলে যায়। এক ধরনের মায়ার দ্বারা হরিনটি তাকে আকৃষ্ট করতে লাগলেন।' এভাবে হরিনটির পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি গভীর জঙ্গলে পৌঁছে যান এবং তখন সূর্য ডুবে যায়। ফলে রাজা আর প্রাসাদে যেতে পারলেন না । তাই বাধ্য হয়ে তিনি জঙ্গলেই একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন । তিনি গাছের ডালপালা ভেঙে গাছটির নিচে আগুন জ্বালালেন । রাজা খুবই ক্ষুধার্ত ছিলেন আর মনে মনে খাবাবের চিন্তা করছিলেন । তিনি যেই গাছটির নিচে বসে ছিলেন সেই গাছটির ওপরে ছিল এক পাখির বাসা। পাখির বাসাটিতে ছিল মা পাখি,বাবা পাখি আর তাদের একশো ছানা। বাবা পাখিটি মা পাখিকে বলতে লাগলো রাজা খুবই ক্ষুধার্ত আমাদের উচিত রাজাকে খাওয়ানো। বাবা পাখিটি বললো আমি আগুনে ঝাপ দিই আমার পালকগুলো পুড়ে যাবে এবং আমি ঝলসে যাবো তখন রাজা আমাকে খেতে পারবে। মা পাখিটি বললো তুমি মরে গেলে ছানাদের অনেক কষ্ট হবে তার চেয়ে বরং আমিই ঝাপ দিই । এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি হতে হতে হঠাৎ মা পাখিটি গাছ থেকে পড়ে যায় এবং সে ঝলসে যায় । পরে রাজা তার তীর দিয়ে আগুন থেকে পাখিটিকে উঠিয়ে খায়। খাবার পর রাজার ক্ষিধে আরও বেড়ে যায় রাজা তখন গাছের ওপরে তাকায় এবং দেখতে পায় গাছের ওপরে আর পাখি আছে । তিনি তখন গাছ বেয়ে ওপরে উঠে বাবা পাখি আর তার ছানাগুলো নামায়। রাজা তার তীর দিয়ে ছানাগুলোর একচোখ দিয়ে ঢোকায় আর অন্যচোখ দিয়ে বের করে তীরে গাথে । এভাবে সে সবগুলো ছানাকে ঝলসে খায়। আর তার এই কৃতকর্মের জন্যই তিনি পরের জন্মে জন্মান্ধ হয়ে জন্ম গ্রহণ করেন এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাকে শত পুত্রের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়।[2]

ধৃতরাষ্ট্র গান্ধার রাজ্য আক্রমণ করে রাজকন্যা গান্ধারী কে বিবাহ করেন।গান্ধারী নিজে চোখ ঢেকে রাখতেন তার স্বামীর জন্য। ধৃতরাষ্ট্রর ঔরসে গান্ধারী গর্ভবতী হন আর দুই বৎসর পর এক মাংসপিন্ড প্রসব করেন যার থেকে ১০০ পুত্র ও দুঃশলার জন্ম হয়।

গান্ধারীর গর্ভাবস্থায় ধৃতরাষ্ট্রের সেবা করতেন এক দাসী। অন্ধরাজকে সে অসাবধানতাবশত ছুঁয়ে ফেলে। তার স্পর্শে মহারাজ কামার্ত হন, ও সেই সুন্দরী দাসীকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর গান্ধারীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাসীকে নগ্ন করে সম্ভোগ করেন। এই সম্ভোগের ফলে দাসীও গর্ভবতী হন। দাসীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্রের ঔরসে যুযুৎসুর জন্ম হয়।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যুযুৎসু ব্যতীত অন্য সব পুত্রগণ নিহত হওয়ার পর ধৃতরাষ্ট্র অনুতপ্ত হয়ে স্বীকার করেন যে, ওঁর দোষেই কৌরবগণ দুষ্কার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন। যুধিষ্ঠির রাজা হলে, কিছুদিন তাঁর আশ্রয়ে থেকে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তিকে নিয়ে অরণ্যযাত্রায় যান। হরিদ্বারের নিকট এক গভীর অরণ্যে প্রজ্বলিত দাবাগ্নির মধ্যে তপস্যারত অবস্থায় তিনজন প্রাণত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র

  1. কাশীদাসী মহাভারত
  2. মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.