অভিমন্যু

অভিমন্যু মহাভারত মহাকাব্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র ও অর্জুন-সুভদ্রার পুত্র, কৃষ্ণের ভাগিনেয় এবং মৎস্য রাজকন্যা উত্তরার স্বামী। শৌর্যে বীর্যে তিনি তার পিতা অর্জুন ও পিতামহ ইন্দ্রের সমতুল্য। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিবসে মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার একমাত্র পুত্র পরীক্ষিৎ তার মৃত্যুর পর জন্মগ্রহণ করেন।ওই যে দ্বিতীয় কৃষ্ণ অভিমুন্য ওই সেই রাজা করুর ক্ষেত্র করুক্ষেত্র।প্রবাহিত বাতাসে তার কেশসমুহের প্রান্ত ভাগ উড়ছে দুলছে।উত্তোলিত হাতে ধরা রয়েছে চক্র নামক অস্ত্র।তখন তার শরীর? দেবতারা ও ভীত হবেন তাকাতে। শুক্লপক্ষের যোদ্ধা উদ্বিগ্ন।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে অভিমন্যুকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার উত্তরার অণুরোধ

একি ভয়ঙ্কর।একা অভিমন্যু। কৃষ্ণ ই ভরসা।কৌরব পক্ষীয় মহাযোদ্বারা চক্রটি কে খন্ড খন্ড করে ফেল লেন।মহারথী অভিমন্যূর সমস্যা_ রথ,ধনু,খড়্গ,চক্র,সব আয়ূধই হারিয়ে ছেন।সম্বল একটি গদা। প্রজ্বলিত বজ্রতুল্য সেই বিশাল গদা তুলে তরুন পান্ডব ছুটে আসছেন অশ্বত্থামার দিকে।

অকল্পনীয় সেই বেশ।গুচ্ছ গুচ্ছ সোনালী চুল সিংহের কেশরের মতো বাতাসে উড়ছে।বাণ বিদ্ধ, রক্তাক্ত শরীর।অশ্বথামা ভয়ে তার রথের ভেতরের দিকে তিন পা সরে গেলেন। রথের উপর বজ্রের আঘাতের মতো নেমে এল ভীম গদা। সেই আঘাতে অশ্বথামার চারটি অশ্ব ও দুই পাশের দুই রক্ষককে বধ করে অভিমুন্য দাঁড়িয়ে আছেন কেমন দেখাচ্ছে তাকে।বান বিদ্ধ দেহ,যেন একটি শ্বাবিদ শজারু।।

মহাভারতের আদি পর্বে ব্যাসদেব এই বিরের পরিচয় দিচ্ছেন, অপূর্ব তার দেহগঠন বাহুযুগল দীর্ঘ,বক্ষ, বিশাল,নয়ণ দুটি আকর্ণ বিস্তৃত। তিনি নির্ভীক ও মহাবীর।

ক্রোধী পুরুষ। তাই তার নাম অভিমুন্য।অভি অর্থাৎ_অত্যধিক ,মুন্য অর্থাৎ ক্রোধ। দূর্যোধন কে ভীষ্ম বলেছিলেন, দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্রই মহারথী।অভিমুন্য মহামহারথ।যুদ্ধ ক্ষেত্রে অভিমুন্য তার পিতা অর্জন ও মাতুল কৃষ্ণের সমান।মনস্বী ও দৃঢ়ব্রত।বিরাট রাজার কন্যা উত্তরা তার স্ত্রী।।।

ভারতযুদ্ধের ত্রয়োদশ দিন। দ্রোণাচার্য আজ চক্রবুহ্য নির্মাণ করেছেন। এই ব্যুহ ভেদের কৌশল মাত্র চার জনের জানা ছিল।তারা হলেন_কৃষ্ণ ,প্রদ্যুম্ন, অর্জন,আর অভিমুন্য। সেদিন দ্রোনের অস্বাভাবিক বিক্রম,চক্রব্যুহের দর্ভেদ্যতা পান্ডব শিবিরে হতাশা।ধর্মরাজ অভিমুন্যকে বললেন__ব্যুহ ভেদ করো।অভিমুন্য বললেন, পিতার কাছে ভেদ করার কৌশল জেনেছি।বিপদ কালে নিষ্ক্রমণের কৌশল জানা হয়নি। ধর্মরাজ বললেন, তুমি ভেদ করো,আমরা তোমার পেছনে পেছনে প্রবেশ করবো। ধর্মরাজের ভুল সিদ্ধান্ত।অভিমুন্যর নিয়তি।তারা ব্যুহ ভেদ করতে পারলেন না।একা অভিযুক্ত,বিপক্ষে______দ্রোণ,দ্রৌণি,কৃপ,কর্ণ,শল্য,কৃতবর্মা,শকুনি,বৃহদ্বল,ভূরি,ভুরিশ্রবা,শল,পৌরব,আর বৃষসেন।

জন্ম, শিক্ষা ও বিবাহ

অর্জুনের বারো বছরের ব্রহ্মচর্য ও বনবাস সম্পূর্ণ হওয়ার পর অভিমন্যুর জন্ম হয়। মাতার গর্ভে থাকতেই তার শিক্ষা শুরু হয়েছিল। গর্ভাবস্থায় সুভদ্রা অর্জুনের নিকট চক্রব্যূহে প্রবেশের প্রণালী শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ায় অভিমন্যু কেবল চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে জানতেন, বাহির হতে জানতেন না।

পান্ডবগণের বনবাস ও অজ্ঞাতবাসের কারণে অভিমন্যু তার বাল্যকাল দ্বারকায় মাতুলালয়ে অতিবাহিত করেন। সেখানে কৃষ্ণ ও বলরামের অভিভাবকত্বে তিনি কৃষ্ণপুত্র প্রদ্যুম্ন এবং যাদববীর কৃতবর্মা ও সাত্যকীর নিকট অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করেন।

অজ্ঞাতবাসকালে পঞ্চপান্ডব ও দ্রৌপদী মৎস্যরাজ বিরাটের নিকট ছদ্মবেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তেরো বৎসর সম্পূর্ণ হওয়ার পর তারা আত্মপ্রকাশ করলে বিরাট স্বীয় কন্যা উত্তরার সঙ্গে অর্জুনের বিবাহের প্রস্তাব দেয়। তখন অর্জুন জানায় উত্তরা তাকে আচার্যের ন্যায় শ্রদ্ধা করে। তাই তিনি উত্তরাকে পুত্রবধূ রূপে গ্রহণ করবেন। তার পুত্র অভিমন্যুই মৎস্যরাজের জামাতা হওয়ার উপযুক্ত। এরপর উপপ্লব্য নগরীতে অভিমন্যু ও উত্তরার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এদের পুত্র পরীক্ষীত

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অভিমন্যু বধ

মহাভারতের যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে কৌরব সেনাপতি দ্রোণাচার্য একটি চক্রব্যূহ রচনা করেন। এইসময়ে চক্রব্যূহ ভেদ করার জন্য পান্ডব শিবিরে অভিমন্যু ব্যতীত আর কেউ উপস্থিত না থাকায় যুধিষ্ঠির তার ওপর এই গুরুভার অর্পণ করেন। এরপর অভিমন্যু যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং চক্রব্যূহ ভেদ করে কৌরব সেনা মধ্যে উপস্থিত হন। তার শরবর্ষণে মদ্ররাজ শল্যদুঃশাসন মূর্ছিত হন। কর্ণের এক ভাই ও শল্যের ভ্রাতা নিহত হয় এবং শল্য রণভূমি থেকে পলায়ণ করেন। এইসময় যুধিষ্ঠির, ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখন্ডী, সাত্যকী, বিরাটদ্রুপদ ব্যূহে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে ধৃতরাষ্ট্রের জামাতা সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ শিবের বরে তাদের পরাস্ত করেন ও ব্যূহের প্রবেশ পথ রুদ্ধ করে্ন। কুরুসৈন্য বেষ্টিত অভিমন্যু একাকী যুদ্ধ করতে থাকেন। কৌরবসৈন্য ছত্রভঙ্গ হয় এবং যোদ্ধারা পালাতে থাকে। শল্যপুত্র রুক্মরথ, দুর্যোধনের পুত্র লক্ষণ ও কোশলরাজ বৃহদবল তার বাণে হত হন।

অভিমন্যুকে অপ্রতিরোধ্য দেখে কর্ণ দ্রোণের উপদেশে তাকে পিছন থেকে আক্রমণ করে তাকে রথচ্যূত ও ধনুর্হীন করেন এবং দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, দুর্যোধনশকুনি নিষ্করুণ ভাবে তার ওপর শরাঘাত করতে থাকেন। অভিমন্যু খড়গ, চক্র, গদা এমনকি রথের চাকা দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এইসময় দুঃশাসনের পুত্র তার মাথায় গদাঘাত করে। ফলে কৌরবসেনা নিপীড়িত বালক অভিমন্যুর প্রাণশূন্য দেহ ভূপাতিত হয় ।[1]

তথ্যসূত্র

  1. রাজশেখর বসু: মহাভারত সারানুবাদ কালীপ্রসন্ন সিংহ: মহাভারত
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.