দ্রোণাচার্য

দ্রোণাচার্য মহাভারত মহাকাব্যের একটি চরিত্র। তিনি কৌরব এবং পঞ্চপাণ্ডবের অস্ত্রশিক্ষার গুরু ছিলেন। জন্ম____ ঋষি ভরদ্বাজ একদিন হতির্ধান নামক স্থানে গঙ্গা স্নানে গেছেন।আর এমনি যোগাযোগ রূযৌবন সম্পন্না মদদৃপ্তা আস্পরা ঘৃতাচি সেই সময় সেই খানে স্নান করছিল।ক্ষরস্রোতে তার অঙ্গবস্ত্র ভেসে গেল। জলে দাঁড়িয়ে নগ্ন সুন্দরী।মুনি সেই দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না।বীর্য স্ফলিত হল। তিনি জানতেন তাঁর তার বীর্যের অমোঘত্ব। তিনি সেই শক্তিকে একটি কলসে রক্ষা করলেন।পরে দেখা গেল সেই কলসের মধ্যে একটি পুত্র সন্তান জন্মেছে।যার গর্ভধারিনী একটি কলস।দ্রোন শব্দের একটি অর্থ হল কলস।প‌ষৎ রাজার পুত্রের নাম দ্রুপদ।দ্রোন আর দ্রুপদ সমবয়সী। দুই বালক ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে লেখা পড়া,অস্ত্রবিদ্যা ,যুদ্ধবিদ্যা, শিখতে লাগলেন।রাজা পৃষৎ ভরদ্বাজের বন্ধু।দ্রোন আর দ্রুপদের মধ্যে ও সুন্দর বন্ধত্ব গড়ে উঠল। কিন্তু রাজন অসম বন্ধত্ব স্থায়ী হয় না,আর দুনিয়ার বন্ধুত্ব একটা শব্দ মাত্র।প্রভুত্বই সার কথা। এই জগতে সম্পর্ক একটাই____তুমি প্রভু আমি ভৃত্য,অথবা আমি প্রভু তুমি ভৃত্য।রাজা পৃষতের মৃত্যু হয় দ্রুপদ উত্তর পাঞ্চালের রাজা হলেন।আর ভরদ্বাজ স্বর্গে গলেন।বিদ্বান তাপস দ্রোন হলেন আশ্রমিক।একজন সিংহাসনে,আর একজন কুশাসনে।দ্রোনের জীবন পথ আর তার বাল্য বন্ধুর জীবন পথ ভিন্ন। সময় চলছে___দিন,মাস,বছর,বছরের পর বছর।দ্রোন শরদ্বানের কন্যা কৃপীকে বিবাহ করলেন। এই বার তিনি সংসারি।দ্রোন মহেন্দ্রপর্বতে পরশুরামের কাছে গেলেন। তাকে সন্তুষ্ট করে বললেন,হে ভার্গব, আপনি সমস্ত অস্ত্র ও শস্ত্র প্রয়োগ এবং সংহার বিদ্যা আমাকে দান করুন। পরশুরাম বললেন__তথাস্তু,দ্রোন হলেন অদ্বিতীয় আচার্য। এই আনন্দ সংবাদ কাকে জানাবেন? প্রিয় সখা দ্রুপদকে। দ্রুপদ রাজা হয়েছেন,সখা হিসেবে তাকে তো অভিনন্দন জানান উচিত। দ্রুপদের সভায় গিয়ে দ্রোন বললেন, বন্ধু চিনতে পারছ? আমি তোমার বাল্য সখা দ্রোন।এ কি কোন কটু কথা। দ্রুপদের কি হল কে জানে।চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেল।ভুরু কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললেন,কে তুমি? তোমার বুদ্ধি সুদ্ধি,কান্ড জ্ঞান আছে বলে মনে হয় না, কারণ তুমি প্রথমেই আমাকে সখা বলে পরিচয় দিয়েছ। নির্বোধ। আমি রাজা, তোমার মতো শ্রহীন দরিদ্রের আমি সখা হতে যাব কোন দুঃখে। তোমার সঙ্গে বাল্যকালে যে সখ্য ছিল,উহা কেবল খেলার ও পড়ার স্বার্থের জন্য। শোন ব্রাহ্মণ,দরিদ্র কখনো ধনীর, মূর্খ কখনো পন্ডিতের,ক্লীব কখনো বীরের সখা হতে পারে না। মানুষের অহংকার ই শত্রু তার বীজ, এই বীজ থেকে মাথা তুলবে একটি ধ্বংস বৃক্ষ,ভূমি হবে করুক্ষেত্র। ভেতরে জ্বলছে আগুন। বুকে বাজছে দামামা___ প্রতিশোধ,প্রতিশোধ। কিভাবে নেবেন এই ব্রাহ্মণ।করে।কৃপাচার্যের গৃহে আশ্রিত। উপার্জন শূন্য।ব্রাহ্মণের চিরাচরিত বৃত্তি অবলম্বনে দারিদ্র্য ঘুচবে না, সেই কারণেই অস্ত্রবিদ্যা আয়ত্ত করে ক্ষত্রিয় হতে চাই লেন।ভীষ্ম সসম্মানে তাকে রাজপ্রাসাদে বরন করে নিলেন।রাজ পুত্রদের অস্ত্রবিদ্যা যুদ্ধবিদ্যা দান করবেন। অভাব কিছু রইল না। কিন্তু অন্তরের জ্বালা! স্ত্রীর সামনে বন্ধু দ্রুপদের কাটা কাটা কথা___দু হাত বিস্তারিত করে বাল্য বন্ধকে আলিঙ্গণ করতে গিয়ে ছিলেন, কিন্তূ হয় নি।।আচার্য দ্রোন তার ছাত্র রাজ পুত্রদের বললেন,হে নিস্পাপ শিয্য বিন্দ, আমার একটি বিশেষ আকাঙ্খার কথা আজ তোমাদের জানাই__তোমাদের অস্ত্রশিক্ষা সম্পূর্ণ হলে আমার সেই আকাঙ্খা পুরণ করতে হবে। তোমাদের মধ্যে কে কে সমর্থ উঠে দাড়াও।এই ভাবে সমস্ত শিয্য দের ডেকে বললেন আমার শিক্ষা শেষ, এই বার গুরুদক্ষিণা।কী দেবে আমাকে? আমি বলছি তোমরা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ কে যুদ্ধে পরাজিত করে বন্দি করে আমার কাছে নিয়ে এসো। এই আমাকে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ দক্ষিণা। অনেক দিন ধরে আমার অন্তরে একটা আগুন জ্বলছে।তখন কমার গণ সকলেএই রথে চড়িয়া দ্রোনের সহিত দ্রুত গতিতে রাজ্যের দিকে ধাবিত হইলেন। দ্রোণাচার্য শিয্যদের নিয়ে যুদ্ধে চলছেন।বাহিনীতে রয়েছেন দূর্যোধন,কর্ণ,যুযুৎসু,দুঃশাসন,বিকর্ণ,জলসন্ধ, পঞ্চপান্ডব।দ্রুপদ আর তার মন্ত্রীদের বন্দী করে দ্রোণাচার্যের কাছে আনা হল।অস্ত্র ধারী দ্রোণাচার্য এই ক্ষণ টির অপেক্ষায় ছিলেন।এসো,এসো রাজা এসো! কোথায় তোমার সিংহাসন! রাজমুকুট,রাজছত্র,অমাত্য_বিমাত্য!রাজ ভুষণে এ কী অবস্থা! নিশ্চয়ই তুমি আমার বন্ধু নও! বন্ধু ভেবে আমাকে আলিঙ্গনের চেষ্টা কোরো না। তুমি এখন রাজ্য হারা ভীখারী।রাজার বন্ধু কি ভীখারি হতে পারে?পাঞ্চালের রাজা এখন আমি__ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ দ্রোণাচার্য।না না আমি তোমাকে প্রানে বধ করবো না কারণ আমি যে ব্রাহ্মণ,ক্ষমাই ব্রাহ্মণের ধর্ম, তাছাড়া, তুমি যে আমার বাল্যবন্ধু!সে কথা আমি ভুলি কেমন করে।তবে আমি তোমাকে একটি কথা বলছি শোনো? এই যে গঙ্গা নদী দেখতে পারছো না ওই নদীর দক্ষিণ দিকে রাজা তুমি।আর উত্তর দিকে রাজা আমি, এই কথা শুনে দ্রুপদ রাজি হয়ে গেলেন।মনে মনে ীশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন আমাকে একটি মহাশক্তি শালি পুত্র চাই তবেই এই দ্রোণাচার্য কে পরাজিত করতে পারবো।।

জন্ম

একদা মহর্ষি ভরদ্বাজ গঙ্গায় স্নানের সময় অপ্সরা ঘৃতাচী কে দেখে উত্তেজিত ও কামার্ত হন এবং তাঁর বীর্যপাত হয়। তিনি সেই বীর্য এক কলসে সংরক্ষণ করেন। সেই কলস থেকে দ্রোণের জন্ম হয়।

বিয়ে

দ্রোণ শরদ্বানের কন্যা এবং কৃপাচার্য এর ভগিনী কৃপী কে বিয়ে করেন। অশ্বত্থামা নামে তাঁদের এক পুত্র জন্মায়।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দ্রোণ কৌরব পক্ষে যুদ্ধ করেন। ভীষ্ম এর শরশয্যা গ্রহণের পর তিনি কৌরবপক্ষের সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৫ দিন কৌরবপক্ষের সেনাপতি ছিলেন।

মৃত্যু

দ্রোণাচার্য যুদ্ধে অপরাজেয় হয়ে উঠলে তাঁকে আটকাতে কৃষ্ণ পাণ্ডবদের বুদ্ধি দেন অশ্বত্থামা এর মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ দ্রোণের নিকট প্রচার করতে। বাস্তবে অশ্বত্থামা অমর ছিলেন। দ্রোণ প্রথমে এই সংবাদ বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু চির সত্যবাদী যুধিষ্ঠির এর মুখে পুত্রের মৃত্যু হয়েছে শ্রবণ করে দ্রোণ পুত্রশোকে কাতর হয়ে অস্ত্রত্যাগ করেন। অশ্বত্থামা নামক একটি হাতিকে বধ করেন ভীম। যুধিষ্ঠির সেই সংবাদ অর্ধসত্য রূপে বিবৃত করেছিলেন। সেই সময় দ্রুপদ রাজার পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের শিরশ্ছেদ করেন।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.