দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ হচ্ছে এমন একটি বিশ্ববীক্ষা যা বিশ্বের ঘটমান সমস্ত পরিবর্তন ও মিথস্ক্রিয়া প্রবাহকে ব্যাখ্যা করার মতবাদ।[1] একে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ বলা হয়, কারণ, বস্তুজগতের প্রতি এর দৃষ্টিভঙ্গি ও বস্তুজগতের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার পদ্ধতি হলো দ্বান্দ্বিক আর বস্তুজগতের ঘটনা প্রবাহের ব্যাখ্যা, সেই সম্পর্কে এর ধারণা এবং এর তত্ত্ব হলো বস্তুবাদী[2]

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ঐতিহাসিক ভিত্তি

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের আত্মপ্রকাশের তত্ত্বগত পূর্বশর্তগুলো গড়ে উঠেছিলো। ঊনবিংশ শতকের ধ্রুপদী জার্মান দর্শনের প্রগতিশীল ভাবধারনা, সর্বোপরি হেগেলফয়েরবাখের দর্শন ছিলো দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের তত্ত্বগত উৎস কার্ল মার্কস ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের দার্শনিক অভিমত পরিগ্রহ করেছিলো বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের অবস্থান থেকে হেগেলের দ্বন্দ্ববাদ ও ফয়েরবাখের বস্তুবাদের এক সমালোচনাত্মক সমীক্ষার মধ্য দিয়ে।[3]

ব্যুৎপত্তি

দ্বন্দ্ববাদ এর ইংরাজি প্রতিশব্দ Dialectics । এই শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Dialego' থেকে এসেছে যার অর্থ বিতর্ক বা আলোচনার মধ্য দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া। তবে দ্বান্দ্বিকতার আসল অর্থ হল দুটি পরস্পর বিরোধী সংঘাতজনিত প্রক্রিয়া। হেগেল এই প্রক্রিয়ার কথা প্রথম বলেন। হেগেলের মতে সৃষ্টির সবকিছুর পেছনেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। তার মতে এর কারণ ভাব বা চৈতন্য (Idea)। এ কারণে হেগেলের দ্বান্দ্বিক তত্ত্ব ভাববাদ নামে পরিচিত। অপরদিকে কার্ল মার্কস-এর মতে দ্বন্দ্বের কারণ বস্তুজগত। মার্কস দ্বন্দ্ববাদকে ভাববাদ এর প্রভাব থেকে মুক্ত করে বস্তুবাদী জগতের গতি, পরিবর্তন, রুপান্তর ও বিকাশের দ্বন্দ্ববাদের প্রয়োগ ঘটান। তাই মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে 'দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ' বলে।

তিনটি সুত্র

(১)পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুনগত পরিবর্তনে রুপান্তর ; (২)বিপরীতের ঐক্য ও সংগ্রাম ; (৩)নেতির নেতিকরন ।

ভিত্তি এবং শর্ত

দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ অনুযায়ী, বস্তু সর্বদা গতিশীল অবস্থায় থাকে। গতিই বস্তুর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য, তার অস্তিত্বের ধরন। বস্তুতে গতি সঞ্চারিত হয় বাইরের কোনো শক্তির কারণে নয়, অভ্যন্তরীণ গতির কারণেই বস্তুজগতে বিকাশ সাধিত হয়। লুডউইগ ফয়েরবাক কেবল বাহ্যিক গতির কথা বলেছিলেন কিন্তু মার্কস বলেন অভ্যন্তরীণ গতি বাহ্যিক গতিকে সক্রিয় করে তোলে। তাই অভ্যন্তরীণ গতি বা কারণ হচ্ছে মুখ্য আর বাহ্যিক কারণ হচ্ছে গৌণ।[4] মাও সেতুং বলেন,

বস্তুবাদী দ্বন্দ্ববাদের মতে বাহ্যিক কারণ হচ্ছে পরিবর্তনের শর্ত। আর অভ্যন্তরীণ কারণ হচ্ছে পরিবর্তনের ভিত্তি, অভ্যন্তরীণ কারণের মাধ্যমে বাহ্যিক কারণ সক্রিয় হয়। যথার্থ তাপেই মুরগীর ডিম মুরগীর ছানায় পরিবর্তিত হয়, কিন্তু কোনো তাপেই পাথরকে মুরগীর ছানায় পরিবর্তিত করতে পারে না, কারণ এ দুইয়ের ভিত্তি ভিন্ন।

তথ্যসূত্র

  1. শোভনলাল দত্তগুপ্ত ও উৎপল ঘোষ, মার্কসীয় সমাজতত্ত্ব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুন ২০১৪, পৃষ্ঠা ৩৯।
  2. জে. ভি. স্তালিন, দ্বন্দ্বমূলক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ৩২তম মুদ্রণ, সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃষ্ঠা ৫।
  3. ভাসিলি ক্রাপিভিন; দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ কী; প্রগতি প্রকাশন, মস্কো; ১৯৮৯; পৃষ্ঠা ৯০-৯১।
  4. মো. আবদুল ওদুদ (এপ্রিল ২০১৪)। রাষ্ট্রদর্শন (দ্বিতীয় সংস্করণ)। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৪৯৯। আইএসবিএন 978-98-43300-90-4।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.