ভিয়েনা চক্র

ভিয়েনা চক্র হলো একটি দার্শনিক আন্দোলন। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দিক থেকে বিংশ শতাব্দি পর্যন্ত এর ব্যাপ্তিকাল। একটি দার্শনিক গোষ্ঠির সাংগঠনিক পরিচয়ও, যারা অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অধিবিদ্যাবিরোধী মত প্রচারের জন্য সংগঠিত হয়েছিল। পাশাপাশি বিজ্ঞানকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যও তাদের ছিল।

দর্শনচর্চা

ভিয়েনা চক্রের দর্শনচিন্তকরা প্রায় সবাই যৌক্তিক ইতিবাদী। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও বিজ্ঞানে নিয়োজিত কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীই এ-চক্র গঠন করেন। তাদের চিন্তাধারা মূলত যৌক্তিক ইতিবাদ নামে পরিচিত।[1] এ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আরোহী বিজ্ঞানের দর্শনের অধ্যাপক মরিস শ্লিককে এ-দর্শনচিন্তার উদ্গাতা বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ছাড়া আর যাদের নাম এ-চক্র আলোচনায় উঠে আসে, তারা হলেন: রুডলফ কারনাপ, নিউরাথ, ফাইগল, ভাইজম্যান। এ. জে. এয়ার দর্শনের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৩৩ সালে এ-চক্রের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। রুডলফ কারনাপ হলেন এ-দর্শনের কট্টর সমর্থক এবং এ জে এয়ার হলেন প্রবক্তা ও ব্যাখ্যাকার। এদিক থেকে বলা যায়, ভিয়েনা চক্রীদের উল্লেখযোগ্য ফসল যৌক্তিক ইতিবাদ ।

যৌক্তিক ইতিবাদ

যৌক্তিক ইতিবাদ এমন একটি দর্শন, যেটা তত্ত্ববিদ্যার অসারতা প্রতিপন্ন করা ও বিজ্ঞানকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রবর্তিত।[2] এ-দুই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ভিয়েনা চক্রের দার্শনিকগণ। ভাষা বিশ্লেষণের মাধ্যমে অধিবিদ্যা তথা তত্ত্ববিদ্যার অসারতা প্রতিপন্ন করার প্রয়াসকেই নব্য ইতিবাদীবা মৌলিকত্ব বলে দাবি করেন। দর্শনের ক্রমবিকাশের ইতিহাসে উৎকর্ষ ও ধ্বংসের পর্যায় পরিলক্ষিত হয়। হেগেলীয় ও নব্য হেগেলীয় দর্শনে চরম উৎকর্ষের একটা অশনিসংকেত লক্ষ করা যায় যৌক্তিক ইতিবাদীদের তত্ত্ববিদ্যার অসারতা প্রমাণের প্রয়াসের মধ্যে।

অধিবিদ্যা অসার

যাচাইকরণ নীতি

প্রভাব

ভিয়েনা চক্রীয় চৈতন্য তথা যৌক্তিক ইতিবাদী চিন্তাধারা ক্রমে-ক্রমে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। বার্লিনে হ্যামস রিকেনব্যাক, সি হেম্পেল, কে গ্রেলিং এবং আর ভন মিসেস এ-চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হন। আমেরিকার অনেক চিন্তাবিদের হৃদয়ও ছুঁয়েছিলো এ-আন্দোলন। যেমন- ই নোগল, সি ডব্লিও মরিস, জন ডিউক এবং টারস্কি। এরা পরে সবাই ভিয়েনা চক্রের সদস্য হন। এ-সদস্যেদের অনেকেই ছিলেন বিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, ইতিহাস ও আইনের শিক্ষক। এ-মতবাদ ভিতগেনস্তাইনের ভাষা সম্পর্কীয় বিশ্লেষণ (Linguistic Analysis) মতবাদকে প্রভাবান্বিত করে।

সমালোচনা

উৎস

  1. হালিম, মো. আবদুল, দার্শনিক প্রবন্ধাবলি : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, মে ২০০৩, বাংলা একাডেমি, ঢাকা
  2. করিম, মো. বজলুর, হেগেলোত্তর দর্শন, পৃ. ১৭৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.