জুবাইদা গুলশান আরা

জুবাইদা গুলশান আরা (জন্ম ১৯৪২ - মৃত্যু ২০১৭) একজন বাংলাদেশী গল্পকার, ঔপন্যাসিক, শিশুসাহিত্যিক। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।[1]

জুবাইদা গুলশান আরা
জন্মজুবাইদা গুলশান আরা
১৯৪২
খুলনা জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৯ মার্চ, ২০১৭
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাগল্পকার, ঔপন্যাসিক, কণ্ঠশিল্পী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
শিক্ষাবাংলা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইডেন মহিলা কলেজ
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি
  • গল্প তবু গল্প নয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক
সক্রিয় বছর১৯৬০২০১৭
দাম্পত্যসঙ্গীমাহমুদ-উল-আমীন
সন্তানমুসবাহ (মেয়ে)
মেহতাব (মেয়ে)

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

জুবাইদা গুলশান আরা ১৯৪২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুহাম্মদ ইউনুস ও মা আঞ্জুমান আরা। তার বাবা ছিলেন একজন প্রকৌশলী।[1] সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। বাবার বদলীর সরকারী চাকরির জন্য তার শৈশব কাটে প্রথমে ভারতের কোলকাতায় ও পরে দার্জিলিং কার্সিয়ং কালিম্পংয়ের পাহাড়ে। তার শিক্ষাজীবনের শুরু হয় টাঙ্গাইল জেলার বিন্দুবাসিনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি গান ও আবৃত্তিতে তিনি দক্ষতা ও সুনাম অর্জন করেন। ময়মনসিংহ জেলার বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন। পরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন।[2]

কর্মজীবন

জুবাইদা গুলশান আরা কর্মজীবন শুরু করেন ভিকারুননিসা নূন গার্লস স্কুলে শিক্ষকতার দিয়ে। তিনি ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতার পর ১৯৬৪ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে নির্বাচিত হয়ে ইডেন মহিলা কলেজ-এ প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[2] এছাড়া ২০১১ সালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রকাশ করেন বাংলা গানের অ্যালবাম 'গান আমার পরশমণি'।[3]

সাহিত্যকর্ম

জুবাইদা সপ্তম শ্রেণি থাকাকালীন লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা ‘দিলরুবা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে দশম শ্রেণি থেকে নিয়মিত লেখালেখি করেন।[1]

পারিবারিক জীবন

তিনি মাহমুদ-উল-আমীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মাহমুদ-উল-আমীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ছিলেন। তাদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মুসবাহ একজন চারুশিল্পী এবং ছোট মেয়ে মেহতাব আমিন একজন আলোকচিত্রী।[2]

গ্রন্থতালিকা

গল্প

  • দুঃখের দুঃস্বপ্ন ছুঁয়ে[4]
  • ঐ নূতনের কেতন ওড়ে[5]
  • আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
  • বানভাসি ও নদীর গান
  • আলো দাও, অগ্নিপুষ্প
  • একুশের ফুলগুলো
  • কালের অভিযাত্রী শান্তির পথে যাও

উপন্যাস

  • মন্দাকিনী
  • হৃদয়ে নিলো নাম
  • চৈতী তোমার ভালবাসা
  • বিবর্ণ নাগরী
  • আমি যোদ্ধা অযুত বৎসর
  • ভালোবাসার স্বভাব এমন
  • ঘৃণার জঠরে জন্ম
  • পদ্মা আমার পদ্মা

শিশুসাহিত্য

  • কি লিখেছো তরবারী তুমি
  • ছোঁ বুড়ির দৌড়
  • অপরিচয়ের স্বপ্নযাত্রা
  • শিশু কিশোর সমগ্র
  • মন ছুটেছে তেপান্তরে
  • বাবুইপাখীর বাসা
  • গল্প তবু গল্প নয়
  • বন্ধু হলো হুলো[6]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • কবি আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৯)
  • একুশে পদক (২০০৫)[7]
  • কমর মসতরী স্মৃতিপদক
  • বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পদক
  • শেরেবাংলা স্মৃতি পুরস্কার
  • কবি জসীমউদদীন পরিষদ পুরস্কার
  • ত্রিভুজ সাহিত্য সংসদ পুরস্কার
  • কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার
  • লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক (১৯৯৪)
  • চয়নসাহিত্য পত্রিকা স্বর্ণপদক (২০১৩)[8]
  • কবি তাইবুন নাহার রশীদ স্বর্ণপদক (২০১৬)[9]

মৃত্যু

১৯ মার্চ ২০১৭ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[10][11]

তথ্যসূত্র

  1. উম্মে আইরিন (৩১ আগস্ট ২০১২)। "বাংলা সাহিত্যে মুসলিম লেখিকা"দৈনিক সংগ্রাম। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  2. "জুবাইদা গুলশান আরা : একজন জীবন শিল্পী"নিউজপেজ২৪। ঢাকা, বাংলাদেশ। এপ্রিল ২২, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  3. "জুবাইদা গুলশান আরার এ্যালবামের প্রকাশনা উৎসব ট্যুরিস্ট ক্লাবে"দৈনিক জনকণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৯ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  4. "গল্প - দুঃখের দুঃস্বপ্ন ছুঁয়ে"যায়যায়দিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। অক্টোবর ৩, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  5. "ঐ নূতনের কেতন ওড়ে"যায়যায়দিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। অক্টোবর ৩, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  6. "বন্ধু হলো হুলো"কিশোর কণ্ঠ। এপ্রিল ১৯, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  7. "Face conspiracy with Ekushey spirit - PM urges patriotic citizens, distributes Ekushey Padak"দ্য ডেইলি স্টার। ঢাকা, বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  8. "স্বর্ণপদক পেলেন জুবাইদা গুলশান আরা ও বুলবুল মহলানবিশ"দৈনিক যুগান্তর। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২১ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  9. "ছয় বিশিষ্টজনকে সম্মাননা বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের"দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৯ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৬
  10. "চলে গেলেন কথাসাহিত্যিক জুবাইদা গুলশান আরা"ঢাকাটাইমস২৪.কম। ১৯ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৭
  11. "জুবাইদা গুলশান আরা আর নেই"দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৭

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.