অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু
অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা ইউএফও, (ইংরেজি: Unidentified Flying Object অথবা UFO), এটা এমন একটি উড়ন্ত বস্তু যা তার প্রত্যক্ষদর্শী দ্বারা এবং তদন্ত করার পরেও শনাক্ত করা যায় না। সহজ ভাষায়, আকাশে দৃশ্যমান যে কোন অচেনা অজানা বস্তু বা আলোকেই ইউএফও বলা হয়। এই সংজ্ঞা অনুসারে, একে একটি ইউএফও বিমান হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা যায়, যে এটি এর পরিচয় দেওয়ার পূর্বেই বিমান নিয়ন্ত্রণকারী রাডার গুলোতে হঠাৎ আবির্ভূত হতে দেখতে পাওয়া যায়। যাইহোক, সাধারণ ভাষায় এবং কল্পনায় অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বলতে বুঝায় ভিন গ্রহ হতে আগত বুদ্ধিমান জীব। উড়ন্ত পিরিচ বা প্লেট হিসেবেও ১৯৪০ - ১৯৯০ এই বিষয়টা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে ছিল। কারণ যে সব অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু আকাশে দেখতে পাওয়া যেত তার বেশির ভাগ উড়ন্ত বস্তুগুলো পিরিচ বা প্লেটের আকৃতির হয়ে থাকতো। যারা অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর বিষয় নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে তাদেরকে উফোলোজিস্ট বলে।


উফোলোজিস্টদের মতে, ইউএফও বলতে আকাশ বা মহাশূন্যের পর্যবেক্ষকরা যে সব অপ্রাকৃতিক বা অজানা বস্তু দেখা পায় সে গুলোই হল ইউএফও। এগুলোকে কোন কর্তৃপক্ষ বা বিশ্লেষক কৃত্রিম বস্তু (কৃত্রিম উপগ্রহ, যানবাহন, বেলুন) অথবা প্রাকৃতিক বস্তু (উল্কা, গ্রহ, উল্কা বৃষ্টি, প্রাকৃতিক কারণ) হিসাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিল। আর যে অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তু বা ইউএফও গুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উপর দেখতে পাওয়া যায় তাকে অশনাক্ত ভাসমান বস্তু (অভাব) বা Unidentified Submerged Objects (USO) বলা হয়। যদিও পূর্বে এমন বস্তু দেখেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরেই ১৯৪৭ সালের ২৪ জুন ইউএফও জন্ম ধরা হয়। সাধারণত একে বৈজ্ঞানিক বিশ্বে একটি Pseudo Science এর দ্বারা গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিক বছরে, ইউএফও–এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃত জাদুঘর বানানো হয়েছে। একটি হলো রোসওয়েলের আন্তর্জাতিক ইউএফও জাদুঘর (আমেরিকা) এবং অপরটি হলো এর শাখা ইস্তানবুলে (তুরস্ক)।
ইতিহাস
অব্যাখ্যাত আকাশীক পর্যবেক্ষণ ইতিহাস জুড়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু ছিল নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক জ্যোর্তিবিদ্যা সংক্রান্ত : ধূমকেতু, উজ্জ্বল উল্কা, একটি বা পাঁচটি গ্রহ যা খালি চোখে দেখা যায়, যুক্ত গ্রহীক, অথবা বায়ুমন্ডলীয় দৃষ্টিবিভ্রন্ত আলোমালা যেমন প্রতিসূর্য (Parhelia) এবং লেন্স অকৃতির মেঘমালা। একটি উদাহরণ যেমন হ্যালির ধূমকেতু, যেটি চীনের জ্যোর্তির্বিজ্ঞানীরা সম্ভবত খ্রীষ্ট্পূর্ব ২৪০ বছর অথবা ৪৬৭ বছর আগে প্রথম রেকর্ড করে ছিল। যাইহক, তাদের প্রকৃত কারণ ইতিহাস জুড়ে অপ্রাকৃতিক, স্বর্গদূত, অথবা অন্যান্য ধর্মীয় পূবাভাস বলে মনে করেছে। মধ্যে যুগে কিছু বস্তু চিত্রাঙ্গণ করা হয়েছে যা দেখলে মনে হতে পারে অনুরুপ আকষণীয় UFO । মধ্যে যুগে এবং নবযুগের অভ্যুদয়ে সময় এমন অন্যান্য চিত্রাঙ্গণ গুলোকে ইতিহাসবিদরা প্রায়ই ধর্মীয় প্রতিক হিসেবে চিহ্নিত করতো। সেন কুও (১০৩১–১০৯৫), চীন সরকারের একজন পন্ডিত ব্যক্তি, বহুবিদ্যাজ্ঞ, আবিস্কারক, তিনি অশনাক্ত উড়ন্ত বস্তুর সম্বন্ধে তার লেখা Dream Pool Essays[1](১০৮৮) বইতে একটি জীবন্ত অণুচ্ছেদ লিখে ছিলেন। ১১তম শতাব্দীতে আনহুই এবং জিয়াংসু (বিশেষভাবে Yangzhou শহর) নামের দুই জন প্রত্যক্ষদশীর প্রমাণ লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। তারা রাত্রি বেলা একটি দরজা বিশিষ্ট উড়ন্ত বস্তু দেখেছিল যার দরজার অভ্যন্তরীণ থেকে আগতো উজ্জল আলো গাছগুলি থেকে ছায়া দূর করে প্রায় দশ মাইল ব্যাসার্ধ জায়গা জুরে আলোকিত করেছিল এবং প্রচণ্ড গতিতে তার নিজ স্থান থেকে উডায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রতক্ষ্যদর্শী দ্বারা বর্ণনা
- ২৪শে সেপ্টেম্বর ১২৩৫, রাতে জাপানে জ়েনেরাল ইয়োরিতসুমে এবং তার সেনাবাহিনী কিয়োটো গোলকের কাছে অস্থির প্রকৃতির আলো দেখতে পান। তার পরামর্শদাতা তাকে পরামর্শ দেন "চিন্তা না করার জন্য। কারণ এটি বায়ু ছিল মাত্র যা তারকাকে কাপাচ্ছে"।

- ১৪ই এপ্রিল ১৫৬১, জার্মানির নুরেম্বেরগ শহর যখন যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলো তখন তারা একটি রিপোর্ট লিখেছিল যে, তারা গোলক আকৃতির একটি বস্তু এবং গোলকের বাইরে অনেক নলাকার বস্তু পেয়েছে।
- জুলাই ১৮৬৮ তে, চিলিতে যে প্রথম UFO দেখা য়ায, গবেষকদের মতে এটা আধুনিক সভ্যতার প্রমাণ পত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এইটি কপিয়াপো শহরের El Constituyente সংবাদপত্রে প্রকাশনা করা হয়েছিল এবং UFO কে অন্য গুলোর মতই দেখা গিয়েছিল (একটি অজানা উদ্বায়ী) এবং কিছু সময় পর একই বছর, একদল "তারকা সারি" অথবা "রেসের গাড়ির" মতো বস্তু আকাশ অতিক্রম করতে দেখা গেল। তার পর হতে UFO গবেষকরা এই ধরনের বিষয় গুলোকে লিপিবদ্ধ করা শুরু করে।
- ২৫শে জানুয়ারি ১৮৭৮ তে, দৈনিক ডেনসন সংবাদ লিখেছিল যে, স্থানীয় এক কৃষক জন মার্টিন বলেছিল সে একটি বড়, কালো, বৃত্তাকার বেলুন আকৃতি বস্তু উড়তে দেখেছে "চমৎকার গতিতে"। মার্টিন আরও বলেছিল যে মনে হচ্ছিল প্লেট আকৃতির। এই প্রথম বারের মতো UFO কে "প্লেট" সঙ্গে তুলোনা করা হয়।
- ১২ই আগষ্ট ১৮৮৩, মেক্সিকান অধ্যাপক এবং জ্যোতিবিদ, জসেফ ইয়. বনিল্লা, তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, সে দূরবীক্ষণ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করার সময় তার দূরবীক্ষণ এবং সূর্য মাঝে যাপাতেকাস (Zapatecas) এর কাছে দীর্ঘ এবং কিছু সংখ্যক রঙিন মণিরমত বস্তু দেখে পেয়েছেন। উড়ন্ত বস্তু অস্তিত্বের কথা বিজ্ঞানীর দ্বারা তোলা একটি ছবিতে প্রমাণ করেছিল, যেমন অতীতের ছবি গুলোতে উড়ন্ত বস্তু অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করেছিল।
- ২৮শে ফেব্রুয়ারি ১৯০৪, সান ফ্রান্সিসকো হতে ৩০০ মাইল পশ্চিমে তিন আমেরিকান নাবিক Ufo দেখেছে, লে. ফ্রানক স্কলফিল্ড দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী কালে তিনি প্রশান্ত মহাসাগরের চিফ কমান্ডার হয়েছেন। স্কলফিল্ড লিখেছেন, গোলাক আকৃতির তিনটি উজ্জল বস্তু মেঘের নিচ দিয়ে যাচ্ছছিলো, পরে গোলাকটি তার পথ পরিবর্তন করে মেঘের উপর ওঠে, দুই-তিন মিনিট পর পৃথিবী ত্যাগ করে। বড় গোলাকটি প্রায় ছয়টা সূর্যের আকার ছিল।
- ৩১শে জানুয়ারি ১৯১৬ তে, একজন যুক্তরাজ্য বিমানচালক রিপোর্ট করেছিল যে, রোচফোড এর কাছে এক সারি আলো দেখতে পেয়েছে, যেন একটি জানালা রেলপথকে আলোকিত করেছে, পরে আলোটি আরো উজ্জল হয় এবং নাই হয়ে যায়।
- জানুয়ারি ১৯২৬ তে, একটি বিমানচালক প্রতিবেদন করেছিল যে, সে ছয়টি "ম্যানহোলের ঢাকনা উড়চ্ছে" উইচিতা, কানসাস এবং কোলোরাড স্প্রিংস শহরের মাঝে উড়তে দেখছে। একই বছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, একটি বড়, উড়ন্ত পাখাহীন নলাওলা মত বস্তু একজন বিমানবাহিত ডাক পাইলটকে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল নেভাডাতে।
- ৫ই আগষ্ট ১৯২৬, তিব্বতের কোকোনর অঞ্চলের হুম্বলডত (Humboldt) পর্বতমালা ভ্রমণের সময়, নিকোলাস রএরীচ প্রতিবেদন করেছিল যে, তার ভ্রমণের সাথীরা "কিছু একটা বড়, সচ্ছ এবং সূর্যের আলো প্রতিফলন করে, একটা বড় ডিম্বাকারের মত যা নড়াচরা করছে প্রচণ্ড গতিতে। আমাদের শিবির অতিক্রম করে জিনিষটা দিক পরিবর্তন করছিল দক্ষিণ থেকে দক্ষিণপশ্চিমে দিকে এবং আমারা দেখেছিলাম গাড় নীল আকাশে হারিয়ে যেতে। এমনকি আমাদের সময়ও ছিল আমাদের মাঠ চশমা নেওয়ার জন্য এবং আমি দেখেছিলাম যথেষ্ট দূরে, উপরিভাগ উজ্জল ডিম্বাকার আকৃতি, তার একপাশে সূর্যের মত উজ্জল।" নিকোলাসের অন্য একটি বর্ণনায় ছিল, ".......... একটি দেহ উজ্জল দক্ষিণ থেকে উত্তরে উড়ছিলো। এইটি একটি বিশাল আকৃতির। এক পাশ সূর্যের নিচে উজ্জল হয় এবং ডিম্বাকার আকৃতির। তারপর এইটি দিক পরিবর্তন করে এবং দক্ষিণপশ্চিমে হারিয়ে যায়।"
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রশান্ত এবং ইউরোপীয় থিয়েটারগুলোতে, "ফো-ফাইটারস" (ধাতব গোলক, আলোর বল এবং অন্যান্য আকৃতির জিনিস যা বিমানকে অনুসরণ করেছিল) প্রতিবেদন করা হয়েছিল এবং বিমানচালক ও তাদের অণুসারিদের দ্বারা ছবি তোলা হয়েছে।
- ২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৪২, আমেরিকার সৈন্যবাহিনী পর্যবেক্ষণের প্রতিবেদন করেছিল, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের ওপর অশনাক্ত বিমান দৃশ্যমান হয়েছে এবং রাডারে ধরা পড়েছে। জাপানি বিমান মনে করে তারা এন্টিএয়ারক্রপ্ট মিসাইল নিক্ষেপণ করে। পরিষ্কার ব্যাখ্যা না দেওয়ায়, কিছু কর্মকর্তা নাকোচ দিয়েছে বিমানের প্রতিবেদনটি। তারা ওই সময় ক্যালিফোর্নিয়াতে জাপানী বিমান আক্রমণের বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। যাইহক, সৈন্যবাহিনী প্রধান জেন.জর্জ সি. মার্শালএবং যুদ্ধের সচিব হেনরি স্টিমসন মনে করেন যে, জাপান এই অশনাক্ত বিমানের ব্যাপারের সাথে জরিত। এই ঘটনার পরবর্তী কালে, এটা লস অ্যাঞ্জেলিসের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল, অথবা প্রাশ্চাত্ত্য দেশের উপকূলীয় বিমান আক্রমণ।
- ১৯৪৬ সালে, ২০০০ এরও বেশি রিপোর্ট করা হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগ সুইডীস সৈন্যবাহিনী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। স্ক্যাডিনাভানীতে অশনাক্ত আকাশীক বস্তু দেখা গিয়েছে, কেবল ফ্রান্স, পর্তুগাল, গ্রিস, এবং ইতালি রিপোর্ট আলাদা করে রাখা হয়েছে। এগুলোকে তারা প্রথমে "রাশিয়ান হেল" এবং পরবর্তী কালে "ভূত রকেট" হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কারণ তারা চিন্তা করেছিল যে, এগুলো সম্ভবত জার্মানীর V1 অথবা V2 রকেট ধার রাশিয়ান রহস্যময় টেষ্টের বস্তু। যদিও অনেকেই ভেবেছিল এটা হবে উল্কার মত প্রাকৃতিক ঘটনা। রাডারের মাধ্যমে ২০০ টির ওপর ধরা পড়েছে এবং সুইডীস সৈন্যবাহিনী দ্বারা "প্রকৃত ভৌত বস্তু" হিসাবে গণ্য করেছিল। ১৯৪৮ সালে, একটি top secret ফাইলে সুইডীস সৈন্যবাহিনী ইউরোপের আমেরিকান সৈন্যবাহিনীকে বলেছে যে, "তাদের তদন্তকারী ভিন্ন গ্রহের জীব বলে বিশ্বাস করেছিল।"
প্রথম আধুনিক প্রতিবেদন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে থেকে UFO দেখা শুরু হয়েছিল, একজন বিখ্যাত মার্কিন ব্যবসায়ী ক্যননেথ আরনোড এর মধ্যে ২৪শে জুন ১৯৪৭ থেকে, যখন তার ব্যক্তিগত প্লেন ওয়াশিংটন এর রাইনার পর্বতমালা কাছে দিয়ে উড়ছিল। সে বলেছিলেন, নয়টা অতি উজ্জ্বল বস্তু রাইনারের দিকে মুখ করে উল্ট পাশে উড়ছিল। যদিও অনুরুপ বস্তু ১৯৪৭ সালে আমেরিকাতে আরো দেখা গিয়েছিল।এমন উড়ন্ত বস্তুু বর্তমানে দেখাগেছে বলে জানা গেছে।
আরনোডর এই বিষয়টিতে প্রথম মিডিয়া মনোযোগ গ্রহণ এবং জনগণের দৃষ্টি আর্কষন করেছিল। আরনোড বর্ণনা করেছিল যা দেখেছিল "একটি পিঠার মত চ্যাপ্টা", "প্লিচের মত অকৃতির এবং এতো পাতলা ছিল যে ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না", "অর্ধেক চাঁদ অকৃতি, পিছের দিক চ্যাপ্টা ডিম্বাকার এবং সামনের দিক উত্তল। ..... মনে হচ্ছিল একটা বড় ফ্লাট ডিস্ক এবং এমন ভাবে উড়েছে যেন একটা চারা পানির উপর লাফাচ্ছে।" অল্প দিনের মধ্যে আরনোডের উড়ন্ত বস্তু বা উড়ন্ত প্লিচের বিষয়টি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আরনোডের দেখা অনুসরণ করে, অন্যানরাও দেখেছে বলে কয়েক সপ্তাহ শতশত রিপোর্ট করেছিল, বেশির ভাগ আমেরিকাতে। কিন্তু অন্যান্য দেশসমূহেতে দেখেছিল বলে রিপোর্ট করেছিল।এ ধরনের অন্যান বিষয়ে রিপোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি হতে শুরু করেছিল। যেমন, ৪ঠা জুলাই, সন্ধ্যাবেলা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান দল ইদাহোর উপর নয়টাও বেশি একই রকম ডিস্ক দেখেছিল।
আমেরিকান UFO গবেষক টেড ব্লোচার, তার সংবাদপত্র প্রতিবেদনে ব্যাপক পর্যালোচনা করেন (আরনোডর বর্ণনাসহ), সে ৬-৮ জুলাই সাথে ৪ঠা জুলাই, এর বিষয়ের উপর হঠাৎ অপ্রত্যশিত বৃদ্ধি খুজে পেয়েছিল। ব্লোচার লক্ষ্য করেছিল যে, পরবর্তী কয়েক দিন সর্বাপেক্ষা মার্কিন সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় "উড়ন্ত প্লিচ" অথবা "উড়ন্ত ডিস্ক" এর ঘটনা ভরা ছিল। ৮ই জুলাই, এরপর যখন কর্মকর্তা রোসওয়েলের UFO এর ঘটনাটি সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল, তারা একে একটি পরীহ্মার বস্তুর ধ্বংসাবশেষ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছিল।
মধ্যযূগ এবং নবযুগের অভ্যুদয়
এইটি সম্ভব যে UFO ভৌতিক দৃশ্য শিল্পের কাজে দেখা গিয়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ অংশ নির্দিষ্ট, এর একটি সহজ ব্যাখ্যা ইতিহাসবিদরা দিয়েছে। সুতরাং:
- কসভোর ডেটজানি সন্ন্যাসীদের মঠের প্রাচীন চিত্রের নভোচারীর প্রতীক হচ্ছে সূর্য এবং চাঁদ যেমন এই সময় বিজানতিনোর ধর্মীয় শিল্পে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
- UFO টেবিল মাইনারদি (বাচ্চাসহ মাদন্না এবং সান জোভাননিন) জ়ন্ম পূর্ণ স্বর্গের মধ্যে, প্রকৃতপক্ষে সর্বোচ্চ দেবদূত গাবরিএল (জ়িবরাইল (আঃ)) এর প্রতীক।
- পাওলো উচেল্লো এর টেবিলে মধ্যে যে একটি গোল উড়ন্ত বস্তু প্রকৃতির, এটি মিশরের টেবেইদ এলাকার একটি টুপির প্রতীক।
- বিখ্যাত খন্ডটি স্মরণীয় করে রাখতে ১৬৮০ সালে ফ্রান্সের আকাশের ওপর দিয়ে একটি UFO যাওয়া চিএ অঙ্কন করে, আসলে এটি একটি খেলার প্রতীক, এটি ভাগ্যর চাকা উপর নকশা করা হয়েছে।
তদন্ত
প্রাচীনকাল হতেই আকাশে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বস্তু দেখার খবর শোনা গেলেও ১৯৪৭ সালে যখন আমেরিকাতে প্রথম UFO দেখা যাবার খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, তারপর থেকে এটিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর পর আরো কয়েক হাজার UFO দেখার খবর পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগই মিথ্যা। সাধারণ মানুষ প্রায়ই উজ্জ্বল কোন গ্রহ কিংবা তারা, বিমান, পাখি, বেলুন, ঘুড়ি, ডিম্বাকার আকৃতির মেঘ দেখে তা UFO ভেবে ভুল করেছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সময় সাপেক্ষ তদন্ত। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী বিবেচনা করে মার্কিন বিমানবাহিনী ১৯৪৭ সালে UFO তদন্তে নামে। তদন্তের কাজ শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। এ সময়ে প্রাপ্ত সর্বমোট ১২,৬১৮ টি ঘটনার মধ্যে ৭০১ টি ঘটনার কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে নি। মার্কিন বিমানবাহিনী তাদের তদন্ত শেষ করে এই বলে যে “বিমান বাহিনীর তদন্তে কোন UFO এর প্রতিবেদন করেনি এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়ের কোন ইঙ্গিত দেয়নি।” ১৯৬৯ সালের পর আর কোন মার্কিন সংস্থা UFO তদন্ত কাজে সরাসরি হাত দেয়নি। এরপর ১৯৯৭ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা[2] মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গোয়েন্দা বিমান ব্যবহারের কথা ফাঁস করে দেয়। ১৯৫০ হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত যতগুলো UFO দেখা গেছে তার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনার জন্য দায়ী Lockheed U-2A এবং Lockheed SR-71 নামের এই বিমান দুটি। যদিও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তারপরও অনেকেই এটিকে ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দাদের আকাশযান বলে মনে করেন। আর বিষয়টিকে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এই মহাশুন্যে কোথাও না কোথায় অতিমানবীয় বুদ্ধিমান প্রানীর অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
আরও দেখুন
- অঞ্চল ৫১
- রজওয়েলের ঘটনা
- উফোলোজি
- অউব দৃষ্টিগোচর হবার তালিকা
- অউব বিধ্স্তের তালিকা
বহিঃসংযোগ
- আন্তর্জাতিক অউব জাদুঘর এবং বিশ্লেষণ কেন্দ্র
- প্রতিরহ্মা মন্ত্রণালয়, ১৯৯৭–২০০৭ থেকে যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদন
- সরকারি অউব প্রতিবেদন,UCB Libraries GovPubs থেকে।