রাণী ভবানী

মহারাণী ভবাণী (১৭১৬ - ১৭৯৫) ইংরেজ শাসনামলে বর্তমান বাংলাদেশের নাটোরের একজন জমিদার ছিলেন। তার পিতা আত্মারাম চৌধুরী এবং মাতা জয়দুর্গা৷ দান, ধ্যান, শিক্ষা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, চিকিৎসা ও ধর্মীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তার প্রজারা তাকে ‘মহারাণী’ নামে আখ্যায়িত করে।

রানী ভবানী
নাটোরের রাণী, অর্ধবঙ্গেশ্বরী
পূর্বসূরিরাজা রামাকান্ত
জন্ম১৭১৬
ছাতিয়ানগ্রাম, আদমদিঘি, বগুড়া, সুবাহ বাংলা
মৃত্যু৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮০২
নাটোর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত(বর্তমানে  বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীরাজা রামাকান্ত
পিতাআত্মারাম চৌধুরী
মাতাজয়দূর্গা
ধর্মহিন্দু

ব্যক্তিগত জীবন

বগুড়া জেলার তৎকালীন আদমদিঘী থানাধীন ছাতিয়ান নামক গ্রামে রানী ভবানী জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই তৎকালীন নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্তের সাথে রানী ভবানীর বিয়ে হয়। তার তিন সন্তানদের মধ্যে (২ ছেলে, ১ মেয়ে ) শুধু তারাসুন্দরী জীবিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রামকৃষ্ণকে দত্তক নেন। রামকৃষ্ণের দুই সন্তান বিশ্বনাথ (বড় তরফ) শিবনাথ (ছোট তরফ)(নাটোর রাজবাড়ীতে দুইটি তরফ আছে বড় তরফ ও ছোট তরফ)।

জমিদারী

১১৫৩ বঙ্গাব্দে রাণী ভবাণীর স্বামী রামকান্ত ইহলোক ত্যাগ করার পর অধিকারবলে রাণী ভবাণী স্বামীর জমিদারী প্রাপ্ত হন। তখনকার দিনে জমিদার হিসাবে একজন মহিলা অত্যন্ত বিরল ছিলেন, কিন্তু রাণী ভবাণী রাজশাহীর বিশাল জমিদার কার্য অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নির্বাহ করেন। একজন ইংরেজ লেখক হলওয়েল ধারণা দেন যে জমিদারী এস্টেটের বার্ষিক খাজনা ছিল প্রায় ৭ লক্ষ রুপী এবং বার্ষিক অর্জিত রাজস্ব ছিল প্রায় ১৫ লক্ষ রুপী।[1]

তার রাজত্বকালে জমিদারী বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুস্টিয়া, যশোর, রংপুর এবং ভারতেপশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এজন্য তাকে অর্ধবঙ্গেশ্বরী বলা হতো। প্রজা সাধারণের কল্যাণের জন্য রাণী ভবানী সুদীর্ঘ ৫০ বছর দক্ষতার সাথে তিনি বিশাল জমিদারী পরিচালনা করেন।

উল্লেখযোগ্য কাজ

অধিকন্ত্ত, অনাড়ম্বর ব্যক্তিগত জীবনযাপন করার সাথে সাথে রাণী ভবাণীর উদারতা এবং সমাজহিতৈষী মনোভাব তাকে সাধারণ জনগনের মাঝে জনপ্রিয় করে। তিনি বাংলায় শত শত মন্দির, অতিথিশালা এবং রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি প্রজাদের পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য অনেকগুলি পুকুরও খনন করেন। তিনি শিক্ষা বিস্তারেও আগ্রহী ছিলেন এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদারভাবে দান করেন।[1] ১৭৫৩ সালে কাশী অর্থাৎ বেনারসে ভবানীশ্বর শিব ও দুর্গাবাড়ী, দুর্গাকুণ্ড, কুরুক্ষেত্রতলা নামক জলাশয় স্থাপন করেন তিনি। হাওড়া থেকে কাশী পর্যন্ত রাস্তা নির্মান করেছিলেন যা রানী ভবানী রোড বা বেনারস রোড নামে খ্যাত ছিল। বর্তমানে এটি বোম্বে রোডের অংশ।শুধু তাই নয়।উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ বাতায়নে তার ভূমিকা লক্ষনীয় ছিল। [2]

বগুড়া জেলার শেরপুরে অবস্থিত পীঠস্থান ভবানীপুরের মন্দিরসমূহের উন্নয়নে রাণী ভবাণী অনেক অবদান রাখেন।[3] রাণী ভবাণীর নাটোর রাজবাড়ী বাংলাদেশে একটি দর্শনীয় স্থান। দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণর হাতে রাজ্যভার দিয়ে তিনি মুর্শিদাবাদ চলে আসেন ও বড়নগরে কন্যাসহ বাস করতে থাকেন। ওয়ারেন হেস্টিংস পরবর্তী কালে জোরপূর্বক তার নাটোর জমিদারি কেড়ে নেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাগীরথী নদী তীরবর্তী বড়নগরে তার নির্মিত ১০০ টি শিবমন্দির ছিল। কালের প্রবাহে অল্প কয়েকটি মন্দির টিকে আছে। মন্দিরগাত্রের টেরাকোটা শৈলী আজও দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে।[2]

মৃত্যু

রাণী ভবানী ১৮০২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে নাটোরে পরলোকগমন করেন।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাপিডিয়ার প্রবন্ধ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে.
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৭৫।
  3. বাংলাপিডিয়ার প্রবন্ধ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.