লাতভিয়া

লাতভিয়া (লাতভীয় Latvija লাৎভিয়া) উত্তর-পূর্ব ইউরোপে বাল্টিক সাগরের পূর্ব তীরে লিথুয়ানিয়াএস্তোনিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত রাষ্ট্র। ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি ও ঘণ অরণ্যে এবং এগুলির মধ্যে অবস্থিত বহু নদনদী, হ্রদ ও জলাভূমি নিয়ে লাতভিয়ার নয়নাভিরাম ভূ-প্রকৃতি গঠিত। এখানে লাতভীয় জাতির লোকেরা সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবে রুশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আকার বেশ বড়। রিগা বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর ও রাজধানী।

লাতভীয় প্রজাতন্ত্র
Latvijas Republika লাৎভিয়াস্‌ রেপুব্লিকা
পতাকা জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: "Tēvzemei un Brīvībai"  (লাতভীয়)
"মাতৃভূমি ও মুক্তির জন্য"
জাতীয় সঙ্গীত: Dievs, svētī Latviju!  (লাতভীয়)
"ইশ্বর, লাতভিয়াকে আশীর্বাদ করুন!"
 লাতভিয়া-এর অবস্থান (কমলা)

 Europe-এ (তামাটে & সাদা)
 the European Union-এ (তামাটে)   [ব্যাখ্যা]

 লাতভিয়া-এর অবস্থান (কমলা)

 Europe-এ (তামাটে & সাদা)
 the European Union-এ (তামাটে)   [ব্যাখ্যা]

রাজধানী
এবং বৃহত্তম নগরী
রিগা
৫৬°৫৭′ উত্তর ২৪°৬′ পূর্ব
সরকারি ভাষা লাতভীয়
জাতিগোষ্ঠী ৬০.০% লাতভীয়
২৭.৩% রুশ
  ৩.৭% বেলারুশীয়
  ২.৫% পোলীয়
  ৬.৫% অন্যান্য
সরকার সংসদীয় গণতন্ত্র
   রাষ্ট্রপতি ভালদিস জাতলের্স
   প্রধানমন্ত্রী আলিগার্স কালভিতিস
   জল/পানি (%) ১.৫
জনসংখ্যা
   2016 আনুমানিক 1,953,200[1] (148th)
   2011 আদমশুমারি 2,070,371[2]
   ঘনত্ব 34.3/কিমি (166th)
৮৮.৯/বর্গ মাইল
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা)
2018 আনুমানিক
   মোট $53.467 billion[3]
   মাথা পিছু $29,489[3]
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র) 2018 আনুমানিক
   মোট $30.176 billion[3]
   মাথা পিছু $18,472[3]
জিনি সহগ (2016)34.5[4]
মাধ্যম
মানব উন্নয়ন সূচক (2015) 0.830[5]
অতি উচ্চ · 44th
মুদ্রা Euro (EUR)
সময় অঞ্চল EET (ইউটিসি+2)
   গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) EEST (ইউটিসি+3)
কলিং কোড 371
ইন্টারনেট টিএলডি .lv 3
1 Latvia considers itself continuous with the first republic.
2 Secession from Soviet Union begun.
3 Also .eu, shared with other European Union member states.

১৩শ শতক থেকে লাতভিয়া ক্রমান্বয়ে জার্মানি, পোল্যান্ড ও রুশদের দ্বারা শাসিত হয়। ১৯১৮ সালে প্রতিবেশী এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়ার সাথে এটিও স্বাধীনতা লাভ করে। রাষ্ট্র তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র নামে পরিচিত লাভ করে। ১৯৪০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বলপূর্বক বাল্টিক রাষ্ট্রগুলিকে ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করে।

১৯৯১ সালে লাতভিয়া পুনরায় স্বাধীনতা লাভ করে এবং একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে। দেশটি বেশ সফলভাবে সোভিয়েত আমলের কেন্দ্রশাসিত অর্থনীতি থেকে পশ্চিমা বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে উত্তরণ ঘটায়। লাতভিয়ার এই সাফল্য ২০০৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশটির পূর্ণ সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ভূমিকা রাখে।

ইতিহাস

খ্রিষ্টজন্মের ৯ হাজার বছর আগে থেকে লাটভিয়া নামের বর্তমান দেশটিতে মনুষ্যবসতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার সালের আগে এলাকাটি জমে ওঠেনি। আরো প্রায় ৪ হাজার বছর পর এ অঞ্চলের জনমিতিতে বড় পরিবর্তন দেখা দেয়। তখন চারটি উপজাতি বসতি দেখা যায়। এরা কুউরি, ল্যাটগালি, সেলি ও জেমগালি নামে পরিচিত। সবারই ছিল আলাদা সংস্কৃতি ও কৃষ্টি। পরে চারটি স্বতন্ত্র ধারায় এর বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকে বাল্টিক সাগরের তীরের দেশটি ইউরোপীয়দের জন্য ছিল বেশ অকর্ষণীয়। বিশেষত সাগর তীরের হলুদাভ বাদামি পাথর পাওয়া যেত। এগুলো অত্যন্ত মূল্যবান অলঙ্কার উপাদান হিসেবে ইউরোপে সমাদৃত ছিল। প্রাচীন রোম ও গ্রিসে এরা এই পাথর রফতানি করত উচ্চ দামে। বর্তমানেও লাটভিয়ার স্বর্ণালঙ্কারে এ পাথরের বহুল ব্যবহার দেখা যায়।[6]

খ্রিষ্টান মিশনারিরা ১১৮০ সালে লাটভিয়ায় আসে। এ সময় লাটভীয়রা দেবদেবীর পূজা করত। জার্মানি থেকে আগত খ্রিষ্টানরা ক্রমেই তাদের এ ধর্মে দীক্ষা দেয়। ১২০০ সালে তারা জার্মান সরকারের অধীনে রীতিমতো লিভোনিয়া নামের একটি নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে। প্রতিবেশী এস্তোনিয়ার দক্ষিণ অংশ এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাজধানী রিগা তখন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। পূর্ব ইউরোপের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল। ১৫০০ সালে এখানকার অদিবাসীদের মধ্যে আবার একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি অঞ্চলটির কর্তৃত্ব চলে যায় পোল্যান্ডের কাছে। অষ্টাদশ শতকের শুরু পর্যন্ত লিভোনিয়া নামক অঞ্চল দখলের ত্রিমুখী লড়াই চলে পোল্যান্ড, সুইডেন ও রাশিয়ার মাঝে। একটা সময় সুইডিশরা এর কর্তৃত্ব পায়। তারা কৃষকদের শিক্ষাদীক্ষার জন্য স্কুল স্থাপন করে। অঞ্চলটি আবার জার্মানদের দখলে আসে। দীর্ঘদিন জার্মান দখলের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধে। ১৯৪০ সালে হিটলারের সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্টালিনের এক চুক্তিবলে রাশিয়া দেশটি গ্রাস করে নেয়। কিন্তু ১৯৪১ সালেই হিটলারের বাহিনী দেশটি দখল করে নেয়।[6]

১৯৪৪ সালে রাশিয়া লাটভিয়াকে আবার দখল করে। রাশিয়ার শাসনে দেশটিতে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটে। একই সাথে লাটভিয়ায় বসতি স্থাপন করে হাজার হাজার রাশিয়ান। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে তারা লাটভিয়া থেকেও সরে আসে। তবে দেশটির সামাজিক জীবনে রাশিয়ানরা ব্যাপক প্রভাব রেখে যায়। জনসাধারণের এক-চতুর্থাংশ রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে।[6]

রাজনীতি

লাটভিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। ১৯২২ সালে দেশটির সংবিধান প্রণীত হলেও ১৯৯১ সালের আগে তা কার্যকারিতা পায়নি। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে মনোনয়ন দেন প্রেসিডেন্ট। এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদের সদস্যসংখ্যা ১০০। তারাও চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন।[6] রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং সাইমা নামক আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা হতে স্বাধীন। ছোট দেশটিতে ২০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

ভূগোল

লাটভিয়ার আবহাওয়ায় বলকান উপসাগরের প্রভাব রয়েছে। সে কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি। গ্রীষ্মকালে উত্তপ্ত আবহাওয়া। শরৎ ও বসন্তে সামান্য উষ্ণ থাকে। অবস্থান উত্তর গোলার্ধের কাছে হওয়ায় শীতকালে দেশটিতে প্রচণ্ড শীত পড়ে। বৃষ্টি ও তুষারপাত হয় সারা বছরই। রাশিয়া থেকে তীব্র শীতল বাতাসও প্রবাহিত হয় বছরব্যাপী। সমতল ভূমির পরিমাণ বেশি। এখানকার জমি বেশ উর্বর। পূর্বাঞ্চলে কিছু পাহাড় রয়েছে। দেশটি ২৬টি জেলায় বিভক্ত। রয়েছে সাতটি শহর। এগুলোর শাসনব্যবস্থা কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। উন্নয়ন ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকার দেশটিকে পাঁচটি পরিকল্পিত এলাকায় বিভক্ত করেছে।[6]

অর্থনীতি

২০০০ সাল থেকে লাটভিয়া ইউরোপের একটি অন্যতম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়। ২০০৬ সালে তাদের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতাংশ। তবে মুদ্রাস্ফীতিও ছয় শতাংশের ওপরে। বেকারত্ব ছিল আট শতাংশের বেশি। সোভিয়েত আমলে সব কিছুতেই ছিল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। এখনো বড় সব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে সরকারের একটা বড় অংশ রয়েছে।[6]

জনসংখ্যা

সংস্কৃতি

ইউরোপীয় এ দেশেটির সংস্কৃতিতে উপজাতীয় প্রভাব রয়েছে। যেমন বিয়ের আগে এরা নিজেদের নিষ্পাপ করে নেয়ার একটি সামাজিক প্রথা এখনো অব্যাহত রেখেছে। তারা একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের সব পাপকে কোনো বস্তুর মধ্যে আরোপের মাধ্যমে নিজেরা পূতপবিত্র হয়। ঠিক বিয়ের আগে একটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তা করা হয়। পূর্ব ইউরোপের আরো কিছু দেশে এখনো এ প্রথা প্রচলিত রয়েছে। কেউ অসুস্থ হলেও একই পদ্ধতিতে তারা সুস্থ হওয়ারও চেষ্টা করে। তবে ইউরোপীয় আধুনিকতার বিস্তারে বেশির ভাগ উপজাতীয় আচার এখন বিলুপ্তির পথে। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে লাটভিয়ানদের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। অতি সযতে তারা এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত উৎসব-আয়োজনে সেসব জমকালো পোশাক পরা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন ঋতু এবং ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এদের পোশাক নির্ধারিত করা থাকে ঐতিহ্যগতভাবে। এসব পোশাক-আশাকের বেশির ভাগই রঙিন।[6]

আরও দেখুন

তথ্যসুত্র

  1. "The number of population is decreasing – the mark has dropped below 2 million"। Central Statistical Bureau of Latvia। নভে ২০১৫। ১৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৪
  2. "Population Census 2011 – Key Indicators"। Central Statistical Bureau of Latvia। ২ এপ্রিল ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১২
  3. "Latvia"। IMF।
  4. "Gini coefficient of equivalised disposable income (source: SILC)"। Eurostat Data Explorer। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৩
  5. "2015 Human Development Report" (PDF)। United Nations Development Programme। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫
  6. Qposter। "লাতভিয়া – Country Information"www.qposter.com। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৬

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.