হাজরে আসওয়াদ

হাজরে আসওয়াদ (আরবি: الحجر الأسود al-Ḥajar al-Aswad বাংলা:কালো পাথর) হল একটি কালো রঙের প্রাচীন পাথর যা কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।[1][2] মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর আদমহাওয়ার সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে।[3]

হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়ার জন্য হাজিদের ভিড়। ভিড়ের কারণে চুমু দেয়া সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়।

প্রাক ইসলামি পৌত্তলিক সমাজেও এই পাথরকে সম্মান করা হত। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, রাসুল মুহাম্মদ (সা) ৬০৫ সালে এটি কাবার দেয়ালে স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানে এটি একটি রূপার ফ্রেমে আটকানো অবস্থায় কাবার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এর রং গাঢ় কালো এবং লক্ষাধিক হাজির স্পর্শের কারণে এটি মসৃণ আকার লাভ করেছে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী এটি আদম ও হাওয়ার সময় বেহেশত থেকে পৃথিবীতে এসে পড়ে। এটিকে একটি উল্কা বলা হলেও এর সত্যতা নিশ্চিত না।[4]

হজ্জ বা উমরার অংশ হিসেবে মুসলিমরা তাওয়াফ করে থাকেন। এর শুরুতে হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়া রীতি রয়েছে।[5] ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে হয়। এর পাশে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকে সৌদি পুলিশ। তারা খেয়াল রাখে, ফ্রেমে মাথা ঢোকাতে বা চুম্বন করতে কারও যেন কষ্ট না হয়।[2] তবে চুমো দেয়া সম্ভব না হলে হাত ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা হয়।[6]

হাজরে আসওয়াদ নিয়ে ঘটনা

ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর সময়ে পবিত্র কাবাঘর পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে বসাবেন—এ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান।[2]

এই পবিত্র পাথরের দৈর্ঘ্য ৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৭ ইঞ্চি। বর্তমানে এটি আট টুকরো।[1] আগে হাজরে আসওয়াদ ছিল আস্ত একটি পাথর। হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ কয়েক টুকরা হয়ে যায়। আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের পরে ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন। ফ্রেম সংস্করণের সময় চুনার ভেতর কয়েকটি টুকরা ঢুকে যায়। বর্তমানে হাজরে আসওয়াদের আটটি টুকরা দেখা যায়। বড় টুকরাটি খেজুরের সমান।[2]

তথ্যসূত্র

  1. পুণ্যময় হজ - দৈনিক প্রথম আলো (১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪)
  2. হাজরে আসওয়াদ মাকামে ইব্রাহিম দেখছেন হজযাত্রীরা - দৈনিক প্রথম আলো (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫)
  3. Sheikh Safi-ur-Rehman al-Mubarkpuri (২০০২)। Ar-Raheeq Al-Makhtum (The Sealed Nectar): Biography of the Prophet। Dar-us-Salam Publications। আইএসবিএন 1-59144-071-8।
  4. Elliott, Jeri (১৯৯২)। Your Door to Arabia। Lower Hutt, N.Z.: R. Eberhardt। আইএসবিএন 0-473-01546-3।
  5. Mohamed, Mamdouh N. (১৯৯৬)। Hajj to Umrah: From A to Z। Amana Publications। আইএসবিএন 0-915957-54-X।
  • Grunebaum, G. E. von (1970). Classical Islam: A History 600 A.D.–1258 A.D.. Aldine Publishing Company. আইএসবিএন ৯৭৮-০-২০২-১৫০১৬-১
  • Sheikh Safi-ur-Rahman al-Mubarkpuri (2002). Ar-Raheeq Al-Makhtum (The Sealed Nectar): Biography of the Prophet. Dar-us-Salam Publications. আইএসবিএন ১-৫৯১৪৪-০৭১-৮.
  • Elliott, Jeri (1992). Your Door to Arabia. আইএসবিএন ০-৪৭৩-০১৫৪৬-৩.
  • Mohamed, Mamdouh N. (1996). Hajj to Umrah: From A to Z. Amana Publications. আইএসবিএন ০-৯১৫৯৫৭-৫৪-X.
  • Time-Life Books (1988). Time Frame AD 600-800: The March of Islam, আইএসবিএন ০-৮০৯৪-৬৪২০-৯.

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.