সাম্যবাদী দল

পৃথিবীর সব দেশেই কমিউনিস্ট দলের (ইংরেজি: Communist Party) অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। কমিউনিস্ট দল মূলত কমিউনিজম ভাবধারার একটি রাজনৈতিক দল। কমিউনিস্ট দল বা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা কমিউনিজমসমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। যার মূল ভিত্তি হলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ। কমিউনিস্ট পার্টিকে বলা হয় শ্রমিক শ্রেণির অগ্রবাহিনী, তার সংগঠক ও পরিচালক। শ্রমিক আন্দোলন কেবল সেক্ষেত্রেই জয়লাভ করে যখন তা সমাজতন্ত্রের তত্ত্বের সঙ্গে, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সঙ্গে মিলিত হয়। আর এ মিলন ঘটায় কমিউনিস্ট পার্টি।[1] ১৮৪৮ সালে মার্কস ও এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার প্রকাশিত হলে কমিউনিস্ট পার্টি শব্দটির ভিত্তি তৈরি হয়[2] পরবর্তীতে ভ্লাদিমির লেনিন কমিউনিস্ট পার্টিকে, যা ক্ষমতায় থাকুক বা নাই থাকুক, প্রলেতারিয়েতের অগ্রগামী পার্টি (vanguard party) হিসেবে উল্লেখ করেন এবং মার্কসবাদের ভিত্তিতে এই মত সংহত করেন যে একটি সমাজতন্ত্র অভিমুখি রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি হবে প্রলিতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র নীতিতে পরিচালিত সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব।[2]

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল[3] যেটি দাবি করে যে ২০০৯ সালের শেষে তাদের সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ৭৮ মিলিয়ন[4] এবং এই সদস্যসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫.৬ ভাগ।

এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, রোমানিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টি অবৈধ।[5][6]

কমিউনিস্ট পার্টির সতর্কতা

কমিউনিস্ট পার্টিকে শ্রমিক শ্রেণির পার্টি হয়েই থাকতে হবে যতদিন পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের সাম্যবাদী সমাজে উত্তরণ না ঘটে। এই পার্টিকে পরিচালিত হতে হবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাবাদের ভিত্তিতে। বাস্তব কমিউনিজমে উত্তরণ ঘটার পূর্ব পর্যন্ত প্রলেতারীয় একনায়কত্ব কার্যকর রাখতে হবে। পার্টিকে সতর্ক থাকতে হবে যেন পার্টি বা রাষ্ট্রের ক্ষমতায় কোনো পুঁজিবাদী পথগামী বা সুবিধাবাদী ঢুকতে না পারে। পার্টিকে সতর্ক থাকতে হবে যেন বুর্জুয়া শ্রেণির তথা সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পার্টিতে, সরকারে, জনমিলিশিয়া, জাতীয়রক্ষী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গোপনে ঢুকে পড়তে না পারে। পার্টিকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোন ভাবেই তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সংশোধনবাদের অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে। পার্টিকে তথা কমিউনিস্টদেরকে সর্বদায় স্মরণে রাখতে হবে যে, প্রলেতারীয় একনায়কত্ব শ্রেণিহীন সাম্যবাদে উত্তরণ পর্যন্ত প্রসারিত।

বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি

বাংলাদেশে একাধিক কমিউনিস্ট দল রয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রচরিত্র, বিপ্লবের স্তর, রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণে এসব দলের একটি সাথে অন্যটির ভিন্নতা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের একাধিক বিপ্লবী গ্রুপ ও ব্যক্তিবর্গ মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ এর মতাদর্শের আলোকে ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে সক্রিয় আছে।

বিভিন্ন দলের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ১৫ দফা দাবির ভিত্তিতে জোটবদ্ধ হয়েছে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, নয়াগণতান্ত্রিক গণমোর্চা, জাতীয় গণফ্রন্ট -এই চারটি সংগঠন বিভিন্ন ইস্যুতে জোটবদ্ধ আন্দোলন করছে।

বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ (ইউসিএলবি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল মিলে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক বামমোর্চা।[7]

মাওবাদী দলগুলোর মধ্যে সিপিএমএলএম-বাংলাদেশ, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (সিসি/আনোয়ার কবির), পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি(এমবিআরএম), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল-জনযুদ্ধ) অন্যতম।

এছাড়াও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট(এনডিএফ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি (আ স ম রব), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট ইউনিয়ন, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (গঠন প্রক্রিয়া), সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি -এসব দল কমিউনিস্ট রাজনীতিতে সক্রিয়।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (ইনু), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাজাসদ (আম্বিয়া-প্রধান), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (সৈয়দ রেজাউর রশিদ খান), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল (দিলীপ বড়ুয়া), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি (জাকির), গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ (মোজাফফর)। বিএনপি জোটে আছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল (সাঈদ), ন্যাপ (আনোয়ারুল)। তবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি জোটে অন্তর্ভুক্ত এসব দলের অধিকাংশেরই সাংগঠনিক অস্তিত্ব বিলুপ্তপ্রায় এবং অনেকক্ষেত্রে তারা শুধু দলীয় নামসর্বস্ব।

তথ্যসুত্র

  1. এম আর চৌধুরী; আবশ্যকীয় শব্দ পরিচয়; ঢাকা, এপ্রিল, ২০১২; পৃষ্ঠা- ৪৯।
  2. অনুপ সাদি; সমাজতন্ত্র; ভাষাপ্রকাশ ঢাকা; পৃষ্ঠা-৬৯।
  3. "The Communist Party of China"। ১১ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪
  4. China's communist party members near 78 mln
  5. Domeinnaam niet ingeschakeld
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪
  7. "বাঁশখালীতে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার"NTV Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১০

আরও দেখুন

  • List of communist parties

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Communism

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.