সফিয়া
সফিয়া (বুলগেরীয় ভাষায়: София, আ-ধ্ব-ব: [ˈsɔ.fi.ja]) বুলগেরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। শহরটি বলকান পর্বতমালার পাদদেশে বুলগেরিয়ার পশ্চিম অংশে অবস্থিত। শহরের মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে ভিতোশা পর্বত শহর থেকে প্রায় ৫৫০ মিটার উঁচুতে উঠে গেছে। সফিয়া বুলগেরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প-উৎপাদন, পরিবহন ও সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানে ধাতু, কাঠ ও রবারের দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, ইলেকট্রনিক ও পরিবহন যন্ত্রাংশ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র, কাপড়, এবং মুদ্রণের কারখানা আছে। সরকারী কর্মকাণ্ড, নির্মাণকাজ এবং পর্যটন শহরের অর্থনীতির অন্যতম অংশ। এখানে প্রায় ১৩ লক্ষ লোক বাস করেন।
সফিয়া София | |||
---|---|---|---|
The Alexander Nevsky Cathedral | |||
| |||
![]() বুলগেরিয়াতে সফিয়ার অবস্থান | |||
স্থানাঙ্ক: ৪২°৪২′ উত্তর ২৩°২০′ পূর্ব | |||
রাষ্ট্র | বুলগেরিয়া | ||
Province | সফিয়া শহর | ||
আয়তন | |||
• মোট | ১৩৪৯ কিমি২ (৫২১ বর্গমাইল) | ||
উচ্চতা | ৫৫০ মিটার (১৮০০ ফুট) | ||
জনসংখ্যা (১৪-০৩-২০০৮) | |||
• মোট | +১,৩৪,৬৬৬ | ||
• জনঘনত্ব | ১০৩০/কিমি২ (২৭০০/বর্গমাইল) | ||
সময় অঞ্চল | EET (ইউটিসি+২) | ||
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | EEST (ইউটিসি+৩) | ||
ওয়েবসাইট | sofia.bg |
সফিয়াতে ১৮৮৮ সালে সফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া এখানে রাসায়নিক প্রযুক্তি, প্রকৌশল, বনবিদ্যা, খনিবিদ্যা, অর্থনীতি ও চারুকলার উপর উচ্চতর ইন্সটিটিউট আছে। আরও আছে ১৮৬৯ সালে স্থাপিত বুলগেরীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি, ১৯৭২ সালে স্থাপিত চিকিৎসাবিজ্ঞান অ্যাকাডেমি, ১৯০৪ সালে স্থাপিত বুলগেরীয় সরকারী সঙ্গীতালয়, এবং ১৮৭৮ সালে স্থাপিত সাধু সিরিল ও সাধু মেথোদিউস জাতীয় গ্রন্থাগার। শহরে অনেকগুলি জাদুঘর আছে। এদের মধ্যে জাতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর, জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, জাতীয় আর্ট গ্যালারি, জাতীয় জাতিতত্ত্ব জাদুঘর, সফিয়ার ইতিহাস জাদুঘর, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শহরের চিত্ররূপময় ভবনের মধ্যে আলেক্সান্দর নেভ্স্কি ক্যাথিড্রাল এবং ১৫শ শতকে নির্মিত বুইউক জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য। ৪র্থ শতকে নির্মিত সাধু জর্জ গির্জা শহরের সবচেয়ে পুরাতন ভবন। আরও আছে ৬ষ্ঠ শতকে নির্মিত সাধু সফিয়ার গির্জা। সফিয়া শহরের নাগরিক নকশা ও স্থাপত্যে উসমানীয় সাম্রাজ্যকালীন পর্ব এবং সোভিয়েত পর্বের সহাবস্থান লক্ষ্যনীয়।
সফিয়া শহরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক থেকে এখানে থ্রাসদের একটি লোকালয় ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৯ অব্দে রোমান সেনারা এটি দখল করে নেয়। ২য় শতকের শুরুতে রোমান সম্রাট শহরটি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেন। এসময় এটি সের্দিকা নামে পরিচিত ছিল। আন্তঃইউরোপীয় বাণিজ্যপথের উপর অবস্থানের কারণে, বিশেষ করে বেলগ্রেড থেকে ইস্তানবুলের রাস্তার উপর অবস্থানের কারণে সফিয়া দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। কিন্তু ৪৪১ সালে আটিলা ও তার হুন সেনারা শহরটি লুট করেন। ৪৪৭ সালের মধ্যে তারা সম্পূর্ণ শহরটি ধূলোয় মিশিয়ে দেন।
৬ষ্ঠ শতকে বাইজেন্টীয় সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান পুনরায় এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নেন এবং ধ্বংসস্তুপ থেকে শহরটি নতুন করে গড়ে তোলেন। ৮০৯ সালে বুলগেরীয় জাতির লোকেরা শহরটি দখল করে এবং এর নাম বদলে স্রেদেৎস রাখে। তারা শহরটিকে প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত করে। ১১শ ও ১২শ শতকে শহরটি বুলগেরীয় ও বাইজেন্টীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়। শেষ পর্যন্ত ১২শ শতকের শেষে শহরটি ২য় বুলগেরীয় সাম্রাজ্যের অংশে এবং একটি বড় বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৩৮২ সালে উসমানীয় তুর্কিরা সফিয়া দখল করে এবং পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে এলাকাটি শাসন করে। সাধু সফিয়ার গির্জার অনুসরণে উসমানীয়রা শহরটির নাম বদলে রাখে সফিয়া। ১৭শ শতকে উসমানীয় শাসন আভ্যন্তরীন বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে দুর্বল হতে শুরু করে এবং রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ভেঙে পড়তে শুরু করে। ১৮৭৭ সালে রুশ সেনারা উসমানীয় সেনাদের পরাজিত করে সফিয়াকে মুক্ত করে। ১৮৭৮ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র বুলগেরিয়ার রাজধানী হিসেবে সফিয়া আত্মপ্রকাশ করে। এরপর এখানে দ্রুত শিল্পকারখানার প্রসার ঘটে এবং গ্রামাঞ্চল থেকে বহু লোক শহরে আসা শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তিরা শহরটির উপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। যুদ্ধের পরে সফিয়া সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সাম্যবাদী সরকার যুদ্ধবিক্ষত শহরটিকে আবার গড়ে তোলে। কিন্তু দ্রুত শিল্পায়নের ফলে শহরে দূষণেরও সৃষ্টি হয়। ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত বলয় থেকে মুক্ত সফিয়াতে এইসব পরিবেশগত বিপর্যয়ের উপর ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনীতির দুর্বলতা, দ্রব্যমূল্য ও বাসা ভাড়ার ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও সফিয়া এখনও ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর ঐতিহাসিক শহরগুলির একটি।
জনপরিসংখ্যান
ব্যাক্তি বা পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপনের জন্য এই শহর বিশ্বের সবথেকে কম ব্যায়বহুল শহরের একটি। খুব সাশ্রয়ী খরচে এখানে ঘর ভাড়া বা কেনা যায় যা বিশ্বের মেট্রোসিটিগুলোতে বিরল।