বেভান কংডন

বেভান আর্নেস্ট কংডন, ওবিই (ইংরেজি: Bevan Congdon; জন্ম: ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ - মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮) তাসমান অঞ্চলের মোতুয়েকায় জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডের প্রথিতযশা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।[1] নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য বেভান কংডন মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকা পালন করতেন।

বেভান কংডন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামবেভান আর্নেস্ট কংডন
জন্ম(১৯৩৮-০২-১১)১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮
মোতুয়েকা, নিউজিল্যান্ড
মৃত্যু১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮(2018-02-10) (বয়স ৭৯)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার, অধিনায়ক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় পার্শ্ব
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১০৩)
২২ জানুয়ারি ১৯৬৫ বনাম পাকিস্তান
শেষ টেস্ট২৪ আগস্ট ১৯৭৮ বনাম ইংল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৪)
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ বনাম পাকিস্তান
শেষ ওডিআই১৭ জুলাই ১৯৭৮ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৬০-১৯৭১সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস
১৯৭১-১৯৭২ওয়েলিংটন
১৯৭২-১৯৭৪ওতাগো
১৯৭৪-১৯৭৮ক্যান্টারবারি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬১ ১১ ২৪১ ৪০
রানের সংখ্যা ৩,৪৪৮ ৩৩৮ ১৩,১০১ ১,২৬৯
ব্যাটিং গড় ৩২.২২ ৫৬.৩৩ ৩৪.৮৪ ৪০.৯৩
১০০/৫০ ৭/১৯ ১/২ ২৩/৬৮ ১/১০
সর্বোচ্চ রান ১৭৬ ১০১ ২০২* ১০১
বল করেছে ৫,৬২০ ৪৩৭ ১৫,৬০২ ১,৮৯৫
উইকেট ৫৯ ২০৪ ৪১
বোলিং গড় ৩৬.৫০ ৪১.০০ ৩০.০২ ২৬.৫১
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৬৫ ২/১৭ ৬/৪২ ৪/৩৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪৪/– ০/– ২০১/– ১২/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১২ অক্টোবর ২০১৪

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি, সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস, ওতাগো এবং ওয়েলিংটন দলের পক্ষে খেলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ের পারদর্শী ছিলেন।

১৯৬৫ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনি ৬১টি টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সময়কালে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে মার্চ, ১৯৭৪ সালে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ আস্বাদন করে।[2]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

১৩ বছর টেস্ট ক্রিকেটে সম্পৃক্ত ছিলেন। কৌশলগতভাবে অসাধারণ শক্তিমত্তার অধিকারের পাশাপাশি বেশ মনোযোগী ছিলেন। সচরাচর টেস্টে তিন নম্বর অবস্থানে থেকে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে তার সফলতম ক্রীড়াজীবন অতিবাহিত হয়। উপর্যুপরি দুই টেস্টে - ট্রেন্ট ব্রিজে ১৭৬ ও লর্ডসে ১৭৫ করেন। তবে প্রয়োজনে নিজেকে আরও সংযত করে রাখতেন। এ বছরই লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় পরাজয়ে বেশ কিছু ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ঐ ইনিংসটিতে বেভান কংডন বেশ সাহসিকতার পরিচয় দেন। জন স্নো’র বাউন্সারে তার মুখে আঘাত লাগে।

ট্রেন্ট ব্রিজে ৪র্থ ইনিংসে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭৯ ধার্য্য করার পর তার দল মাত্র ৩৮ রানের ব্যবধানে পরাভূত হয়। ঐ সময়ে পরাজয়বরণকারী দলের সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্যমাত্রার রেকর্ড ধারণ করা হয়। লর্ডসে নিউজিল্যান্ড ঐ সময়ে তাদের সর্বোচ্চ ৫৫১ রান তোলে।

১৭ জুলাই, ১৯৭৮ তারিখে তিনি তার সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেন। একদিনের আন্তর্জাতিকে ইতিহাসে কংডনসহ রিকি পন্টিং, রবি শাস্ত্রী, জ্যাক ক্যালিস, তিলকরত্নে দিলশানকেভিন পিটারসন - এ ছয়জন অধিনায়কের একজন হিসেবে সর্বশেষ ওডিআইয়ে সেঞ্চুরি করেন। ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত এ খেলায় তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার একমাত্র সেঞ্চুরি করেন।[3]

অধিনায়কত্ব

সর্বমোট ১৭ টেস্টে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে একটিমাত্র টেস্টে তার দল জয় পেলেও তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মার্চ, ১৯৭৪ সালে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত টেস্টে টসে জয়ী হয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান। প্রথম ইনিংসে মিডিয়াম পেস বোলিং করে তিন উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে গ্রেগ চ্যাপেলরডনি মার্শের ন্যায় ব্যাটসম্যান ছিল। খেলায় নিউজিল্যান্ড পাঁচ উইকেটের নাটকীয় জয় পায়। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৫৯ টেস্ট উইকেট পান ৩৬.৫০ গড়ে।

১৯৭২ সালে কিউই দলের ব্যর্থ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রেক্ষিতে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের কাছ থেকে দলের দায়িত্বভার তার উপর অর্পণ করা হয়। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি চমৎকারভাবে ফিল্ডিং করাসহ উভয়ভাবেই মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে সুইং করানোয় দক্ষতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। অনেকের ন্যায় তিনিও অধিনায়কত্ব থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ ঘটান।

একদিনের আন্তর্জাতিক

১৯৭৫ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বেসিন রিজার্ভে ওডিআই সেঞ্চুরি করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে কেন উইলিয়ামসন দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে সেঞ্চুরিটি করেন।

একদিনের আন্তর্জাতিকেও চমৎকার রেকর্ড রয়েছে তার। ১১ খেলায় অংশ নিয়ে দুইটি অর্ধ-শতরান ও একটি শতরানের ইনিংস খেলে ৫৬.৩৩ গড়ে রান তুলেন। এ পরিসংখ্যানটি কমপক্ষে ১০ ইনিংসে অংশগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে অদ্যাবধি সেরা রেকর্ডরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। তার স্ট্রাইক রেটও অসামান্য। ৭১.৬১ স্ট্রাইক রেটের আশ্চর্যজনক পরিসংখ্যানটি সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সূচনালগ্নে ঘটেছিল।

সম্মাননা

১৯৭৪ উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মানে ভূষিত হন এ ক্রিকেটার।[4] এছাড়াও, ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদান রাখায় তিনি ‘অর্ডার অব মেরিট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে তাকে অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারদের একজনরূপে গণ্য করা হয়। খেলার মাঠে ও মাঠের বাইরে তিনি পেশাদার বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছেন। তার অধিনায়কত্বের সময়কালে নিউজিল্যান্ড দল পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত বেভান কংডন শার্লি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। অ্যালি ও স্যান্ডি নাম্নী দুই কন্যা এবং ম্যাথু, জসুয়া, লিলি ও রিভস নামীয় নাতি ছিল তার।

৮০তম জন্মদিন উদযাপনের মাত্র একদিন পূর্বে ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে তার দেহাবসান ঘটে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অকল্যাণ্ডে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরিসংখ্যান

বেভান কংডন তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাতটি টেস্ট ও একটি ওডিআই শতরান করতে পেরেছেন।

টেস্টে ৫-উইকেট লাভ

#পরিসংখ্যানখেলাপ্রতিপক্ষমাঠশহরদেশসাল
৫/৬৫৫১ ভারতইডেন পার্কঅকল্যান্ডনিউজিল্যান্ড১৯৭৬

টেস্ট সেঞ্চুরি

বেভান কংডনের টেস্ট সেঞ্চুরিসমূহ
নম্বররানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠবছরফলাফল
[১]১০৪১১ ইংল্যান্ড ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ডল্যাঙ্কাস্টার পার্ক১৯৬৬ড্র
[২]১৬৬*৩৩ ওয়েস্ট ইন্ডিজ পোর্ট অব স্পেন, ত্রিনিদাদকুইন্স পার্ক ওভাল১৯৭২ড্র
[৩]১২৬৩৪ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্রিজটাউন, বার্বাডোসকেনসিংটন ওভাল১৯৭২ড্র
[৪]১৭৬৪০ ইংল্যান্ড নটিংহাম, ইংল্যান্ডট্রেন্ট ব্রিজ১৯৭৩পরাজয়
[৫]১৭৫৪১ ইংল্যান্ড লন্ডন, ইংল্যান্ডলর্ড’স১৯৭৩ড্র
[৬]১৭৫৪৬ অস্ট্রেলিয়া ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ডবেসিন রিজার্ভ১৯৭৪ড্র
[৭]১০৭*৫৪ অস্ট্রেলিয়া ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ডল্যাঙ্কাস্টার পার্ক১৯৭৭ড্র

ওডিআইয়ে সেঞ্চুরি

বেভান কংডনের ওডিআই সেঞ্চুরিসমূহ
নম্বররানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠসালফলাফল
[১]১০১ ইংল্যান্ড ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ডবেসিন রিজার্ভ১৯৭৫ফলাফল হয়নি

তথ্যসূত্র

  1. "Former New Zealand captain Bevan Congdon dies"ESPN Cricinfo। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  2. "New Zealand's great day of fulfilment"espncricinfo। ১৩ মার্চ ১৯৭৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৪
  3. "Post-captaincy performers, How players have fared in their post-captaincy careers compared to their performance when at the helm"espncricinfo। ২০ এপ্রিল ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৪
  4. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
গ্রাহাম ডাউলিং
নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৭১/৭২-১৯৭৬/৭৭
উত্তরসূরী
গ্লেন টার্নার
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.